মৌলবাদ
মৌলবাদ উৎপত্তিগত দিক থেকে মৌলবাদ (Fundamentalism) একটি খ্রিস্টীয় শব্দ এবং বর্তমানে শব্দটি ইসলাম ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মীয় চরমপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ একটি বিতর্কিত শব্দ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। এ সব দেশে মৌলবাদ বলতে যেকোনো ইসলামি আন্দোলনকে নির্দেশ করে যারা কোরান ও শরিয়ার শিক্ষাকে কঠোরভাবে মেনে চলার পক্ষে মত প্রদান করে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে এবং ধর্মীয় রীতি-নীতি কঠোরভাবে মেনে চলার অর্থে ‘মৌলবাদ’ শব্দটির উৎপত্তি খ্রিস্টীয় ‘মৌলবাদী’ (Fundamentalists) শব্দ থেকে হয়েছে। মোরমন্স (Mormons), পেন্টিকোস্টালস (Pentecostals), ইভনজেলিক্যাল্স (Evangelicals) ইত্যাদি খ্রিস্টীয় নাম বা অভিধাগুলো এই অর্থে মৌলবাদী যে, তাঁরা বাইবেলের প্রতিটি শব্দকে সত্য ও পবিত্র মনে করে এবং এগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। সকল পুরাতন ধর্মে সহজাতভাবেই মৌলবাদী ধারণা বিদ্যমান আছে। কালের পরিক্রমায় পুরাতন ধর্মগুলো যখন বিভিন্ন সম্প্রদায়গত ব্যাপক মতাদর্শ গড়ে তোলে, তখন তাঁরা তাঁদের মতাদর্শকে বিশেষ প্রামাণিকতা দেওয়ার দাবি করে এবং এসব মতাদর্শকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে।
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমরা শ্রমণ, পাষন্ড, রাক্ষস ইত্যাদি নামে শাস্ত্র বিরোধী সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব লক্ষ্য করি। সমাজশাসনে নিযুক্ত ‘ধর্মানুসারী’ জাতিগোষ্ঠী তাদের শাস্তি প্রদান করত। কলিযুগে যখন বিরাট সংখ্যক জনগণ ‘সত্য’ ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতি-নীতি-প্রথা থেকে দূরে সরে আসে, তখন কল্কি অবতার পৃথিবীতে আর্বিভূত হয়ে প্ররোচনার দ্বারা সংশোধনবাদীদের ‘সঠিক ধর্মীয়’ পথে আনার চেষ্টা করেন, কিংবা প্রয়োজন হলে তাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার বা হত্যা করেন। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে ধর্ম-বিরোধীদের (ধর্ম বিষয়ে প্রচলিত মতের বিরুদ্ধ বিশ্বাস) নিয়মিত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার প্রথা ছিল। ইউরোপের মধ্যযুগীয় ইতিহাস এবং এশিয়া এরূপ ধর্মীয় বিশোধন উদ্যোগের জন্য সুপরিচিত ছিল।
প্রচলিত বা সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস ও জীবনব্যবস্থার প্রতি আধুনিক মানুষের চাপ এবং এর ফলে ধর্মীয় ও জীবনব্যবস্থার বিচ্যুতি ও অবক্ষয়ের কারণে অনেকে হারিয়ে যাওয়া বা পরিমার্জিত ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতি-নীতি প্রথার সঙ্গে কিছু সংযোজন বা এগুলো পুনরুজ্জীবন করা প্রত্যাখ্যান করেন। মৌলবাদ ‘সত্য’ অতীতে ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি রাজনৈতিক বিষয়, যদিও এই দিকটি প্রায়ই প্রকাশ করা হয় না। মৌলবাদ মূলত কর্তৃত্ববাদী বা প্রাধিকারবাদী এই অর্থে যে, এটি সমাজ ও সরকারের সকল বিষয় মূল ধর্মীয় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কারণ মৌলবাদ ধর্মীয় নীতিকে ‘সঠিক’ মানব অস্তিত্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয় মনে করে। অনেকেই ইসলামের পুনরুজ্জীবনকে মৌলবাদ নামে আখ্যায়িত করে, কিন্তু ইসলামি পুনরুজ্জীবন ধর্মনিরপেক্ষ ও পাশ্চাত্যকরণ প্রভাবের উপাদানের অনুপ্রবেশকে প্রবলভাবে বিরোধিতা করে এবং এর পরিবর্তে ইসলামিক আচরণের সঠিক নীতিমালাসহ ইসলামিক আইন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। রাজনৈতিক দুর্নীতিও তাদের লক্ষ্যবস্ত্ত, কারণ তারা মনে করে ইসলামিক জীবনব্যবস্থা অবহেলা করার কারণেই রাজনৈতিক দুর্নীতির উৎপত্তি হয়।
