চৌধুরী, মোহাম্মদ এয়াকুব আলী

চৌধুরী, মোহাম্মদ এয়াকুব আলী (১৮৮৮-১৯৪০)  লেখক, সাংবাদিক। ১৩৯৫ বঙ্গাব্দের ১৮ কার্তিক (নভেম্বর, ১৮৮৮)  ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলার অন্তর্গত মাগুরাডাঙ্গা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা এনায়েতুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ অফিসার।

এয়াকুব আলী পাংশা এম ই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাজবাড়ি সূর্যকুমার ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। তারপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়ে চতুর্থ বার্ষিক শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর চক্ষূরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কলেজ ত্যাগ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি চট্টগ্রামের জোরওয়ারগঞ্জ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরের বছর রাজবাড়ি সূর্যকুমার ইনস্টিটিউশনে এবং ১৯১৮ সালে পাংশার জর্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত হন।

এয়াকুব আলী চৌধুরী কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০-২১ সালে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি কারাবরণ করেন। এর ফলে তাঁর শিক্ষকজীবনেরও অবসান ঘটে। অতঃপর তিনি  কলকাতা গিয়ে অনুজ আওলাদ আলী চৌধুরীর সঙ্গে সাংবাদিকতার কাজে যোগ দেন এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির (১৯১১) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। তিনি কিছুকাল এ সমিতির সম্পাদকও ছিলেন। তাঁর ও কবি গোলাম মোস্তফার যুগ্ম সম্পাদনায় ১৯২৭ সালের জানুয়ারি মাসে সমিতির মুখপত্র মাসিক সাহিত্যিক  প্রকাশিত হয়। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা  মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক কোহিনূরে প্রবন্ধ লিখে তিনি সাহিত্যসাধনা শুরু করেন। সমকালের বিভিন্ন সাময়িকীতে সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম, দর্শন ও নীতি বিষয়ে তাঁর অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রধান রচনা হলো: ধর্মের কাহিনী (১৯১৪), নূরনবী (১৯১৮), শান্তিধারা (১৯১৮) ও মানব মুকুট (১৯২৬)।

এয়াকুব আলীর রচনার মূল উপজীব্য ইসলামি দর্শন ও সংস্কৃতি। গাম্ভীর্যপূর্ণভাব, মাধুর্যপূর্ণ ভাষা ও বলিষ্ঠ বক্তব্যের সমন্বয়ে তাঁর রচনাশৈলী অনন্য। বিশ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা বাংলা না  উর্দু হবে এ বিতর্কে তিনি বাংলা ভাষাকেই সমর্থন করেন।

চিরকুমার এয়াকুব আলী ছিলেন উজ্জ্বল চরিত্রের অধিকারী এবং ন্যায়ের ধ্বজাধারী। সুবক্তা হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর প্রচন্ড আর্থিক অনটন ও ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ জীবন গ্রামের বাড়িতে কাটান। ১৯৪০ সালের ১৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।  [খোন্দকার সিরাজুল হক]