কালিহাতি উপজেলা
কালিহাতি উপজেলা (টাঙ্গাইল জেলা) আয়তন: ৩০১.২২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৭´ থেকে ২৪°২৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৫´ থেকে ৯০°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভূঞাপুর ও ঘাটাইল উপজেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল সদর ও বাসাইল উপজেলা, পূর্বে সখীপুর উপজেলা, পশ্চিমেযমুনা নদী, সিরাজগঞ্জ সদর ও বেলকুচি উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৭৬৪০৭; পুরুষ ১৯৩৯৬৭, মহিলা ১৮২৪৪০। মুসলিম ৩৪৫৫৮৭, হিন্দু ৩০৭৬৪, বৌদ্ধ ২৪ এবং অন্যান্য ৩২।
জলাশয় যমুনা, লৌহজং, বংশী নদী এবং চরন বিল, কুমার বিল ও তল্লা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন কালিহাতি থানা গঠিত হয় ১৯২৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১১ | ২৬৪ | ৩০১ | ৩২৪৯৪ | ৩৪৩৯১৩ | ১২৫০ | ৪২.৭ | ৩৭.১ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১৪.৫২ | ৯ | ১৬ | ৩০০৯৪ | ২০৭৩ | ৪৪ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
০.৯৫ | ১ | ২৪০০ | ২৫২৬ | ২৫.৩ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
এলেঙ্গা ৩৬ | ৫৪১৯ | ১৭৪৫৫ | ১৬৬৯১ | ৪১.৪২ |
ককদহরা ৫৮ | ৪৭৯৮ | ১৩৯৪৩ | ১৩৩৬৬ | ৩৫.১৭ |
দুর্গাপুর ২৯ | ৮৮৩৪ | ১২৮৫৪ | ৯৪৫০ | ৩২.১৩ |
নাগবাড়ী ৬৫ | ৬২২৩ | ১৪৬১৪ | ১৩৯৩৮ | ৩৬.৮৬ |
নারান্দিয়া ৭৩ | ৬৭১৫ | ১৫৩৭৫ | ১৫১৫৩ | ৪০.৮৫ |
পাইকারা ৮০ | ৪৬২৯ | ১৩৯২৪ | ১৩২০৩ | ৩৫.৫৬ |
পারকি | ৬৭৩ | ১৪১৮ | ১২৮৫ | ২৬.৯০ |
বল্লা ১২ | ৩৬৫১ | ২০২৪৪ | ১৬৩৯০ | ৩৮.২০ |
বাঙ্গরা ১৪ | ৫৮৬২ | ১৩৬১১ | ১৩০২৭ | ৪৪.৪২ |
বীরবাসুন্দা ২১ | ৬৩৯১ | ১৭৫৪০ | ১৮১৯৮ | ৩০.৫৩ |
সাল্লা ৮৭ | ৩৯৭৯ | ৯৭০২ | ৯৪২১ | ৩৬.১৪ |
সাহাদেবপুর ৯৪ | ৪৭৪৭ | ১২৮৭৬ | ১২৩৬৬ | ৩৮.০৭ |
গোহালিয়াবাড়ি | ৩৯৪৭ | ৭৫০৯ | ৭২৩১ | ৩১.৩১ |
দশকিয়া | ২৮০৮ | ৭৪৪৫ | ৬৮৯৪ | ৪১.৩৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আশরাফিয়া জামে মসজিদ (ফুলতলা), কদিমহামজানি জামে মসজিদ (সাল্লা), পাছ চারান জামে মসজিদ (পাছ চারান), এলেঙ্গা জমিদার বাড়ি (এলেঙ্গা)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে ১৯ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের লড়াইয়ে ১ জন মেজরসহ প্রায় ৩৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১১ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় ছত্রী সেনাদের আক্রমণে ৩৭০ জন পাকসেনা নিহত, শতাধিক আহত ও প্রায় ৬০০ জন বন্দি হয়।
উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কালিহাতি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বল্লা জামে সমজিদ, শাহ্ একিন সাহেবের মাযার, কালিহাতি কেন্দ্রীয় জয়কালী মন্দির, উল্টর বেতডোবা বড় কালীমন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.৬%; পুরুষ ৪২.৩%, মহিলা ৩২.৭%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭০, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আলাউদ্দিন সিদ্দিকী কলেজ (১৯৭১), শামসুল হক মহাবিদ্যালয় (১৯৭২), কালিহাতি কলেজ (১৯৭৯), লূুৎফর রহমান মতিন মহিলা কলেজ (২০০০), কালিহাতি আর.এস. পাইলট উচ্চবিদ্যালয় (১৯১৫), গোপলদিঘী কে.পি.ইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), ককদহরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), রাজাফৈর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), বর্গা সরিষা আটা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), সাতুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৬), চাটিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৬), গোহালিয়াবাড়ি ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক বংশাই, সাপ্তাহিক সামাল, সাপ্তাহিক ইন্তেখাব, সাপ্তাহিক গণবিপ্লব, পাক্ষিক আহম্মদী (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ১৮৯, থিয়েটার গ্রুপ ৫, সিনেমা হল ১০, মহিলা সমিতি ২২, খেলার মাঠ ৩৪, সংগীত একাডেমি ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৬।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পর্যটন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু, যমুনা রিসোর্ট।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৬.৭৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৩%, শিল্প ২.২১%, ব্যবসা ১৫.৫৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৫৩%, চাকরি ৬.২০%, নির্মাণ ১.২৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৯০% এবং অন্যান্য ১৭.৭১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৬৯%, ভূমিহীন ৪৩.৩১%। শহরে ৪৫.১১% এবং গ্রামে ৫৭.৮০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, আলু, বেগুন, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, শাকসবজি।
বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কুসুম, মুগ ডাল।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, কলা, পেঁপে, তরমুজ।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩০.৮১ কিমি, কাঁচারাস্তা ১১৩.২৯ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা এ উপজোলায় রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল ও বরফকল রয়েছে।
কুটিরশিল্প এ উপজেলায় প্রায় ৫০০০০ তাঁত রয়েছে। বল্লা তাঁতের শাড়ী বিখ্যাত। এছাড়া এখানে বাঁশশিল্প, বেতের কাজ, লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, সেলাই কাজ, স্বর্ণশিল্প, বিড়ি তৈরি শিল্প প্রভৃতি রয়েছে।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৬, মেলা ১১। বল্লা হাট, ভন্ডেশ্বর হাট, হামিদপুর হাট, কস্ত্তরীপাড়া হাট, এলেঙ্গা হাট, শয়া হাট, ইছাপুর হাট, বাগুটিয়া হাট ও পৌজান হাট এবং বিজয়া-দশমীর মেলা (কালিহাতি), বারুণী মেলা (ফুলতলা ও বাঙ্গরা), চৈত্র সংক্রান্তির মেলা (সাহাদেবপুর) উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, পিঁয়াজ, রসুন, আলু, পেঁপে, আদা, কাঁঠাল।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২০.৪২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৫৪%, পুকুর ০.১৬%, ট্যাপ ০.৬১% এবং অন্যান্য ৫.৬৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৭.৯৪% (গ্রামে ৩৬.৪৬% ও শহরে ৫৩.৩৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৯.৮১% (গ্রামে ৫১.৫৮% ও শহরে ৩১.৩২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.২৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, বেসরকারি স্বাস্থ্য ও দাতব্য চিকিৎসালয় ২, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ৫২।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়। ১৯৯৬ সালে টর্নোডোতে এ উপজেলার ৫২৩ জন প্রাণ হারায়, ৩০ হাজার লোক আহত হয় এবং ৬৭ টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। [শ্যামল চন্দ্র নাথ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালিহাতি উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।