উনিশ শতকের শেষের দিকে ও বিশ শতকের শুরুতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিস্টীয় মৌলবাদ লক্ষ্য করি। খ্রিস্ট মৌলবাদীরা প্রচন্ডভাবে আধুনিক নব্য প্রবর্তিত রীতি-নীতির বিরোধিতা করে, কারণ তারা মনে করে আধুনিকপন্থীরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বাইবেলের বিশ্বস্ততা ও সঠিকতার ভিত্তি দুর্বল করেছে। নব্য রীতি-নীতি ও আধুনিকতার বিরোধিরা একটি বিশেষ অর্থে ‘মৌলবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে। তাদের মতে, বাইবেল হচ্ছে ঈশ্বরের আন্তর-শব্দ। তারা মনে করে, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বাইবেলের নৈতিক নির্দেশ, বিশেষ করে দশটি বিধান অনুসারে জীবনযাপন করবে। তারা বিশ্বাস করে জৈবিক বিবর্তন ভুল, এবং যিশু খ্রিস্ট সহস্রাব্দের পূর্ণশান্তি প্রবর্তনের জন্য পৃথিবীতে আগমন করবেন।
মৌলবাদী ধ্যান-ধারণা অনুশীলনের ক্ষেত্রে ইহুদিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং তারা সবচেয়ে জঙ্গি মনোভাবাসম্পন্ন। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইহুদিবাদকে সবচেয়ে জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইহুদিবাদীরা তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ তোরা এবং তালমুদ-এ উল্লিখিত ধর্মীয় আইন ও নৈতিক নির্দেশনাকে কঠোরভাবে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেয়। এই নির্দেশ অমান্যকারীকে সমাজচ্যুত করা হয়।
ইরানে ব্যাপক ইসলামি বিপ্লবের (১৯৭৮-৭৯) পর পশ্চিমা দেশসমূহ ইসলামি মৌলবাদী ধারণা আবিষ্কার করে। ইরানের এই ইসলামি বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত রেজা শাহ পহলবিকে (১৯১৯-৮০) ক্ষমতাচ্যুত করে এবং তাঁর সকল আধুনিক সংস্কারের বিলোপসাধন করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ইসলামের মূলনীতি ও বিদেশি প্রভাবমুক্ত ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ইরানের বিপ্লব ছিলো ইরান থেকে আমেরিকার আধিপত্য উচ্ছেদ করা। আরো অবিশ্বাস্য বিষয় হচ্ছে, বলা হয় টুইন টাওয়ার ঘটনা (১১ সেপ্টেম্বর ২০০১) আল-কায়দা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এ দুটি অজুহাতসন্ধানী ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামি পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে বিস্তর লেখা-লেখি শুরু হয়, এবং এর ফলে পাশ্চাত্যে তথাকথিত ইসলামি মৌলবাদী ধারণা জন্মলাভ করে।
ইসলামি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারণা একেক দেশে এবং সমস্ত ঐতিহাসিক যুগব্যাপী ভিন্ন প্রকৃতিসম্পন্ন। কিছু ইসলামি পুনরুজ্জীবি আন্দোলন সমগ্রতাবাদে রূপলাভ করে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা হয়নি। কিছু আন্দোলন মার্কসবাদ ও বিভিন্ন প্রকার সমাজতান্ত্রিক ধারণা নিয়ে চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়, আবার অন্যান্য আন্দোলন কোনো প্রকার পরিবর্তন সাধন না করে খিলাফত সময়কার ইসলামি ধ্যান-ধারণা বজায় রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। অবশ্য অধিকাংশ ইসলামপন্থীরা শুধুমাত্র কোরান ও সুন্না নির্দেশিত আচরণ বিধি অনুসরণ করার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। তাঁরা যুক্তি প্রদান করে যে, ইসলাম হচ্ছে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় আইনসহ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সুতরাং, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামপন্থীরা বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা নৈতিকভাবে ইসলামের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তাঁদের দৃষ্টিতে ইসলাম ও ইসলামিক উম্মাহর শত্রু হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আধিপত্যবাদ এবং পৃথিবীব্যাপী অন্যান্য ইহুদিদের স্বার্থ। মার্কিন-ইহুদি সমর্থকদের যুক্তভাবে ইসলামের প্রকৃত বা সুপ্ত শত্রু হিসেবে দেখা হয়। তাদের যুদ্ধ করে হটিয়ে দেওয়াকে এরা বিবেক নির্দেশিত কাজ বলে মনে করে, এবং এই কাজটি সফলভাবে সম্পাদন করার জন্য তারা অভ্যন্তরীণ আধুনিকপন্থীদের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক নবজীবনলাভ আন্দোলন শুরু করে।
