ফতেহ শাহ মসজিদ
ফতেহ শাহ মসজিদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের নগর সাদিপুর গ্রামের দরগাহ কমপ্লেক্স-এর অভ্যন্তরে অবস্থিত। এ এলাকা মধ্যযুগের রাজধানী সোনারগাঁয়ের একটি অংশ ছিল বলে মনে করা হয়। মসজিদটিতে ক্রমাগত সংস্কার ও পুনর্নির্মানের ফলে মূল বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছুই বর্তমানে অনুপস্থিত। তা সত্ত্বেও কিছু বৈশিষ্ট্য এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, যা মসজিদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ করে তুলেছে।
আস্তরণসহ ইটের তৈরি মসজিদটি ১০.৩৫ মি × ৭.৯৫ মি আয়তনের আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। পূর্বদিকের সম্মুখভাগে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে; যার কেন্দ্রীয়টি পার্শ্বস্থগুলি থেকে সামান্য বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ ছিল, বর্তমানে এগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিবলা দেয়ালে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব কুলুঙ্গি রয়েছে। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয়টি পাথরের তৈরি অন্য দুটির চেয়ে সামান্য বড় এবং বাইরের দিকে শিরতোলা। মসজিদটি অভ্যন্তরীণভাবে তিনভাগে ভাগ করা, মধ্যবর্তী অংশটি অপেক্ষাকৃত বড় ও বর্গাকার এবং পার্শ্বস্থগুলি ছোট। মধ্যবর্তী ভাগটি একটি বড় গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। পার্শ্বস্থগুলি অর্ধগম্বুজাকৃতি ভল্টের আচ্ছাদনে ঢাকা। গম্বুজটি গোলাকার ড্রামের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর চূড়া পদ্ম ও কলস শোভিত। পার্শ্বস্থ অর্ধগম্বুজাকৃতি ভল্ট এবং কেন্দ্রীয় মিহরাব ও কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপরিস্থিত বদ্ধ খিলান অভ্যন্তরীণভাবে গম্বুজের ভার বহন করে আছে। বদ্ধ খিলান এবং অর্ধগমু^জাকৃতি ভল্টের মধ্যবর্তী স্থানের উপরের কোণ ত্রিকোণাকার পেন্ডেন্টিভ দ্বারা তৈরি। মসজিদের কার্নিস সুলতানি রীতিতে ক্রমশ বাঁকানো, যদিও প্যারাপেট মুগল রীতিতে অনুভূমিকভাবে তৈরি।
মসজিদটি পুরোপুরি প্লাস্টার দ্বারা আবৃত এবং সাদা চুনের আস্তরণ দেওয়া। বাঁকানো কার্নিসের ঠিক নিচে দেওয়ালের বহির্ভাগ সাধারণ মুগল রীতির প্যানেল দ্বারা সজ্জিত। কেন্দ্রীয় মিহরাব আয়তাকার ফ্রেমে আবদ্ধ এবং বহুখাঁজ খিলান বর্শার ফলার মোটিফে অলংকৃত। ফ্রেমের শীর্ষে বদ্ধ মেরলোন নকশা রয়েছে, বর্তমানে রং করা। মিহরাব খিলানের সমর্থনকারী দুটি অর্ধঅষ্টভুজাকার স্তম্ভ সামান্য উত্থিত ব্যান্ড নকশা দ্বারা ভাগ করা। সর্বোচ্চ ব্যান্ডটি জালি নকশার ফ্রিজ দ্বারা শোভিত। শিরতোলা খিলানসহ সংলগ্নস্তম্ভ পলকাটা (ক্ষুদ্রভাগ করা) এবং চূড়ায় ঝুলন্ত শিকলঘণ্টার নকশা করা। মিহরাব খিলানের ঠিক উপরে রয়েছে প্রশস্ত গোলাপ নকশার স্তর এবং স্প্যানড্রেলে রয়েছে ছোট গোলাপসহ পরস্পর ছেদকারী প্যাঁচানো নকশা। গম্বুজের চূড়া অভ্যন্তরীণভাবে প্রশস্ত মেডেলিয়ন দ্বারা সজ্জিত, যা পুনরায় গোলাপের সারি দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এ সমস্ত কাজই স্টাকো নকশায় করা।
মসজিদটিতে বর্তমানে দুটি শিলালিপি রয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপরে এবং অপরটি বর্তমানে মসজিদের বিপরীতপার্শ্বে কবরস্থানের দেওয়ালে লাগানো। প্রবেশপথের উপরে ফারসি শিলালিপিতে ১১১২ হিজরি/১৭০০-০১ খ্রিস্টাব্দের উল্লেখ রয়েছে। অপর শিলালিপিটি আরবিতে লেখা এবং ৮৮৯ হিজরি/১৪৮৪ খ্রিস্টাব্দের উল্লেখ রয়েছে। মসজিদটি সম্ভবত সুলতান জালালউদ্দীন ফতেহ শাহ এর শাসনামলে ১৪৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম নির্মাণ করা হয় এবং ধারণা করা হয় ১৭০০-০১ খ্রিস্টাব্দে মুগল আমলে গম্বুজ ও ভল্টের নুতন আচ্ছাদন দ্বারা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী পুনর্নির্মাণের ফলে মুগল বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান হয়। [এম.এ বারি]