খাদ্য পুষ্টিবৃদ্ধিকরণ
খাদ্য পুষ্টিবৃদ্ধিকরণ (Food Fortification) খাদ্যের পুষ্টিগুণ পুনরুদ্ধার, সংযোজন, সমৃদ্ধকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টিবৃদ্ধিকরণ পদ্ধতি। অন্য কথায় খাদ্য পুষ্টিবৃদ্ধিকরণ হচ্ছে ভোক্তার প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব মেটানোর জন্য খাদ্যে পুষ্টি সংযোজন। এ ধরনের খাদ্যের প্রাকৃতিক উপাদান যেমন স্বাদ, রং, গন্ধ প্রভৃতি পরিবর্তিত হওয়া উচিত নয়। পুষ্টিবৃদ্ধিকরণের ধারণা ১৮৩১ সালে উদ্ভব হয়। ওই সময় গলগন্ড রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য খাদ্যে আয়োডিনের অভাব মেটাতে সাধারণ লবণের সঙ্গে আয়োডিন মেশানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার খাদ্যে এ পুষ্টিগুণ বর্ধিতকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
ভিটামিন ‘এ’-র অভাবজনিত রাতকানা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯১৭ সালে ডেনমার্কে এবং ১৯৪০ সালে যুক্তরাজ্যে মার্জারিনের (margarine) সঙ্গে ভিটামিন ‘এ’ মিশিয়ে খাদ্য পুষ্টি বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। একইভাবে গম ভাঙানো এবং মিহিকরণের সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া পুষ্টিমান পুনরুদ্ধারের জন্য থায়ামিন, নিকোটিনিক এসিড এবং লৌহ সাদা ময়দা এবং সাদা রুটির সঙ্গে যোগ করা শুরু হয়। ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণের জন্য রুটিতে ক্যালসিয়ামও যোগ করা হয়।
বাংলাদেশে গলগন্ড (goiter) বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়া একটি রোগ যা চিকিৎসা এবং সামাজিক নানারকম সমস্যা তৈরি করে। বাংলাদেশ সরকার অতি সম্প্রতি লবণের সঙ্গে আয়োডিন মেশানোর একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এজন্য একটি আইন তৈরি করে তা বলবৎ করা হয়েছে। এ আইনে ৪৫-৫০ পিপিএম পটাশিয়াম আয়োডাইড (KIO3) লবণের সঙ্গে মেশানোর কথা বলা হয়েছে যাতে ভোক্তাদের কাছে যাওয়া পর্যন্ত লবণে আয়োডিনের পরিমাণ ১৫-২০ পিপিএম অবশিষ্ট থাকে। ভিটামিন ‘এ’-র অভাব জনস্বাস্থ্যগত আর একটি বড় সমস্যা। দেশে প্রতি বছর প্রায় ১,০০,০০০ শিশু জিরোপথালমিয়া (Xerophthalmia) রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৩০,০০০ শিশু অন্ধ হয়ে যায়। এখন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল অনধিক পাঁচ বছর বয়স্ক শিশুদের মাঝে ভিটামিন ‘এ’-র অভাব মেটানোর জন্য বিতরণ করার ব্যবস্থা হয়েছে। [মোঃ কবিরউল্লাহ]
আরও দেখুন অপুষিব; খাদ্যবাহিত রোগ; খাদ্যে ভেজাল; গলগন্ড।