মানসী

মানসী  মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। আলোকচিত্র সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হপসিং কোম্পানির (৪, চৌরঙ্গী লেন, কলকাতা) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আড্ডা থেকে (অনানুষ্ঠানিক সাহিত্য সভা) এ পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করেছিল। উনিশ শতকের শেষ এবং  বিশ শতকের প্রথমভাগে সংবাদ প্রভাকর, বঙ্গদর্শন, সবুজপত্রভারতী সহ এ জাতীয় সাময়িক পত্রকেন্দ্রিক ‘আড্ডা’ প্রবণতা বাংলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। মানসী-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিল ভিন্ন ধরনের। সাময়িকীটির পরিকল্পনায় ছিলেন হপসিং কোম্পানির ম্যানেজার সুবোধচন্দ্র দত্ত ও কেল্লনার কোম্পানির কর্মচারী ফকিরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ‘রতন লাইব্রেরি’ খ্যাত শিবরতন মিত্র আরও কয়েকজনকে নিয়ে এঁদের সঙ্গে পরে যোগ দেন। সাময়িকী প্রকাশে প্রয়োজনীয় অর্থ ‘চাঁদা’ হিসেবে সংগৃহীত হয়। সুবোধচন্দ্র দত্ত, ফকিরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শিবরতন মিত্র এবং ইন্দুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় সম্পাদনা পরিষদ। আলোচ্য মাসিক পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৩১৫ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে (১৯০৯ খ্রি), যাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রচনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশের কয়েক মাস পর শিবরতন মিত্র কলকাতা ত্যাগ করায় যতীন্দ্রমোহন বাগচী সম্পাদনা পরিষদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

প্রথম সংখ্যা প্রকাশের ছয় বছর পর (ফাল্গুন ১৩২০ বঙ্গাব্দ) ১৯১৪ সালে নাটোরের জগদীন্দ্রনাথ রায় পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তী দুবছরের মধ্যে অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের সহযোগিতায় জগদীন্দ্রনাথ মর্মবাণী নামে আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে জগদীন্দ্রনাথসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি মানসী ও মর্মবাণী-কে একীভূত করে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ১৩২২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন থেকে জগদীন্দ্রনাথ ও প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় নতুন মাসিক পত্রিকা হিসেবে মানসী ও মর্মবাণী প্রকাশিত হতে থাকে, যার প্রকাশনা ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের মাঘ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

পত্রিকাটিতে নিয়মিত লেখকদের মধ্যে ছিলেন: অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, অনুরূপা দেবী, জলধর সেন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরপ্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রিয়ম্বদা দেবী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রমাপ্রসাদ চন্দ, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং  হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ। উপরিউক্ত তালিকা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, পত্রিকাটি বিভিন্ন বিষয়ে চর্চার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল। পত্রিকাটিতে প্রকাশিত রচনাবলির একটি পূর্ণাঙ্গ নির্ঘণ্ট বা অনুক্রমণিকা তৈরি করেছেন শান্তিপদ ভট্টাচার্য, যা কলকাতার সাহিত্যলোক থেকে প্রকাশিত হয়েছে।  [ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী]