কম্পিউটার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১৬ নং লাইন: | ১৬ নং লাইন: | ||
'''''বাংলা সফটওয়্যার উদ্ভাবন''''' কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখা সম্ভব হয় ১৯৮৭ সালে এবং এ সাফল্যের কৃতিত্ব মাইনুল ইসলাম নামক একজন প্রকৌশলির। তিনি নিজের উদ্ভাবিত বাংলা ফন্ট ‘মাইনুলিপি’ ব্যবহার করে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলার জন্য আলাদা কোনো কি-বোর্ড (keyboard) ব্যবহার না করে ইংরেজি কি-বোর্ড দিয়েই কাজ চালানো হয়েছিল। ইংরেজি ও বাংলার আলাদা ধরনের বর্ণক্রম এবং বাংলার যুক্তাক্ষরজনিত সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের চার স্তর কি-বোর্ড (4 layer keyboard) ব্যবহারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। মাইনুলিপির পর পরই ‘শহীদলিপি’ ও ‘জববারলিপি’ নামে আরও দুটো বাংলা ফন্ট উদ্ভাবিত হয় এবং একই পদ্ধতিতে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহূত হয়। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে আনন্দ কম্পিউটার্স নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হয় অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস ‘বিজয়’। এ সময়েই প্রথম বাংলা কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি হয়। প্রথম পর্যায়ের বাংলা কি-বোর্ডগুলির মধ্যে ‘বিজয়’ এবং ‘মুনীর’ উল্লেখযোগ্য। ইন্টারফেস পদ্ধতিতে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের (Operating System or OS) সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এবং এ কি-বোর্ডকে ক্রিয়াশীল করে ও ফন্ট নির্বাচন করে কম্পিউটারে বাংলা লেখা যায়। বিজয় ইন্টারফেসটি ছিল ম্যাকিনটোশ ভিত্তিক এবং অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো সীমিত, মূলত প্রকাশনার কাজেই তা ব্যবহূত হতো। | '''''বাংলা সফটওয়্যার উদ্ভাবন''''' কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখা সম্ভব হয় ১৯৮৭ সালে এবং এ সাফল্যের কৃতিত্ব মাইনুল ইসলাম নামক একজন প্রকৌশলির। তিনি নিজের উদ্ভাবিত বাংলা ফন্ট ‘মাইনুলিপি’ ব্যবহার করে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলার জন্য আলাদা কোনো কি-বোর্ড (keyboard) ব্যবহার না করে ইংরেজি কি-বোর্ড দিয়েই কাজ চালানো হয়েছিল। ইংরেজি ও বাংলার আলাদা ধরনের বর্ণক্রম এবং বাংলার যুক্তাক্ষরজনিত সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের চার স্তর কি-বোর্ড (4 layer keyboard) ব্যবহারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। মাইনুলিপির পর পরই ‘শহীদলিপি’ ও ‘জববারলিপি’ নামে আরও দুটো বাংলা ফন্ট উদ্ভাবিত হয় এবং একই পদ্ধতিতে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহূত হয়। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে আনন্দ কম্পিউটার্স নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হয় অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস ‘বিজয়’। এ সময়েই প্রথম বাংলা কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি হয়। প্রথম পর্যায়ের বাংলা কি-বোর্ডগুলির মধ্যে ‘বিজয়’ এবং ‘মুনীর’ উল্লেখযোগ্য। ইন্টারফেস পদ্ধতিতে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের (Operating System or OS) সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এবং এ কি-বোর্ডকে ক্রিয়াশীল করে ও ফন্ট নির্বাচন করে কম্পিউটারে বাংলা লেখা যায়। বিজয় ইন্টারফেসটি ছিল ম্যাকিনটোশ ভিত্তিক এবং অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো সীমিত, মূলত প্রকাশনার কাজেই তা ব্যবহূত হতো। | ||
আই.বি.এম কম্পিউটারের ব্যবহারকারী আগাগোড়াই বেশি এবং এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করেই ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে ‘বর্ণ’ নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা ওয়ার্ডপ্রসেসিং সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দুজন ছাত্র রেজা-ই আল আমিন আব্দুল্লাহ (অংক) ও মোঃ শহীদুল ইসলাম (সোহেল)। প্রতিভাবান দু কিশোর প্রোগ্রামারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সেইফওয়ার্কস-এর পক্ষ থেকে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ ওয়ার্ডপ্রসেসরটির উদ্ভাবন ছিল বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ওয়ার্ডপ্রসেসরটি ছিল ‘ডস’ (Disk Operating System - DOS) ভিত্তিক, কিন্তু প্রোগ্রামটির নিজস্ব আঙ্গিক ছিল উইন্ডোস (Windows)-এর মতো। বর্ণ-তে তিন ধরণের কি-বোর্ড ব্যবহার করা যেতো মুনীর, বিজয় এবং ইজি কি-বোর্ড (easy keyboard)। বর্ণ সফটওয়্যারটিতে কি-বোর্ড পুনর্গঠনের (customise) সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছা করলে নিজের পছন্দ বা সুবিধা অনুযায়ী নতুন কি- | আই.বি.এম কম্পিউটারের ব্যবহারকারী আগাগোড়াই বেশি এবং এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করেই ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে ‘বর্ণ’ নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা ওয়ার্ডপ্রসেসিং সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দুজন ছাত্র রেজা-ই আল আমিন আব্দুল্লাহ (অংক) ও মোঃ শহীদুল ইসলাম (সোহেল)। প্রতিভাবান দু কিশোর প্রোগ্রামারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সেইফওয়ার্কস-এর পক্ষ থেকে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ ওয়ার্ডপ্রসেসরটির উদ্ভাবন ছিল বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ওয়ার্ডপ্রসেসরটি ছিল ‘ডস’ (Disk Operating System - DOS) ভিত্তিক, কিন্তু প্রোগ্রামটির নিজস্ব আঙ্গিক ছিল উইন্ডোস (Windows)-এর মতো। বর্ণ-তে তিন ধরণের কি-বোর্ড ব্যবহার করা যেতো মুনীর, বিজয় এবং ইজি কি-বোর্ড (easy keyboard)। বর্ণ সফটওয়্যারটিতে কি-বোর্ড পুনর্গঠনের (customise) সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছা করলে নিজের পছন্দ বা সুবিধা অনুযায়ী নতুন কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি করে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল। | ||
