ময়নামতী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৭টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''ময়নামতী''' কুমিল্লা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বাংলাদেশের পূর্ব সীমায় বিচ্ছিন্ন অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা, যা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে এক পরিচিত নাম। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ নিদর্শনাদি উন্মোচিত হয়েছে। ঈষৎ লাল পুরাতন পললভূমির ইঙ্গিতবহ অঞ্চলটি প্রাচীন ইতিহাসের মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত। মেঘনা বেসিনের ভাটিতে গোমতী নদী তীরস্থ ময়নামতী গ্রাম থেকে লালমাই রেলস্টেশনের নিকটে চান্দিমুরা পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র শৈলশ্রেণি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৭ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর প্রশস্ততম অংশটি ৪.৫ কিলোমিটার চওড়া এবং সর্বোচ্চ চূড়াটি ৪৫ মিটার উঁচু। এসব উঁচু ভূমি এক সময় ঘন জঙ্গল ও অসংখ্য বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ ছিল, কিন্তু আধুনিক উন্নয়ন এখানকার শান্ত মনোরম পরিবেশকে বিঘ্নিত করেছে। অঞ্চলটির উত্তর অংশে ক্রমবর্ধমান ক্যান্টনমেন্ট এবং এর প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত দ্রুত প্রসারমাণ কোটবাড়ি শহরতলি এখানকার মায়াবী সৌন্দর্যকে ইতোমধ্যেই অতীতের ছায়ায় পরিণত করেছে।
'''gqbvgZx  '''Kzwgj­v kn‡ii cÖvq 8 wK‡jvwgUvi cwð‡g evsjv‡`‡ki c~e© mxgvq wew”Qbœ Aby”P cve©Z¨ GjvKv, hv evsjvi mvs¯‹…wZK HwZ‡n¨ GK cwiwPZ bvg| GLv‡b cÖZœZvwË¡K LbbKv‡h©i d‡j AZ¨š— ¸iZ¡c~Y© wb`k©bvw` D‡š§vwPZ n‡q‡Q| Clr jvj cyivZb cjjf‚wgi Bw½Zen AÂjwU cÖvPxb BwZnv‡mi gvBj djK wn‡m‡e wPwýZ| †gNbv †ewm‡bi fvwU‡Z †MvgZx b`x Zxi¯’ gqbvgZx MÖvg †_‡K jvjgvB †ij‡÷k‡bi wbK‡U Pvw›`gyiv ch©š— GB ¶z`ª ˆkj‡kÖwY DËi-`w¶‡Y cÖvq 17 wK‡jvwgUvi we¯—…Z| Gi cÖk¯—Zg AskwU 4.5 wK‡jvwgUvi PIov Ges m‡e©v”P P‚ovwU 45 wgUvi DuPz| Gme DuPz f‚wg GK mgq Nb R½j I AmsL¨ eb¨cÖvYx‡Z cwic~Y© wQj, wKš‘ AvaywbK Dbœqb GLvbKvi kvš— g‡bvig cwi‡ek‡K wewNœZ K‡i‡Q| AÂjwUi DËi As‡k µgea©gvb K¨v›Ub‡g›U Ges Gi cÖvq †K‡›`ª Aew¯’Z `ª“Z cÖmvigvY †KvUevwo kniZwj GLvbKvi gvqvex †mŠ›`h©‡K B‡Zvg‡a¨B AZx‡Zi Qvqvq cwiYZ K‡i‡Q|


[[Image:Mainamati.jpg]]
[[Image:Mainamati.jpg|thumb|400px|right]]
লালমাই-ময়নামতী যৌথনাম এ স্থানটির সাথে অতীতের এক তাৎপর্যপূর্ণ যোগসূত্র নির্দেশ করে। লালমাই অর্থাৎ, এর দক্ষিণাংশ চন্দ্র লিপিতে উৎকীর্ণ লালম্বী-বন এর সাথে অভিন্ন; অন্যদিকে এর উত্তরাংশ স্থানীয় গাঁথা ও লোকসংগীতে উল্লিখিত চন্দ্রবংশের কিংবদন্তীর রানী ‘ময়নামতী’র নাম স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ঘাটন তর্কাতীতভাবেই প্রমাণ করে যে, এই এলাকাটিই ছিল প্রাচীন বঙ্গ-সমতটের (দক্ষিণপূর্ব বাংলা) সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। অসংখ্য ঢিবি, স্মৃতিস্তম্ভ, খননকৃত ধ্বংসাবশেষ এবং সেগুলির যথাযথ পরিপূরক হিসেবে বিক্ষিপ্ত নিদর্শনসমূহের আকর্ষণীয় বিন্যাস ঘটনাবহুল অতীত ও গৌরবের প্রতি জোরালো ইঙ্গিত বহন করে। তবে খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষসমূহের জন্যই ময়নামতী বর্তমানে অধিকতর পরিচিত। বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষসমূহের সর্বাধিক সংগ্রহ এখানেই।


jvjgvB-gqbvgZx †hŠ_bvg G ¯’vbwUi mv‡_ AZx‡Zi GK Zvrch©c~Y© †hvMm~Î wb‡`©k K‡i| jvjgvB A_©vr, Gi `w¶Yvsk P›`ª wjwc‡Z DrKxY© jvj¤^x-eb Gi mv‡_ Awfbœ; Ab¨w`‡K Gi DËivsk ¯’vbxq Muv_v I †jvKmsMx‡Z Dwj­wLZ P›`ªes‡ki wKse`š—xi ivbx ÔgqbvgZxÕi bvg ¯§iY Kwi‡q †`q| cÖZœZvwË¡K D˜NvUb ZK©vZxZfv‡eB cÖgvY K‡i †h, GB GjvKvwUB wQj cÖvPxb e½-mgZ‡Ui (`w¶Yc~e© evsjv) mvs¯‹…wZK I ivR‰bwZK †K›`ª| AmsL¨ wXwe, ¯§„wZ¯—¤¢, LbbK…Z aŸsmve‡kl Ges †m¸wji h_vh_ cwic~iK wn‡m‡e wew¶ß wb`k©bmg~‡ni AvKl©Yxq web¨vm NUbveûj AZxZ I †MŠi‡ei cÖwZ †Rviv‡jv Bw½Z enb K‡i| Z‡e LbbKv‡h©i d‡j Avwe®‹…Z †eŠ× aŸsmve‡klmg~‡ni Rb¨B gqbvgZx eZ©gv‡b AwaKZi cwiwPZ| evsjv‡`‡ki cÖvPxb †eŠ× aŸsmve‡klmg~‡ni mev©waK msMÖn GLv‡bB|
''আবিষ্কার''  ১৮৭৫ সালে পাহাড়গুলির মধ্য দিয়ে প্রসারিত পুরানো সড়কটির পুনঃনির্মাণ কালে শ্রমিকরা হঠাৎ কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ঘাটন করে। তখন এটিকে একটি ছোট ইটের দুর্গ মনে করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি বৌদ্ধ মঠ। এর প্রায় ৭২ বছর আগে (১৮০৩) এই এলাকা থেকেই ময়নামতীর প্রথম পুরানিদর্শন ১২২০ খ্রিস্টাব্দে উৎকীর্ণ রণবঙ্কমল্ল হরিকলদেব-এর তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছিল। এতে দুর্গ ও মঠ সমৃদ্ধ রাজধানী পট্টিকেরা-র বিবরণ আছে। বর্তমানে পটিকর পরগনার মাঝে এ নামটি এখন বেঁচে আছে।


[[Image:MainamatiSalbanViharComilla.jpg]]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ময়নামতীর ধ্বংসাবশেষসমূহ পুনরাবিষ্কৃত হয়। অগ্রবর্তী শিবির স্থাপনকালে সেনাবাহিনী শৈলশ্রেণির কয়েকটি স্থানে পুরানো ধ্বংসাবশেষসমূহের সম্মুখীন হয়। তরিত একটি জরিপের পর সরকার ১৮টি স্থানকে চিহ্নিত করে এবং সেগুলি সংরক্ষণ করে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে আরও নিয়মিত ও নিয়মানুগ জরিপের ফলে সমগ্র অঞ্চলের জনবসতিহীন এলাকা থেকে পঞ্চাশেরও অধিক স্থান চিহ্নিত করা হয়। এগুলির অধিকাংশই শৈলশ্রেণির উত্তরাংশে, যা এখন ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অন্তর্গত। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন আরম্ভ হয়। খনন পর্যায়ে চিহ্নিত পঞ্চাশোর্ধ্ব স্থানের মধ্যে এ যাবৎ নয়টি উন্মোচিত হয়েছে। যদিও খনন কার্য এখনও স¤পূর্ণ হয়নি এবং যে কোন বিচারেই এর সংখ্যা বেশ সীমিত, তথাপি এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফল এতদিন যাবৎ অজ্ঞাত এই স্থানের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনর্গঠনে এক বলিষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি রচনা করেছে।


kvjeb wenvi,Kzwgj­v
[[Image:MainamatiSalbanViharComilla.jpg|left|thumb|400px|শালবন বিহার,কুমিল্লা]]
''খননকৃত প্রত্নস্থান'' খননকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো [[শালবন বিহার|শালবন বিহার]]। এটি শৈলরাজির প্রায় কেন্দ্রে বর্তমান কোটবাড়িস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমির সন্নিকটে অবস্থিত। খননের ফলে [[পাহাড়পুর|পাহাড়পুর]]-এর ন্যায় একটি সুবৃহৎ বৌদ্ধ মঠ এবং সাত থেকে বারো শতকের মধ্যবর্তী সময়ের মূল্যবান দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে। আবিষ্কৃত দ্রব্যাদির মধ্যে আছে আটটি তাম্রশাসন, চারশরও অধিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়ামাটিফলক ও পোড়ানো মাটির সিল ও সিলিং, বহু সংখ্যক পাথর, ব্রোঞ্জ ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য। সাত শতকের শেষ বা আট শতকের শুরুতে [[দেবপর্বত|দেবপর্বত]]-এর আদি [[দেব রাজবংশ|দেব বংশ]]-এর চতুর্থ শাসক শ্রী ভবদেব কেন্দ্রীয় বেদিসহ সুবৃহৎ এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন।


