রাজাকার

রাজাকার  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিরা রাজাকার শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়। যুদ্ধরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে রাজাকার দল গঠিত হয়। ‘রাজাকার’ ফার্সি শব্দ। এর অর্থ ’স্বেচ্ছাসেবী’। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগকালে তদানীন্তন হায়দ্রাবাদের শাসক নিজাম ভারতভুক্ত হতে অনিচ্ছুক থাকায় ভারতের সামরিক বাহিনীকে প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য রাজাকার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানকল্পে মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থী কর্মী নিয়ে হায়দ্রাবাদের ‘রাজাকার’-এর অনুকরণে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যান্য অংশেও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়।

প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। ১৯৭১ সালের ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স ১৯৭১ জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। তবে এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তানপন্থী স্থানীয় নেতাদের হাতে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এক অধ্যাদেশ বলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়।

রাজাকার বাহিনীর প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল ১৫ দিন। ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই কুষ্টিয়ায় রাজাকার বাহিনীর প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং সমাপ্ত হয়। পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক অধিনায়ক জেনারেল .এ.কে নিয়াজী ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর সাভারে রাজাকার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে বিদায়ী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের মর্যাদায় উন্নীত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর স্বাভাবিক বিলুপ্তি ঘটে।  [মুনতাসীর মামুন]