বাংলা একাডেমী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''বাংলা একাডেমী'''  বাংলা ভাষা সংক্রান্ত সর্ববৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১৭ অগ্রহায়ণ (৩ ডিসেম্বর ১৯৫৫) ঢাকার বর্ধমান হাউসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের  [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলন]] এবং এ দেশের মুসলিম মধ্যবিত্তের জাগরণ ও আত্মপরিচয় বিকাশের প্রেরণায় এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়।
'''বাংলা একাডেমী'''  বাংলা ভাষা সংক্রান্ত সর্ববৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১৭ অগ্রহায়ণ (৩ ডিসেম্বর ১৯৫৫) ঢাকার বর্ধমান হাউসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের  [[ভাষা আন্দোলন|ভাষা আন্দোলন]] এবং এ দেশের মুসলিম মধ্যবিত্তের জাগরণ ও আত্মপরিচয় বিকাশের প্রেরণায় এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়।


[[Image:BanglaAcademy.jpg|thumb|400px|right|বাংলা একাডেমী ভবন]]
বিশ শতকের প্রথমদিকে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ সূচিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তারা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর। এ অবস্থা অতিক্রম করার প্রয়াসে লেখক-পন্ডিত-গবেষকদের দৃষ্টি পড়ে বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি। ১৯২৫ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়  [[শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ|মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্]] বাংলা ভাষায় জ্ঞানসাধনা ও সাহিত্যচর্চার প্রস্তাব করেন। ১৯৪০ সালে এ.কে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্সে তিনি বাংলা সরকারকে একটি অনুবাদ বিভাগ স্থাপনের অনুরোধ করেন। বিভাগোত্তরকালে ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে মূল সভাপতির অভিভাষণে শহীদুল্লাহ্ একটি একাডেমি গড়ার কথা বলেন। এর আগেই ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ও শিক্ষার ভাষা এবং উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতার মুখে ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী ও জনগণের বিক্ষোভের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে এবং ঢাকায়  [[একুশে ফেব্রুয়ারি|একুশে ফেব্রুয়ারি]] পুলিশের গুলিতে কয়েকজন তরুণ শাহাদাত বরণ করেন। এ অবস্থায় বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির গবেষণা ও চর্চার কেন্দ্ররূপে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার দাবি আরও জোরালো হয়।
বিশ শতকের প্রথমদিকে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ সূচিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তারা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর। এ অবস্থা অতিক্রম করার প্রয়াসে লেখক-পন্ডিত-গবেষকদের দৃষ্টি পড়ে বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি। ১৯২৫ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়  [[শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ|মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্]] বাংলা ভাষায় জ্ঞানসাধনা ও সাহিত্যচর্চার প্রস্তাব করেন। ১৯৪০ সালে এ.কে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্সে তিনি বাংলা সরকারকে একটি অনুবাদ বিভাগ স্থাপনের অনুরোধ করেন। বিভাগোত্তরকালে ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে মূল সভাপতির অভিভাষণে শহীদুল্লাহ্ একটি একাডেমি গড়ার কথা বলেন। এর আগেই ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ও শিক্ষার ভাষা এবং উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতার মুখে ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী ও জনগণের বিক্ষোভের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে এবং ঢাকায়  [[একুশে ফেব্রুয়ারি|একুশে ফেব্রুয়ারি]] পুলিশের গুলিতে কয়েকজন তরুণ শাহাদাত বরণ করেন। এ অবস্থায় বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির গবেষণা ও চর্চার কেন্দ্ররূপে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার দাবি আরও জোরালো হয়।
[[Image:BanglaAcademy.jpg|thumb|400px|right|
বাংলা একাডেমী ভবন]]


