সরকার
সরকার ভারতের মুগল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ইউনিট এর নাম। সম্রাট আকবর তাঁর চল্লিশতম শাসনবর্ষে সমগ্র সাম্রাজ্যকে ১০৫টি সরকারে ভাগ করেন। সরকার সমূহকে পুনরায় ২০৩৭ টি মহল বা পরগণায় বিভক্ত করা হয়। সম্রাট আকবর তাঁর প্রশাসনের অধীনে এ বিভাগ ও উপবিভাগকে একটি একক প্রশাসনিক নিয়মের আওতায় ১২টি সুবাহ এর মধ্যে পুনর্বিন্যাস করেন। মুগল শাসক কর্তৃক বাংলা অধিকৃত হলে তাদের রাজস্ব সংক্রান্ত বন্দোবস্তের দায়িত্ব অর্পিত হয় রাজা টোডরমলের উপর। তিনি জাগির ও খালিসা (খালসা বা সরকারের খাস জমি) সমূহের রাজস্ব নির্ধারণ করেন এবং ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব সংগ্রহের ব্যবস্থাকে সহজতর করার জন্য তিনি বাংলার সমগ্র অর্থনৈতিক ইউনিট সমূহকে ১৯টি সরকারে বিভক্ত করে তিনজন প্রধান সরকারী কর্মকর্তার অধীনে উক্ত ১৯টি সরকারের দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। তাঁরা হলেন, সিকদার-ই-সিকদারান (প্রশাসন, অর্থ ও সেনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত), মুনসিফ-ই-মুনসিফান (রাজস্ব আদায়ের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত) এবং কাজি (বিচার বিভাগের প্রধান)।
আকবর বাংলা প্রদেশের সরকারকে ৬৮২টি উপবিভাগে বিভক্ত করেন। বিভাগ সমূহের নাম মহল বা পরগণা। ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুবাদার শাহ সুজা বাংলার সরকার ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজান এবং তিনি বাংলা সুবাহর সঙ্গে উড়িষ্যাকে যুক্ত করেন। এতে বাংলা সুবাহর অধীনে সরকার এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪টি এবং মহলের সংখ্যা ৭৮১টি। ২৪টি সরকার-এর মোট বাৎসরিক রাজস্ব ছিলো- ৫৯,৮৪,৫৯.৩১৯ দাম (১৪৯৬১৪৮২-১৫-৭ রুপি) এবং উড়িষ্যার অন্তর্গত ৫টি সরকার ও ৯৯টি মহলের রাজস্ব ছিল মোট ১২৫৭৩২৬৩৮ দাম।
বাংলার সরকারসমূহ: (আকবর এর সময়ে)
ক্র. | সরকার | পরগণার সংখ্যা |
১. | উদম্বর (রাজমহল, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর বীরভূম; (‘তান্ডা’ নামে পরিচিত) | ৫২টি |
২. | জান্নাতাবাদ বা লখনৌতি (প্রধানত মালদা) | ৬৬টি |
৩. | ফতেয়াবাদ (ফরিদপুর, দক্ষিণ বাকেরগঞ্জ) | ৩১টি |
৪. | মাহমুদাবাদ (উত্তর নদীয়া, উত্তর যশোর ও পশ্চিম ফরিদপুর) | ৮৮টি |
৫. | খলিফতাবাদ (দক্ষিণ-যশোর ও পশ্চিম বাকেরগঞ্জ) | ৩৫টি |
৬. | পূর্ণিয়া | ৯টি |
৭. | তাজপুর (পশ্চিম দিনাজপুর) | ২৯টি |
৮. | ঘোড়াঘাট (দক্ষিণ রংপুর, দক্ষিণ-পূর্ব দিনাজপুর ও উত্তর বগুড়া) | ৮৪টি |
৯. | পিঞ্জিরা (দিনাজপুর, রংপুর-এর একাংশ ও রাজশাহী) | ২১টি |
১০. | বরবকাবাদ (প্রধানত রাজশাহী, দক্ষিণ-পশ্চিম বগুড়া ও দক্ষিণ-পূর্ব মালদা) | ৩৮টি |
১১. | বাজুহা (আংশিক রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা ও ঢাকা) | ৩২টি |
১২. | সোনারগাঁও (পশ্চিম ত্রিপুরা, পাবনা ও ঢাকা) | ৫২টি |
১৩. | সিলেট (শ্রীহট্ট) | ৮টি |
১৪. | চাটগাঁও (চট্টগ্রাম) | ৭টি |
১৫. | শরিফতাবাদ (প্রধানত বর্ধমান) | ২৬টি |
১৬. | সুলাইমনাবাদ (উত্তর হুগলী, নদীয়ার একাংশ ও পূর্ব বর্ধমান) | ৩১টি |
১৭. | সাতগাঁও (২৪ পরগণা, পশ্চিম নদীয়া ও হাওড়া) | ৫৩টি |
১৮. | মান্দারন (বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও দক্ষিণ-পূর্ব বর্ধমান) | ১৬টি |
১৯. | বাকলা (উত্তর ও পশ্চিম বাকেরগঞ্জ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ঢাকা) | ৪টি |
উড়িষ্যার সরকারসমূহ
ক্র. | সরকার | পরগণার সংখ্যা |
১. | জালেশ্বর | ২৮টি |
২. | ভদ্রক | ৭টি |
৩. | কটক | ২১টি |
৪. | কলিঙ্গ দন্ডপাট | ২৭টি |
৫. | রাজ মাহেন্দ্রী | ১৬টি
মুর্শিদকুলী খান তাঁর সময়ে বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা পুনবির্ন্যাস করেন এবং একই সময়ে আমিন কর্তৃক ভূমি জরিপ সম্পন্ন করেন। জরিপ কাজ সম্পন্ন হলে বাংলায় নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। নওয়াব বাংলার পূর্ববর্তী রাজস্ব ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহকে ‘চাকলা’ নামের একটি বৃহত্তর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ ব্যবস্থার অধীনে ১৩টি নতুন বিভাগ বা চাকলা সৃষ্টি করা হয় এবং পরগণার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৬০টি। [নাসরীন আক্তার] |