অভয়নগর উপজেলা

অভয়নগর উপজেলা (যশোর জেলা)  আয়তন: ২৪৭.২১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৫´ থেকে ২৩°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ ৮৯°১৮´ থেকে ৮৯°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে যশোর সদর এবং নড়াইল সদর উপজেলা, দক্ষিণে খানজাহান আলী থানা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়াফুলতলা উপজেলা, পূর্বে নড়াইল সদরকালিয়া উপজেলা, পশ্চিমে যশোর সদর ও মনিরামপুর উপজেলা। প্রশাসনিকভাবে এ অঞ্চলটি অভয়নগর নামে পরিচিতি লাভ করলেও স্থানীয়ভাবে এটি নওয়াপাড়া নামেই সমধিক পরিচিত।

জনসংখ্যা ২৬২৪৩৪; পুরুষ ১৩১৮৪৬, মহিলা ১৩০৫৮৮। মুসলমান ২১১৬৪৬, হিন্দু ৪৯০৮২, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ২৭০ এবং অন্যান্য ১৪৩১।

জলাশয় প্রধান নদী: ভৈরব, চিত্রা এবং সিংড়া বিল, বিল ডাকাতিয়া, কুড়াখালী বিল ও মাজুল খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন অভয়নগর থানা গঠিত হয় ১৮৭৫ সালের ১৬ মার্চ। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালের ১ আগষ্ট। নওয়াপাড়া পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৬ অক্টোবর।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১ (নওয়াপাড়া) ৭৭ ১০৬ ৮৫৮৫৬ ১৭৬৫৭৮ ১০৬২ ৬৩.৭ ৫৭.৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৫.১১ ২১ ৮৫৮৫৬ ৩৪১৯ ৬৩.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চলিশিয়া ৫২ ৬৪২১ ৯৪৯৯ ৯৪৬২ ৫২.৩
পায়রা ৪২ ৬১৯৪ ৯২৯৮ ৯৩০৫ ৫৮.১
প্রেমবাগ ২১ ৬১৫৩ ১১২০৩ ১১১২০ ৬৪.১
বাঘুটিয়া ১০ ৫৬৭৯ ১০৯৭৭ ১১০২৬ ৫০.৪
শুভপাড়া ৮৪ ৮৫১৭ ১২১০৫ ১২০৫১ ৫৯.১
শ্রীধরপুর ৭৩ ৮৫১৬ ১৫৮০৩ ১৫৯৫৪ ৬১.১
সিদ্ধিপাশা ৬৩ ৭৯১৩ ১৩৩৪৫ ১৩১২২ ৫৬.৯
সুন্দলী ২৭ ৫৪৯০ ৬২১১ ৬০৯৭ ৫৮.২

সূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খানজাহান আলী জামে মসজিদ (শুভপাড়া), নওয়াপাড়া কালী মন্দির, সিদ্ধিপাশার রাজবাড়ি, দিঘি ও মন্দির, ১১ দুয়ারী মন্দির, মধ্যপুর নীলকুঠি, শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি, খানজাহান আলী দিঘি (বাসুয়াড়ী), রূপসনাতন ধাম (রামসরা)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকসেনাদের গুলিতে নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের অফিস কক্ষে রেলওয়ের কয়েকজন স্টাফ শহীদ হন। তাছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনাদের হামলায় নওয়াপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক নজিবর রহমানসহ আরও সতেরো জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন অভয়নগর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২৭, মন্দির ৬৬, গির্জা ২, মাযার ৩, তীর্থস্থান ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.৮%; পুরুষ ৬২.৯%, মহিলা ৫৬.৭%। কলেজ ১০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৭, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৭, কমিউনিটি স্কুল ৩, এনজিও স্কুল ১৫, মাদ্রাসা ৩৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নওয়াপাড়া কলেজ (১৯৬৪), পিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), রাজঘাট-জাফরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), মশিয়াহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), নওয়াপাড়া-শঙ্করপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৩), নওয়াপাড়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬২), নওয়াপাড়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক মুকুল, সাপ্তাহিক মুক্তি। শিল্প সংস্কৃতি চর্চায় নওয়াপড়া জামানিয়া আর্ট প্রেস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ প্রেস থেকেই কবি নাসিরুদ্দিন আহমদ-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় নওয়াপাড়ার প্রথম মাসিক পত্রিকা মুকুল।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ২২, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ৩, নাট্যদল ৭, খেলার মাঠ ৩২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৪.৩৮%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৭৬%, শিল্প ২.৩৯%, ব্যবসা ১৫.২৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.২৭%, চাকরি ১৮.১৮%, নির্মাণ ১.৬৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৩% এবং অন্যান্য ৭.৪১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৯২%, ভূমিহীন ৪১.০৮%। শহরে ৪১.৭৮% এবং গ্রামে ৬৭.১৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, শাকসবজি, সুপারি, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, আলু, পাট।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, অড়হর, যব, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে, তরমুজ, নারকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ১১৩ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১০৬ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৪৮৮ কিমি; রেলপথ ১৩ কিমি, নৌপথ ২৫ কিমি। নওয়াপাড়ার নদীবন্দর উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে এ নদীবন্দর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০টি ছোট-বড় বার্জ পণ্য আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পাটকল, বস্ত্রকল, চামড়া ফ্যাক্টরি, লবণ কারখানা, চালকল, বরফকল, পেপারমিল ও সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য শিল্প কলকারখানা: বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস, রাজ টেক্সটাইল মিলস, জে, জে আই জুট মিলস, নওয়াপড়া জুট মিলস, পূর্বাচল জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এনায়েত পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহাশিল্প, তাঁতশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৬। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার: নওয়াপাড়া, চেঙ্গুটিয়া, ভাঙ্গাগেট, চাকই, পায়রা, ভাটপাড়া, হরিশপুর, নাউলী, সিদ্ধিপাশা, আমতলা, আড়পাড়া, সুন্দলী, গোবিন্দপুর, প্রেমবাগ, মাগুরা এবং ধোপাদী নতুন বাজার হাট।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  নারিকেল, কলা, পাট, খেজুর গুড়, তরমুজ, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৫.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.২%, ট্যাপ ১.১%, এবং অন্যান্য ০.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৪.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪।

এনজিও গণসাহায্য সংস্থা, পল্লী উন্নয়ন সংস্থা, আশার আলো সংস্থা, ব্র্যাক, আরআরসি, কেয়ার। [সাইফুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ ব্যুরো; অভয়নগর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।