'''Avwe®‹vi'''  1875 mv‡j cvnvo¸wji ga¨ w`‡q cÖmvwiZ cyiv‡bv moKwUi cybtwbg©vY Kv‡j kÖwgKiv nVvr wKQy aŸsmve‡kl D˜NvUb K‡i| ZLb GwU‡K GKwU †QvU B‡Ui `yM© g‡b Kiv n‡qwQj| cÖK…Zc‡¶ GwU wQj GKwU †eŠ× gV| Gi cÖvq 72 eQi Av‡M (1803) GB GjvKv †_‡KB gqbvgZxi cÖ_g cyivwb`k©b 1220 wLª÷v‡ã DrKxY© iYe¼gj­ nwiKj‡`e-Gi Zvgªkvmb Avwe®‹…Z n‡qwQj| G‡Z `yM© I gV mg„× ivRavbx cwƇKiv-i weeiY Av‡Q| eZ©gv‡b cwUKi ciMbvi gv‡S G bvgwU GLb †eu‡P Av‡Q|
আনন্দ বিহার-এর সন্নিকটে শৈলরাজির উত্তর-পূর্বাংশের সর্বোচ্চ ঢিবি [[কুটিলা মুড়া|কুটিলা মুড়া]]য় ময়নামতীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শনসমূহ উদ্ঘাটিত হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত তিনটি প্রধান ¯তূপ এবং এদের ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি স¤পূরক উপাসনা কক্ষ ও চৈত্য-হল। সবগুলি স্থাপনাই একটি বিশাল দেওয়াল দ্বারা ঘেরা। এখানে আকর্ষণীয় ও জটিল কিছু স্থাপত্যিক কাঠামো এবং সেই সাথে নকশা শৈলী সংরক্ষিত। এখানে খননকার্য এখনও শেষ হয়নি। উত্তর প্রান্তের মঠ এবং প্রত্নস্থলটির দুধারের সুবৃহৎ স্তূপ দুটির উন্মোচন এখনও বাকি। খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এই ভবনগুলির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল সাত শতকের দিকে। উপরের দিকের স্তর থেকে উদ্ধারকৃত একটি আব্বাসীয় মুদ্রা ইঙ্গিত দেয় যে, এগুলি তেরো শতকের পর্যন্ত টিকেছিল।


wØZxq wek¦hy× PjvKv‡j gqbvgZxi aŸsmve‡klmg~n cybivwe®‹…Z nq| AMÖeZ©x wkwei ¯’vcbKv‡j †mbvevwnbx ˆkj‡kÖwYi K‡qKwU ¯’v‡b cyiv‡bv aŸsmve‡klmg~‡ni m¤§yLxb nq| ZwiZ GKwU Rwi‡ci ci miKvi 18wU ¯’vb‡K wPwýZ K‡i Ges †m¸wj msi¶Y K‡i| 1955 †_‡K 1957 mv‡ji g‡a¨ AviI wbqwgZ I wbqgvbyM Rwi‡ci d‡j mgMÖ A‡ji RbemwZnxb GjvKv †_‡K cÂv‡kiI AwaK ¯’vb wPwýZ Kiv nq| G¸wji AwaKvskB ˆkj‡kÖwYi DËivs‡k, hv GLb K¨v›Ub‡g›U GjvKvi Aš—M©Z| 1955 mv‡ji Rvbyqvwi gv‡m cÖZœZvwË¡K Lbb Avi¤¢ nq| Lbb ch©v‡q wPwýZ cÂv‡kvaŸ© ¯’v‡bi g‡a¨ G hver bqwU D‡š§vwPZ n‡q‡Q| hw`I Lbb Kvh© GLbI m¤c~Y© nqwb Ges †h †Kvb wePv‡iB Gi msL¨v †ek mxwgZ, Z_vwc G hver cÖvß Z_¨ I djvdj GZw`b hver AÁvZ GB ¯’v‡bi cÖvPxb BwZnvm I ms¯‹…wZ cybM©V‡b GK ewjô cÖZœZvwË¡K wfwË iPbv K‡i‡Q|
শৈলরাজির উত্তরাংশে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার প্রায় কেন্দ্রে [[চারপত্র মুড়া|চারপত্র মুড়া]] নামক একটি ক্ষুদ্র ও আকর্ষণীয় প্রত্নস্থল অবস্থিত। এখানে চন্দ্র যুগের (দশ-এগারো খ্রিস্টাব্দ) একটি ছোট হিন্দু মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দু [[মন্দির স্থাপত্য|মন্দির স্থাপত্য]] এর প্রথমদিকের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। এই প্রত্নস্থল থেকে চারটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে চারপত্র মুরা।


'''LbbK…Z cÖZœ¯’vb''' LbbK…Z cÖZœ¯’vbmg~‡ni g‡a¨ me‡P‡q ¸i“Z¡c~Y© n‡jv [[শালবন বিহার|kvjeb wenvi]]| GwU ˆkjivwRi cÖvq †K‡›`ª eZ©gvb †KvUevwo¯’ evsjv‡`k cj­x Dbœqb A¨vKv‡Wwgi mwbœK‡U Aew¯’Z| Lb‡bi d‡j [[পাহাড়পুর|cvnvocyi]]Gi b¨vq GKwU mye„nr †eŠ× gV Ges mvZ †_‡K ev‡iv kZ‡Ki ga¨eZ©x mg‡qi g~j¨evb `ªe¨vw` cvIqv †M‡Q| Avwe®„‹…Z `ªe¨vw`i g‡a¨ Av‡Q AvUwU Zvgªkvmb, PvikiI AwaK ¯^Y© I †iŠc¨ gy`ªv, AmsL¨ †cvovgvwUdjK I †cvov‡bv gvwUi wmj I wmwjs, eû msL¨K cv_i, †eªvÄ I †cvovgvwUi fv¯‹h©| mvZ kZ‡Ki †kl ev AvU kZ‡Ki ïi“‡Z [[দেবপর্বত|†`ece©Z]] Gi Avw` [[দেব রাজবংশ|†`e esk]]Gi PZz_© kvmK kÖx fe‡`e †K›`ªxq †ew`mn mye„nr GB gVwU wbg©vY K‡iwQ‡jb|''' '''
[[Image:AnandaVihare.jpg|thumb|400px|right|আনন্দবিহার]]
ময়নামতীর মনুমেন্টগুলির মধ্যে [[আনন্দবিহার|আনন্দবিহার]] সর্ববৃহৎ। এটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্ভারে সমৃদ্ধ  কোটবাড়ির কেন্দ্রে অবস্থিত। চারদিকে বিহার, [[স্তূপ|স্তূপ]] ও উপাসনালয় নিয়ে গঠিত ধর্ম ও শিক্ষার এটি একটি বিরাট স্থাপনা। পূর্ববর্তী দেববংশের তৃতীয় শাসক শ্রী আনন্দদেব সাত শতকের শেষ অথবা আট শতকের গোড়ার দিকে এলাকার সর্ববৃহৎ জলাধারটিসহ সমগ্র বিহার কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৪৪-৪৫ সালে সেনা ঠিকাদাররা ও ইট সংগ্রাহক কেন্দ্রীয় উপাসনালয়টিসহ এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল যে, এগুলিকে আর চেনার মতো অবস্থায় রাখেনি। পরবর্তীকালে ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণের প্রক্রিয়া এই স্থাপনার গুরুতর ক্ষতিসাধন করে। বিশ শতকের সত্তর দশকের শেষভাগে সামান্য কয়েকটি পর্যায়ে সীমিত আকারে খনন কার্য চালানো হয়, তবে তাও অসম্পূর্ণভাবে।


[[আনন্দবিহার|Avb›` wenvi]]Gi mwbœK‡U ˆkjivwRi DËi-c~e©vs‡ki m‡e©v”P wXwe [[কুটিলা মুড়া|KzwUjv gyiv]]q gqbvgZxi me‡P‡q AvKl©Yxq wb`k©bmg~n D˜NvwUZ n‡q‡Q| G‡Z Aš—f©y³ wZbwU cÖavb ¯Z‚c Ges G‡`i wN‡i i‡q‡Q †ek K‡qKwU m¤c~iK Dcvmbv K¶ I ˆPZ¨-nj| me¸wj ¯’vcbvB GKwU wekvj †`Iqvj Øviv †Niv| GLv‡b AvKl©Yxq I RwUj wKQy ¯’vcwZ¨K KvVv‡gv Ges †mB mv‡_ bKkv ˆkjx msiw¶Z| GLv‡b LbbKvh© GLbI †kl nqwb| DËi cÖv‡š—i gV Ges cÖZœ¯’jwUi `yav‡ii mye„nr ¯—‚c `ywUi D‡š§vPb GLbI evwK| LbbKv‡h©i d‡j cÖvß Z_¨ Bw½Z †`q †h, GB feb¸wji wbg©vY KvR ïi“ n‡qwQj mvZ kZ‡Ki w`‡K| Dc‡ii w`‡Ki ¯—i †_‡K D×viK…Z GKwU AveŸvmxq gy`ªv Bw½Z †`q †h, G¸wj †Z‡iv kZ‡Ki ch©š— wU‡KwQj|
ময়নামতীতে শালবন বিহার ও আনন্দ বিহারের পর তৃতীয় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক মঠ স্থাপনাটি হলো [[ভোজবিহার|ভোজবিহার]]। এটি কোটবাড়ি এলাকার প্রায় কেন্দ্রস্থলে [[পল্লী উন্নয়ন একাডেমী|পল্লী উন্নয়ন একাডেমী]]র সন্নিকটে অবস্থিত। মঠটির পূর্বদিকে একটি বিরাট জলাধার আছে। খননের ফলে একটি বর্গাকৃতি মঠের পরিরেখ উন্মোচিত হয়েছে। শালবন বিহার ও আনন্দ বিহারের ন্যায় এটিও উন্মুক্ত আঙিনার মাঝখানে ক্রুশাকৃতির একটি সুবৃহৎ উপাসনালয় সমৃদ্ধ।