পরবর্তীতে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ক্রমাগত উন্নত থেকে উন্নততর সংস্করণের ওয়ার্ড প্রসেসর বাজারে ছাড়তে থাকলে ১৯৯৩ সালে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে আই.বি.এম কম্পিউটারের আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম ‘মাইক্রোসফট উইন্ডোস’ (Microsoft Windows)-এর সঙ্গে ব্যবহারের জন্য ইন্টারফেস ‘বিজয়’ উদ্ভাবিত হয়। এর পর ১৯৯৪ সালে ‘লেখনী’ নামেও একটি ইন্টারফেস তৈরি হয়। যদিও ‘আবহ’ (১৯৯২-এর শেষে উদ্ভাবিত) আই.বি.এম কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস, কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে এটি তেমন একটা ব্যবহূত হয় নি। বর্তমানে বেশকিছু বাংলা ইন্টারফেস প্রচলিত রয়েছে, যেমন: বিজয়, লেখনী, প্রশিকা-শব্দ, অনির্বাণ, বর্ণমালা, প্রবর্তনা ইত্যাদি। একাধিক ইন্টারফেসের মতো একাধিক | পরবর্তীতে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ক্রমাগত উন্নত থেকে উন্নততর সংস্করণের ওয়ার্ড প্রসেসর বাজারে ছাড়তে থাকলে ১৯৯৩ সালে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে আই.বি.এম কম্পিউটারের আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম ‘মাইক্রোসফট উইন্ডোস’ (Microsoft Windows)-এর সঙ্গে ব্যবহারের জন্য ইন্টারফেস ‘বিজয়’ উদ্ভাবিত হয়। এর পর ১৯৯৪ সালে ‘লেখনী’ নামেও একটি ইন্টারফেস তৈরি হয়। যদিও ‘আবহ’ (১৯৯২-এর শেষে উদ্ভাবিত) আই.বি.এম কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস, কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে এটি তেমন একটা ব্যবহূত হয় নি। বর্তমানে বেশকিছু বাংলা ইন্টারফেস প্রচলিত রয়েছে, যেমন: বিজয়, লেখনী, প্রশিকা-শব্দ, অনির্বাণ, বর্ণমালা, প্রবর্তনা ইত্যাদি। একাধিক ইন্টারফেসের মতো একাধিক বাংলা কি-বোর্ডও প্রচলিত রয়েছে, যেমন: মুনীর, বিজয়, ন্যাশনাল, লেখনী, প্রবর্তনা, শহীদলিপি ইত্যাদি। বাংলায় সার্বজনীন (universal) কোনো কি-বোর্ড না থাকায় এবং বিভিন্ন ইন্টারফেসগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় কোনো একটি নির্দিষ্ট ইন্টারফেস ও কি-বোর্ড ব্যবহার করে তৈরি করা ডকুমেন্ট ভিন্ন ইন্টারফেস বা কি-বোর্ড ব্যবহার করে সম্পাদনা করা যায় না। তবে সম্প্রতি কিছু কিছু ইন্টারফেসে কনভার্টার প্রোগ্রাম যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে বা আলাদাভাবে কনভার্টার প্রোগ্রাম তৈরি করা হচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনের জন্য প্রয়োজন একটি সার্বজনীন কি-বোর্ড লে-আউট এবং বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ইন্টারফেসগুলির মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়সাধন। | ||
ইন্টারফেস ও কি-বোর্ডের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ফন্টেরও যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটেছে, তৈরি হয়েছে অতি সাধারণ থেকে কারুকার্যময় শৈল্পিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন ফন্ট। বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রসেসর ছাড়াও অন্যান্য অনেক ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রামে বাংলা কি বোর্ড ও ফন্ট ব্যবহার করা যায়। ওয়ার্ড প্রসেসরের সঙ্গে ব্যবহারের জন্য বাংলা বানান সংশোধক (spell checker) বিভিন্ন প্রোগ্রামও তৈরি করা হয়েছে, যেমন: পন্ডিত, প্রশিকা শব্দকোষ, লেখনী ইত্যাদি। তবে কম্পিউটারে বাংলা ফন্টে নির্দিষ্ট কোনো বর্ণ নকশা (font layout) না থাকায় বাংলা বর্ণসমূহ ক্রমধারা অনুযায়ী বিন্যস্ত (sorting) করার ক্ষেত্রে এতদিন কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি। ২০০১ সালে | ইন্টারফেস ও কি-বোর্ডের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ফন্টেরও যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটেছে, তৈরি হয়েছে অতি সাধারণ থেকে কারুকার্যময় শৈল্পিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন ফন্ট। বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রসেসর ছাড়াও অন্যান্য অনেক ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রামে বাংলা কি বোর্ড ও ফন্ট ব্যবহার করা যায়। ওয়ার্ড প্রসেসরের সঙ্গে ব্যবহারের জন্য বাংলা বানান সংশোধক (spell checker) বিভিন্ন প্রোগ্রামও তৈরি করা হয়েছে, যেমন: পন্ডিত, প্রশিকা শব্দকোষ, লেখনী ইত্যাদি। তবে কম্পিউটারে বাংলা ফন্টে নির্দিষ্ট কোনো বর্ণ নকশা (font layout) না থাকায় বাংলা বর্ণসমূহ ক্রমধারা অনুযায়ী বিন্যস্ত (sorting) করার ক্ষেত্রে এতদিন কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি। ২০০১ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ- ''বাংলাপিডিয়া'' (Banglapedia)-এর আইটি বিশেষজ্ঞ দল এ ব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কম্পিউটারে বাংলা বর্ণমালা ক্রমবিন্যাসে (sorting) সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। | ||
কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারের প্রভাবে ঢাকার অফিস ও প্রকাশনা শিল্পে দ্রুত কম্পিউটারের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য সফটওয়্যার তৈরি ও উন্নয়ন এবং ১৯৯৭ সাল থেকে রপ্তানিযোগ্য মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়। | কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারের প্রভাবে ঢাকার অফিস ও প্রকাশনা শিল্পে দ্রুত কম্পিউটারের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য সফটওয়্যার তৈরি ও উন্নয়ন এবং ১৯৯৭ সাল থেকে রপ্তানিযোগ্য মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়। | ||
'''''ইন্টারনেট ও ই-মেইলের ব্যবহার''''' ১৯৯০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ অনেক পরে এ মহাযাত্রায় যোগ দেয়। ১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইল (offline e-mail)-এর মাধ্যমে প্রথম এদেশে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট (Very Small Aperture Terminal - VSAT) স্থাপন করা হয় এবং আই.এস.এন নামক একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আই.এস.পি (Internet Service Provider - ISP)-এর মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তৃতি ঘটতে শুরু করে। দেশে বর্তমানে ৫০-এর অধিক আই.এস.পি রয়েছে। আই.এস.পি গুলির মধ্যে কেবলমাত্র বি.টি.টি.বি (Bangladesh Telegraph and Telephone Board - BTTB)-ই সরকারি মালিকানাধীন। দেশের অধিকাংশ আই.এস.পি মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। তবে বর্তমানে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী এবং বগুড়া শহরেও অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা চালু রয়েছে। অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা ও বিনোদনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচিতিমূলক ওয়েবপেজ (WebPages) তৈরি করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ওয়েবপেজটির ঠিকানা হলো: www.bangladesh.gov.bd যেখানে দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিমূলক বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। বাংলাপিডিয়ার ওয়েবপেজটির ঠিকানা হলো: www.banglapedia. | '''''ইন্টারনেট ও ই-মেইলের ব্যবহার''''' ১৯৯০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ অনেক পরে এ মহাযাত্রায় যোগ দেয়। ১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইল (offline e-mail)-এর মাধ্যমে প্রথম এদেশে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট (Very Small Aperture Terminal - VSAT) স্থাপন করা হয় এবং আই.এস.এন নামক একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আই.এস.পি (Internet Service Provider - ISP)-এর মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তৃতি ঘটতে শুরু করে। দেশে বর্তমানে ৫০-এর অধিক আই.এস.পি রয়েছে। আই.এস.পি গুলির মধ্যে কেবলমাত্র বি.টি.টি.বি (Bangladesh Telegraph and Telephone Board - BTTB)-ই সরকারি মালিকানাধীন। দেশের অধিকাংশ আই.এস.পি মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। তবে বর্তমানে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী এবং বগুড়া শহরেও অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা চালু রয়েছে। অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা ও বিনোদনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচিতিমূলক ওয়েবপেজ (WebPages) তৈরি করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ওয়েবপেজটির ঠিকানা হলো: www.bangladesh.gov.bd যেখানে দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিমূলক বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। বাংলাপিডিয়ার ওয়েবপেজটির ঠিকানা হলো: www.banglapedia.org। | ||
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে কম খরচের দ্রুততম ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু হওয়ার পর ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষা, দাপ্তরিক, বাণিজ্যিক সকল ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। দ্রুততম ডাক ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দেশের বেশ কিছু পোষ্ট অফিসে ই-পোষ্ট বা ইলেকট্রনিক পোষ্ট-এর ব্যবস্থা করেছে। এ ডাক ব্যবস্থায় সংবাদ আদান-প্রদান করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ঢাকা শহরে বর্তমানে যথেষ্ট সংখ্যক সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখান থেকে ওয়েব ব্রাউজিংসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সুবিধাও ভোগ করা যায়। | যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে কম খরচের দ্রুততম ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু হওয়ার পর ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষা, দাপ্তরিক, বাণিজ্যিক সকল ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। দ্রুততম ডাক ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দেশের বেশ কিছু পোষ্ট অফিসে ই-পোষ্ট বা ইলেকট্রনিক পোষ্ট-এর ব্যবস্থা করেছে। এ ডাক ব্যবস্থায় সংবাদ আদান-প্রদান করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ঢাকা শহরে বর্তমানে যথেষ্ট সংখ্যক সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখান থেকে ওয়েব ব্রাউজিংসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সুবিধাও ভোগ করা যায়। |