একথা সুবিদিত যে, নবী মোহম্মদ (স.) ও খিলাফতের সময়ের আদি ইসলামি ধ্যান-ধারণায় প্রত্যাবর্তনের ইসলামপন্থী নৈতিক নবজীবনলাভের আন্দোলনের ডাক ইসলামের ইতিহাসে মাঝে মধ্যেই ঘটেছে। আট শতক থেকে বারো শতক পর্যন্ত কলা, বিজ্ঞান ও দর্শনচর্চায় ইসলামের স্বর্ণযুগ ছিল। এ সময় ইসলামি চিন্তাচেতনা ও দর্শনের সবচেয়ে বেশি উন্নতিসাধন হয় এবং ইসলামি সাম্রাজ্যের কর্তৃত্ব ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। ইসলামি সাম্রাজ্যের গৌরবজ্জ্বল দিকটি ছিল ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিভিন্ন আদর্শ ও প্রতিষ্ঠানের সহাবস্থান যা ইতোপূর্বে খিলাফত যুগে অনুপস্থিত ছিল। ইসলাম ধর্মে অধিকাংশ নবদীক্ষিতদের পূর্বসংস্কার সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা ব্যতীতই এই ধর্মে স্থান দেওয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়টিকে কোনো সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, কারণ রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে। ফলে এতে ইসলাম ধর্ম বিপন্ন হওয়ারও কোনো আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু বিপরীতক্রমে রাজনৈতিকভাবে খ্রিস্ট শাসকদের অধীনে থাকাকালে মুসলিম নেতৃবৃন্দ পবিত্র কোরান ও শরিয়া নির্দেশিত ইসলামের মূলনীতিসমূহ প্রচলন করাকে তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করে।
আঠারো শতকের শেষের দিকে আরবে সংঘটিত ওহাবী আন্দোলন থেকে প্রত্যক্ষভাবে বাংলায় ইসলামি পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের ধারণা গ্রহণ করা হয়। এই আন্দোলনের দুই বিখ্যাত বাঙালি অনুসারী হলেন তিতুমীর (১৭৮২-১৮৩১) ও হাজী শরীয়তউল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০)। বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা ছিল কৃষক ও কারিগর এবং তারা অপেক্ষাকৃত ইসলাম ধর্মে নবদীক্ষিত। ফলে তারা একটি বিরুদ্ধ-সমন্বয়ধর্মী ইসলামের প্রতি আগ্রহী ছিল। সুলতানি ও মুগল আমলের রাজনৈতিক অবস্থায় এ ধরনের বিরুদ্ধ-সমন্বয়ের প্রতি কোনো হুমকি দেখা দেয়নি। কিন্তু ব্রিটিশদের অধীনে বাংলায় বিরুদ্ধ-সমন্বয়ধর্মীতা ইসলামের অস্তিত্বের প্রতি সুপ্ত আশংকা হয়ে দেখা দেয়। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে মুসলিম সমাজকে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন ও ধর্মীয়ভাবে গতিশীল উঠতি হিন্দু মধ্যবর্তী শ্রেণির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সনাতনী ধর্মীয় ব্যবস্থাকে সংশোধন করা প্রয়োজন হয়ে পরে বলে মনে করা হয়। তিতুমীরই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামি বা মৌলবাদী ধারায় মুসলিম সমাজের আধ্যাত্মিক সংস্কারসাধনের বিষয়টি উপলব্ধি করেন। তিনি হজব্রত পালন করেন এবং মক্কার ওহাবি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি বাংলার কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামের মূলনীতিসমূহ প্রচলনের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ইসলামি মতবাদ প্রচারের সময় তিতুমীর স্থানীয় জমিদারদের বাধার সম্মুখীন হন, কারণ তারা মনে করেন তিতুমীরের আন্দোলন তাদের সামাজিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রতি হুমকি স্বরূপ। তিতুমীর জমিদার ও ইসলামের মৌলনীতি অনুসরণে অনিচ্ছুক মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের প্রতিহত করার জন্য এক পর্যায়ে সামরিক অভিযান চালানো হয়। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এক সম্মুখ লড়াইয়ে তিতুমীর নিহত হন, এবং তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জঙ্গি সংস্কার আন্দোলনের সাময়িক অবসান ঘটে।
