বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি বাঙালি মুসলমানদের একটি সাহিত্য সংগঠন। কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের (১৮৯৩) অনুপ্রেরণায় কয়েকজন উদীয়মান মুসলিম লেখক ১৯১১ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক প্রমুখ। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সমিতির সম্পাদক মনোনীত হন। একটি পরিচালক পরিষদ দ্বারা সমিতি পরিচালিত হতো।
১৯১৭-১৮ সালে পরিচালক পরিষদের সভাপতি পদে ছিলেন আবদুল করিম, সহসভাপতি খান বাহাদুর আহছানউল্লা ও মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, সম্পাদক মোজাম্মেল হক এবং ২৫জন সদস্য। বাংলা সাহিত্যচর্চা, আরবি-ফারসি-উর্দু ভাষায় রচিত ধর্মশাস্ত্র ও ইতিহাসাদির অনুবাদ প্রকাশ, প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, পীর-দরবেশদের জীবনী রচনা, মুসলমান সাহিত্যিকদের উৎসাহ প্রদান, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন ইত্যাদি সাহিত্য সমিতির উদ্দেশ্য ছিল। বস্ত্তত আত্মপরিচয় ও নবজাগরণের স্পৃহা থেকেই এসব কর্মসূচি নির্ধারিত হয়।
সাহিত্য সমিতি বত্রিশ বছরের ইতিহাসে মুসলিম জাতীয়তাবোধের বিকাশ সাধনের চেষ্টা করে। সমিতির মাসিক সভা ও বার্ষিক সম্মেলনের ব্যবস্থা ছিল। সমিতির উদ্যোগে মোট সাতটি সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তারমধ্যে তৃতীয় সম্মেলন চট্টগ্রামে, চতুর্থ সম্মেলন বসিরহাটে এবং বাকিগুলি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনগুলি খুব গুরুত্ব ও আড়ম্বরের সঙ্গে উদ্যাপিত হতো। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা (বৈশাখ ১৩২৫/ এপ্রিল ১৯১৮) ও সাহিত্যিক (অগ্রহায়ণ ১৩৩৩/ ডিসেম্বর ১৯২৬) নামে এর দুটি মুখপত্র ছিল।
সমিতির ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৪১ সালের ৫-৬ এপ্রিল কলকাতায় রজত জুবিলি পালিত হয়। এ.কে ফজলুল হক অধিবেশনের উদ্বোধন এবং কাজী নজরুল ইসলাম তাতে সভাপতিত্ব করেন। ১৯২১ সালে সাহিত্যিক জীবনের শুরুতে নজরুল ইসলাম সাহিত্য সমিতির আশ্রয় লাভ করেছিলেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর অনেক লেখাও প্রকাশিত হয়।
১৯৪৩ সালের ৮-৯ মে সমিতির সপ্তম ও শেষ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনকে কেন্দ্র করে কলকাতায় পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি (১৯৪২) এবং ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ (১৯৪২) গঠিত হলে সাহিত্য সমিতির গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং সম্ভবত বিভাগপূর্বকালেই এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি দীর্ঘকাল স্থায়ী একটি মুসলিম সংগঠন। জাতির ক্রান্তিলগ্নে মুসলমান লেখকগণকে একটি ব্যানারে একত্রিত করা এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে সমাজের মধ্যে জাতীয় জাগরণ ও জাতীয়তাবোধের সঞ্চার করা ছিল এর একটি বড় অর্জন। [ওয়াকিল আহমদ]