০৫:২৬, ৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
কম্পিউটার (Computer) ইলেকট্রনিক গণনাকারী যন্ত্র যার সাহায্যে গণনা ছাড়াও অন্য অনেক ধরনের কাজ অত্যন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি (Personal Computer - PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম এবং ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবার। কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে অসংখ্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক কালে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology - IT) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ দখল করেছে এবং কর্মসংস্থান হয়ে পড়েছে অনেকাংশেই কম্পিউটার নির্ভর।
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সূচনা হয় ষাটের দশকে এবং নববই-এর দশকে তা ব্যাপকতা লাভ করে। তথ্য প্রযুক্তি বর্তমানে অতি পরিচিত একটি বিষয়। নববই দশকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে।
পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আইবিএম (International Business Machines - IBM) কোম্পানির 1620 সিরিজের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)। যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল গবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ।
ষাটের দশকে দেশে ও বিদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণাসহ ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করে; এবং এজন্য রুটিন হিসাবের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি প্রয়োজন হয়ে পড়ে হিসাবে দ্রুততা আনয়নের। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে হিসাব পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এসময় দেশের কয়েকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপন করে। ষাটের দশকের শেষ দিকে তদানীন্তন হাবিব ব্যাংক IBM 1401 কম্পিউটার এবং ইউনাইটেড ব্যাংক IBM 1901 কম্পিউটার স্থাপন করে। প্রধানত ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব-নিকাশের জন্য ব্যবহূত এসব কম্পিউটার ছিল তৃতীয় প্রজন্মের মেইনফ্রেম ধরনের। স্বাধীনতার পূর্বে, ১৯৬৯ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে স্থাপিত হয় একটি IBM 360 কম্পিউটার। আদমজী জুট মিলেও এ সময় একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপিত হয়েছিল। সীমিত পরিসরে হলেও স্বাধীনতা পূর্বকালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স কৌশল প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার-এর অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়।
স্বাধীনতার পর দেশে কম্পিউটার স্থাপন ও কম্পিউটারায়ন প্রক্রিয়া বেগবান হতে শুরু করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭২-এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে এ প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয় IBM 370, IBM 9100 এবং IBM 4341 প্রভৃতি বৃহৎ কম্পিউটার। এ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারায়নের অগ্রগতির ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে এবং সংযোজিত হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের বিভিন্ন শক্তিশালী কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তির অন্যান্য সর্বাধুনিক সাজ-সরঞ্জাম। ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় একটি IBM 370 এবং একটি IBM 4331 মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপন করে এবং প্রতিষ্ঠিত হয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার কেন্দ্র। এ কম্পিউটার কেন্দ্রটি বাংলাদেশে কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান ও কম্পিউটার প্রযুক্তি প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ১৯৮১ সালে স্থাপন করে IBM 4341 মেইনফ্রেম কম্পিউটার। ১৯৮৫ সালে একটি IBM 4331 মেইনফ্রেম কম্পিউটার দিয়ে স্থাপিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার কেন্দ্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করলে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসরভিত্তিক কম্পিউটার। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এম কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি। এর পর একের পর এক উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি। আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কমপ্যাটিবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপকহারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অন্যদিকে আই.বি.এম কোম্পানির পাশাপাশি অ্যাপল কম্পিউটার ইনকর্পোরেট (Apple Computer Inc) তাদের উদ্ভাবিত অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ (Apple-Macintosh) কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে। কিন্তু অ্যাপল কোম্পানি তাদের কমপ্যাটিবল কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে কোনোরূপ উদারতা প্রদর্শন না করায় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য থেকে যায় অত্যধিক বেশি, যার ফলে অ্যাপল তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে নি। তবে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যবহারিক সুবিধার কারণে মূলত মুদ্রণ শিল্পে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হতো।
সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং দামের দিক থেকে সস্তা হওয়ার দরুণ পিসি সহজলভ্য হয়ে ওঠে। ফলে মূলত আশির দশকের শেষভাগ থেকে বাংলাদেশে বিশেষ করে, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পিসির ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যাপক হারে বিস্তৃত ও ব্যবহূত হতে থাকে নববই-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে।
বাংলা সফটওয়্যার উদ্ভাবন কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখা সম্ভব হয় ১৯৮৭ সালে এবং এ সাফল্যের কৃতিত্ব মাইনুল ইসলাম নামক একজন প্রকৌশলির। তিনি নিজের উদ্ভাবিত বাংলা ফন্ট ‘মাইনুলিপি’ ব্যবহার করে অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন। এ ক্ষেত্রে বাংলার জন্য আলাদা কোনো কি-বোর্ড (keyboard) ব্যবহার না করে ইংরেজি কি-বোর্ড দিয়েই কাজ চালানো হয়েছিল। ইংরেজি ও বাংলার আলাদা ধরনের বর্ণক্রম এবং বাংলার যুক্তাক্ষরজনিত সমস্যা সমাধান করা হয়েছিল ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের চার স্তর কি-বোর্ড (4 layer keyboard) ব্যবহারের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। মাইনুলিপির পর পরই ‘শহীদলিপি’ ও ‘জববারলিপি’ নামে আরও দুটো বাংলা ফন্ট উদ্ভাবিত হয় এবং একই পদ্ধতিতে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহূত হয়। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে আনন্দ কম্পিউটার্স নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তৈরি হয় অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস ‘বিজয়’। এ সময়েই প্রথম বাংলা কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি হয়। প্রথম পর্যায়ের বাংলা কি-বোর্ডগুলির মধ্যে ‘বিজয়’ এবং ‘মুনীর’ উল্লেখযোগ্য। ইন্টারফেস পদ্ধতিতে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের (Operating System or OS) সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় এবং এ কি-বোর্ডকে ক্রিয়াশীল করে ও ফন্ট নির্বাচন করে কম্পিউটারে বাংলা লেখা যায়। বিজয় ইন্টারফেসটি ছিল ম্যাকিনটোশ ভিত্তিক এবং অ্যাপল-ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের মূল্য অত্যধিক হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো সীমিত, মূলত প্রকাশনার কাজেই তা ব্যবহূত হতো।
আই.বি.এম কম্পিউটারের ব্যবহারকারী আগাগোড়াই বেশি এবং এ বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করেই ১৯৯২ সালের প্রথম দিকে ‘বর্ণ’ নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলা ওয়ার্ডপ্রসেসিং সফটওয়্যার উদ্ভাবন করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দুজন ছাত্র রেজা-ই আল আমিন আব্দুল্লাহ (অংক) ও মোঃ শহীদুল ইসলাম (সোহেল)। প্রতিভাবান দু কিশোর প্রোগ্রামারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সেইফওয়ার্কস-এর পক্ষ থেকে এ স্বয়ংসম্পূর্ণ ওয়ার্ডপ্রসেসরটির উদ্ভাবন ছিল বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ওয়ার্ডপ্রসেসরটি ছিল ‘ডস’ (Disk Operating System - DOS) ভিত্তিক, কিন্তু প্রোগ্রামটির নিজস্ব আঙ্গিক ছিল উইন্ডোস (Windows)-এর মতো। বর্ণ-তে তিন ধরণের কি-বোর্ড ব্যবহার করা যেতো মুনীর, বিজয় এবং ইজি কি-বোর্ড (easy keyboard)। বর্ণ সফটওয়্যারটিতে কি-বোর্ড পুনর্গঠনের (customise) সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থাৎ, কেউ ইচ্ছা করলে নিজের পছন্দ বা সুবিধা অনুযায়ী নতুন কি-বোর্ড লে-আউট তৈরি করে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল।
পরবর্তীতে মাইক্রোসফট কর্পোরেশন ক্রমাগত উন্নত থেকে উন্নততর সংস্করণের ওয়ার্ড প্রসেসর বাজারে ছাড়তে থাকলে ১৯৯৩ সালে বাংলা ফন্ট ও বাংলা কি-বোর্ডকে আই.বি.এম কম্পিউটারের আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম ‘মাইক্রোসফট উইন্ডোস’ (Microsoft Windows)-এর সঙ্গে ব্যবহারের জন্য ইন্টারফেস ‘বিজয়’ উদ্ভাবিত হয়। এর পর ১৯৯৪ সালে ‘লেখনী’ নামেও একটি ইন্টারফেস তৈরি হয়। যদিও ‘আবহ’ (১৯৯২-এর শেষে উদ্ভাবিত) আই.বি.এম কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী প্রথম ইন্টারফেস, কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে এটি তেমন একটা ব্যবহূত হয় নি। বর্তমানে বেশকিছু বাংলা ইন্টারফেস প্রচলিত রয়েছে, যেমন: বিজয়, লেখনী, প্রশিকা-শব্দ, অনির্বাণ, বর্ণমালা, প্রবর্তনা ইত্যাদি। একাধিক ইন্টারফেসের মতো একাধিক বাংলা কি-বোর্ডও প্রচলিত রয়েছে, যেমন: মুনীর, বিজয়, ন্যাশনাল, লেখনী, প্রবর্তনা, শহীদলিপি ইত্যাদি। বাংলায় সার্বজনীন (universal) কোনো কি-বোর্ড না থাকায় এবং বিভিন্ন ইন্টারফেসগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় কোনো একটি নির্দিষ্ট ইন্টারফেস ও কি-বোর্ড ব্যবহার করে তৈরি করা ডকুমেন্ট ভিন্ন ইন্টারফেস বা কি-বোর্ড ব্যবহার করে সম্পাদনা করা যায় না। তবে সম্প্রতি কিছু কিছু ইন্টারফেসে কনভার্টার প্রোগ্রাম যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে বা আলাদাভাবে কনভার্টার প্রোগ্রাম তৈরি করা হচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনের জন্য প্রয়োজন একটি সার্বজনীন কি-বোর্ড লে-আউট এবং বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ইন্টারফেসগুলির মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়সাধন।
