বরেন্দ্র

বরেন্দ্র বা বরেন্দ্রী উত্তর বঙ্গের প্রাচীন জনপদ পুন্ড্র বা পুন্ড্রবর্ধনের সঙ্গে সমবিস্তৃত একটি প্রাচীন ভৌগোলিক অঞ্চল, যা প্লিস্টোসিন যুগীয় ভূগঠন বারিন্দ ভূভাগে অবস্থিত।

ত্রিকান্ডশেষ নামক প্রাচীন অভিধানে বরেন্দ্রীকে পুন্ড্রবর্ধনের একটি অখন্ড অংশরূপে উল্লেখ করা হয়েছে এবং লেখতাত্ত্বিক অনেক প্রমাণ এর সত্যতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। দক্ষিণ ভারতীয় একটি শিলালিপিতে (৯৬৭ খ্রি.) জনৈক ব্রাহ্মণকে ‘বরেন্দ্রদ্যুতিকারিণঃ’ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। সেন রাজাদের শিলালিপিতে বরেন্দ্র বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে এবং সেগুলির ভিত্তিতে পন্ডিতগণ এ বিষয়ে একমত যে, বৃহত্তর বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী ও পাবনা জেলা নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল গঠিত। কানিংহাম বরেন্দ্রর সীমানা পশ্চিমে গঙ্গা ও মহানন্দা, পূর্বে করতোয়া, দক্ষিণে পদ্মা এবং উত্তরে কুচবিহার ও তরাই অঞ্চলের মধ্যবর্তী ভূভাগ নির্দিষ্ট করেন।

বারো শতকের রামচরিতম্ কাব্যের রচয়িতা সন্ধ্যাকর নন্দী বৃহদ্বটু এলাকার লোক ছিলেন। বৃহদ্বটু ছিল পুন্ড্রবর্ধন (মহাস্থান) নগরের কাছাকাছি বরেন্দ্র মন্ডলের চূড়ামণি (বরেন্দ্রী-মন্ডল-চূড়ামণি)। কাব্যের তৃতীয় পর্বে সন্ধ্যাকর নন্দী পালদের ‘জনকভূ’ বরেন্দ্রের ভূসংস্থান, উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের স্পষ্ট বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং গঙ্গা ও করতোয়ার প্রবাহসহ এর অবস্থান উল্লেখ করেন। গঙ্গা ও করতোয়া যথাক্রমে এর পশ্চিম ও পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত ছিল। বলা হয় যে, রামপাল বরেন্দ্রীতে প্রবেশ করার জন্য গঙ্গা অতিক্রম করেছিলেন। বল্লালচরিত এ শিবমন্দির নামে বিশিষ্ট একটি পবিত্র স্থানের (মহাস্থান) উল্লেখ আছে, যা বরেন্দ্রীর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। বরেন্দ্র সেনযুগে পুন্ড্রবর্ধনভুক্তির একটি প্রশাসনিক ইউনিটে পরিণত হয়। তবকাত-ই-নাসিরীতে বারিন্দকে গঙ্গার পূর্ব দিকে লখনৌতি রাজ্যের একটি অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]