তান্ডা

তান্ডা  ষোল শতকের একটি বিখ্যাত শহর। স্থানীয়ভাবে শহরটি তাঁড়া নামেও পরিচিত। এটি কররানী রাজবংশের রাজধানী ছিল। বর্তমান মালদা শহর থেকে ২৪.১৪ কিমি দক্ষিণপূর্বে ও তেলিয়াগড়ি গিরিপথ থেকে ১৯.৩১ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত। গঙ্গার পশ্চিম তীরে এবং বিখ্যাত গৌড়ের (লখনৌতি) প্রায় বিপরীতে ছিল এর অবস্থান। সে সময়ে গঙ্গা যেখানে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছিল ঠিক সেখানেই এটি অবস্থিত ছিল।তান্ডার অর্থ হলো উঁচু ভূমি। মুদ্রাতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দেশেরশাহ-এর শাসনামলে তান্ডা টাকশাল হিসেবে গড়ে উঠে। সুলায়মান কররানী (১৫৬৩-১৫৭২) তাঁর ভাই তাজ খান কররানীর মৃত্যুর পর বাংলা ও বিহারের সুলতান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি গৌড় থেকে রাজধানী তান্ডায় স্থানান্তরিত করেন। তাঁর বংশধর বায়েজীদ কররানীদাউদ খান কররানী-র আমলেও তান্ডা বাংলার রাজধানী ছিল। সে সময়ে শহরটি খাবাসপুর তান্ডা হিসেবেও পরিচিত ছিল। কররানী শাসনামলে তান্ডা টাকশাল শহর হিসেবে অস্তিত্ব বজায় রাখে এবং তা বহাল থাকে ৯৮৪ হিজরি / ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তবে মুগল সেনাপতি খান-ই-খানান মুনিম খান গৌড়েই তার প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে তিনি তাঁর হাজার সৈন্যসহ নিজে মহামারীতে আক্রান্ত হলে ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুগল কেন্দ্র তান্ডায় সরিয়ে নেয়া হয়। তবে শহরটি বেশি দিন আর তার আগের মর্যাদা ধরে রাখতে পারে নি। মানসিংহ রাজমহল-এ রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীকালে রাজমহলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ’আকবরনগর’। রালফ ফিচ-এর গ্রন্থ থেকে (১৫৮৬ খ্রি.) জানা যায় যে, তান্ডা একটি বড় উন্নয়নশীল শহর ছিল, কিন্তু গঙ্গার গতি পরিবর্তনের সাথে সাথে এর পতন শুরু হয়। ১৮২৬ সালের দিকে শহরটি বন্যায় ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের ১.৬ কিমি দূরে এটিকে একটি বালির ঢিবি হিসেবে দেখা যায়।  [মোঃ আখতারুজ্জামান]