[[Image:AnandaVihare.jpg]]
[[ময়নামতী প্রাসাদ টিলা|ময়নামতী প্রাসাদ টিলা]] (Mainamati’s Palace Mound) শৈলরাজির উত্তর প্রান্তের সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ ঢিবি। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের ঠিক পূর্বে এখনও রানীর নাম বহনকারী গ্রামটির সন্নিকটে অবস্থিত। কিংবদন্তী অনুযায়ী প্রত্নস্থলটি চন্দ্র বংশের সর্বশেষ জ্ঞাত রাজা গোবিন্দচন্দ্রের মা রানী ময়নামতীর নামের সাথে জড়িত। প্রত্নস্থলটির কেন্দ্রস্থলে সীমিত আকারের খননের ফলে এর বিভিন্ন অংশের, সম্ভবত একটি দুর্গের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা প্রাচীরের কিছু অংশ এবং একটি সুদৃঢ় কাঠামোর কোণ সম্বলিত একটি প্রাসাদের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে। এটিই সম্ভবত ময়নামতীতে ধর্মবহির্ভূত একমাত্র নির্মাণ কাঠামো।


Avb›` wenvi
[[Image:RupbamMuraMainamoti.jpg|thumb|left|400px|রূপবান মুড়া]]
কুমিল্লা-কালীরবাজার সড়কের দক্ষিণে কোটবাড়ি এলাকায় নির্মিত বর্তমান পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (সাবেক বাংলাদেশ রাইফেলস-বি.ডি.আর) প্রতিষ্ঠান দুটির মাঝে অবস্থিত ছোট একটি পাহাড়ে  [[রূপবান মুড়া|রূপবান মুড়া]] একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। খননের ফলে এখানে অন্যান্য কিছু সম্পূরক কাঠামোসহ সেমি-ক্রুশাকৃতির একটি উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। খননের ফলে এ প্রত্নস্থলটিতে তিনটি কালপর্বে নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের চিহ্ন উন্মোচিত হয়েছে। সর্বপ্রাচীন পর্বটি আনুমানিক ছয় হতে সাত শতকের। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শেষ পর্বটির (দশ থেকে এগারো শতক) তেমন কিছুই আর টিকে নেই। এখানে উদ্ভাবিত উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে বিরাটকায় বুদ্ধ প্রস্তর মূর্র্তি, ছাড়াও খড়গ রাজা বলভট্ট-এর পাঁচটি খাদযুক্ত স্বর্ণমুদ্রা অন্তর্ভুক্ত।


ˆkjivwRi DËivs‡k K¨v›Ub‡g›U GjvKvi cÖvq †K‡›`ª [[চারপত্র মুড়া|PvicÎ gyiv]] bvgK GKwU ¶z`ª I AvKl©Yxq cÖZœ¯’j Aew¯’Z| GLv‡b P›`ª hy‡Mi (`k-GMv‡iv wLª÷vã) GKwU †QvU wn›`y gw›`‡ii aŸskve‡kl Avwe®‹…Z n‡q‡Q| evsjv‡`‡k wn›`y [[মন্দির স্থাপত্য|gw›`i ¯’vcZ¨]] Gi cÖ_gw`‡Ki wb`k©bmg~‡ni g‡a¨ GwU Ab¨Zg| GB cÖZœ¯’j †_‡K PviwU Zvgªkvmb Avwe®‹…Z nIqvq Gi bvgKiY n‡q‡Q PvicÎ gyiv|
কোটবাড়ি সড়কের পাশে  রূপবান মুড়ার বিপরীতে ছোট টিলাটিতে তিন স্তরে [[ইটাখোলামুড়া|ইটাখোলামুড়া]] প্রত্নস্থলটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। বহুদিন ধরে পুরানো ইটের ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহৃতত হওয়ায় এ স্থানের এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। খননের ফলে উত্তর দিকে একটি সংযুক্ত মঠসহ এক সুবৃহৎ স্তূপ কমপ্লেক্স উন্মোচিত হয়েছে। পাঁচটি সাংস্কৃতিক পর্যায়ের মধ্যে প্রাচীনতম তিনটি পরবর্তীকালের ধ্বংস্তূপের নিচে ঢাকা পড়ে আছে। এ স্থানে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনসমূহের মধ্যে স্টাকো মূর্তি ব্যতীত নিরেট সোনার তিনটি গোলক (১৯ তোলা) এবং একটি [[তাম্রশাসন|তাম্রশাসন]] রয়েছে। এখনও তাম্রশাসনটির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।


gqbvgZxi gby‡g›U¸wji g‡a¨ [[আনন্দবিহার|Avb›` wenvi]] me©e„nr| GwU cÖZœZvwË¡K m¤¢v‡i mg„×  †KvUevwoi †K‡›`ª Aew¯’Z| Pviw`‡K wenvi, [[স্তূপ|¯—‚c]] I Dcvmbvjq wb‡q MwVZ ag© I wk¶vi GwU GKwU weivU ¯’vcbv| c~e©eZ©x †`ees‡ki Z…Zxq kvmK kÖx Avb›`‡`e mvZ kZ‡Ki †kl A_ev AvU kZ‡Ki †Mvovi w`‡K GjvKvi me©e„nr RjvaviwUmn mgMÖ wenvi Kg‡c­·wU wbg©vY K‡iwQ‡jb| 1944-45 mv‡j †mbv wVKv`viiv I BU msMÖvnK †K›`ªxq DcvmbvjqwUmn GB wekvj cÖwZôvbwU Ggbfv‡e ¶wZMÖ¯’ K‡iwQj †h, G¸wj‡K Avi †Pbvi g‡Zv Ae¯’vq iv‡Lwb| cieZ©xKv‡j K¨v›Ub‡g›U wbg©v‡Yi cÖwµqv GB ¯’vcbvi ¸i“Zi ¶wZmvab K‡i| wek kZ‡Ki mËi `k‡Ki †klfv‡M mvgvb¨ K‡qKwU ch©v‡q mxwgZ AvKv‡i Lbb Kvh© Pvjv‡bv nq, Z‡e ZvI Am¤c~Y©fv‡e|
[[Image:ItakholaMuraMainamoti.jpg|thumb|right|400px|ইটখোলা মুড়া]]
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে ময়নামতী বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে  [[ময়নামতী টিলা ১এ|ময়নামতী টিলা ১এ]] (Mainamati Mound 1-A) অবস্থিত। এখানে সীমিত আকারে খনন পরিচালনা করে ছয়টি দীর্ঘ দেওয়াল, সোজা ও আড়াআড়ি রাস্তা, প্রবেশদ্বারসমূহ এবং অন্যান্য অপর্যাপ্ত কিছু ধ্বংসাবশেষ উন্মোচন করা হয়েছে। ধ্বংসাবশেষসমূহের মধ্যে ধর্মবহির্ভূত ও ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখে অনুমিত হয় যে, এটি কোন সেনা নিবাসের ব্যারাক ছিল।


gqbvgZx‡Z kvjeb wenvi I Avb›` wenv‡ii ci Z…Zxq me©v‡c¶v ¸i“Z¡c~Y© I e¨vcK gV ¯’vcbvwU n‡jv [[ভোজবিহার|†fvR wenvi]]| GwU †KvUevwo GjvKvi cÖvq †K›`ª¯’‡j [[পল্লী উন্নয়ন একাডেমী|cj­x Dbœqb A¨vKv‡Wwg]]i mwbœK‡U Aew¯’Z| gVwUi c~e©w`‡K GKwU weivU Rjvavi Av‡Q| Lb‡bi d‡j GKwU eM©vK…wZ g‡Vi cwi‡iL D‡š§vwPZ n‡q‡Q| kvjeb wenvi I Avb›` wenv‡ii b¨vq GwUI Dš§y³ AvwObvi gvSLv‡b µzkvK…wZi GKwU mye„nr Dcvmbvjq mg„×|
''অখননকৃত স্থানসমূহ'' অসংখ্য অখননকৃত স্থানের মধ্যে কুটিলা মুড়ার সরাসরি পশ্চিমে ক্যান্টনমেন্টের অন্তর্ভুক্ত মাঝারি উচ্চতার ঢিবি বৈরাগীর মুড়ার নাম উল্লেখ করা যায়। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট, ভাঙা মৃৎপাত্র ও প্রস্তর মূর্তির টুকরাসমূহ এ স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের জোরাল ইঙ্গিত বহন করে। ক্যান্টনমেন্টে পানি সরবরাহের জন্য এই ঢিবির উপর নির্মিত দুটি বিশাল পানির ট্যাংক স্থানটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। নির্মাণ কাজের সময় বেশ কিছু নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছিল, তবে সেগুলির মধ্যে কেবলমাত্র দুটি (চন্দ্র যুগের) স্থানীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে- একটি উৎকীর্ণ লিপিসহ পদ্ম সিংহাসনের ওপর দণ্ডায়মান একটি বিশালাকার প্রস্তর মূর্তির নিচের অংশ এবং অন্যটি ব্রোঞ্জের তৈরী প্রমাণ সাইজ বোধিসত্ত্ব মস্তক।


[[ময়নামতী প্রাসাদ টিলা|gqbvgZx cÖvmv` wUjv]] (Mainamati’s Palace Mound) ˆkjivwRi DËi cÖv‡š—i me©e„nr I m‡e©v”P wXwe| GwU eªvþYevwoqv mo‡Ki wVK c~‡e© GLbI ivbxi bvg enbKvix MÖvgwUi mwbœK‡U Aew¯’Z| wKse`š—x Abyhvqx cÖZœ¯’jwU P›`ª es‡ki me©‡kl ÁvZ ivRv †Mvwe›`P‡›`ªi gv ivbx gqbvgZxi bv‡gi mv‡_ RwoZ| cÖZœ¯’jwUi †K›`ª¯’‡j mxwgZ AvKv‡ii Lb‡bi d‡j Gi wewfbœ As‡ki, m¤¢eZ GKwU `y‡M©i kw³kvjx cÖwZi¶v cÖvPx‡ii wKQy Ask Ges GKwU my`„p KvVv‡gvi †KvY m¤^wjZ GKwU cÖvmv‡`i Askwe‡kl D‡š§vwPZ n‡q‡Q| GwUB m¤¢eZ gqbvgZx‡Z ag©ewnf©~Z GKgvÎ wbg©vY KvVv‡gv|
একটি বিরাট ব্রোঞ্জের ঘণ্টা, বর্গাকৃতি বড় বড় পাথরের ব্লক (মনে হয় স্তম্ভের তলদেশ), একটি তাম্রশাসন, একটি লিপি সম্বলিত প্রস্তর ফলক এবং বেশ কিছু ব্রোঞ্জ ও পোড়ামাটির ভাস্কর্যের আবিষ্কার কোটবাড়িতে অবস্থিত রূপবান কন্যা মুড়ার গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের প্যারেড গ্রাউন্ড ও গ্যারেজের জন্য এ স্থানটিকে কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে।


