মেহেরুল্লাহ, মুনশি মোহাম্মদ
মেহেরুল্লাহ, মুনশি মোহাম্মদ (১৮৬১-১৯০৭) কবি, ধর্মপ্রচারক, সমাজ-সংস্কারক। ১৮৬১ সালে যশোর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঘোপ গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস একই এলাকার ছাতিয়ানতলায়।
মেহেরুল্লাহ যশোরের মৌলবি মোসহারউদ্দীনের নিকট ধর্মশিক্ষা এবং মৌলবি মোহাম্মদ ইসমাইলের নিকট আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষা লাভ করেন। এ সময় তিনি কুরআন-হাদিস ও ফারসি সাহিত্যেও বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন। দারিদ্রে্যর কারণে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ সম্ভব হয়নি। তিনি কিছুকাল সরকারি চাকরি করার পর দর্জিবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যশোরে দর্জির দোকান খুলে স্বাধীন ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় খ্রিস্টান পাদরিগণ ইসলাম ও হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে অপপ্রচার করার চেষ্টা করলে মেহেরুল্লাহ বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করেন। এ ব্যাপারে পাদরিদের সঙ্গে তিনি একাধিকবার প্রকাশ্য বিতর্কে অবতীর্ণ হন। ক্রমে তিনি ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেন এবং একজন ভাল বক্তা হিসেবে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
মেহেরুল্লাহ ইসলামের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে বাংলা ও আসামের বিভিন্ন ধর্মীয় জলসায় বক্তৃতা দিয়ে দরিদ্র, হতাশাগ্রস্ত ও সম্বিতহারা মুসলমান সমাজকে জাগাবার চেষ্টা করেন। তিনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত ও বিপথগামী অনেক মুসলমানকে ইসলাম ধর্মে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি যশোরের মনোহরপুর গ্রামে ‘মাদ্রাসায়ে কারামাতিয়া’ এবং ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ‘এসলাম ধর্মোত্তেজিকা সভা’ (১৮৮৯) স্থাপন করেন। কলকাতার সুধাকর, ইসলাম প্রচারক প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ধর্ম ও সমাজ সংক্রান্ত তাঁর প্রধান গ্রন্থগুলি হলো: খ্রীষ্টীয় ধর্মের অসারতা (১৮৮৭), বিধবাগঞ্জনা ও বিষাদভান্ডার (১৮৯৪), মেহেরুল এসলাম (১৮৯৭), হিন্দুধর্ম রহস্য ও দেবলীলা (১৮৯৮, ২য় সং) এবং মুসলমান ও খ্রীষ্টান তর্কযুদ্ধ (১৯০৮, ২য় সং)। দ্বিতীয় ও চতুর্থ গ্রন্থদ্বয়ে হিন্দু সমাজের বিধবাবিবাহ, হিন্দু দেবদেবীর লীলারহস্য এবং অন্যান্য কুসংস্কারের বিরূপ সমালোচনা করা হয়েছে। উভয় গ্রন্থই অশ্লীলতা ও সাম্প্রদায়িকতার কারণে তৎকালীন সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয়। [মহসিন হোসাইন]