১৯৫৩ সালে  [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রথম বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। পরের বছর পূর্ববাংলা আইনসভার নির্বাচনে বিজয়ী  [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রন্ট]] পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু অল্পদিনেই তাদের পতন হওয়ায় সে প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বার যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসে (স্থাপিত ১৯০৬) বাংলা একাডেমীর উদ্বোধন করেন। এভাবে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তব রূপ লাভ করে।
১৯৫৩ সালে  [[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়|ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]] প্রথম বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। পরের বছর পূর্ববাংলা আইনসভার নির্বাচনে বিজয়ী  [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রন্ট]] পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু অল্পদিনেই তাদের পতন হওয়ায় সে প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বার যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসে (স্থাপিত ১৯০৬) বাংলা একাডেমীর উদ্বোধন করেন। এভাবে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তব রূপ লাভ করে।
২২ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দেশবাসীর দৃষ্টিতে বাংলা একাডেমী একটি মার্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। শুধু বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের আবেগময় ভাবাদর্শের প্রতীকরূপেই নয়, বিশ্বের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসিদ্ধ কেন্দ্রগুলির অন্যতম প্রতিষ্ঠানরূপেও এটি পরিগণিত হয়ে থাকে। একে এখন বাঙালির মননের প্রতীক বলে মনে করা হয়।  [বশীর আল হেলাল]
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দেশবাসীর দৃষ্টিতে বাংলা একাডেমী একটি মার্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। শুধু বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের আবেগময় ভাবাদর্শের প্রতীকরূপেই নয়, বিশ্বের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসিদ্ধ কেন্দ্রগুলির অন্যতম প্রতিষ্ঠানরূপেও এটি পরিগণিত হয়ে থাকে। একে এখন বাঙালির মননের প্রতীক বলে মনে করা হয়।  [বশীর আল হেলাল]


[[en:Bangla Academy]]
[[en:Bangla Academy]]
[[en:Bangla Academy]]
[[en:Bangla Academy]]


[[en:Bangla Academy]]
[[en:Bangla Academy]]

০৯:৪৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বাংলা একাডেমী  বাংলা ভাষা সংক্রান্ত সর্ববৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১৭ অগ্রহায়ণ (৩ ডিসেম্বর ১৯৫৫) ঢাকার বর্ধমান হাউসে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের  ভাষা আন্দোলন এবং এ দেশের মুসলিম মধ্যবিত্তের জাগরণ ও আত্মপরিচয় বিকাশের প্রেরণায় এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়।

বাংলা একাডেমী ভবন

বিশ শতকের প্রথমদিকে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ সূচিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তারা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর। এ অবস্থা অতিক্রম করার প্রয়াসে লেখক-পন্ডিত-গবেষকদের দৃষ্টি পড়ে বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি। ১৯২৫ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়  মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষায় জ্ঞানসাধনা ও সাহিত্যচর্চার প্রস্তাব করেন। ১৯৪০ সালে এ.কে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্সে তিনি বাংলা সরকারকে একটি অনুবাদ বিভাগ স্থাপনের অনুরোধ করেন। বিভাগোত্তরকালে ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে মূল সভাপতির অভিভাষণে শহীদুল্লাহ্ একটি একাডেমি গড়ার কথা বলেন। এর আগেই ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ও শিক্ষার ভাষা এবং উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতার মুখে ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী ও জনগণের বিক্ষোভের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে এবং ঢাকায়  একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে কয়েকজন তরুণ শাহাদাত বরণ করেন। এ অবস্থায় বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির গবেষণা ও চর্চার কেন্দ্ররূপে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার দাবি আরও জোরালো হয়।

১৯৫৩ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। পরের বছর পূর্ববাংলা আইনসভার নির্বাচনে বিজয়ী  যুক্তফ্রন্ট পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করে, কিন্তু অল্পদিনেই তাদের পতন হওয়ায় সে প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বার যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসে (স্থাপিত ১৯০৬) বাংলা একাডেমীর উদ্বোধন করেন। এভাবে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তব রূপ লাভ করে।

প্রাদেশিক পূর্ববাংলা সরকার বাংলা একাডেমী পরিচালনার জন্য প্রথমে একটি প্রিপারেটরি কমিটি গঠন করে।  মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ কমিটির সম্পাদক ও স্পেশাল অফিসাররূপে বর্ধমান হাউসে একাডেমীর প্রাথমিক রূপদান করেন। ১৯৫৬ সালের ১ ডিসেম্বর  মুহম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮২) একাডেমীর প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একাডেমী সূচনায় ছিল একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে ‘দি বেঙ্গলী একাডেমী অ্যাক্ট’ গৃহীত হলে এটি সরকারি অর্থে পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে।

