সোনারগাঁও
সোনারগাঁও স্বর্ণগ্রাম বা সুবর্ণগ্রাম নামে অভিহিত বঙ্গের এক প্রাচীন জনপদ। ব্রহ্মপুত্রের উভয় তীর ব্যাপী বিস্তৃত এই জনপদে ‘স্বর্ণভূষিত’ জাতি নামে চিহ্নিত এক আদিম জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। এরা ঐতিহ্যগতভাবেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত ছিল। মহাভারতে বর্ণিত কুরুপান্ডব যুদ্ধের সময়কালে এবং সম্ভবত এর আগেও এই জনপদের অস্তিত্ব ছিল বলে অনুমিত হয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীরে অবস্থিত হিন্দুদের দুটি ঐতিহ্যবাহী পবিত্র স্নানতীর্থ লাঙ্গলবন্দ ও পঞ্চমীঘাট এ অঞ্চলের প্রাচীন গুরুত্বের সাক্ষ্য বহন করছে। প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম জনপদ পূর্বে মেঘনা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং এর উত্তর সীমা বিস্তৃত ছিল আধুনিক বৃহত্তর ঢাকা জেলার উত্তর প্রান্তসীমায় ব্রহ্মপুত্র নদী পর্যন্ত। আধুনিক ভৌগোলিক বিভাগের নিরীখে এই জনপদের অবস্থান নির্ধারণ করতে গেলে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে এই জনপদের অবস্থান ছিল শীতলক্ষ্যা ও মেঘনার মধ্যবর্তী ওই ভূখন্ডে যা বর্তমানে নরসিংদী জেলা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার বৃহত্তর অংশে বিস্তৃত।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বহু পূর্বে সোনারগাঁও এলাকায় একটি স্বাধীন রাজ্যের রাজধানী ছিল এমন লোকশ্রুতি নির্ভর বিবরণ রয়েছে। তা ছাড়াও বঙ্গ বা সমতট রাজ্যের একটি প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে খ্রিস্টীয় ছয় শতক থেকে অন্যূন দশ শতকের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পাদ পর্যন্ত এ অঞ্চলের রাজনৈতিক গুরুত্ব নিরূপন করা যায়। সমাচার দেবের ছয় শতকের ভূমিদান লিপিতে (গোগরাহাটি তাম্রশাসন) উলেখিত সুবর্ণবীথি এই অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। সম্ভবত তেরো শতকের সত্তুরের দশকে রাজা দনুজ রায়ের (দশরথদেব দনুজমাধব) অধীনে সোনারগাঁও স্বাধীন বঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। তখন থেকে পূর্ববঙ্গে স্বাধীন হিন্দু রাজত্বের অবসানের (১৩০২) পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁ বঙ্গরাজ্যের রাজধানী ছিল। এ সময়ের পর থেকে গিয়াসুদ্দীন বাহাদুর শাহের উত্থান এবং পূর্ববঙ্গে স্বাধীন সালতানাত শাসন প্রতিষ্ঠার (১৩১৭) পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সোনারগাঁয়ের গৌরব সাময়িক ম্লান হয়ে পড়ে। পূর্ববঙ্গে বাহাদুর শাহের সালতানাতের রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। বাহাদুর শাহের পতন (১৩২৮) এবং বাংলাকে মুহাম্মদ বিন তুগলকের সাম্রাজ্যের অর্ন্তভুক্ত করার পর পরবর্তী এক দশক কাল সোনারগাঁও নগরী ছিল বাংলার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ কর্তৃক ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম সালতানাতের রাজধানী ছিল সোনারগাঁও, আর তখন থেকেই শুরু হয় সোনারগাঁয়ের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের। ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে লখনৌতির সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের হাতে ফখরুদ্দীনের রাজবংশের পতনের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ চৌদ্দ বছর সোনারগাঁও সমগ্র পূর্ববঙ্গ ও দক্ষিণপূর্ব বঙ্গের সুলতানি শাসনের রাজধানীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল। সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ ও সিকান্দর শাহের শাসনামলে সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গ প্রদেশের রাজধানী। পূর্ববঙ্গে গিয়াসুদ্দীন আযম শাহের স্বাধীন শাসনামলে তাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। ঈসা খান মসনদ-ই-আলা প্রতিষ্ঠিত ভাটি রাজ্যের রাজধানী ছিল সোনারগাঁয়ে।
মুগলের নিকট মুসা খান মসনদ-ই-আলার পতনের পর সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক প্রাধান্য লোপ পায় এবং মুগলদের বাংলা সুবাহ্র একটি প্রশাসনিক কেন্দ্রে পর্যবসিত হয়। ঢাকায় মুগল রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সোনারগাঁও নগরীর দ্রুত অবক্ষয় ঘটে।
সোনারগাঁয়ে হিন্দু শাসনামলের রাজধানী শহরটি ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সঙ্গমস্থলের সন্নিকটে ধলেশ্বরী নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত ছিল। শহরটির অবস্থান ছিল বর্তমান ঢাকা নগরীর প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্ব দিকে। সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মোগরাপাড়া থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বর্তমান পানাম এলাকায় হিন্দু শাসনামলের রাজধানী শহর অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। মুসলিম রাজধানী শহরের কেন্দ্রস্থল সম্ভবত ছিল মেনিখালী নদীর তীরবর্তী মোগরাপাড়া। বিদ্যমান স্থাপত্য নিদর্শনাদি থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, সমগ্র মোগরাপাড়া ও গোয়ালদি এলাকায় এক সময় সুবিস্তৃত মুসলিম বসতি গড়ে উঠেছিল। সম্ভবত মুসলিম রাজধানী শহরটি মেনিখালী নদীর উত্তর তীরবর্তী মোগরাপাড়া ও এর চতুষ্পার্শ্বস্থ এলাকায় এবং গোয়ালদি ও বৈদ্যের বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বর্তমান পানাম ও খাসনগরের মধ্যবর্তী এলাকায় বিস্তৃত হিন্দু আমলের রাজধানী শহর মুসলিম আমলে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয় নি। সম্ভবত এ এলাকায় প্রথম দিকের মুসলিম শাসনকর্তাদের আবাসস্থল ছিল।
চৌদ্দ শতকের দ্বিতীয় পাদে সোনারগাঁও একটি বাণিজ্যশহররূপে গড়ে ওঠে। সমুদ্রপথে পশ্চিম এশীয় ও দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশ থেকে বাণিজ্য-তরী সহজেই সোনারগাঁয়ে পৌঁছতে পারত। ইবনে বতুতা (১৩৪৬) সোনারগাঁওকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-নগরী রূপে বর্ণনা করেন এবং চীন, ইন্দোনেশিয়া (জাভা) ও মালয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে এর সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। চীনের পরিব্রাজক মা হুয়ান (১৪০৬) সোনারগাঁওকে একটি বিরাট বাণিজ্যিক শহররূপে প্রত্যক্ষ করেন। হৌ-হিয়েন (১৪১৫) সোনারগাঁওকে বহু পুকুর, পাকা সড়ক ও বাজার সমৃদ্ধ একটি সুরক্ষিত প্রাচীর বেষ্টিত নগর এবং বাণিজ্যকেন্দ্ররূপে উল্লেখ করেন, যেখানে সব ধরনের পণ্যসামগ্রী মজুত ও বিক্রয় করা হতো।
