ভূঞাপুর উপজেলা

ভুঞাপুর উপজেলা (টাঙ্গাইল জেলা)  আয়তন: ২২৫.০০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৩´ থেকে ২৪°৩৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৪´ থেকে ৮৯°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গোপালপুর এবং সরিষাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে কালিহাতি উপজেলা, পূর্বে কালিহাতি, ঘাটাইল এবং গোপালপুর উপজেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৮৯৯১৩; পুরুষ ৯২২৩০, মহিলা ৯৭৬৮৩। মুসলিম ১৮৩৭৪৮, হিন্দু ৬১৪৬, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ১৩।

জলাশয় যমুনা নদী এবং ভূঞাপুর বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ভূঞাপুর থানা গঠিত হয় ১৯৭৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৯৩ ১২৮ ২৮৭০৮ ১৬১২০৫ ৮৪৪ ৫৯.০ ৪১.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.৬৯ ২১ ২৮৭০৮ ২০৯৭ ৫৯.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অর্জুনা ১৩ ৯৯০১ ১২৬৮৯ ১৪১০৪ ৪১.১
অলোয়া ২৭ ৪৮৩৫ ১৩৩০১ ১৪১৯৯ ৪২.৯
গাবসারা ৫৪ ১৫৯২৪ ১২০৭৬ ১৪৬০২ ২৭.৩
গোবিন্দদাসী ৬৭ ৪৩৪৭ ১৬৪৩৫ ১৭০০৪ ৪৬.৪
নিকরাইল ৮১ ১০২৬৭ ১৩১০৩ ১২৬৩৮ ৪২.৩
ফলদা ৪০ ৪৭৯২ ১০৫০৪ ১০৯৯৩ ৪৬.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ ভূঞাপুর কলেজের শহীদ মিনারের পাদদেশে ভূঞাপুর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এর সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১১ আগস্ট সিরাজকান্দিতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর জাহাজ আক্রমণ করে বিপুল সংখ্যক গোলাবারুদ দখল করে এবং জাহাজটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৭ নভেম্বর এ উপজেলার ছাব্বিশা গ্রামে পাকসেনারা ৩২ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ৩৫০টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলার পালসা স্কুল মাঠে ১টি গণকবর আছে, ইব্রাহীম খাঁ কলেজ প্রাঙ্গণে ১টি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ভূঞাপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৩৫, মন্দির ৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কিসমত মড়িয়া মসজিদ, ফলদা জামে মসজিদ, কালীদহ মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৮%; পুরুষ ৪৬.৬%, মহিলা ৪১.২%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪, মাদ্রাসা ২১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইবরাহিম খাঁ কলেজ (১৯৪৮), শমসের ফকির কলেজ (১৯৮৬), পলশিয়া রাণী দিনমণি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), গোবিন্দদাসী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), ভূঞাপুর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৬)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১, সিনেমা হল ২, লাইব্রেরি ৫, নাট্যদল ৬, সাহিত্য সংগঠন ২, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৪।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৬১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৫%, শিল্প ১.১৬%, ব্যবসা ১৪.৭৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৩৯%, চাকরি ৯.০১%, নির্মাণ ১.৯৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬১% এবং অন্যান্য ১০.৮৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.৮৭%, ভূমিহীন ৩৭.১৩%। শহরে ৬২.০৩% এবং গ্রামে ৬২.৯৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, গম, আলু, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চীনাবাদাম, তিসি, কাউন, আখ।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭৪, গবাদিপশু ১৫, হাঁস-মুরগি ৩০০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৭.৪২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭.৩৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩১৩.৬ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি; নৌপথ ১৫ কিমি। ব্রিজ ২৬।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু ও ঘোড়ার গাড়ি, পাল্কি, ডুলি।

শিল্প ও কলকারখানা টেক্সটাইল মিল, রাইস মিল, স্টিল মিল, কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, কৃষি-যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, নকশি শিকা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৬। ভূঞাপুর হাট, শিয়ালকোল হাট, নিকরাইল হাট, কুঠিবয়ড়া হাট, গোবিন্দদাসী হাট, দুর্গাপুর হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাট, চামড়া, আলু, শাকসবজি, সরিষা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৭.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৪%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ২.৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৯.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৬.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, গ্রামীন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৪, ক্লিনিক ৩।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, সার্ভ, কারিতাস, এসআরসি। [মো. কায়সার]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ভূঞাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।