ইন্টারফেস ও কি-বোর্ডের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ফন্টেরও যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটেছে, তৈরি হয়েছে অতি সাধারণ থেকে কারুকার্যময় শৈল্পিক মানসম্পন্ন বিভিন্ন ফন্ট। বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রসেসর ছাড়াও অন্যান্য অনেক ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রামে বাংলা কি বোর্ড ও ফন্ট ব্যবহার করা যায়। ওয়ার্ড প্রসেসরের সঙ্গে ব্যবহারের জন্য বাংলা বানান সংশোধক (spell checker) বিভিন্ন প্রোগ্রামও তৈরি করা হয়েছে, যেমন: পন্ডিত, প্রশিকা শব্দকোষ, লেখনী ইত্যাদি। তবে কম্পিউটারে বাংলা ফন্টে নির্দিষ্ট কোনো বর্ণ নকশা (font layout) না থাকায় বাংলা বর্ণসমূহ ক্রমধারা অনুযায়ী বিন্যস্ত (sorting) করার ক্ষেত্রে এতদিন কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় নি। ২০০১ সালে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ- বাংলাপিডিয়া (Banglapedia)-এর আইটি বিশেষজ্ঞ দল এ ব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কম্পিউটারে বাংলা বর্ণমালা ক্রমবিন্যাসে (sorting) সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারের প্রভাবে ঢাকার অফিস ও প্রকাশনা শিল্পে দ্রুত কম্পিউটারের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য সফটওয়্যার তৈরি ও উন্নয়ন এবং ১৯৯৭ সাল থেকে রপ্তানিযোগ্য মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়।
ইন্টারনেট ও ই-মেইলের ব্যবহার ১৯৯০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ অনেক পরে এ মহাযাত্রায় যোগ দেয়। ১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইল (offline e-mail)-এর মাধ্যমে প্রথম এদেশে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট (Very Small Aperture Terminal - VSAT) স্থাপন করা হয় এবং আই.এস.এন নামক একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আই.এস.পি (Internet Service Provider - ISP)-এর মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তৃতি ঘটতে শুরু করে। দেশে বর্তমানে ৫০-এর অধিক আই.এস.পি রয়েছে। আই.এস.পি গুলির মধ্যে কেবলমাত্র বি.টি.টি.বি (Bangladesh Telegraph and Telephone Board - BTTB)-ই সরকারি মালিকানাধীন। দেশের অধিকাংশ আই.এস.পি মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। তবে বর্তমানে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী এবং বগুড়া শহরেও অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা চালু রয়েছে। অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা ও বিনোদনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। অনলাইন ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচিতিমূলক ওয়েবপেজ (WebPages) তৈরি করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ওয়েবপেজটির ঠিকানা হলো: www.bangladesh.gov.bd যেখানে দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিমূলক বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। বাংলাপিডিয়ার ওয়েবপেজটির ঠিকানা হলো: www.banglapedia.org।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ই-মেইল বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে কম খরচের দ্রুততম ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু হওয়ার পর ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষা, দাপ্তরিক, বাণিজ্যিক সকল ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। দ্রুততম ডাক ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দেশের বেশ কিছু পোষ্ট অফিসে ই-পোষ্ট বা ইলেকট্রনিক পোষ্ট-এর ব্যবস্থা করেছে। এ ডাক ব্যবস্থায় সংবাদ আদান-প্রদান করা হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ঢাকা শহরে বর্তমানে যথেষ্ট সংখ্যক সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখান থেকে ওয়েব ব্রাউজিংসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সুবিধাও ভোগ করা যায়।
