কলাপাড়া উপজেলা

কলাপাড়া উপজেলা (পটুয়াখালী জেলা)  আয়তন: ৪৯১.৮৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪৮´ থেকে ২২°০৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৫´ থেকে ৯০°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আমতলী উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে রাবনাবাদ চ্যানেল ও গলাচিপা উপজেলা, পশ্চিমে আমতলী উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৩৭৮৩১; পুরুষ ১২০৫১৪, মহিলা ১১৭৩১৭। মুসলিম ২২৫৩৪৫, হিন্দু ১১১২৫, বৌদ্ধ ১১৯৬, খ্রিস্টান ১৪৫ এবং অন্যান্য ২০। এ উপজেলায় আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের ১০৪টি পরিবারে মোট ৪৭৪ জন বাস করে।

জলাশয় প্রধান নদী: আন্ধারমানিক, নীলগঞ্জ ও ধানখালী।

প্রশাসন ১৯২৮ সালে কলাপাড়া থানা গঠিত হয় এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ৫৭ ২৩৯ ৩৫৩৫৪ ২০২৪৭৭ ৪৮৪ ৬৫.৩ (২০০১) ৬৮.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৭৫ (২০০১) ১৮ ৩৪ ২৬৫০৯ ৪৩৩৫ (২০০১) ৪৭.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৭৪ (২০০১) ৮৮৪৫ ৪৬৪ (২০০১) ৭৫.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চাকমাইয়া ১১ ৮৪৯৬ ৮১৫৭ ৮৩১৫ ৫২.৯
টিয়াখালি ৮৩ ৮১২৬ ৭২১৩ ৭১২৯ ৪৬.২
ডালবুগঞ্জ ১৫ ৬০০৪ ৫২৮০ ৫৬৪১ ৫০.৯
ধানখালী ৫৫ ৯৯৪৮ ১৩০২৫ ১৩০৪৮ ৪৫.২
ধুলাসার ২৯ ১২৭১৩ ৯১৮৯ ৯০৫৪ ৩৮.৯
নীলগঞ্জ ৭১ ১৫৬৪৮ ১৪১৬৩ ১৪৮৫৬ ৬২.৬
বালিয়াতলী ১০ ১১১৪৮ ৭৯৪৮ ৮৩৪৪ ৪৭.৬
মিঠাগঞ্জ ৫৯ ৭৩৪৮ ৫৭৮৯ ৫৭৯৮ ৪৫.৮
মহিপুর ২৩ ৭০২৫ ১১৫৮৬ ৯৩০০ ৫৬.৪
লতাচাপলি ৪৭ ১৫৫৪৪ ১৩৩২৭ ১২৫৯৮ ৫৩.৫
লালুয়া ৩৫ ৯৫২৮ ১০৯০৭ ১০৬৫৫ ৪০.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কেরানীপাড়ার পুরানো বৌদ্ধবিহারে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি (এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি), কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহার।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় কলাপাড়ার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা ছোটখাটো বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করে। তবে এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে কলাপাড়া থানায় পরিচালিত অপারেশনটি। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা খেপুপাড়া হানাদার মুক্ত করেন।

বিস্তারিত দেখুন কলাপাড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯০, মন্দির ৪৫, প্যাগোডা ৪, বৌদ্ধবিহার ৮, গির্জা ২, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কলাপাড়া জামে মসজিদ, কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহার, কলাপাড়ায় পীর বশির উদ্দিনের মাযার।


শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.০%; পুরুষ ৫২.৬%, মহিলা ৫১.৫%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫০, মাদ্রাসা ২৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ (১৯৭৭), কুয়াকাটা কলেজ (২০০১), ধানখালী কলেজ (১৯৯৪), খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৮), ধানখালী এম. ইউ. মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫২), মাহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৭), খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৩), কলাপাড়া নেছারুদ্দিন সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, মহিলা সমিতি ১, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ৪, কমিউনিটি সেন্টার ১৪, খেলার মাঠ ২২।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান কলাপাড়া উপজেলার দক্ষিণে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা অবস্থিত। ১৮ কিমি দৈর্ঘ্যের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। স্থানবিশেষে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ ৩ থেকে ৩.৫ কিমি। কুয়াকাটা থেকে পশ্চিমে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লী। শীতকালে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ছোটবড় মাছ আহরণ করে উক্ত পল্লীতে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এখান থেকে শুঁটকি মাছের চালান বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রয়েছে সিফিশ মিউজিয়াম, বুড়া গৌরঙ্গ সামুদ্রিক চ্যানেল, কুয়াকাটার সীমা বৌদ্ধ মন্দির, বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি, রাখাইন পল্লী, নারিকেল বীথি, ঝাউবন, ফাতরার চর (ম্যানগ্রোভ), গঙ্গামতির চর, রাসমেলা, লেম্বুর চর ইত্যাদি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৭.২৩%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৮০%, শিল্প ০.৪৩%, ব্যবসা ১৩.৫০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৪%, চাকরি ৪.৫৬%, নির্মাণ ১.৩৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২০% এবং অন্যান্য ১৫.৫৭%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, ডাল, আলু, তরমুজ।

প্রধান ফল-ফলাদিব কলা, পেঁপে, নারিকেল, পেয়ারা, বাদাম, কূল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় চিংড়ী, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৬৯ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১০৬ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৭৮ কিমি; নৌপথ ২২২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটা-ময়দার মিল, চালকল, বরফকল, করাতকল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশশিল্প, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫০ (প্রায়), মেলা ১। কলাপাড়া হাট, মহিপুর হাট এবং কুয়াকাটার রাশ-পুর্ণিমা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, ইলিশ মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার ৩১.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ মৎস ও বনজ সম্পদ।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৬%, ট্যাপ ১.৪% এবং অন্যান্য ১.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭০.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮২২, ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় এবং ১৮৭৬ সালের বন্যায় বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, কোডেক।  [একরামুল কবির]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কলাপাড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।