শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরী
শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরী একজন দরবেশ। তিনি ছিলেন মানেরের (বিহারে অবস্থিত) শেখ ইয়াহিয়ার পুত্র এবং শেখ শরফুদ্দীন আবু তওয়ামার শিষ্য। আবু তওয়ামা সোনারগাঁও যাওয়ার পথে ইয়াহিয়া মানেরীর আতিথ্য গ্রহণ করেন। যুবক শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া অতিথি আবু তওয়ামার জ্ঞানে-গুণে মুগ্ধ হন। তিনি তাঁর নিকট শিক্ষা গ্রহণ ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ নেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং তাঁর সঙ্গে সোনারগাঁও চলে আসেন।
সোনারগাঁয়ে আবু তওয়ামা একটি মাদ্রাসা ও একটি খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরী সেখানে তাঁর নিকট শিক্ষা লাভ করেন ও আধ্যাত্মিক রহস্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন। লেখাপড়ায় তাঁর গভীর মনোযোগ ছিল এবং তাফসির বা কুরআনের ব্যাখ্যা, রসুলুল্লাহ (সঃ)-এর হাদীস, ফেকাহ শাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, তর্কশাস্ত্র, দর্শন এবং অঙ্কশাস্ত্রে তিনি ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি সুফি মতবাদেও দীক্ষা নেন এবং অধিকাংশ সময় ধ্যানে ও আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োজিত থাকতেন। তিনি লেখাপড়া ও ধ্যানে এত বিভোর থাকতেন যে, বাড়ি থেকে আসা চিঠিপত্রের প্রতিও তিনি কোন গুরুত্ব দিতেন না। শিক্ষা সমাপনের পর চিঠিগুলি পড়ে তিনি জানতে পারেন যে ইতোমধ্যে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়েছে (তাঁর পিতা শেখ ইয়াহিয়াও বাংলায় মহীসুন এলাকায় মাওলানা তাকিউদ্দীন আরাবীর নিকট শিক্ষালাভ করেন)।
জন্মস্থান মানেরে ফিরে যাওয়ার পূর্বে শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া তাঁর শিক্ষক শেখ আবু তওয়ামার কন্যার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। পরবর্তী জীবনে সুফি জগতে তিনি বিরল খ্যাতির অধিকারী হন। তাঁর মাকতুবাত (চিঠিপত্র) পাওয়া গিয়েছে। এগুলি আধ্যাত্মিক ব্যাপারে উপদেশ ও সাবধান বাণীতে পূর্ণ। সমসাময়িক দিল্লির সুলতানগণ তাঁর উপদেশ গ্রহণের জন্য উদগ্রীব থাকতেন। [আবদুল করিম]