গোপাল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
৮ নং লাইন: ৮ নং লাইন:
গোপালের মতায় আরোহণ সম্পর্কে খালিমপুর তাম্রশাসনের চতুর্থ শ্লোকে নিুরূপ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:  
গোপালের মতায় আরোহণ সম্পর্কে খালিমপুর তাম্রশাসনের চতুর্থ শ্লোকে নিুরূপ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:  


                          মাৎস্যন্যায়ম্-অপোহিতুম্ প্রকৃতিভি-র্লক্ষ্ম্যাঃ করম্-গ্রাহিতঃ
মাৎস্যন্যায়ম্-অপোহিতুম্ প্রকৃতিভি-র্লক্ষ্ম্যাঃ করম্-গ্রাহিতঃ


                          শ্রীগোপালঃ ইতি তিীশ-শিরসাম্ চূড়ামণিস্-তৎসুতঃ॥
শ্রীগোপালঃ ইতি তিীশ-শিরসাম্ চূড়ামণিস্-তৎসুতঃ॥


(তাঁর পুত্র শ্রীগোপালকে, যিনি ছিলেন রাজাদের মুকুটমণি, প্রকৃতিগণ মাৎস্যন্যায় বা অরাজকতার অবসানকল্পে লক্ষ্মীর হাত গ্রহণ করিয়েছিলেন)।
(তাঁর পুত্র শ্রীগোপালকে, যিনি ছিলেন রাজাদের মুকুটমণি, প্রকৃতিগণ মাৎস্যন্যায় বা অরাজকতার অবসানকল্পে লক্ষ্মীর হাত গ্রহণ করিয়েছিলেন)।
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
গোপালের মতারোহণ সম্পর্কে তারনাথের অনুরূপ একটি রূপকাশ্রয়ী বর্ণনা রয়েছে। খালিমপুর লিপিশ্লোক এবং তারনাথের বর্ণনা থেকে পণ্ডিতগণ মনে করেন যে, জনগণ গোপালকে রাজা নির্বাচিত করেছিল। উপরিউক্ত শ্লোকে ব্যবহৃত ‘প্রকৃতি’ শব্দের সঠিক অর্থ নির্ধারন করা সম্ভব নয়। এ শব্দ দ্বারা প্রজাও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে আবার প্রধান প্রধান অমাত্যও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। তাই গোপালের নির্বাচকমণ্ডলী নির্ধারণ করা দুঃসাধ্য। এমনও ধারণা করা যেতে পারে যে, একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী সৈনিক হিসেবে গোপাল অরাজকতা সৃষ্টিকারী শক্তিসমূহকে উৎপাটিত করে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনে সম হয়েছিলেন এবং এ প্রাথমিক সাফল্যের মাধ্যমেই তিনি জনসমর্থনও লাভ করেছিলেন।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]
গোপালের মতারোহণ সম্পর্কে তারনাথের অনুরূপ একটি রূপকাশ্রয়ী বর্ণনা রয়েছে। খালিমপুর লিপিশ্লোক এবং তারনাথের বর্ণনা থেকে পণ্ডিতগণ মনে করেন যে, জনগণ গোপালকে রাজা নির্বাচিত করেছিল। উপরিউক্ত শ্লোকে ব্যবহৃত ‘প্রকৃতি’ শব্দের সঠিক অর্থ নির্ধারন করা সম্ভব নয়। এ শব্দ দ্বারা প্রজাও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে আবার প্রধান প্রধান অমাত্যও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। তাই গোপালের নির্বাচকমণ্ডলী নির্ধারণ করা দুঃসাধ্য। এমনও ধারণা করা যেতে পারে যে, একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী সৈনিক হিসেবে গোপাল অরাজকতা সৃষ্টিকারী শক্তিসমূহকে উৎপাটিত করে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনে সম হয়েছিলেন এবং এ প্রাথমিক সাফল্যের মাধ্যমেই তিনি জনসমর্থনও লাভ করেছিলেন।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]


'''গ্রন্থপঞ্জি''' AM Chowdhury, Dynastic History of Bengal, Dhaka, 1967.
'''গ্রন্থপঞ্জি''' AM Chowdhury, ''Dynastic History of Bengal'', Dhaka, 1967.