পুনরুজ্জীবন আন্দোলনের আরেকজন এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন হাজি শরীয়তউল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০)। তিনি ওহাবী আন্দোলনের পীঠস্থান আরবে বেশ কয়েক বছর বসবাস করে আরবি ও ইসলামি বিদ্যা শিক্ষালাভ করে ওহাবী মতবাদের একজন একনিষ্ঠ সক্রিয় সদস্য হিসেবে দেশে ফিরে আসেন। শরীয়তউল্লাহ বিরুদ্ধ-সমন্বয়ী মুসলমানদের প্রচলিত জীবনধারা ত্যাগ করে কঠোরভাবে ইসলামের মূলনীতি তথা ফরজ অনুসরণ করে চলার আহবান জানান। এভাবে তাঁর অনুসারীগণ ফারায়েজি নামে পরিচিতি লাভ করে। শরীয়তউল্লাহর শরিয়া ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতি বেশ সফলভাবে কার্যকরী হয় এবং তিনি পূর্ববাংলায় একজন প্রভাবশালী ইসলামি সংস্কারকে পরিণত হন। কিন্তু তাঁর পুত্র দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২) একজন চরমপন্থী ফারায়েজি মতবাদ প্রচারকে পরিণত হন। তিনি মুসলমানদের দাড়ি এবং ওহাবী রীতিতে পোষাক পরিধানের আহবান জানান। ফারায়েজি চিন্তাচেতনার বিরোধীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্য তিনি ফারায়েজি গ্রামসমূহে স্ব-নিয়ন্ত্রিত পঞ্চায়েত প্রথার পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনি জনগণকে স্থানীয় বিবাদ সমাধানের জন্য ব্রিটিশ আইন দ্বারা পরিচালিত ইংরেজ বিচারালয়ের পরিবর্তে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। তিনি লাঠিয়াল বাহিনী সংগঠিত করে আন্দোলনের বিরোধীদের প্রতিহত করার কাজে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া দুদু মিয়া ছোট ছোট গ্রাম, উপ-অঞ্চল ও বসতি (৫০ থেকে ৫০০ গ্রামবাসী নিয়ে) স্থাপন করেন তাদের মধ্য থেকে গ্রাম খলিফা হিসেবে একজন ঘনিষ্ট সহযোগী নিয়োগ দেন যাতে তিনি তাঁর সঙ্গে ও গ্রামবাসীদের মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করতে পারেন। তিনি ফারায়েজি গ্রামসমূহকে গির্দায় বিভক্ত করে খলিফা নামে একজন তত্ত্ববধায়ক নিয়োগ করেন। গ্রাম খলিফাগণ গির্দা খলিফাকে প্রধান করে একটি পর্ষদ (Council) গঠন করেন ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে স্থানীয় বিবাদের নিষ্পত্তি করেন। তিনি ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন এবং তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক উপরিস্থ খলিফা নিয়োগ দেন। এই উপরিস্থ খলিফাগণ পরিস্থিতি-সৃষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা খলিফাদের দ্বারা পাঠানো বিষয় চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য তাঁকে পরামর্শ দিতেন। এভাবে দুদু মিয়া ব্রিটিশ রাষ্ট্রের মধ্যে একটি প্রকৃত ইসলামিক রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭) ব্যর্থতা ইসলামপন্থী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীদের ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করে। সিপাহি বিদ্রোহের অব্যবহিত পূর্বে একদল উলামা এই ফতোয়া প্রদান করেন যে, ব্রিটিশদের অধীনে ইসলাম নিরাপদ নয়, সুতরাং ইসলাম রক্ষার একমাত্র পথ হচ্ছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। সিপাহি বিদ্রোহের ব্যর্থতার ফলে অন্য একটি দল এই ফতোয়া প্রদান করেন যে, ব্রিটিশ-ভারতে ইসলাম নিরাপদ। ব্রিটিশ সরকার এই ফতোয়াকে মক্কার শরিয়া দ্বারা অনুমোদন করিয়ে নেয়। এই মতবাদকে কেন্দ্র করে বাংলার মুসলিম সম্প্রদায় র্যালি বা মিছিল করে এবং এভাবে বাংলা ও বাংলার বাইরে ইসলামি মৌলবাদী আন্দোলনের জঙ্গিভাব পরিত্যক্ত