সবুজপত্র

সবুজপত্র  বিংশ শতাব্দীর বাংলায় আধুনিকতার বাহন বাংলা সাময়িকী। প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় সবুজপত্র প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪ সালে) ২৫ বৈশাখ। এ ধরণের একটি সাময়িকী প্রকাশ করার জন্য  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমথ চৌধুরীকে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন। এ সাময়িকীতে শুধু সবুজ রং-ই ব্যবহার করা হতো। নন্দলাল বসু অঙ্কিত একটি সবুজ তালপাতা এর প্রচ্ছদে ব্যবহূত হতো। সবুজপত্রে কখনও কোনো বিজ্ঞাপন এবং ছবি প্রকাশিত হয়নি। প্রমথ চৌধুরী সাময়িকীটিকে বাণিজ্যিকভাবে আকর্ষণীয় রূপ প্রদানের জন্য কোনো চেষ্টা করেননি। বরং তিনি এর মান এবং আদর্শ সমুন্নত রাখার প্রতি অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। তাই সবুজপত্র সাধারণ পাঠক ও লেখকদের কাছে জনপ্রিয় হতে পারেনি। প্রথম পর্যায়ে এটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দ (১৯২২ সাল) পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে সবুজপত্রের প্রকাশনা শুরু হয় ১৩৩২ বঙ্গাব্দ থেকে। সাময়িকীটি শেষ পর্যন্ত ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে (১৯২৭ সালে) বন্ধ হয়ে যায়।

স্বল্পায়ু সত্ত্বেও সবুজপত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য রীতি গঠনে একটি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রমথ চৌধুরী নতুন সাহিত্য রীতি প্রবর্তনের চেষ্টা হিসেবে কথ্য বাংলাকে অগ্রাধিকার দেন, যা ‘বীরবলী’ ভাষা (তাঁর ছদ্মনাম ‘বীরবল’ থেকে) রূপে পরিচিতি লাভ করে। তাঁর প্রথম চেষ্টাটি ব্যর্থ হয়, কিন্তু দ্বিতীয়টি সফলতা লাভ করে। এরপর থেকে বাংলা সাহিত্যে কথ্য বাংলা প্রাধান্য লাভ করে। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ লিখিত গদ্য এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্য সবুজপত্রের সফলতা যথেষ্টভাবে প্রমাণ করে।

সবুজপত্রের প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এবং সম্পাদকের নিজের লেখা সন্নিবেশিত হয়। এই ধারা শেষ পর্যন্ত বহাল ছিল। প্রথম ও শেষোক্ত ব্যক্তি ছিলেন সাময়িকীর প্রধান লেখক। কিন্তু উভয়েই একটি নতুন লেখকগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। প্রমথ চৌধুরীকে ঘিরে যেসব বুদ্ধিজীবী ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পরবর্তী সময়ে বিশিষ্ট লেখকরূপে পরিচিতি লাভ করেন।  ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, বরদাচরণ গুপ্ত,  সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কিরণশংকর রায় সবুজপত্রে লিখতেন। কান্তিচন্দ্র ঘোষ, অমিয় চক্রবর্তী এবং সুরেশ চক্রবর্তী কবিতা লিখতেন। সবুজপত্রে প্রকাশিত সকল লেখায় মুক্তচিন্তা, গণতন্ত্র, যুক্তি এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রকাশ পেয়েছে। কলকাতাস্থ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগারে সবুজপত্রের সকল সংখ্যা সংরক্ষিত আছে।  [ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী]