কালিয়াকৈর উপজেলা

কালিয়াকৈর উপজেলা (গাজীপুর জেলা)  আয়তন: ৩১৪.১৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০০´ থেকে ২৪°১৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৯´ থেকে ৯০°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মির্জাপুরসখীপুর উপজেলা, দক্ষিণে সাভারধামরাই উপজেলা, পূর্বে গাজীপুর সদরশ্রীপুর উপজেলা, পশ্চিমে মির্জাপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৮৩৩০৮; পুরুষ ২৪৮২১৯, মহিলা ২৩৫০৮৯। মুসলিম ৪৩৭৩৯৬, হিন্দু ৪৩৫৮৮, বৌদ্ধ ৭৭, খ্রিস্টান ১৩৭৯ এবং অন্যান্য ৮৬৮। এ উপজেলায়  কোচ, বেঁদে প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: তুরাগ, বংশী, সালদা। বোয়ালি বিল, হাওলা বিল, উজান বিল, মার্কাজ বিল এবং গোয়ালার খাল, বেতজুরী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কালিয়াকৈর একসময় সাভার থানার অন্তর্গত ছিল। কালিয়াকৈর থানা গঠিত হয় ১৯২৩ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৭০ ২৭২ ১৬৩৪৯৮ ৩১৯৮১০ ১৫৩৯ ৬১.৪ (২০০১) ৫৬.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৪.৬৬ ১৮ ১৫৭১৬২ ৬৩৭৩ ৬৯.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫.৩৮ (২০০১) ৬৩৩৬ ৩৬২০ (২০০১) ৬৯.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আটাবহ ১৩ ৪৪৩৭ ১৬৮০৫ ১৫৯২৪ ৬২.৮
চাপাইর ২৮ ৯৬৮৫ ১২৯৬৭ ১৩৭১৯ ৫৫.২
ঢালজোড়া ৩৮ ৪৫৪৩ ১০৫৮৩ ১১১৫৭ ৫২.৩
ফুলবাড়ি ৪৭ ১৮৩৮২ ১৯০৯৭ ২০২৭৪ ৪২.৮
বোয়ালি ১৯ ৮৭৬৯ ১২১৩৯ ১২৪৭৬ ৫১.২
মধ্যপাড়া ৫৭ ৮৬৯৭ ১৫৭৯৭ ১৫৫৫৪ ৫৪.৪
মৌচাক ৬৬ ১০৬৬১ ৫৩৪৩৭ ৪৯২২০ ৬২.৭
শ্রীফলতলী ৭৬ ২৪৮৭ ১০৯৫৫ ১০৯৫৩ ৫৭.৯
সূত্রাপুর ৮৫ ৩৮৬৯ ১২৯১২ ১২১৭৭ ৫৪.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ  সিদ্ধিমাধব সাকাশ্বর বৌদ্ধ স্তম্ভ (মধ্যপাড়া), ডাকুরাইলে প্রাচীন সভ্যতা ডোলসমুদ্রের ধ্বংসাবশেষ ও কোটামনি দিঘি, চান্দ্রা মসজিদ (মৌচাক)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলায় কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ফুলবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর পাড়ায় পাকবাহিনীর ঘাটি আক্রমণ করলে ১জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা কালিয়াকৈর ঘাঁটি আক্রমণ করলে ৩৪জন রাজাকার ও ১২জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৮ অক্টোবর কাচিঘাটা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘটিত লড়াইয়ে ৫২জন পাকসেনা নিহত হয়। ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা ফুলবাড়ি এলাকায় ৭জন পাকসেনাকে হত্যা করে এবং মাইন বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে একটি সেতু ধ্বংস করে। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনা ভর্তি ৩টি ট্রাক ধ্বংস করলে ২৭জন পাকসেনা নিহত হয় এবং পরবর্তীতে পাকবাহিনী উপজেলার কাচিঘাটা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। উপজেলার লতিফপুর সেতুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের সম্মূখ লড়াইয়ের পর পাকবাহিনী শ্রীফলতলী গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। ১৩ ডিসেম্বর বংশী সেতুর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘটিত লড়াইয়ে ২জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৪ ডিসেম্বর সফিপুরে কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে এক লড়াইয়ে পাকসেনারা পরাজিত হয় এবং কালিয়াকৈর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন কালিয়াকৈর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪১৩, মন্দির ৯২, গির্জা ৭।

শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬০.৬%; পুরুষ ৬৫.২%, মহিলা ৫৫.৬%। কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৫, মাদ্রাসা ১৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালিয়াকৈর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৮), চাপাইর বি.বি. উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), ভৃঙ্গরাজ তালিবাবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), কালিয়াকৈর বড়ই বাড়ী এ.কে.ইউ. ইন্সটিটিউট ও কলেজ (১৯৪৯), আক্কেল আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), আনসার ভি.ডি.পি. উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৫) (ফুলবাড়ি), ভূপেনশ্বরী গার্লস্ হাই স্কুল (বালিয়াদী)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সুবানী (অর্ধ সাপ্তাহিক), সন্ধি (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩৮, ক্লাব ও সমিতি ১৩২, সিনেমা হল ২, নাট্যদল ৫, মহিলা সমিতি ৬।

বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান নন্দন পার্ক, সিদ্ধিমাধব স্তম্ভ, মাটির পাহাড়, আনসার ভিডিপি একাডেমী, জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বলিয়াদি জমিদার বাড়ী, শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী, তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬%, ব্যবসা ১৩.৬৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৩৯%, চাকরি ১৫.৪% এবং অন্যান্য ১২.৪৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক  ৫৮.৪৮%, ভূমিহীন ৪১.৫২%। শহরে ৫৪.৬১% এবং গ্রামে ৬৮.৯২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, ইক্ষু, সরিষা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, মিষ্টি আলু, অড়হর, তুলা, গম, চিনা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, জাম, আনারস, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৬৯, গবাদিপশু ২৫৫, হাঁস-মুরগি ৫১১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৬ কিমি, আধাপাকারাস্তা ২৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯২৯ কিমি; নৌপথ ৭ কিমি; রেলপথ ১৩ কিমি; রেল ষ্টেশন ১।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা  এ উপজেলায় ওষুধ প্রস্ত্তত কোম্পানি, পোশাক শিল্প, পাটজাত পণ্য শিল্প, রাসায়নিক শিল্প, ফুট ওয়্যার, ইস্পাত কারখানা, ইটের ভাটা প্রভৃতি রয়েছে।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশি কাথা, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৯। কালিয়াকৈর, সফিপুর, ফুলবাড়িয়া, বড়ইবাড়ী, চাবাগান, বেনুপুর হাটবাজার এবং  রঘুনাথপুর মেলা, কেশবনাথ পাগলার মেলা, বেতারকেন্দ্র বাউল মেলা, কালিয়াকৈর জন্মাষ্টমী মেলা, বরিয়াবহ পীরবাড়ীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   কলা, পেঁপে।

বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮৪.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ উপজেলার ৮৪০০ হেক্টর (প্রায় ২৬.৭৩%) বনভূমি। ভাওয়াল গড়ের একাংশ এ উপজেলার অন্তর্ভূক্ত।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৬.৮%, ট্যাপ ১৯.৮% এবং অন্যান্য ৩.৪%। এ উপজেলার প্রায় ৪০ টি অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৭৭.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, বেসরকারি হাসপাতাল ৪, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, কারিতাস। [আয়ুব রানা]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালিয়াকৈর উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।