হয়। দিল্লীর উত্তর-পূর্ব উপ-শহর দেওবন্দে স্থাপিত মাদ্রাসা (১৮৬৭) পরবর্তীকালে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পুনরুজ্জীবনবাদী বা ইসলামি ধ্যান-ধারণা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেওবন্দ থেকে অ-রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সংগঠন তাবলিগ জা’মাত জঙ্গিভাব ব্যতীত ইসলাম বিশুদ্ধকরণের প্রচেষ্টা শুরু করে। জা’মাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামের পুনরুজ্জীবন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে অ-মুসলিমদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা।
পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, গণ দারিদ্র্য এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থানচ্যুতির প্রেক্ষাপটের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি’ নামে এক হিন্দু মৌলবাদী আন্দোলন শুরু হয়। দয়ানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে শুদ্ধি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মে পূর্বে যে সকল হিন্দু ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের পুনঃধর্মান্তরিত করা। এই আন্দোলনের সাফল্য তাবলিগ জা’মাতকে শুদ্ধি আন্দোলনে পুনঃধর্মান্তরিত দরিদ্র মুসলমানদের ইসলামের মূলনীতি শিক্ষা দিতে আরো সক্রিয় করে তোলে। উনিশ শতকের প্রথম দশকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলায় ইসলাম ধর্মকে শক্তিশালী করার তবলিগ জা’মাতের ধারণা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ শতকের প্রথমার্ধে রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে তাদের শান্তিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তাবলিগ জামাত অনুসারে ইসলামের প্রকৃত শত্রু বিদাহ (bidah) (নতুন কিছুর প্রবর্তন) নয়, স্বয়ং ব্রিটিশ শাসন। খিলাফত এবং স্বরাজ আন্দোলনএর (১৯১৯-২৫) অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম বিষয় ছিল সাম্প্রদায়িক শান্তি ও সম্প্রীতি যা গান্ধী ও কংগ্রেস সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিল। অবশ্য ১৯২০ সালের পরে হিন্দু-মুসলিম বন্ধুতার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।
পাকিস্তানের ভিত্তি ছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদ। মুসলমানরা চিন্তা করেছিলেন পাকিস্তান হবে ইসলাম ও ইসলামিক সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল। কিন্তু পরবর্তী ঘটনাবলি পূর্ব বাংলার জনগণের এই সুখস্বপ্ন ভেঙে দেয়। উপেক্ষিত ও অবহেলিত হয়ে তারা পাকিস্তানের ধারণা পরিত্যাগ করে এর স্থলে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকশিত করে। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের সময় (২৬ মার্চ ১৯৭১-১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাঙালি ও বিহারি মুসলিম সম্প্রদায় আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, প্রস্তাবিত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে ইসলাম নিরাপদ নাও হতে পারে, কারণ নতুন রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতিতে ইসলামকে একটি আদর্শ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেনি। সুতরাং তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার কারণ খুঁজে পায় এবং পাকিস্তানি পেশাদার সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের নিরাপত্তার ভয় দূর করার জন্য স্বাধীনতার পর সরকারিভাবে পুনঃপুন সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাংলাদেশে ইসলামের জন্য হুমকি নয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-শামস, আল-বদর বাহিনী, মুসলিম লীগ, জামায়েতে ইসলাম পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের প্রকাশ্যে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে শত্রু ভাবাপন্ন অবস্থান গ্রহণ করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার তাদের এই প্রত্যাশায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে যে, তারা তাদের কৃত অপরাধের জন্য অনুশোচনা করবে এবং নতুন রাষ্ট্রের জাতি গঠনে অংশগ্রহণ করবে। মূলত তাদের উদ্বেগ দূর করা এবং অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ইসলামি সম্মেলন সংস্থায় (Organization of Islamic Conference) যোগদান করে। ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। পূর্বের সব অনুদানের তুলনায় মাদ্রাসা ও মসজিদে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অনুদান দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও কলেজ স্তরে ইসলামিক স্টাডিজ শিক্ষাদানকে উৎসাহিত করা হয়। কুষ্টিয়ায় একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় (১৯৮০)। ইসলামপন্থীদের চাহিদা পরিপূরণের জন্য সংবিধান বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হয়। ১৯৮৮ সালে প্রথম ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম করা হয়। এত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও ইসলামের নিরাপত্তা সম্পর্কে ইসলামপন্থীদের আশঙ্কা কখনো দূর হয়নি। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা ও পাশ্চাত্যের আধিপত্যবাদী বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ইসলামের নিরাপত্তার একমাত্র উপায় হিসেবে ইসলামী আন্দোলনে যেতে বাধ্য করে।
তসলিমা নাসরীন নামক জনৈক নারীবাদী লেখিকার অত্যন্ত বিতর্কিত একটি প্রকাশনাকে (লজ্জা) কেন্দ্র করে ১৯৯৪ সালে ধর্মীয় অধিকার ও রাজনৈতিক উদারতার মধ্যে সংস্কৃতির বিভক্তি সুস্পষ্টরূপ ধারণ করে। উদারপন্থীরা উক্ত পুস্তকে বর্ণিত তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করে, ইসলামপন্থীরা তাকে মুর্তাদ (স্বধর্মত্যাগী) ঘোষণা করে এবং তার মাথার মূল্যের বিনিময়ে পুরস্কার ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে তারা হরতাল, লং মার্চ ও র্যালি করে এবং কোনো ব্যক্তি, সম্প্রদায়, রাজনৈতিক দল সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি কর্তৃক মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতি অনিষ্টকামী ও অপমানজনক কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকার জন্য ধর্মীয় অবজ্ঞা আইন পাশ করার জন্য সরকারকে চাপ দেয়। উদারপন্থীদের বিরুদ্ধ-প্রতিবাদে এই বিভক্তি আরো বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীকালে এটি বৃদ্ধি পেয়েই চলছে। তসলিমার লজ্জা গ্রন্থটি প্রকাশের ফলে জামায়েতী ইসলামী বাংলাদেশসহ তেরটি ইসলামপন্থী দল জোটবদ্ধ হয়ে ইউনাইটেড এ্যাকশন্স কাউন্সিল (UAC) গঠন করে এবং ১৯৯৪ সালের ২৯ জুলাই ঢাকায় কুরআন দিবস পালন করে। খুব সামান্য জনসমর্থন নিয়ে এই জোট দারিদ্র্য থেকে নারীদের মুক্তি ও লিঙ্গ-বৈষম্য বিমোচনে এনজিও কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করে। তারা যুক্তি প্রদান করে যে, এনজিও ও তার স্থানীয় দল-বল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের নামে ইসলাম-বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমেরিকা সমর্থিত এনজিও তাদের আক্রমণের শিকার হয়।