রালফ ফিচ (১৫৮৬) এই নগরকে একটি ব্যস্ত বাণিজ্যকেন্দ্ররূপে বর্ণনা করেন। সোনারগাঁয়ে প্রস্ত্তত মসলিন, বিশেষত ‘খাস’ নামীয় অত্যুৎকৃষ্ট মসলিন সমগ্র বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করে। সতেরো শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে রাজনৈতিক মর্যাদা হারাবার ফলে ধীরে ধীরে সোনারগাঁয়ের বাণিজ্যিক গুরুত্বও হ্রাস পেতে থাকে।
ঊনিশ শতকে সুতিবস্ত্রের, প্রধানত বিলাতি থান কাপড়ের ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পানাম নগরের অভ্যুদয়ের ফলে সোনারগাঁও বাণিজ্য ক্ষেত্রে কিছুটা প্রাধান্য লাভ করে। পানাম নগরের বর্তমান ভগ্নপ্রায় দালানকোঠা হচ্ছে হিন্দু ব্যবসায়ীদের তৈরি আবাসিক ভবন। ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন উপনিবেশিক স্থাপত্য রীতিতে এগুলি নির্মিত।
বোখারার জ্ঞানতাপস মওলানা শরফুদ্দীন আবু তওয়ামার নেতৃত্বে সোনারগাঁও ইসলামি শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। তিনি সম্ভবত ১২৭০ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁয়ে এসে স্বীয় খানকা ও একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষার সকল শাখায় এবং লৌকিক বিজ্ঞানের ওপর শিক্ষাদান ও অধ্যয়নের ব্যবস্থা ছিল। সমগ্র উপমহাদেশে এই মাদ্রাসার বহুল সুখ্যাতি ছিল এবং দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষালাভের জন্য সমবেত হতো। বিহারের বিখ্যাত সুফি ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরী এই মাদ্রাসায়ই শিক্ষালাভ করেন। সম্ভবত মোগরাপাড়ার বর্তমান দরগাহ-বাড়িতে অবস্থিত ছিল এই জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।
পরবর্তীকালে শেখ আলাউদ্দিন আলাউল হক (মৃ ১৩৯৮), তাঁর পৌত্র শেখ বদর-ই-ইসলাম ও প্রপৌত্র শেখ জাহিদ সোনারগাঁয়ে ধর্মতত্ত্ব ও সুফিতত্ত্ব বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। আবু তাওয়ামা প্রতিষ্ঠিত খানকা ও মাদ্রাসা সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর আধ্যাত্মিক অনুসারীদের দ্বারা এবং পরবর্তীকালে প্রখ্যাত সুফিসাধক সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ ও তাঁর বংশধর সৈয়দ আরিফ বিল্লাহ মুহাম্মদ কামেল, সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফ ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। সোনারগাঁও এক সময়ে ছিল বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও ফকিরদের মিলনক্ষেত্র। সোনারগাঁয়ে সংকলিত কতিপয় মূল্যবান গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এগুলি হচ্ছে শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রচিত ইসলামি সুফিবাদ (তাছাওয়াফ) বিষয়ক দুর্লভ গ্রন্থ মাকামাত, আবু তাওয়ামা কর্তৃক রচিত অথবা তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে তাঁর কোনো অনুসারী কর্তৃক সংকলিত (১৩০৪) ফার্সি ভাষার ফিকাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থ নাম-ই-হক, চৌদ্দ শতকের প্রথমদিকে জনৈক কামাল-ই-করিম বিরচিত ফিকাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থ মাজমু-ই-খানী ফি আইন আল-মাআনী, সোনারগাঁয়ের তুগলক শাসনকর্তা বাহরাম খান ওরফে তাতার খানএর নির্দেশে সংকলিত তফসির-ই-তাতারখানী ও ফতওয়ায়ে তাতারখানী এবং মুসা খানের সভাকবি নাথুরেশ কর্তৃক সংকলিত সংস্কৃত-বাংলা অভিধান শব্দ-রত্নকরী।