নববই দশকের শুরু থেকেই দেশের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ল্যান (Local Area Network - LAN) স্থাপন করতে শুরু করে। এর মধ্যে শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার-এর (Optical Fibre) সাহায্যে উন্নতমানের ল্যান কাঠামো স্থাপন করেছে। ১৯৯৭ সালে বারনেট (BURNET) নামক একটি ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং ১৯৯৯ সাল নাগাদ রেডিও লিংকের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে এ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এখনও সরাসরি এ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব হয় নি, তবে ডায়াল-আপের মাধ্যমে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। অন্য একটি ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ‘ব্যান্সলিংক’ (BANSLINK) দিয়ে দেশের বড় বড় গ্রন্থাগারগুলিকে সংযুক্ত করার সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামকে সরাসরি সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যুক্ত করতে বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে একটি উচ্চ-ক্ষমতার (high bandwidth) অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত তথ্যপ্রযুক্তির সুপার হাইওয়ের (Global Information Super Highway) সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধিত হবে। এ ক্যাবল সংযোগ স্থাপনের ফলে ইন্টারনেট ব্রাউজিং-এর গতি অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে ও ব্যয় হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলগুলির মূল্যও হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।
কম্পিউটার যন্ত্রাংশ সংযোজন বাংলাদেশ নিজে কোনো ধরনের কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়। এ ছাড়া জাপান, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও কিছু কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। দেশে কম্পিউটারের মোট চাহিদার অধিকাংশই দেশি বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে সংযোজিত হয়। অত্যন্ত সীমিত আকারে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ড কম্পিউটার (Brand computer) সংযোজিত অবস্থায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশে কম্পিউটার ব্যবহার ও এর প্রসারকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে শুল্কমুক্ত করেছে। ফলশ্রুতিতে দেশে কম্পিউটারের মূল্য যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি এর ব্যবহারও অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কম্পিউটারের ব্যবহার বর্তমানে বাংলাদেশে গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, সামরিক স্থাপনা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটার ব্যবহূত হচ্ছে। সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বৃহত্তম কম্পিউটার ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান। পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের বিভিন্ন শুমারী থেকে সংগৃহীত উপাত্তসমূহ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিশ্লেষণসহ উপাত্তভিত্তি বা ডাটাবেস (database) তৈরির সকল পর্যায়ে বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করছে।
ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে, বেসরকারি ব্যাংকসমূহের ডাটাবেস পরিচালনা এবং বিভিন্ন সেবা প্রদান বর্তমানে কম্পিউটারভিত্তিক হয়ে পড়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলিতেও ধীরে ধীরে কম্পিউটারায়ন ঘটছে। বাংলাদেশে কম্পিউটারভিত্তিক অর্থনৈতিক লেনদেন প্রবর্তনে বিদেশি ব্যাংকসমূহ পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই আন্তশাখা, আন্তব্যাংক এবং এমনকি আন্তমহাদেশীয় ব্যাংকসমূহের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এসকল ব্যাংক গ্রাহকদের উন্নততর সেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক আজকাল এ পথ অনুসরণ করছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিছুসংখ্যক দেশি ও বিদেশি ব্যাংক একক বা সম্মিলিতভাবে পরিচালনা করছে এ.টি.এম (Automatic Teller Machine - ATM) নেটওয়ার্ক। দেশের প্রধান প্রধান শহরে এ.টি.এম কার্ড ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ১৯৯৯ সাল থেকে দেশের সর্বত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড (Credit Card)। বর্তমানে কম্পিউটারভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের এ নিরাপদ ও সহজসাধ্য ব্যবস্থা ক্রেডিট কার্ড সার্ভিসটি ভিসা (VISA), মাস্টার কার্ড (MasterCard) ও বণিক (VANIK) নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। অতি সম্প্রতি কয়েকটি বিদেশি ব্যাংক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সার্ভিস (Electronic Fund Transfer Service) চালু করেছে। মাইক্রোচিপস স্থাপিত স্মার্ট কার্ডও ধীরে ধীরে দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে, বিশেষ করে, বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধে এ কার্ড ব্যবস্থা খুবই উপযোগী বলে বিবেচিত।
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর অধিদপ্তর ও সংস্থাসমূহ, যেমন: স্পারসো (Space Research and Remote Sensing Organisation- SPARRSO), বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (Bangladesh Meteorological Department), বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর (Survey of Bangladesh), পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (Water Resources Planning Organisation - WARPO), বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (Geological Survey of Bangladesh) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান তাদের ডাটাবেস তৈরি এবং মানচিত্র প্রণয়নের কাজ কম্পিউটারের মাধ্যমেই সম্পন্ন করছে। বিশেষ করে, জিআইএস (Geographical Information Systems) সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে নানা ধরনের দক্ষতাপূর্ণ মানচিত্র কম সময়ের মধ্যেই প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত আবহাওয়া উপাত্তসমূহ কম্পিউটারের সাহায্যে বিশ্লেষণ ও মানচিত্র প্রণয়ন করে দ্রুত ও অধিকতর নির্ভুল আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে, যার ফলে মানুষ দুর্যোগকালীন সময়ে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে পারছে এবং এতে ক্ষয়ক্ষতিও অনেকাংশে কম হচ্ছে। তাছাড়া কম্পিউটার মডেলিং (Computer Modelling)-এর মাধ্যমে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কিত বিশ্লেষণও সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কম্পিউটারের সাহায্যে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে ডাটাবেস অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে এবং একসময় এসকল সফটওয়্যার বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশি বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসকল কাস্টমাইজড সফটওয়্যার তৈরি করানো হচ্ছে।
দেশের বৃহদাকৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের কারখানা ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা বর্তমানে অনেকাংশে কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর। বিশেষ করে, যে সকল শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ (উদাহরণস্বরূপ, ঔষধ শিল্প) সে সকল কারখানায় কম্পিউটারের সাহায্যেই পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
কম্পিউটারভিত্তিক সংগঠন সরকারি প্রয়োজনে কম্পিউটার ক্রয়ের জন্য ১৯৮৩ সালে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয় এবং ১৯৮৮-তে এ কমিটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জাতীয় কম্পিউটার বোর্ড’। ১৯৮৯ সালে এ বোর্ডকে পুনর্গঠন করে ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল’ (বি.সি.সি) নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। বি.সি.সি বর্তমানে কম্পিউটার বিষয়ক সরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।
কম্পিউটার চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি পেশাভিত্তিক সংগঠন। এগুলির মধ্যে অগ্রপথিক হচ্ছে ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি’। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সোসাইটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা চার হাজারের ঊর্ধ্বে। ১৯৯২ সালে কম্পিউটার ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ (বি.সি.এস)। সমিতির উদ্যোগে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের সুবিধার্থে ১৯৯৭ সালে ঢাকার আগারগাঁওস্থ আই.ডি.বি ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বি.সি.এস কম্পিউটার সিটি নামে বিশাল কম্পিউটার বিপণীকেন্দ্র। এ কম্পিউটার সিটিতে প্রতিবছর বি.সি.এস কম্পিউটার মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ সমিতি ঢাকা ছাড়াও দেশের প্রধান প্রধান মহানগরীতে নিয়মিত কম্পিউটার মেলার আয়োজন করে থাকে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার ইন্ডাসট্রিজ অ্যান্ড সার্ভিসেসসহ আরও কয়েকটি কম্পিউটার পেশাভিত্তিক সংগঠন।
কম্পিউটার শিক্ষা বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কম্পিউটার শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯২ সালের ১লা সেপ্টেম্বর। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চারটি বি.আই.টি (Bangladesh Institute of Technology)-তে কম্পিউটার শিক্ষার জন্য বিভাগ চালু হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশ কয়েকটি কলেজে স্নাতক সম্মান পর্যায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান কোর্স চালু করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৯১ সাল থেকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৯৪ সাল থেকে কম্পিউটার শিক্ষাকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নববই এর দশকের মধ্যভাগ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কম্পিউটার সাক্ষরতা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে দেশিয় অনেক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
কম্পিউটার চর্চাকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে দেশের কম্পিউটার বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন কম্পিউটার জগৎ। বর্তমানে আরও অনেক কম্পিউটার বিষয়ক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এ পত্রিকাগুলির কিছু কিছু আবার কাগজে ছাপানো সংস্করণের পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া (Multimedia) বা সিডি (Compact Disk) সংস্করণও প্রকাশ করে থাকে।
সরকারি উদ্যোগে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও ঢাকার মহাখালীতে ‘কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি পল্লী’ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে যা সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও চর্চা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। [মাসুদ হাসান চৌধুরী এবং মোঃ মাহবুব মোর্শেদ]