১৯৯৯ সালের ৩ জুন কিছু মৌলবাদী দল সর্ব প্রথম তাদের জঙ্গি লক্ষ্য ঘোষণা করে। তারা ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাতবোমা নিক্ষেপ করে ১০ জন মানুষ হত্যা করে। উদারপন্থীদের নিকট এটি ছিল তাদের আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা যে, তারা তাদের মৌলবাদী ও জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ২০০৫ সালের ২৫ আগস্ট তাদের দুঃসাহসিক প্রস্ত্ততির কথা এক রাতের মধ্যে বাংলাদেশের সব কটি জেলায় একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে ঘোষণা করা হয়। অবশ্য এতে তাদের সাময়িকভাবে কাউকে জখম করার ইচ্ছা ছিল না। সন্ত্রাসবাদীরা তাদের আক্রমণ স্থল হিসেবে বিচারব্যবস্থাকে বেছে নেয়, কারণ তাদের মতে বিদ্যমান আইন ও বিচারব্যবস্থা অনৈসলামিক। তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করে হত্যাকান্ড ঘটায়। এই বোমা হামলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনায় বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান যাতে ৮ জন নিহত হয় এবং ২০০২ সালের ২১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা হামলা যাতে ২১ জন নিহত হয়। ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর তারা ঝালকাঠির দুইজন বিচারককে হত্যা করে। এই হত্যকান্ডের মূলহোতাকে গ্রেফতার করা হয়, বিচার করা হয় এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়।
সংবিধানসম্মত ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সংগঠিত দল হচ্ছে জামায়েতে ইসলামী বাংলাদেশ। নির্বাচন কমিশন থেকে খাঁটি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি এই ইসলামপন্থী দলটি তাদের গঠনতন্ত্র থেকে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিছু ধর্মরাজতান্ত্রিক/মোল্লাতান্ত্রিক (theocratic) ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে। অবশ্য অন্যান্য অধিকাংশ মৌলবাদী দল মনে করে যে, কুরআন ও সুন্নাহই রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তি হওয়া উচিৎ। এসব দলের মধ্যে রয়েছে:ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খিলাফত মজলিশ, জাতীয় মুসল্লি কমিটি, আহলে হাদিস, উলামা কমিটি, ইসলামিক ছাত্র সেনা, জমিয়াতুল মোদারাসিন, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ ইত্যাদি। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানকে ইসলামিকরণ।
কিন্তু অন্যান্য গুপ্ত দল জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে ঐ একই উদ্দেশ্য অর্জন করতে চায়। তারা তাদের বিদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে। তারা বোমা তৈরি এবং তাদের লক্ষ্যবস্ত্তর প্রতি বোমা ব্যবহারের জন্য আধা-সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি দলের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জামাতউল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি, বি.), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), আল্লাহ’র দল ও মুভমেন্ট অব ইসলামিক হলি ওয়ার। একথা বিশ্বাস করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই যে, এসব দলের উল্লেখযোগ্য অনুসারী ও জনসমর্থন আছে। এই সামগ্রিক পর্যালোচনা এ কথাই নির্দেশ করে যে, মধ্যপন্থী ইসলামি দলগুলোর জনসমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকলেও জঙ্গি মৌলবাদের সমর্থন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। [সিরাজুল ইসলাম]
গ্রন্থপঞ্জি Muni-ud-Din Ahmad Khan, History of the Fara’idi Movement in Bengal (1818-1906), Pakistan Historical Society, 1965; Muni-ud-Din Ahmad Khan, Selections form Bengal Government Records on Wahabi Trials (1863-1870), Asiatic Society of Pakistan, Dacca, 1961; W.W. Hunter, Our Indian Musalmans: Are they bound in conscience to rebel against the Queen? London, 1871; Barbara D. Metealf, “Traditionalist” Islamic Activism: Deoband, Tablighis, and Talibs, in htt:/essays.ssrcorg/septll/essays/metcalf.htm; মাসুদুল হক, মৌলবাদ, ঢাকা, ২০০৭।