নিয়ামতপুর উপজেলা

নিয়ামতপুর উপজেলা (নওগাঁ জেলা)  আয়তন: ৪৪৯.০৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪১´ থেকে ২৪°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৩´ থেকে ৮৮°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পোরশা উপজেলা, দক্ষিণে তানোর ও নাচোল উপজেলা, পূর্বে মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলা, পশ্চিমে গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪৮৩৫১; পুরুষ ১২২৫৭৮, মহিলা ১২৫৭৭৩। মুসলিম ১৯৩০৮১, হিন্দু ৪৫৬৩৬, বৌদ্ধ ৪, খ্রিস্টান ৩৬৪৬ এবং অন্যান্য ৫৯৮৪। এ উপজেলায়  সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: শিব।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৩২১ ৩৪৪ ৫৯৫৩ ২৪২৩৯৮ ৫৫৩ ৬৯.৫ ৪৪.১
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.০১ ৫৯৫৩ ১৯৭৮ ৬৯.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
চন্দননগর ৩১ ১২৮১৭ ১২৮০৫ ১৩০৮৯ ৪৪.৬
নিয়ামতপুর ৫২ ১০৯৬৭ ১৩৯৮৭ ১৪৩২৬ ৪৭.৮
পারইল ৬৩ ১৪৩৬৬ ১৫১২৩ ১৬০২৯ ৪৪.৩
বাহাদুরপুর ১০ ১৩৯৪৮ ১৭১৪৮ ১৭৫২২ ৪৩.৯
ভাবিচা ২১ ১৩০৮৯ ১৫৮১০ ১৬২৯৭ ৪৩.১
রসুলপুর ৭৩ ১৮৬৭৮ ১৯১৪৭ ১৯০৮৫ ৪০.৯
শ্রীমন্তপুর ৮৪ ১১৮১৪ ১৪৫১৮ ১৫০১০ ৪৮.১
হাজীনগর ৪২ ১৫৩০৩ ১৪০৪০ ১৪৪১৫ ৪৬.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কালাপাহাড়ের ভিটে (নিয়ামতপুর), মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদ (ধরমপুর গ্রাম)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকবাহিনী এ উপজেলার ভাবিচা ও নিয়ামতপুর গ্রামে অতর্কিতে আক্রমণ করে বেশসংখ্যক নিরীহ গ্রামবাসিকে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার দেওয়ান আজিজার রহমান ও এমএনএ ছালেক চৌধুরীসহ মোট ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ামতপুর থানা আক্রমণ করলে ৬ জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করে।

বিস্তারিত দেখুন নিয়ামতপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৭৫, মন্দির ২৬, গির্জা ৪।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.৭%; পুরুষ ৪৬.৫%, মহিলা ৪২.৯%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৮, কেজি স্কুল ১, এনজিও স্কুল ৮, মাদ্রাসা ৪৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বলাতৌড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), নিয়ামতপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮০), বামইন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), নিয়ামতপুর হাইস্কুল (১৯৪৮), শালবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৮), কাপাসটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬১), আমইল এ এস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), বুদুরিয়া ডাংগাপাড়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৪০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  প্রতিবাদ (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ২৯, খেলার মাঠ ৯০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮৬.২৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪২%, শিল্প ০.২৩%, ব্যবসা ৫.০৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৫০%, চাকরি ২.১৬%, নির্মাণ ০.১৩%, ধর্মীয় সেবা ০.০৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৮% এবং    অন্যান্য ৩.০৪%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, শাকসবজি।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.২৮%, ভূমিহীন ৪৪.৭২%। শহরে ৫৪.০৫% এবং গ্রামে ৪৫.৯৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, অড়হর, তিসি, তিল, ছোলা, মসুরি।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, পেঁপে, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৮, গবাদিপশু ১৮, হাঁস-মুরগি ১৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮৫.৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৩০.১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০৩.৯৬ কিমি। কালভার্ট ৫১৬, ব্রিজ ৬৫।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, চালকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূঁচিশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৯, মেলা ১। নিয়ামতপুর হাট, খড়িবাড়ী হাট, বটতলী হাট, গাবতলী হাট, শাংসোল হাট এবং প্রেমগোসাই মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য সরু চাল, ধান।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৪.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৭%, ট্যাপ ৭.৭% এবং অন্যান্য ২.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ৩৪.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪১.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ৭, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৯।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [মো. মোন্তাজুর রহমান]

তথ্যসুত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নিয়ামতপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।