Kzwgj­v-KvjxievRvi mo‡Ki `w¶‡Y †KvUevwo GjvKvq wbwg©Z eZ©gvb cj­x Dbœqb A¨vKv‡Wwg I mxgvš— i¶x evwnbx (mv‡eK evsjv‡`k ivB‡djm-we.wW.Avi) cÖwZôvb `ywUi gv‡S Aew¯’Z †QvU GKwU cvnv‡o  [[রূপবান মুড়া|iƒcevb gyiv]] GKwU ¸iyZ¡c~Y© cÖZœ¯’j| Lb‡bi d‡j GLv‡b Ab¨vb¨ wKQy m¤c~iK KvVv‡gvmn †mwg-µzkvK…wZi GKwU Dcvmbvj‡qi aŸsmve‡kl cvIqv †M‡Q| Lb‡bi d‡j G cÖZœ¯’jwU‡Z wZbwU Kvjc‡e© wbg©vY I cybtwbg©v‡Yi wPý D‡š§vwPZ n‡q‡Q| me©cÖvPxb ce©wU AvbygvwbK Qq n‡Z mvZ kZ‡Ki| e¨vcKfv‡e ¶wZMÖ¯— †kl ce©wUi (`k †_‡K GMv‡iv kZK) †Zgb wKQyB Avi wU‡K †bB| #
[[Image:MainamatiBuffalo.jpg|thumb|400px|left|পোড়ামাটির ভাস্কর্য- বৃষ ]]
কোটবাড়ি ঢিবির কেন্দ্রে ক্রুশাকৃতির উপাসনালয়সহ শালবন বিহারের মতো একটি মঠের সু¯পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়। একটি বৃহৎ মসজিদ ও তদ্ধসঢ়;সংলগ্ন কবরস্থান উক্ত ঢিবিতে লক্ষ্য করা যায়।


[[Image:RupbamMuraMainamoti.jpg]]
কোটবাড়ি ধ্বংসাবশেষের প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, শৈলরাজির পশ্চিম সীমান্তে অখননকৃত পাক্কা মুড়া (২৭৪ মি লম্বা, ৯১ মি চওড়া ও ১৫ মিটার উঁচু) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই প্রত্নস্থলটির গুরুত্ব নিহিত এর নিু ভিত্তির পশ্চিম অংশের প্রসারের মাঝে। সম্ভবত নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বা গতি পরিবর্তনের ফলে এটি সম্ভব হয়েছিল। পলিজনিত কারণে নদীগর্ভ উপরে উঠে যাওয়ায় এর একাংশ বিরাট এক জলাশয়ে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ‘তারা’ দিঘি নামে পরিচিত। এর গভীরতম মধ্যাংশ বর্তমানে দুটি পুকুরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পুকুরদ্বয়ের মধ্যে বৃহত্তরটি প্রায় দুএকর আয়তন বিশিষ্ট। এটি খননের সময় বিষ্ণুর দুটি আকর্ষণীয় কালো প্রস্তর মূর্তি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি প্রমাণ সাইজের এবং অপরটি সামান্য ছোট। মূর্তি দুটিতে সেন ও দেব রীতির পরিণত বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান। প্রাপ্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো পরবর্তী দেব বংশের দামোদরদেবের পুত্র ও উত্তরাধিকারী দশরথ দেবের (তেরো শতক) একটি তাম্রশাসন।


#iƒcevb gyov
[[Image:MainamatiTerracotta.jpg|thumb|400px|right|পোড়ামাটির ভাস্কর্য- ঠোঁটে মুক্তার মালাসহ ময়ূর , পোড়ামাটির ফলক]]
সর্বদক্ষিণের চণ্ডী মুড়া (স্থানীয়ভাবে রূপবান মুড়া নামে পরিচিত) প্রত্নস্থল থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শৈলরাজির পশ্চিম প্রান্তের বিস্তৃত উঁচু ঢিবিতে গোলাকার গম্বুজের ন্যায় একটি বিধ্বস্ত কাঠামোর অস্তিত্ব ছিল। স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা ইট সংগ্রহের ফলে ইতোমধ্যেই উš§ুক্ত স্থাপনাটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই স্থাপনাটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন বেরিয়ে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।


GLv‡b D™¢vweZ D‡j­L‡hvM¨ wb`k©‡bi g‡a¨ weivUKvq ey× cÖ¯—i g~wZ©©, QvovI LoM ivRv ejfÆ-Gi cuvPwU Lv`hy³ ¯^Y©gy`ªv Aš—f©y³|
লালমাই রেলস্টেশনের প্রায় ১.৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শৈলরাজির দক্ষিণ প্রান্তে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো একটি ঢিবি  (দৈর্ঘ্যে ৪৫৭ মি, প্রস্থে ১৮৩ মি এবং উচ্চতায় ১৮ মিটার) বিদ্যমান যা স্থানীয়ভাবে চণ্ডী মুড়া নামে পরিচিত। প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা এই ঢিবির চূড়ায় চণ্ডীর জোড়া মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এ থেকেই স্থানটির নাম হয় চণ্ডীমুড়া। এ স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক  চিহ্ন অক্ষত রয়েছে; ঢিবিটিতে সম্ভবত একটি বৃহৎ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। প্রথমে মন্দির যুগল নির্মাণের কারণে এবং পরে মন্দিরের সাথে জড়িত লোকজনের বাড়ি-ঘর নির্মাণের জন্য ঢিবির চূড়াটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নিুতর স্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক অবশিষ্টাংশ এখনও অক্ষত রয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে।


†KvUevwo mo‡Ki cv‡k  iƒcevb gyovi wecix‡Z †QvU wUjvwU‡Z wZb ¯—‡i [[ইটাখোলামুড়া|BUv‡Lvjv gyov]] cÖZœ¯’jwUi aŸsmve‡kl cvIqv hvq| eûw`b a‡i cyiv‡bv B‡Ui fvÊvi wn‡m‡e e¨enƒZ nIqvq G ¯’v‡bi Giƒc bvgKiY Kiv n‡q‡Q| Lb‡bi d‡j DËi w`‡K GKwU mshy³ gVmn GK mye„nr ¯~—c Kg‡c­· D‡š§vwPZ n‡q‡Q| cuvPwU mvs¯‹…wZK ch©v‡qi g‡a¨ cÖvPxbZg wZbwU cieZ©xKv‡ji aŸsm¯~—‡ci wb‡P XvKv c‡o Av‡Q| G ¯’v‡b cÖvß D‡j­L‡hvM¨ cÖvPxb wb`k©bmg~‡ni g‡a¨ ÷v‡Kv g~wZ© e¨ZxZ wb‡iU †mvbvi wZbwU †MvjK (19 †Zvjv) Ges GKwU [[তাম্রশাসন|Zvgªkvmb]] i‡q‡Q| GLbI ZvgªkvmbwUi cv‡Vv×vi Kiv m¤¢e nqwb|
[[Image:MainamatiGuptaImmitationGoldCoin.jpg|thumb|left|400px|গুপ্ত অনুকৃত স্বর্ণমুদ্রা]]
অখননকৃত অন্যান্য প্রত্নস্থলের মধ্যে ময়নামতি টিলা-২, আব্বাস আলী মুড়া, স্টেশন কমান্ডারের আবাস, হাতিগড় টিলা, উজিরপুর টিলা, ঘিলা মুড়া এবং বলগাজীর মুড়ার নাম উল্লেখ করা যায়। এসব স্থান থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ ধ্বংসাবশেষ প্রাপ্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। লোকজনের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অবহেলার দরুণ ঢিবিগুলির আশে পাশের স্থানসমূহের অধিকাংশই এখন অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় বিদ্যমান।


XvKv-PÆMÖvg gnvmo‡Ki DËi cv‡k gqbvgZx evm÷¨v‡Ûi mwbœK‡U  [[ময়নামতী টিলা ১এ|gqbvgZx wUjv 1-G]] (Mainamati Mound 1-A) Aew¯’Z| GLv‡b mxwgZ AvKv‡i Lbb cwiPvjbv K‡i QqwU `xN© †`Iqvj, †mvRv I AvovAvwo iv¯—v, cÖ‡ekØvimg~n Ges Ab¨vb¨ Ach©vß wKQy aŸsmve‡kl D‡š§vPb Kiv n‡q‡Q| aŸsmve‡klmg~‡ni g‡a¨ ag©ewnf©~Z I ag©wbi‡c¶ ˆewkó¨mg~n †`‡L AbywgZ nq †h, GwU †Kvb †mbv wbev‡mi e¨vivK wQj|
''নিদর্শনসমূহ''  ময়নামতীতে খননকার্যের ফলে অসাধারণভাবে সমৃদ্ধ প্রাচীন নিদর্শনের সমাহার উন্মোচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বারোটি তাম্রশাসন ও ক্ষুদ্রাকৃতির লিপিসমৃদ্ধ মূর্তি, চারশরও অধিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া ও কাদামাটির সিল ও সিলিং, নব্যপ্রস্তরযুগীয় কুঠার ও বাটালি, প্রস্তর, ব্রোঞ্জ, স্টাকো ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য, প্রস্তর ও পোড়ামাটির গুটিকা, সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের অলঙ্কার, অলঙ্কৃত পোড়ামাটি ও স্থাপত্যশিল্প সামগ্রী, ধাতব ও মৃৎ পাত্র, তাওয়া, অলংকৃত পাত্র ও হাঁড়িপাতিল, তৈল প্রদীপ এবং দৈনন্দিন ব্যবহারোপযোগী বিভিন্ন সামগ্রী। এগুলির বেশিরভাগই শালবন বিহার থেকে সংগৃহীত। শালবন বিহারেই নিয়মানুগ পদ্ধতিতে খননকার্য পরিচালনা করা হয়েছে। এই প্রত্নসামগ্রীগুলি একই সাথে প্রাচীন বঙ্গ-সমতট স¤পর্কে জ্ঞানার্জনে যেমন অবদান রাখে, তেমনি ছয় থেকে তেরো শতক পর্যন্ত প্রায় সাতশ বছরের তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।


