শাহ্ গরীবুল্লাহ
শাহ্ গরীবুল্লাহ (আনু. ১৬৭০-১৭৭০) দোভাষী পুথি রচয়িতা। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার হাফেজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নামে প্রচলিত এ যাবৎ পাঁচখানি কাব্যের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলি হলো: ইউসুফ জোলায়খা, জঙ্গনামা, সোনাভান, সত্যপীরের কথা এবং আমীর হামজা (১ম খন্ড)। কিন্তু এ কাব্যগুলি বটতলার পুথি প্রকাশকদের দ্বারা নানা ব্যক্তির নামে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন ইউসুফ জোলায়খা মুনসী ফকির মোহাম্মদের নামে প্রচলিত হলেও কাব্যের প্রায় সর্বত্রই ‘অধীন ফকির’ বা ‘গরীব ফকির’ নামে ভণিতা আছে, যা ফকির গরীবুল্লাহকেই এর রচয়িতা হিসেবে প্রমাণ করে।
ইউসুফ জোলায়খা, জঙ্গনামা ও আমীর হামজা কাব্যের উৎস আরবি ও ইরানি সাহিত্য, আর সোনাভান ও সত্যপীরের কথা কাব্যের উৎস ভারতীয় সাহিত্য। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় এসব বিষয় নিয়ে বহু কাব্য রচিত হয়েছে। আঠারো শতকের বাংলা সাহিত্যএ শাহ্ গরীবুল্লাহর বড় পরিচয় দোভাষী পুথিসাহিত্যের নির্মাতা হিসেবে। তিনিই প্রথম কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, ভুরসুট ও মান্দারণ নগর কেন্দ্রিক অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত মুসলিম জনগণের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহূত বাংলা ভাষার সঙ্গে আরবি-ফারসি ও উর্দু-হিন্দি ভাষার প্রয়োগ ঘটিয়ে এক ভিন্ন ধারার কাব্যরীতি গড়ে তোলেন। এ ধারার কাব্যই দোভাষী পুথি নামে পরিচিত। উনিশ শতক পর্যন্ত বহু কবি এ রীতিতে কাব্য রচনা করেছেন। উল্লেখ্য যে, শাহ্ গরীবুল্লাহর প্রথম কাব্যখানি শুদ্ধ বাংলা ভাষায় রচিত। তিনি একাধারে সাধক ও কবি ছিলেন। তাঁর রচনায় ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কথা উচ্চারিত হলেও পরধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধার মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে।[মুহম্মদ আবদুল জলিল]