যশোর সদর উপজেলা

যশোর সদর উপজেলা (যশোর জেলা)  আয়তন: ৪৩৫.২২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৪´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৬´ থেকে ৮৪°০৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ও বাঘারপাড়া উপজেলা, দক্ষিণে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলা, পূর্বে বাঘারপাড়া ও নড়াইল সদর উপজেলা, পশ্চিমে চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৭৪২৮৯৮; পুরুষ ৩৮০৩১৪, মহিলা ৩৬২৫৮৪। মুসলিম ৬৭৪০৫৯, হিন্দু ৬৬৪৯০, বৌদ্ধ ৯৪, খ্রিস্টান ১৯৫৮ এবং অন্যান্য ২৯৭।

জলাশয় প্রধান নদী: ভৈরব ও চিত্রা; লাউখালি বিল, পদ্মা বিল, ও মধ্য বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন যশোর সদর উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ২৩৭ ২৫৬ ২৫৩০১৯ ৪৮৯৮৭৯ ১৭০৭ ৭০.২৩ (২০০১) ৫৭.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.৭২ (২০০১) ৭৩ ২১৭৩৩৭ ১২০০১ (২০০১) ৭৭.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.১৪ (২০০১) ৩৫৬৮২ ৭৪৩০ (২০০১) ৭০.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আরবপুর ১০ ৫৯৩২ ২০৭৯৮ ২০৫৬৩ ৬১.৪
ইছালী ৫৩ ৭৭৫৬ ১১৩৬২ ১১৪৪৩ ৫৭.৫
উপশহর ৯৫ ১৩৬৯ ৮৪২৬ ৮১২০ ৮০.৭
কচুয়া ৭১ ৬১৪৭ ১১৪৪৯ ১১২৪৩ ৪৭.৬
কাশিমপুর ৬৫ ৭৫৪০ ১৯৫১২ ১৮৯৬০ ৫৬.৫
চাঁচড়া ২৩ ৬৫৭৭ ২২৪১৬ ২১৮১৬ ৫৩.৫
চূড়ামনকাঠি ২৯ ৮০৪৫ ২০২২৪ ১৯৯১৫ ৫৫.৩
দিয়াড়া ৩৫ ৮২৮৭ ১৮২১৭ ১৮৫৭২ ৫৩.৫
নওয়াপাড়া ৮৯ ৫৯০৩ ২৮৯৫২ ১৬৯২৬ ৬১.০
নরেন্দ্রপুর ৮৩ ৬১৪৫ ১৬২৩২ ১৬০২১ ৫৯.৩
ফতেহপুর ৪১ ৭২১৪ ২৩৯২৯ ২৩৬২১ ৫৯.৫
বসুন্দিয়া ১১ ৭৬৮৬ ১৭৮৪০ ১৭৪৫২ ৫৭.০
যশোর ক্যান্টনমেন্ট ৯৮ - ১০৮৮১ ৪৬৬০ ৯৫.৭
রামনগর ৯২ ৭১৮৫ ১৯৫০৭ ১৯৩০৩ ৬১.৭
লেবুতলা ৭৭ ৫৫০৯ ১০৬৪৪ ১০৬৩০ ৫৫.১
হৈবতপুর ৪৭ ৯২৯১ ১৬১৭২ ১৬২৮৯ ৫৩.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শেখহাটিতে লক্ষণসেন প্রতিষ্ঠিত দেবী ভূবনেশ্বরী মন্দির, পাতালভেদীর রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীন কালীমন্দির (ধ্বংসাবশেষ), মুড়লীতে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন নির্মিত ইমাম বাড়ি, হযরত গরীব শাহের (র:) মাযার উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পাকসেনাদের হাতে বন্দী হন এবং পরে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২৯ মার্চ ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন ও লে. আনোয়ার এর নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাসের বাঙালি সৈনিকরা বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসার সময় সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ সৈন্য শহীদ হন। ৩০ মার্চ চাঁচড়া মোড়ে মুক্তিযোদ্ধারা ৫০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। ৫ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ২টি স্মৃতি ভাস্কর্য এবং ১টি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংগ্রহশালা রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন যশোর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭১৩, মন্দির ৫০, গির্জা ৬, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মার্কাজ মসজিদ (নিউমার্কেট), ফতেপুর জামে মসজিদ, লেবুতলা মসজিদ,হযরত গরীব শাহের (র.) মাযার, মাড়ুয়া মন্দির, রামকৃষ্ণ আশ্রম মন্দির, কালীবাড়ি মন্দির, ক্যাথলিক গির্জা।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৩.৮%; পুরুষ ৬৬.৮%, মহিলা ৬০.৬%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ১, আইন কলেজ ১, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, কলেজ ২০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৩৩, কিন্ডার গার্টেন ১২, মাদ্রাসা ৪৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ (১৯৪১), যশোর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৫), সরকারি সিটি কলেজ (১৯৬৭), সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন (১৮৮৯), মুন্সী মেহেরুল্লাহ একাডেমী (১৯০১), মুসলিম একাডেমী (১৯৪৬), যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (১৯৬৩), যশোর জেলা স্কুল (১৮৩৮), জঙ্গল বাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৯), বসুন্ধিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৯), শাহবাজপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), মধুসূদন তারাপ্রসন্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯৩২), হাশিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪১), খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৩), যশোর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬২), আমিনিয়া আলীয়া মাদ্রাসা (১৯৫২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক রানার, লোক সমাজ, দেশ হিতৈশী, পূরবী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, ক্লাব ৩৭, সিনেমা হল ৬, খেলার মাঠ ৯২, নাট্যদল ৫, মঞ্চ ৪, মহিলা সংগঠন ১২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৫.০৯%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৭৩%, শিল্প ২.১৪%, ব্যবসা ২১.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.২৩%, চাকরি ১৭.৩১%, নির্মাণ ২.৫৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৪% এবং অন্যান্য ৯.৭৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৯.৬৮%, ভূমিহীন ৫০.৩২%। শহরে ৩৬.১৪% এবং গ্রামে ৫৫.৯১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, গম, তুলা, সরিষা, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তামাক, বালাম ধান, চন্দ্রাহার ধান, ভুরো ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, নারিকেল, কলা, সফেদা, খেজুর।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫১, গবাদিপশু ১৬, হাঁস-মুরগি ১৮০, হ্যাচারি ১০০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৯৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৬০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮০৬ কিমি; রেলপথ ৫৫ কিমি। রেলষ্টেশন ১, বিমান বন্দর ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, তেলকল, বিস্কুট কারখানা, সাবান কারখানা, চিরুনি কারখানা, বিড়ি কারখানা, লেদার মিল, ষ্টীলমিল, প্লাস্টিকমিল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫৬। হাশিমপুর বাজার, রাজার হাট, পুলের হাট, লেবুতলা হাট, শাহবাজপুর বাজার, মনোহরপুর বাজার, চূড়ামনকাঠি বাজার ও উপশহর গরু-ছাগলের হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  খেজুরের গুড়, চামড়া, তুলা, কাঁঠাল, কলা, চিরুনী, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৫.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮%, ট্যাপ ২.৪% এবং অন্যান্য ১.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৩.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, সরকারি টি বি হাসপাতাল ১, শিশু ও মাতৃকল্যাণ কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ১৫, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ৭, চক্ষু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, জাগরনী চক্র, সমাজ কল্যান সংস্থা।  [ফিরোজ আনসারী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; যশোর সদর উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।