আগ্নেয়ভস্ম

আগ্নেয়ভস্ম (Volcanic Ash)  আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গত সূক্ষ্ম (২ মিমি ব্যাসার্ধের কম) শিলাচূর্ণ ও লাভা নিয়ে গঠিত অসংহত পাইরোক্লাস্টিক পদার্থ। বহুকাল পূর্ব থেকেই আগ্নেয়গিরিকে একটি জ্বলন্ত পর্বত বলে মনে করা হতো বিধায় ভুলবশত আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত পদার্থসমূহকে আগ্নেয়ভস্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে আসছে। বাংলাদেশে  রাজশাহী জেলার কুমারপুর,  বগুড়া জেলার আলিয়ারহাট নদীসংলগ্ন এলাকা,  গাজীপুর জেলার নবীন মধুপুর কর্দম (Upper Madhupur Clay),  কুমিল্লা জেলার লালমাই ঊর্ধ্বভঙ্গের পশ্চিমাংশ, হবিগঞ্জ ভূগঠনের শাহবাজপুর এলাকা এবং  নওগাঁ জেলার  নিয়ামতপুর উপজেলায় কোয়ার্টারনারী সময়ের আগ্নেয়ভস্মের সঞ্চয়ন পাওয়া গিয়েছে।

আগ্নেয়ভস্মের স্তর শ্বেত, ঈষৎ বাদামি হলদেটে ও হলুদাভ বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। এ ভস্ম সামান্য থেকে পরিমিত পরিমাণে সংহত, পানিতে বুদবুদ নির্গত করে,  পলল থেকে বালুকা পলল সমৃদ্ধ এবং হাতের চাপে সহজেই চূর্ণ হয়ে যায়। আগ্নেয়ভস্ম অনেকটা চীনামাটি সদৃশ। রাজশাহী ও বগুড়া এলাকায় আগ্নেয়ভস্ম সামান্য পরিমাণে বিচূর্ণিত ২০ থেকে ৩০ সেমি পলিস্তর দ্বারা আবৃত। নওগাঁ জেলায় বরেন্দ্র কর্দমের প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার গভীরতায় এ ভস্ম পাওয়া যায়। আগ্নেয়ভস্মের  মণিক গঠন অত্যন্ত জটিল। এটি কোয়ার্টজ,  ফেল্ডস্পার, কেলসাইট, বায়োটাইট, রুটাইল,  জিরকন, এপিডোট, স্মেকটাইট, ইলাইট, কেওলিনাইট এবং সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ওপাল-সি.টি (Opal-CT) ইত্যাদি মণিকের সমন্বয়ে গঠিত। এমোরফাস ওপাল-এ থেকে ওপাল-সি.টি উৎপন্ন হতে পারে যা সাধারণত আগ্নেয় উৎস থেকে গঠিত ও অধঃক্ষেপিত হয়ে থাকে। আগ্নেয়ভস্মে সিলিকার শতকরা পরিমাণ ৮৪ থেকে ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় আজ থেকে ৭৫ হাজার বছর পূর্বে তোবা আগ্নেয়গিরি থেকে সংঘটিত অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নিক্ষিপ্ত ভস্ম ভারতের পূর্বাংশে এবং বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয়ভস্মের স্তর গঠন করেছে। বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এখানেও আগ্নেয়ভস্মের স্তর গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। বিভিন্ন স্থানে আগ্নেয়ভস্মের স্তরসমূহ এতদঞ্চলে কোয়ার্টারনারি পলল সম্পর্কযুক্ত সমূহকে করতে এবং কোয়ার্টারনারি স্তরায়নকে প্রতিষ্ঠিত করতে মার্কার হরাইজন হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।

[সিফাতুল কাদের চৌধুরী]