সরস্বতী, প্রভাবতী দেবী
সরস্বতী, প্রভাবতী দেবী (১৯০৫-১৯৭২) ঔপন্যাসিক ও শিশুসাহিত্যিক। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গার খাঁটুরায় মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। পিতা গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দিনাজপুরের উকিল।
প্রভাবতী দেবী নয় বছর বয়সে গোবরডাঙ্গার নিকটবর্তী গৈগুর গ্রামে বিভূতিভূষণ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ব্রাহ্ম গার্লস ট্রেনিং কলেজ থেকে টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট লাভ করে কলকাতা করপোরেশন স্কুলে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেন। উত্তর কলকাতার সাবিত্রী শিক্ষালয়ের তিনি প্রতিষ্ঠাত্রী ও শিক্ষিকা ছিলেন। সমকালীন বাঁশরী, সারথি, উপাসনা, উদ্বোধন, সম্মিলনী, মোহাম্মদী, ভারতবর্ষ প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করতেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস বিজিতা ১৯২৩ সালে ভারতবর্ষে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি পরে বাংলায় ‘ভাঙাগড়া’, হিন্দিতে ‘ভাবী’ ও মালয়ালম ভাষায় ‘ফুলদেবম্’ নামে চিত্রায়িত হয়। এছাড়া তাঁর পথের শেষে উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘বাংলার মেয়ে’ কলকাতার রঙ্গমঞ্চে দীর্ঘকাল অভিনীত হয়েছিল। গল্প, উপন্যাস ও শিশুতোষ রচনা মিলিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা তিনশতাধিক। সেগুলির মধ্যে ব্রতচারিণী, মহীয়সী নারী, ব্যথিতা ধরিত্রী, ধূলার ধরণী, রাঙ্গা বৌ, জাগরণ (১৯৩৩), বিধবার কথা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। চলমান সমাজজীবন, সনাতন আদর্শ ও মূল্যবোধ তাঁর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়। সঙ্গীত রচনায়ও তাঁর খ্যাতি ছিল।
প্রভাবতী দেবী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে জামসেদপুরে নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনের পরিচালিকা ছিলেন। নবদ্বীপ বিদ্বজ্জন সভা তাঁকে ‘সরস্বতী’ উপাধি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘লীলা পুরস্কার’ (১৯৪৬) প্রদান করে। ১৯৭২ সালের ১৪ মে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [আবুল হাসনাত]