'''ALbbK…Z ¯’vbmg~n''' AmsL¨ ALbbK…Z ¯’v‡bi g‡a¨ KzwUjv gyovi mivmwi cwð‡g K¨v›Ub‡g‡›Ui Aš—f©y³ gvSvwi D”PZvi wXwe ˆeivMxi gyovi bvg D‡j­L Kiv hvq| Pviw`‡K Qwo‡q wQwU‡q _vKv BU, fvOv g„rcvÎ I cÖ¯—i g~wZ©i UzKivmg~n G ¯’v‡bi cÖZœZvwË¡K ¸i“‡Z¡i †Rvivj Bw½Z enb K‡i| K¨v›Ub‡g‡›U cvwb mieiv‡ni Rb¨ GB wXwei Dci wbwg©Z `ywU wekvj cvwbi U¨vsK ¯’vbwUi e¨vcK ¶wZmvab K‡i‡Q| wbg©vY Kv‡Ri mgq †ek wKQy wb`k©b Avwe®‹…Z n‡qwQj, Z‡e †m¸wji g‡a¨ †KejgvÎ `ywU (P›`ª hy‡Mi) ¯’vbxq Rv`yN‡i msiw¶Z n‡q‡Q- GKwU DrKxY© wjwcmn cÙ wmsnvm‡bi Ici `Êvqgvb GKwU wekvjvKvi cÖ¯—i g~wZ©i wb‡Pi Ask Ges Ab¨wU †eªv‡Äi ˆZix cÖgvY mvBR †evwamË¡ g¯—K|
[[Image:MainamatiBuddha.jpg|thumb|400px|right|বুদ্ধমূর্তি, রূপবান মুড়া]]
অন্যূন বারোটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে যা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর আলোকপাত করে। উৎসর্গীকৃত ছোট ছোট বহু উৎকীর্ণ লিপির মধ্যে খুব সামান্য কয়েকটিতে শালবন বিহার ও এর নির্মাতা রাজার নাম খচিত। সবগুলিই বেশ গুরুত্ববহ। সংগ্রহকৃত মুদ্রার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সামান্য কিছু গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী মুদ্রার অনুকরণে নির্মিত স্বর্ণ মুদ্রা, [[শশাঙ্ক|শশাঙ্ক]]-এর একটি দুর্লভ রৌপ্য মুদ্রা, খড়গ শাসক বলভট্টের প্রায় এক ডজন স্বর্ণ মুদ্রা, গুটি কয়েক আরাকানি ও অসংখ্য [[হরিকেল|হরিকেল]] ও ‘আকর’ বংশের মুদ্রা এবং আব্বাসীয় খলিফাদের একটি স্বর্ণ ও কয়েকটি রৌপ্য মুদ্রা।


GKwU weivU †eªv‡Äi NÈv, eM©vK…wZ eo eo cv_‡ii e­K (g‡b nq ¯—‡¤¢i Zj‡`k), GKwU Zvgªkvmb, GKwU wjwc m¤^wjZ cÖ¯—i djK Ges †ek wKQy †eªvÄ I †cvovgvwUi fv¯‹‡h©i Avwe®‹vi †KvUevwo‡Z Aew¯’Z iƒcevb Kb¨v gyovi ¸i“‡Z¡i cÖwZ Bw½Z †`q| wKš‘ K¨v›Ub‡g‡›Ui c¨v‡iW MÖvDÛ I M¨v‡i‡Ri Rb¨ G ¯’vbwU‡K †K‡U mgZj K‡i †djv n‡q‡Q|
মৃৎপাত্র ব্যতীত প্রস্তর, ব্রোঞ্জ, স্টাকো ও পোড়ামাটির ভাস্কর্যসমূহ হলো প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাদির মধ্যে একক সর্ববৃহৎ সংগ্রহ। এখানে প্রস্তর ভাস্কর্য বিরল। তবে প্রাপ্ত কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত স্টাকো ভাস্কর্যটি একটি আকর্ষণীয় নমুনা। ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও মূর্তিতত্ত্বে বিহ্বলতা প্রকাশ পেলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় মহাযান মতবাদের পরিবর্তে তান্ত্রিক মতবাদ এবং সবশেষে বহু-ঈশ্বরবাদের প্রকাশ পরিদৃষ্ট হয়। এক্ষেত্রে বৌদ্ধধমের্র সাথে হিন্দু ও আদিবাসীদের বিশ্বাসসমূহ অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে গেছে। পোড়ামাটির ফলকই এখানে সর্বাধিক এবং এগুলিই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও স্থানীয় লোকশিল্পের পরিচয়বাহী। এগুলি স্থূল অথচ বলিষ্ঠ ভঙ্গি এবং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য আকর্ষণীয়।


[[Image:ItakholaMuraMainamoti.jpg]]
[[Image:MainamatiBronzeBuddha.jpg|thumb|400px|left|ব্রোঞ্জ বুদ্ধ মূর্তি]]
খননের ফলে প্রধানত ফসিল কাঠে নির্মিত প্রায় ডজন খানেক সঙ্কীর্ণ হাতলের হাত-কুঠার ও বাটালি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি অনুসন্ধানের ফলে ময়নামতীর দক্ষিণাংশে কিছু নব্য প্রস্তরযুগীয় বসতি আবিষ্কৃত হয়েছে। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও [[উড়িষ্যা|উড়িষ্যা]]র নব্য প্রস্তর যুগীয় নিদর্শনাদির সাথে এগুলির সুস্পষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান।


†KvUevwo wXwei †K‡›`ª µzkvK…wZi Dcvmbvjqmn kvjeb wenv‡ii g‡Zv GKwU g‡Vi my¯có wPý †`Lv hvq| GKwU e„nr gmwR` I Z`&msjMœ Kei¯’vb D³ wXwe‡Z j¶¨ Kiv hvq|
ময়নামতীতে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার জীবন ও সংস্কৃতির প্রায় সকল বিষয়েই আলোকপাত করেছে। এ অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্বন্ধে বিশদ তথ্য সরবরাহ করেছে এবং সেই সাথে প্রথম দেব বংশ ও দেবপর্বত-এর প্রতিষ্ঠাতা বলভট্ট সম্বন্ধে জানার পথ সুগম করেছে। এতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক প্রশ্নের সমাধান হয়েছে। যেমন, সমতটের আয়তন ও সীমানা, দেবপর্বত, পট্টিকের ও লালম্বি-বন-এর অবস্থান এবং হরিকেলের অবস্থা। আরও তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, পোড়ামাটির নিদর্শনাদি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এবং মৃৎপাত্র ও সাধারণ ব্যবহার্য দ্রব্যাদির তারিখ-ক্রম নিরূপণ করে ময়নামতী এখন এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান ও গবেষণার কার্যকর ভিত্তি স্থাপন করেছে। নিঃসন্দেহে ময়নামতী থেকে সংগৃহীত নিদর্শনাদি অতীত সম্বন্ধে জানার পরিধিকে আরও ব্যাপক করেছে। এসব সংগ্রহের মূল তাৎপর্য এই যে, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা হতে এগুলিই একমাত্র প্রাপ্ত প্রামাণিক সমকালীন স্তরবিন্যস্ত উপকরণ যা বাংলার এই অঞ্চলের সভ্যতা ও ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য এই প্রথমবারের মত একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।  [এম হারুনুর রশিদ]


