গ্র্যান্ট, জেমস
গ্র্যান্ট, জেমস ভূমি অধিকার এবং রাজস্ব ব্যবস্থা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য বাংলার ইতিহাসে পরিচিত। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক দীউয়ানি লাভের অব্যবহিত পূর্বে তিনি উক্ত গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেন। জেমস গ্র্যান্ট ইংরেজ কর্মচারী বা বণিক রূপে বাংলায় আসেন নি, নিজের ভাগ্যান্বেষণের অভিযান হিসেবেই বাংলায় তার আগমন। ১৭৮৪ থেকে ১৭৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলায় অবস্থান করেন। তার গবেষণাকর্ম থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ফারসি ভাষায় বেশ দক্ষ ছিলেন এবং মুগল রাজস্ব হিসাব পদ্ধতি সম্পর্কে পারদর্শিতা অর্জন করেন। সে সময় ফোর্ট উইলিয়ম কর্তৃপক্ষ একটি স্থায়ী রাজস্ব বন্দোবস্ত প্রবর্তনের জন্য দেশের প্রকৃত রাজস্ব সম্পদ বিষয়ে এক শ্রমসাধ্য অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছিল। মাদ্রাজ সরকারকে অনুরূপ অনুসন্ধানী জরিপ কাজে সহায়তা করার জন্য ১৭৮৬ সালে জেমস গ্র্যান্টকে রাজস্ব বোর্ড-এর অধীনে প্রধান সেরেস্তাদার বা প্রধান রাজস্ব হিসাবরক্ষক পদে নিযুক্ত করা হয়। প্রাপ্ত ফারসি দলিলপত্রের ভিত্তিতে জেমস গ্র্যান্ট An Inquiry into the Nature of Zamindary Tenures in the Landed Property of Bengal,1791 (বাংলার ভূমিমালিকানায় জমিদারি ভোগদখলের প্রকৃতি অনুসন্ধান, ১৭৯১) শীর্ষক একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। এ প্রবন্ধে তিনি যুক্তি প্রদর্শনপূর্বক উল্লেখ করেন যে, ভূমি রাজস্বের চাহিদা এবং সংগ্রহ সংক্রান্ত দীউয়ানি-পূর্ব হিসাব অনুসারে রাজস্ব চাহিদা আরও বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। তার মতে, রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে জমিদারগণ জমিদারি/তালুক-এর রাজস্ব সম্পদের হিসাব সুকৌশলে গোপন রাখতে পারতেন।
রাজস্ব বোর্ডের সভাপতি ও প্রসিদ্ধ রাজস্ব বিশেষজ্ঞ জন শোর গ্রান্টের এ যুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানান। শোর-এর মতে প্রজারা ইতপূর্বেই অতিরিক্ত খাজনার ভারে জর্জরিত, তদুপরি রাজস্বের হার বাড়লে তা কেবল বিপর্যয়ই সৃষ্টি করত। অবশ্য উপনিবেশের দশম বর্ষ শেষে সরকার রাজস্ব হার সর্বত্র একই সঙ্গে বৃদ্ধি করেনি। শুধু প্রয়োজনবোধে উপযুক্ত ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে জমিদারদের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বার্ষিক বর্ধিত রাজস্ব ধার্য করা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-এর পূর্ব পর্যন্ত কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব চাহিদা এবং সংগ্রহের প্রমাণ স্বরূপ জেমস গ্রান্টের এ অনুসন্ধান সম্পর্কিত তথ্য ফিফ্থ রিপোর্ট-এ (১৮১২) লেখকগণ উল্লেখ করেন। [সিরাজুল ইসলাম]