ফ্রেঞ্চ একাডেমীর আদর্শে বাংলা একাডেমীর কর্মকাঠামো পরিকল্পিত হয়। গবেষণা, অনুবাদ, সংকলন, প্রকাশনা, গ্রন্থাগার মোটামুটি এই বিভাগগুলির মাধ্যমে একাডেমীর কর্মকান্ড সম্পাদিত হয়। একাডেমীর গৃহীত কর্মসূচি: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণা; প্রাচীন ও মধ্যযুগীয়  পুথি সংগ্রহ ও সম্পাদনা;  লোকসঙ্গীতলোককাহিনী, ছড়া,  ধাঁধা ইত্যাদি আহরণ এবং সেগুলির ওপর গবেষণা পরিচালনা করা; বিভিন্ন ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি,  দর্শন ইত্যাদি বিষয়ক গ্রন্থের অনুবাদ; শ্রেষ্ঠ বাংলা গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তরকরণ; বাংলায় উচ্চতর শিক্ষার পাঠ্য ও সহায়ক গ্রন্থ প্রকাশ; পূর্ববাংলার  আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, উর্দু-বাংলা, বাংলা-উদু,র্ বাংলা-আরবি, আরবি-বাংলা অভিধান সংকলন; বাংলায় ইসলামি বিশ্বকোষ, সাহিত্যকোষ, জীবনীকোষ, বিভিন্ন পরিভাষাকোষ সংকলন; বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান লেখকদের পুরস্কৃতকরণ ইত্যাদি।

পাকিস্তান আমলে একাডেমীর অর্থসংস্থান করত পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার। এ জন্য ১৯৬০-৬১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ টাকা, তৎসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের এক লাখ টাকার নিয়মিত অনুদানও ছিল। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার পরিচালিত কেন্দ্রীয় বাংলা-উন্নয়ন বোর্ডকে বাংলা একাডেমীর সঙ্গে একীভূত করে এর কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়; পরিচালকের পদমর্যাদা মহাপরিচালকে উন্নীত করা হয়। পাঠ্যপুস্তক ও ফোকলোর বিভাগ নামে দুটি নতুন বিভাগ খোলা হয়।

প্রকাশনা ছাড়াও বর্তমানে বাংলা একাডেমীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিবিধ আলোচনা ও বক্তৃতা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা ও মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা, ভাষা প্রশিক্ষণ, বাংলা প্রসেসিংসহ কারিগরি প্রশিক্ষণ, তরুণ লেখক প্রকল্প, গবেষণাবৃত্তি প্রদান ইত্যাদি। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রদত্ত ‘বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার’ খুবই মর্যাদাসম্পন্ন। একাডেমীর রয়েছে কম্পিউটারভিত্তিক বৃহৎ আধুনিক মুদ্রণালয়। দুই শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী একাডেমীর কার্যাবলি নির্বাহ করেন। একাডেমী পূর্ববাংলার আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ছাড়াও অন্য কতগুলি  অভিধান সংকলন করেছে, বিষয়ভিত্তিক পরিভাষা প্রকাশ করেছে এবং প্রমিত বাংলা বানানের নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচার করেছে।

বাংলা একাডেমীর সর্বোচ্চ পরিষদ হচ্ছে ফেলো, জীবন-সদস্য ও সদস্যদের দ্বারা গঠিত সাধারণ পরিষদ। বার্ষিক সাধারণ সভাগুলিতে সাধারণ সদস্যদের বক্তব্য ও প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়। ফেলো, জীবন-সদস্য ও সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ৬জন প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সদস্যদ্বারা গঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদ একাডেমীর কর্মকান্ড পরিচালনা করে।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দেশবাসীর দৃষ্টিতে বাংলা একাডেমী একটি মার্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। শুধু বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামের আবেগময় ভাবাদর্শের প্রতীকরূপেই নয়, বিশ্বের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসিদ্ধ কেন্দ্রগুলির অন্যতম প্রতিষ্ঠানরূপেও এটি পরিগণিত হয়ে থাকে। একে এখন বাঙালির মননের প্রতীক বলে মনে করা হয়।  [বশীর আল হেলাল]