সোনারগাঁয়ের স্থাপত্য নিদর্শনগুলি সুবিন্যস্ত অবস্থায় দেখা যায় না। সেখানে এখন এমন কোনো নিদর্শন বা ধ্বংসাবশেষ নেই যা হিন্দু আমলের রাজধানী শহরের নিদর্শনরূপে চিহ্নিত করা যায়। শুধু রয়েছে নগর এলাকার চারপাশ ঘিরে গভীর কর্দমাক্ত মজা খাল, যা নগরের প্রতিরক্ষার জন্য খনিত পরিখা বলে প্রতীয়মান হয়। বর্তমান নিদর্শনগুলি হচ্ছে কয়েকটি মধ্যযুগীয় ইমারত, যার অধিকাংশই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সেগুলি সুলতানি ও মুগল আমলের। আর রয়েছে মুগল আমলের কয়েকটি সেতু ও ইংরেজ আমলের গুটিকয়েক আবাসিক ভবন। সোনারগাঁও উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে রয়েছে খাসনগর দিঘি, দালালপুরে কোম্পানি কুঠি (নীল কুঠি), হাবিবপুরে পাগলা শাহের মাজার, গোয়ালদি মসজিদ (১৫১৯), আবদুল হামিদ মসজিদ (১৪৩৩-৩৬), মুয়াজ্জমপুরে শাহ লঙ্গরের দরগাহ, আমিনপুরে ক্রোড়িবাড়ি, আমিনপুর মঠ, দামোদরদি মঠ, মিসরিপুরা মঠ, মঠের পুকুর পাড়ের মঠ, পানাম নগরের আবাসিক ভবন ও ঈসাপুরে সরদার বাড়ি (১৯০১)।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত নিদর্শনগুলি হচ্ছে মোগরাপাড়ায় দরগাহ-বাড়ি কমপ্লেক্সে দরগাহ ভবন, মাদ্রাসা ভবন, ফতেহ শাহ মসজিদ (১৪৮৪), নহবতখানা, শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামার সমাধি (মৃত্যু ১৩০০), সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দের সমাধিসৌধ, সাইয়্যিদ আরিফ বিল্লাহর সমাধি, সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফের সমাধিসৌধ এবং মুন্না শাহ দরবেশের মাজার। দক্ষিণ পাশের অপরাপর নিদর্শন হচ্ছে মোগরাপাড়ায় দমদমা, শাহ চিলাপুরে গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ’র সমাধি, গোহাট্টায় পোঁকাই দেওয়ানার মাজার, ভাগলপুরে পাঁচ পীর দরগাহ ও মসজিদ, ইউসুফগঞ্জ মসজিদ এবং দারুগোলায় শেখ সাহেবের মসজিদ। বন্দর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এলাকার নিদর্শন হচ্ছে সদরে অবস্থিত বন্দর শাহী মসজিদ (১৪৮১), সালেহ নগরে বাবা সালেহ মসজিদ (১৫০৫) ও বাবা সালেহর সমাধি (মৃত্যু ১৫০৬), বন্দর মঠ, সোনাকান্দা দুর্গ (১৭শ শতক), দেওয়ানবাগে দেওয়ানবাগ মসজিদ (১৬শ শতক) এবং নবীগঞ্জে কদম রসুল দরগাহ।
ইতিহাসখ্যাত সোনারগাঁও নগর এখন শুধু নামেই রয়েছে। ঢাকা নগরীর প্রতিষ্ঠার পর থেকে সোনারগাঁও তার প্রাধান্য হারাতে থাকে এবং ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে সোনারগাঁও পরিণত হয় ‘গভীর জঙ্গলে আচ্ছাদিত গন্ড গ্রামে’। কিন্তু প্রায় এক শতক কালের ব্যবধানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যোগাযোগ সুবিধার ফলে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনার মধ্যবর্তী ভূভাগ এখন পরিণত হয়েছে একটি উৎপাদনশীল এলাকায়। মহাসড়কের উভয় পাশে পল্লবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, গড়ে উঠেছে বহুতর শিল্প কারখানা। মহাসড়কের উত্তর পাশে পানাম ও গোয়ালদির দিকে এবং দক্ষিণ পাশে মোগরাপাড়ায় সম্প্রতি গড়ে ওঠা আধুনিক বসতি দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং এতে করে দিনে দিনে এলাকাটি রূপ নিচ্ছে একটি উপশহরের। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
গ্রন্থপঞ্জি Muazzam Hussain Khan, Thousand Years of Sonargaon, Dhaka , 2009।