রায়, বিদ্যানিধি যোগেশচন্দ্র
রায়, বিদ্যানিধি যোগেশচন্দ্র (১৮৫৯-১৯৫৬) গবেষক, লেখক। ১৮৫৯ সালের ২০ অক্টোবর পিতার কর্মস্থল বাঁকুড়ায় তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস হুগলির দিগড়া গ্রামে। যোগেশচন্দ্র প্রথমে কিছুদিন বাঁকুড়া জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। পিতার মৃত্যু হলে তিনি বর্ধমান রাজ স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এন্ট্রান্স (১৮৭৮), হুগলি কলেজ থেকে এফএ (১৮৮০) ও প্রথম বিভাগে বিএ (১৮৮২) পাস করেন। ১৮৮৩ সালে উদ্ভিদবিদ্যার একমাত্র ছাত্র হিসেবে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ পাস করেন।
যোগেশচন্দ্র প্রথমে কটক র্যাভেনশ কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন। পরে কিছুকাল তিনি কলকাতা মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করে পুনরায় কটকে ফিরে যান এবং সেখানে প্রায় ৩০ বছর অধ্যাপনা করে ১৯২০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বারো বছর বাংলা ভাষা, বারো বছর জ্যোতির্বিদ্যা এবং বারো বছর দেশীয় কলাবিদ্যার চর্চা করেন। ফলে এ তিন বিষয়ে তিনি গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি বাংলা বানানে দ্বিত্ব বর্জনরীতির প্রচলন করেন। ‘বাশুলী চন্ডীদাস’ নামের পুথি আবিষ্কার, সিদ্ধান্তদর্শন গ্রন্থ সম্পাদনা এবং পূজাপার্বণ গ্রন্থ রচনা তাঁর উলেখযোগ্য কীর্তি। তিনি ইংরেজিতে উড়িষ্যার জ্যোতির্বিদ চন্দ্রশেখরের জীবনচরিত রচনা করে তাঁকে দেশে-বিদেশে পরিচিত করেন। চার খন্ডে বাংলা শব্দকোষ তৈরি তাঁর আর একটি বিশেষ কীর্তি।
যোগেশচন্দ্র প্রবাসী, সাহিত্য, বঙ্গদর্শন, ভারতবর্ষ ইত্যাদি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তাঁর গবেষণামূলক কয়েকটি উলেখযোগ্য গ্রন্থ: সিদ্ধান্তদর্শন (১৮৯৯), আমাদের জ্যোতিষী ও জ্যোতিষ (১৯০৩), বাঙলা ভাষা (৪ খন্ড, ১৯০৮-১৯১৫), বাঙ্গালা শব্দকোষ (১৯১৩), পূজাপার্বণ (১৯৫১), রত্নপরীক্ষা, চন্ডীদাসচরিত, Ancient Indian Life (১৯৪৮), বেদের দেবতা ও কৃষ্টিকাল ইত্যাদি।
যোগেশচন্দ্র বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং এর সহসভাপতি ও সভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেন। তিনি বিজ্ঞান পরিষদ, উদ্ভিদবিদ্যা পরিষদ এবং উৎকল সাহিত্য সমাজেরও সদস্য ছিলেন। ছাতনায় তিনি চন্ডীদাসের নামে একটি স্মৃতিমন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন।
যোগেশচন্দ্র তাঁর পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ নানা উপাধি ও পুরস্কারে ভূষিত হন। সেগুলি হচ্ছে: পুরীর পন্ডিতসভা কর্তৃক ‘বিদ্যানিধি’ উপাধি (১৯১০), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, সরোজিনী পদক ও বিশেষ সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি (১৯৫৬), উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি, রবীন্দ্র পুরস্কার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক রামপ্রাণগুপ্ত পুরস্কার, বিজ্ঞানভূষণ এবং সরকার কর্তৃক রায়বাহাদুর উপাধি। ১৯৫৬ সালের ৩০ জুলাই বাঁকুড়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। [বদিউজ্জামান]