†KvUevwo aŸsmve‡k‡li cÖvq GK wK‡jvwgUvi `w¶Y-cwð‡g, ˆkjivwRi cwðg mxgv‡š— ALbbK…Z cv°v gyov (274 wg j¤^v, 91 wg PIov I 15 wgUvi DuPz) GKwU ¸i“Z¡c~Y© ¯’vcbv| GB cÖZœ¯’jwUi ¸i“Z¡ wbwnZ Gi wbæ wfwËi cwðg As‡ki cÖmv‡ii gv‡S| m¤¢eZ b`x kywK‡q hvIqvq ev MwZ cwieZ©‡bi d‡j GwU m¤¢e n‡qwQj| cwjRwbZ Kvi‡Y b`xMf© Dc‡i D‡V hvIqvq Gi GKvsk weivU GK Rjvk‡q iƒcvš—wiZ n‡q‡Q, hv ÔZvivÕ w`wN bv‡g cwiwPZ|
BU‡Lvjv gyov#
Gi MfxiZg ga¨vsk eZ©gv‡b `ywU cyKz‡i iƒcvš—wiZ Kiv n‡q‡Q| cyKzi؇qi g‡a¨ e„nËiwU cÖvq `yGKi AvqZb wewkó| GwU Lb‡bi mgq weòzi `ywU AvKl©Yxq Kv‡jv cÖ¯—i g~wZ© cvIqv †M‡Q| Gi g‡a¨ GKwU cÖgvY mvB‡Ri Ges AciwU mvgvb¨ †QvU| g~wZ© `ywU‡Z †mb I †`e ixwZi cwiYZ ˆewkó¨ cÖZxqgvb| cÖvß Ab¨vb¨ Avbylw½K `ªe¨vw`i g‡a¨ me‡P‡q Zvrch©c~Y© n‡jv cieZ©x †`e es‡ki `v‡gv`i‡`‡ei cyÎ I DËivwaKvix `ki_ †`‡ei (†Z‡iv kZK) GKwU Zvgªkvmb|
me©`w¶‡Yi PÊx gyov (¯’vbxqfv‡e iƒcevb gyov bv‡g cwiwPZ) cÖZœ¯’j †_‡K cÖvq 2.5 wK‡jvwgUvi DËi-cwð‡g ˆkjivwRi cwðg cÖv‡š—i we¯—…Z DuPz wXwe‡Z †MvjvKvi M¤^y‡Ri b¨vq GKwU weaŸ¯— KvVv‡gvi Aw¯—Z¡ wQj| ¯’vbxq Awaevmx‡`i Øviv BU msMÖ‡ni d‡j B‡Zvg‡a¨B Dš§y³ ¯’vcbvwUi KvVv‡gv ¶wZMÖ¯— n‡q‡Q| GB ¯’vcbvwU †_‡K ¸i“Z¡c~Y© wb`k©b †ewi‡q Avmvi h‡_ó m¤¢vebv i‡q‡Q|
[[Image:TerracottaSculptureBuffalo.jpg]]
[[Image:MainamatiTerracotta.jpg]]
†cvovgvwUi fv¯‹h©- e„l #†Vvu‡U gy³vi gvjvmn gq~i , †cvovgvwUi djK
jvjgvB †ij‡÷k‡bi cÖvq 1.6 wK‡jvwgUvi DËi-cwð‡g ˆkjivwRi `w¶Y cÖv‡š— `„wó‡MvPi nIqvi g‡Zv GKwU wXwe  (ˆ`‡N©¨ 457 wg, cÖ‡¯’ 183 wg Ges D”PZvq 18 wgUvi) we`¨gvb hv ¯’vbxqfv‡e PÊx gyov bv‡g cwiwPZ| cÖvq 250 eQi c~‡e© wÎcyivi gnvivRv GB wXwei P‚ovq PÊxi †Rvov gw›`i wbg©vY K‡iwQ‡jb| G †_‡KB ¯’vbwUi bvg nq PÊxgyov| G ¯’v‡bi cÖZœZvwË¡K  wPý A¶Z i‡q‡Q; wXwewU‡Z m¤¢eZ GKwU e„nr gw›`‡ii aŸsmve‡kl we`¨gvb| cÖ_‡g gw›`i hyMj wbg©v‡Yi Kvi‡Y Ges c‡i gw›`‡ii mv‡_ RwoZ †jvKR‡bi evwo-Ni wbg©v‡Yi Rb¨ wXwei P‚ovwU gvivZ¥Kfv‡e ¶wZMÖ¯— n‡q‡Q| Z‡e wbæZi ¯—‡i cÖZœZvwË¡K Aewkóvsk GLbI A¶Z i‡q‡Q e‡j aviYv Kiv †h‡Z cv‡i|
[[Image:MainamatiGuptaImmitationGoldCoin.jpg]]
¸ß AbyK…Z ¯^Y©gy`ªv
ALbbK…Z Ab¨vb¨ cÖZœ¯’‡ji g‡a¨ gqbvgwZ wUjv-2, AveŸvm Avjx gyov, †÷kb KgvÛv‡ii Avevm, nvwZMo wUjv, DwRicyi wUjv, wNjv gyov Ges ejMvRxi gyovi bvg D‡j­L Kiv hvq| Gme ¯’vb †_‡K cÖZœZvwË¡K ¸i“Z¡en aŸsmve‡kl cÖvwßi cÖgvY cvIqv †M‡Q| †jvKR‡bi B”QvK…Z ev Awb”QvK…Z Ae‡njvi `i“Y wXwe¸wji Av‡k cv‡ki ¯’vbmg~‡ni AwaKvskB GLb AZ¨š— ¶wZMÖ¯— Ae¯’vq we`¨gvb|
'''wb`k©bmg~n'''  gqbvgZx‡Z LbbKv‡h©i d‡j AmvaviYfv‡e mg„× cÖvPxb wb`k©‡bi mgvnvi D‡š§vwPZ n‡q‡Q| †m¸wji g‡a¨ i‡q‡Q ev‡ivwU Zvgªkvmb I ¶z`ªvK…wZi wjwcmg„× g~wZ©, PvikiI AwaK ¯^Y© I †iŠc¨ gy`ªv, AmsL¨ †cvov I Kv`vgvwUi wmj I wmwjs, be¨cÖ¯—ihyMxq KzVvi I evUvwj, cÖ¯—i, †eªvÄ, ÷v‡Kv I †cvovgvwUi fv¯‹h©, cÖ¯—i I †cvovgvwUi ¸wUKv, †mvbv, iƒcv I †eªv‡Äi Aj¼vi, Aj¼…Z †cvovgvwU I ¯’vcZ¨wkí mvgMÖx, avZe I g„r cvÎ, ZvIqv, AjsK…Z cvÎ I nuvwocvwZj, ˆZj cÖ`xc Ges ˆ`bw›`b e¨env‡ivc‡hvMx wewfbœ mvgMÖx| G¸wji †ewkifvMB kvjeb wenvi †_‡K msM„nxZ| kvjeb wenv‡iB wbqgvbyM c×wZ‡Z LbbKvh© cwiPvjbv Kiv n‡q‡Q| GB cÖZœmvgMÖx¸wj GKB mv‡_ cÖvPxb e½-mgZU m¤c‡K© ÁvbvR©‡b †hgb Ae`vb iv‡L, †Zgwb Qq †_‡K †Z‡iv kZK ch©š— cÖvq mvZk eQ‡ii Zvrch©c~Y© Z_¨ mieivn K‡i|
Ab~¨b ev‡ivwU Zvgªkvmb Avwe®‹…Z n‡q‡Q hv `w¶Y-c~e© evsjvi BwZnvm, ms¯‹…wZ, mgvR I A_©bxwZi Ici Av‡jvKcvZ K‡i| DrmM©xK…Z †QvU †QvU eû DrKxY© wjwci g‡a¨ Lye mvgvb¨ K‡qKwU‡Z kvjeb wenvi I Gi wbg©vZv ivRvi bvg LwPZ| me¸wjB †ek ¸i“Z¡en| msMÖnK…Z gy`ªvi g‡a¨ D‡j­L‡hvM¨ n‡”Q, mvgvb¨ wKQy ¸ß I ¸ß-cieZ©x gy`ªvi AbyKi‡Y wbwg©Z ¯^Y© gy`ªv, [[শশাঙ্ক|kkv¼]]Gi GKwU `yj©f †iŠc¨ gy`ªv, LoM kvmK ejf‡Æi cÖvq GK WRb ¯^Y© gy`ªv, ¸wU K‡qK AvivKvwb I AmsL¨ [[হরিকেল|nwi‡Kj]] I ÔAvKiÕ es‡ki gy`ªv Ges AveŸvmxq Lwjdv‡`i GKwU ¯^Y© I K‡qKwU †iŠc¨ gy`ªv| #
[[Image:MainamatiBuddha.jpg]]
#ey×g~wZ©, iƒcevb gyov
g„rcvÎ e¨ZxZ cÖ¯—i, †eªvÄ, ÷v‡Kv I †cvovgvwUi fv¯‹h©mg~n n‡jv cÖvß cÖvPxb wb`k©bvw`i g‡a¨ GKK me©e„nr msMÖn| GLv‡b cÖ¯—i fv¯‹h© weij| Z‡e cÖvß wKš‘ ¶wZMÖ¯— ÷v‡Kv fv¯‹h©wU GKwU AvKl©Yxq bgybv| †eªvÄ fv¯‹h©¸wj‡Z cÖv_wgK ch©v‡q ag©xq Abyf‚wZ I g~wZ©Z‡Ë¡ wenŸjZv cÖKvk †c‡jI ax‡i ax‡i RbwcÖq gnvhvb gZev‡`i cwie‡Z© Zvwš¿K gZev` Ges me‡k‡l eû-Ck¦iev‡`i cÖKvk cwi`„ó nq| G‡¶‡Î †eŠ×a‡gi© mv‡_ wn›`y I Avw`evmx‡`i wek¦vmmg~n Awe‡”Q`¨fv‡e wg‡k †M‡Q| †cvovgvwUi djKB GLv‡b me©vwaK Ges G¸wjB me‡P‡q AvKl©Yxq I ¯’vbxq †jvKwk‡íi cwiPqevnx| G¸wj ¯’‚j A_P ewjô fw½ Ges ¯’vbxq ˆewk‡ó¨i Rb¨ AvKl©Yxq|
[[Image:MainamatiBronzeBuddha.jpg]]
Lb‡bi d‡j cÖavbZ dwmj Kv‡V wbwg©Z cÖvq WRb Lv‡bK m¼xY© nvZ‡ji nvZ-KzVvi I evUvwj cvIqv †M‡Q| m¤cÖwZ AbymÜv‡bi d‡j gqbvgZxi `w¶Yvs‡k wKQy be¨ cÖ¯—ihyMxq emwZ Avwe®‹…Z n‡q‡Q| cwðg evsjv, wenvi I [[উড়িষ্যা|Dwol¨v]]i be¨ cÖ¯—i hyMxq wb`k©bvw`i mv‡_ GMywji my¯úó mv`„k¨ we`¨gvb|
gqbvgZx‡Z cwiPvwjZ cÖZœZvwË¡K Lbb `w¶Y-c~e© evsjvi Rxeb I ms¯‹…wZi cÖvq mKj wel‡qB Av‡jvKcvZ K‡i‡Q| G A‡ji mvgvwRK, ivR‰bwZK I A_©‰bwZK Ae¯’v m¤^‡Ü wek` Z_¨ mieivn K‡i‡Q Ges †mB mv‡_ cÖ_g [[দেব রাজবংশ|†`e esk]] I †`ece©Z-Gi cÖwZôvZv ejfÆ m¤^‡Ü Rvbvi c_ myMg K‡i‡Q| G‡Z †ek wKQy HwZnvwmK I †fŠ‡MvwjK cÖ‡kœi mgvavb n‡q‡Q| †hgb, mgZ‡Ui AvqZb I mxgvbv, †`ece©Z, cwƇKi I jvjw¤^-eb-Gi Ae¯’vb Ges nwi‡K‡ji Ae¯’v| AviI Zvrch©c~Y© GB †h, †cvovgvwUi wb`k©bvw` ch©‡e¶Y I we‡k­lY K‡i Ges g„rcvÎ I mvaviY e¨envh© `ªe¨vw`i ZvwiL-µg wbiƒcY K‡i gqbvgZx GLb G wel‡q AviI AbymÜvb I M‡elYvi Kvh©Ki wfwË ¯’vcb K‡i‡Q| wbtm‡›`‡n gqbvgZx †_‡K msM„nxZ wb`k©bvw` AZxZ m¤^‡Ü Rvbvi cwiwa‡K AviI e¨vcK K‡i‡Q|
†eªvÄ ey× g~wZ© #
Gme msMÖ‡ni g~j Zvrch© GB †h, `w¶Y-c~e© evsjv n‡Z G¸wjB GKgvÎ cÖvß cÖvgvwYK mgKvjxb ¯—iweb¨¯— DcKiY hv evsjvi GB A‡ji mf¨Zv I BwZnvm cybM©V‡bi Rb¨ GB cÖ_gev‡ii gZ GKwU wbf©i‡hvM¨ wfwË ¯’vcb K‡i‡Q|  [Gg nvi“byi iwk`]''' '''
[[en:Mainamati]]
[[en:Mainamati]]
[[en:Mainamati]]
[[en:Mainamati]]
[[en:Mainamati]]