[[en:Gopala]]
[[en:Gopala]]

০৫:২৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

গোপাল পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা। এ বংশ নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে প্রায় চারশ বছর বাংলা শাসন করে। খ্রিস্টীয় সাত শতকের মধ্যভাগ থেকে স্থিতিশীল সরকারের অবর্তমানে প্রায় একশ বছর ধরে বাংলায় অরাজকতা বিরাজমান ছিল। অভ্যন্তরীণ হানাহানি এবং বহির্দেশীয় আক্রমণ দ্বারা গোটা দেশ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল। গোপালের আবির্ভাবের আগে বাংলায় যে অবস্থা বিদ্যমান ছিল তা ধর্মপালের খালিমপুর তাম্রশাসনে মাৎস্যন্যায় বলে উল্লিখিত হয়েছে। এ অরাজক অবস্থা থেকে উদ্ভূত হয়েই গোপাল এর অবসান ঘটিয়েছিলেন। আনুমানিক ৭৫৬ থেকে ৭৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৫ বছর স্থায়ী তাঁর শাসনামলে তিনি তাঁর বংশের মতাকে এমনই দৃঢ় করেছিলেন যে, তাঁর পুত্র ও উত্তরাধিকারী ধর্মপাল দিগিজয়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তবে গোপালের রাজত্বকাল সম্পর্কে বিশদ জানার মতো উপাদান আমাদের হাতে নেই।

গোপালের বংশ পরিচয় সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না। শুধু এটুকুই জানা যায় যে, তাঁর পিতা ছিলেন বপ্যট (যাকে শত্রু ধ্বংসকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে) এবং পিতামহ ছিলেন দয়িতবিষ্ণু (যাকে বলা হয়েছে সর্ববিদ্যা-বিশুদ্ধ)। পাল রাজাদের বংশ পরিচয় সম্পর্কিত সমস্যার মতোই যে আদি রাজ্যকে ভিত্তি করে তাদের উদ্ভব সে সম্পর্কেও নিশ্চয় করে কিছু বলা দুরূহ। রামচরিতম্ গ্রন্থে বরেন্দ্র (উত্তরবঙ্গ) পাল রাজাদের জনকভূ (পিতৃভূমি) বলে উল্লিখিত হয়েছে। এতে মনে হয় উত্তরবঙ্গেই পাল রাজগণ তাদের আদি রাজ্য স্থাপন করেছিলেন।

আর্য-মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, পরবর্তী গুপ্তদের অধীনে গৌড় রাজ্য এবং উত্তর-পশ্চিম বাংলায় গোপালের উত্থান হয়েছিল। সুতরাং অনুমিত হয় যে, বাংলার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গোপাল তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সম হয়েছিলেন। তারনাথ গোপালকে মগধ (দক্ষিণ বিহার) জয়েরও কৃতিত্ব দিয়েছেন। আর্য-মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে উল্লিখিত ‘গৌড়তন্ত্র’-এর মধ্যে মগধ অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং দক্ষিণ বিহারও গোপালের রাজ্যের অন্তর্গত ছিল বলে মনে হয়।

গোপালের মতায় আরোহণ সম্পর্কে খালিমপুর তাম্রশাসনের চতুর্থ শ্লোকে নিুরূপ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:

মাৎস্যন্যায়ম্-অপোহিতুম্ প্রকৃতিভি-র্লক্ষ্ম্যাঃ করম্-গ্রাহিতঃ

শ্রীগোপালঃ ইতি তিীশ-শিরসাম্ চূড়ামণিস্-তৎসুতঃ॥

(তাঁর পুত্র শ্রীগোপালকে, যিনি ছিলেন রাজাদের মুকুটমণি, প্রকৃতিগণ মাৎস্যন্যায় বা অরাজকতার অবসানকল্পে লক্ষ্মীর হাত গ্রহণ করিয়েছিলেন)।

গোপালের মতারোহণ সম্পর্কে তারনাথের অনুরূপ একটি রূপকাশ্রয়ী বর্ণনা রয়েছে। খালিমপুর লিপিশ্লোক এবং তারনাথের বর্ণনা থেকে পণ্ডিতগণ মনে করেন যে, জনগণ গোপালকে রাজা নির্বাচিত করেছিল। উপরিউক্ত শ্লোকে ব্যবহৃত ‘প্রকৃতি’ শব্দের সঠিক অর্থ নির্ধারন করা সম্ভব নয়। এ শব্দ দ্বারা প্রজাও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে আবার প্রধান প্রধান অমাত্যও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। তাই গোপালের নির্বাচকমণ্ডলী নির্ধারণ করা দুঃসাধ্য। এমনও ধারণা করা যেতে পারে যে, একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী সৈনিক হিসেবে গোপাল অরাজকতা সৃষ্টিকারী শক্তিসমূহকে উৎপাটিত করে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনে সম হয়েছিলেন এবং এ প্রাথমিক সাফল্যের মাধ্যমেই তিনি জনসমর্থনও লাভ করেছিলেন। [আবদুল মমিন চৌধুরী]

গ্রন্থপঞ্জি AM Chowdhury, Dynastic History of Bengal, Dhaka, 1967.