[[en:Mainamati]]
[[en:Mainamati]]

১০:২২, ৮ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

ময়নামতী কুমিল্লা শহরের প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বাংলাদেশের পূর্ব সীমায় বিচ্ছিন্ন অনুচ্চ পার্বত্য এলাকা, যা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে এক পরিচিত নাম। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ নিদর্শনাদি উন্মোচিত হয়েছে। ঈষৎ লাল পুরাতন পললভূমির ইঙ্গিতবহ অঞ্চলটি প্রাচীন ইতিহাসের মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত। মেঘনা বেসিনের ভাটিতে গোমতী নদী তীরস্থ ময়নামতী গ্রাম থেকে লালমাই রেলস্টেশনের নিকটে চান্দিমুরা পর্যন্ত এই ক্ষুদ্র শৈলশ্রেণি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৭ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর প্রশস্ততম অংশটি ৪.৫ কিলোমিটার চওড়া এবং সর্বোচ্চ চূড়াটি ৪৫ মিটার উঁচু। এসব উঁচু ভূমি এক সময় ঘন জঙ্গল ও অসংখ্য বন্যপ্রাণীতে পরিপূর্ণ ছিল, কিন্তু আধুনিক উন্নয়ন এখানকার শান্ত মনোরম পরিবেশকে বিঘ্নিত করেছে। অঞ্চলটির উত্তর অংশে ক্রমবর্ধমান ক্যান্টনমেন্ট এবং এর প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত দ্রুত প্রসারমাণ কোটবাড়ি শহরতলি এখানকার মায়াবী সৌন্দর্যকে ইতোমধ্যেই অতীতের ছায়ায় পরিণত করেছে।

লালমাই-ময়নামতী যৌথনাম এ স্থানটির সাথে অতীতের এক তাৎপর্যপূর্ণ যোগসূত্র নির্দেশ করে। লালমাই অর্থাৎ, এর দক্ষিণাংশ চন্দ্র লিপিতে উৎকীর্ণ লালম্বী-বন এর সাথে অভিন্ন; অন্যদিকে এর উত্তরাংশ স্থানীয় গাঁথা ও লোকসংগীতে উল্লিখিত চন্দ্রবংশের কিংবদন্তীর রানী ‘ময়নামতী’র নাম স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক উদ্ঘাটন তর্কাতীতভাবেই প্রমাণ করে যে, এই এলাকাটিই ছিল প্রাচীন বঙ্গ-সমতটের (দক্ষিণপূর্ব বাংলা) সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। অসংখ্য ঢিবি, স্মৃতিস্তম্ভ, খননকৃত ধ্বংসাবশেষ এবং সেগুলির যথাযথ পরিপূরক হিসেবে বিক্ষিপ্ত নিদর্শনসমূহের আকর্ষণীয় বিন্যাস ঘটনাবহুল অতীত ও গৌরবের প্রতি জোরালো ইঙ্গিত বহন করে। তবে খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষসমূহের জন্যই ময়নামতী বর্তমানে অধিকতর পরিচিত। বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষসমূহের সর্বাধিক সংগ্রহ এখানেই।

আবিষ্কার  ১৮৭৫ সালে পাহাড়গুলির মধ্য দিয়ে প্রসারিত পুরানো সড়কটির পুনঃনির্মাণ কালে শ্রমিকরা হঠাৎ কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ঘাটন করে। তখন এটিকে একটি ছোট ইটের দুর্গ মনে করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি বৌদ্ধ মঠ। এর প্রায় ৭২ বছর আগে (১৮০৩) এই এলাকা থেকেই ময়নামতীর প্রথম পুরানিদর্শন ১২২০ খ্রিস্টাব্দে উৎকীর্ণ রণবঙ্কমল্ল হরিকলদেব-এর তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছিল। এতে দুর্গ ও মঠ সমৃদ্ধ রাজধানী পট্টিকেরা-র বিবরণ আছে। বর্তমানে পটিকর পরগনার মাঝে এ নামটি এখন বেঁচে আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ময়নামতীর ধ্বংসাবশেষসমূহ পুনরাবিষ্কৃত হয়। অগ্রবর্তী শিবির স্থাপনকালে সেনাবাহিনী শৈলশ্রেণির কয়েকটি স্থানে পুরানো ধ্বংসাবশেষসমূহের সম্মুখীন হয়। তরিত একটি জরিপের পর সরকার ১৮টি স্থানকে চিহ্নিত করে এবং সেগুলি সংরক্ষণ করে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে আরও নিয়মিত ও নিয়মানুগ জরিপের ফলে সমগ্র অঞ্চলের জনবসতিহীন এলাকা থেকে পঞ্চাশেরও অধিক স্থান চিহ্নিত করা হয়। এগুলির অধিকাংশই শৈলশ্রেণির উত্তরাংশে, যা এখন ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অন্তর্গত। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন আরম্ভ হয়। খনন পর্যায়ে চিহ্নিত পঞ্চাশোর্ধ্ব স্থানের মধ্যে এ যাবৎ নয়টি উন্মোচিত হয়েছে। যদিও খনন কার্য এখনও স¤পূর্ণ হয়নি এবং যে কোন বিচারেই এর সংখ্যা বেশ সীমিত, তথাপি এ যাবৎ প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফল এতদিন যাবৎ অজ্ঞাত এই স্থানের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনর্গঠনে এক বলিষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি রচনা করেছে।

শালবন বিহার,কুমিল্লা

খননকৃত প্রত্নস্থান খননকৃত প্রত্নস্থানসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শালবন বিহার। এটি শৈলরাজির প্রায় কেন্দ্রে বর্তমান কোটবাড়িস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমির সন্নিকটে অবস্থিত। খননের ফলে পাহাড়পুর-এর ন্যায় একটি সুবৃহৎ বৌদ্ধ মঠ এবং সাত থেকে বারো শতকের মধ্যবর্তী সময়ের মূল্যবান দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে। আবিষ্কৃত দ্রব্যাদির মধ্যে আছে আটটি তাম্রশাসন, চারশরও অধিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়ামাটিফলক ও পোড়ানো মাটির সিল ও সিলিং, বহু সংখ্যক পাথর, ব্রোঞ্জ ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য। সাত শতকের শেষ বা আট শতকের শুরুতে দেবপর্বত-এর আদি দেব বংশ-এর চতুর্থ শাসক শ্রী ভবদেব কেন্দ্রীয় বেদিসহ সুবৃহৎ এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন।

আনন্দ বিহার-এর সন্নিকটে শৈলরাজির উত্তর-পূর্বাংশের সর্বোচ্চ ঢিবি কুটিলা মুড়ায় ময়নামতীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় নিদর্শনসমূহ উদ্ঘাটিত হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত তিনটি প্রধান ¯তূপ এবং এদের ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি স¤পূরক উপাসনা কক্ষ ও চৈত্য-হল। সবগুলি স্থাপনাই একটি বিশাল দেওয়াল দ্বারা ঘেরা। এখানে আকর্ষণীয় ও জটিল কিছু স্থাপত্যিক কাঠামো এবং সেই সাথে নকশা শৈলী সংরক্ষিত। এখানে খননকার্য এখনও শেষ হয়নি। উত্তর প্রান্তের মঠ এবং প্রত্নস্থলটির দুধারের সুবৃহৎ স্তূপ দুটির উন্মোচন এখনও বাকি। খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এই ভবনগুলির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল সাত শতকের দিকে। উপরের দিকের স্তর থেকে উদ্ধারকৃত একটি আব্বাসীয় মুদ্রা ইঙ্গিত দেয় যে, এগুলি তেরো শতকের পর্যন্ত টিকেছিল।

শৈলরাজির উত্তরাংশে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার প্রায় কেন্দ্রে চারপত্র মুড়া নামক একটি ক্ষুদ্র ও আকর্ষণীয় প্রত্নস্থল অবস্থিত। এখানে চন্দ্র যুগের (দশ-এগারো খ্রিস্টাব্দ) একটি ছোট হিন্দু মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির স্থাপত্য এর প্রথমদিকের নিদর্শনসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। এই প্রত্নস্থল থেকে চারটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে চারপত্র মুরা।

আনন্দবিহার

ময়নামতীর মনুমেন্টগুলির মধ্যে আনন্দবিহার সর্ববৃহৎ। এটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্ভারে সমৃদ্ধ  কোটবাড়ির কেন্দ্রে অবস্থিত। চারদিকে বিহার, স্তূপ ও উপাসনালয় নিয়ে গঠিত ধর্ম ও শিক্ষার এটি একটি বিরাট স্থাপনা। পূর্ববর্তী দেববংশের তৃতীয় শাসক শ্রী আনন্দদেব সাত শতকের শেষ অথবা আট শতকের গোড়ার দিকে এলাকার সর্ববৃহৎ জলাধারটিসহ সমগ্র বিহার কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৪৪-৪৫ সালে সেনা ঠিকাদাররা ও ইট সংগ্রাহক কেন্দ্রীয় উপাসনালয়টিসহ এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল যে, এগুলিকে আর চেনার মতো অবস্থায় রাখেনি। পরবর্তীকালে ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণের প্রক্রিয়া এই স্থাপনার গুরুতর ক্ষতিসাধন করে। বিশ শতকের সত্তর দশকের শেষভাগে সামান্য কয়েকটি পর্যায়ে সীমিত আকারে খনন কার্য চালানো হয়, তবে তাও অসম্পূর্ণভাবে।

ময়নামতীতে শালবন বিহার ও আনন্দ বিহারের পর তৃতীয় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক মঠ স্থাপনাটি হলো ভোজবিহার। এটি কোটবাড়ি এলাকার প্রায় কেন্দ্রস্থলে পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর সন্নিকটে অবস্থিত। মঠটির পূর্বদিকে একটি বিরাট জলাধার আছে। খননের ফলে একটি বর্গাকৃতি মঠের পরিরেখ উন্মোচিত হয়েছে। শালবন বিহার ও আনন্দ বিহারের ন্যায় এটিও উন্মুক্ত আঙিনার মাঝখানে ক্রুশাকৃতির একটি সুবৃহৎ উপাসনালয় সমৃদ্ধ।

ময়নামতী প্রাসাদ টিলা (Mainamati’s Palace Mound) শৈলরাজির উত্তর প্রান্তের সর্ববৃহৎ ও সর্বোচ্চ ঢিবি। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের ঠিক পূর্বে এখনও রানীর নাম বহনকারী গ্রামটির সন্নিকটে অবস্থিত। কিংবদন্তী অনুযায়ী প্রত্নস্থলটি চন্দ্র বংশের সর্বশেষ জ্ঞাত রাজা গোবিন্দচন্দ্রের মা রানী ময়নামতীর নামের সাথে জড়িত। প্রত্নস্থলটির কেন্দ্রস্থলে সীমিত আকারের খননের ফলে এর বিভিন্ন অংশের, সম্ভবত একটি দুর্গের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা প্রাচীরের কিছু অংশ এবং একটি সুদৃঢ় কাঠামোর কোণ সম্বলিত একটি প্রাসাদের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে। এটিই সম্ভবত ময়নামতীতে ধর্মবহির্ভূত একমাত্র নির্মাণ কাঠামো।

রূপবান মুড়া

কুমিল্লা-কালীরবাজার সড়কের দক্ষিণে কোটবাড়ি এলাকায় নির্মিত বর্তমান পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (সাবেক বাংলাদেশ রাইফেলস-বি.ডি.আর) প্রতিষ্ঠান দুটির মাঝে অবস্থিত ছোট একটি পাহাড়ে  রূপবান মুড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। খননের ফলে এখানে অন্যান্য কিছু সম্পূরক কাঠামোসহ সেমি-ক্রুশাকৃতির একটি উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। খননের ফলে এ প্রত্নস্থলটিতে তিনটি কালপর্বে নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের চিহ্ন উন্মোচিত হয়েছে। সর্বপ্রাচীন পর্বটি আনুমানিক ছয় হতে সাত শতকের। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শেষ পর্বটির (দশ থেকে এগারো শতক) তেমন কিছুই আর টিকে নেই। এখানে উদ্ভাবিত উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে বিরাটকায় বুদ্ধ প্রস্তর মূর্র্তি, ছাড়াও খড়গ রাজা বলভট্ট-এর পাঁচটি খাদযুক্ত স্বর্ণমুদ্রা অন্তর্ভুক্ত।

কোটবাড়ি সড়কের পাশে  রূপবান মুড়ার বিপরীতে ছোট টিলাটিতে তিন স্তরে ইটাখোলামুড়া প্রত্নস্থলটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। বহুদিন ধরে পুরানো ইটের ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহৃতত হওয়ায় এ স্থানের এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। খননের ফলে উত্তর দিকে একটি সংযুক্ত মঠসহ এক সুবৃহৎ স্তূপ কমপ্লেক্স উন্মোচিত হয়েছে। পাঁচটি সাংস্কৃতিক পর্যায়ের মধ্যে প্রাচীনতম তিনটি পরবর্তীকালের ধ্বংস্তূপের নিচে ঢাকা পড়ে আছে। এ স্থানে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য প্রাচীন নিদর্শনসমূহের মধ্যে স্টাকো মূর্তি ব্যতীত নিরেট সোনার তিনটি গোলক (১৯ তোলা) এবং একটি তাম্রশাসন রয়েছে। এখনও তাম্রশাসনটির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ইটখোলা মুড়া

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে ময়নামতী বাসস্ট্যান্ডের সন্নিকটে  ময়নামতী টিলা ১এ (Mainamati Mound 1-A) অবস্থিত। এখানে সীমিত আকারে খনন পরিচালনা করে ছয়টি দীর্ঘ দেওয়াল, সোজা ও আড়াআড়ি রাস্তা, প্রবেশদ্বারসমূহ এবং অন্যান্য অপর্যাপ্ত কিছু ধ্বংসাবশেষ উন্মোচন করা হয়েছে। ধ্বংসাবশেষসমূহের মধ্যে ধর্মবহির্ভূত ও ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখে অনুমিত হয় যে, এটি কোন সেনা নিবাসের ব্যারাক ছিল।

অখননকৃত স্থানসমূহ অসংখ্য অখননকৃত স্থানের মধ্যে কুটিলা মুড়ার সরাসরি পশ্চিমে ক্যান্টনমেন্টের অন্তর্ভুক্ত মাঝারি উচ্চতার ঢিবি বৈরাগীর মুড়ার নাম উল্লেখ করা যায়। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট, ভাঙা মৃৎপাত্র ও প্রস্তর মূর্তির টুকরাসমূহ এ স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের জোরাল ইঙ্গিত বহন করে। ক্যান্টনমেন্টে পানি সরবরাহের জন্য এই ঢিবির উপর নির্মিত দুটি বিশাল পানির ট্যাংক স্থানটির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। নির্মাণ কাজের সময় বেশ কিছু নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছিল, তবে সেগুলির মধ্যে কেবলমাত্র দুটি (চন্দ্র যুগের) স্থানীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে- একটি উৎকীর্ণ লিপিসহ পদ্ম সিংহাসনের ওপর দণ্ডায়মান একটি বিশালাকার প্রস্তর মূর্তির নিচের অংশ এবং অন্যটি ব্রোঞ্জের তৈরী প্রমাণ সাইজ বোধিসত্ত্ব মস্তক।

একটি বিরাট ব্রোঞ্জের ঘণ্টা, বর্গাকৃতি বড় বড় পাথরের ব্লক (মনে হয় স্তম্ভের তলদেশ), একটি তাম্রশাসন, একটি লিপি সম্বলিত প্রস্তর ফলক এবং বেশ কিছু ব্রোঞ্জ ও পোড়ামাটির ভাস্কর্যের আবিষ্কার কোটবাড়িতে অবস্থিত রূপবান কন্যা মুড়ার গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের প্যারেড গ্রাউন্ড ও গ্যারেজের জন্য এ স্থানটিকে কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে।

পোড়ামাটির ভাস্কর্য- বৃষ

কোটবাড়ি ঢিবির কেন্দ্রে ক্রুশাকৃতির উপাসনালয়সহ শালবন বিহারের মতো একটি মঠের সু¯পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়। একটি বৃহৎ মসজিদ ও তদ্ধসঢ়;সংলগ্ন কবরস্থান উক্ত ঢিবিতে লক্ষ্য করা যায়।

কোটবাড়ি ধ্বংসাবশেষের প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, শৈলরাজির পশ্চিম সীমান্তে অখননকৃত পাক্কা মুড়া (২৭৪ মি লম্বা, ৯১ মি চওড়া ও ১৫ মিটার উঁচু) একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই প্রত্নস্থলটির গুরুত্ব নিহিত এর নিু ভিত্তির পশ্চিম অংশের প্রসারের মাঝে। সম্ভবত নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বা গতি পরিবর্তনের ফলে এটি সম্ভব হয়েছিল। পলিজনিত কারণে নদীগর্ভ উপরে উঠে যাওয়ায় এর একাংশ বিরাট এক জলাশয়ে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ‘তারা’ দিঘি নামে পরিচিত। এর গভীরতম মধ্যাংশ বর্তমানে দুটি পুকুরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পুকুরদ্বয়ের মধ্যে বৃহত্তরটি প্রায় দুএকর আয়তন বিশিষ্ট। এটি খননের সময় বিষ্ণুর দুটি আকর্ষণীয় কালো প্রস্তর মূর্তি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি প্রমাণ সাইজের এবং অপরটি সামান্য ছোট। মূর্তি দুটিতে সেন ও দেব রীতির পরিণত বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান। প্রাপ্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো পরবর্তী দেব বংশের দামোদরদেবের পুত্র ও উত্তরাধিকারী দশরথ দেবের (তেরো শতক) একটি তাম্রশাসন।

পোড়ামাটির ভাস্কর্য- ঠোঁটে মুক্তার মালাসহ ময়ূর , পোড়ামাটির ফলক

সর্বদক্ষিণের চণ্ডী মুড়া (স্থানীয়ভাবে রূপবান মুড়া নামে পরিচিত) প্রত্নস্থল থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শৈলরাজির পশ্চিম প্রান্তের বিস্তৃত উঁচু ঢিবিতে গোলাকার গম্বুজের ন্যায় একটি বিধ্বস্ত কাঠামোর অস্তিত্ব ছিল। স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা ইট সংগ্রহের ফলে ইতোমধ্যেই উš§ুক্ত স্থাপনাটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই স্থাপনাটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন বেরিয়ে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

লালমাই রেলস্টেশনের প্রায় ১.৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শৈলরাজির দক্ষিণ প্রান্তে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো একটি ঢিবি  (দৈর্ঘ্যে ৪৫৭ মি, প্রস্থে ১৮৩ মি এবং উচ্চতায় ১৮ মিটার) বিদ্যমান যা স্থানীয়ভাবে চণ্ডী মুড়া নামে পরিচিত। প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা এই ঢিবির চূড়ায় চণ্ডীর জোড়া মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এ থেকেই স্থানটির নাম হয় চণ্ডীমুড়া। এ স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক  চিহ্ন অক্ষত রয়েছে; ঢিবিটিতে সম্ভবত একটি বৃহৎ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান। প্রথমে মন্দির যুগল নির্মাণের কারণে এবং পরে মন্দিরের সাথে জড়িত লোকজনের বাড়ি-ঘর নির্মাণের জন্য ঢিবির চূড়াটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নিুতর স্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক অবশিষ্টাংশ এখনও অক্ষত রয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে।

গুপ্ত অনুকৃত স্বর্ণমুদ্রা

অখননকৃত অন্যান্য প্রত্নস্থলের মধ্যে ময়নামতি টিলা-২, আব্বাস আলী মুড়া, স্টেশন কমান্ডারের আবাস, হাতিগড় টিলা, উজিরপুর টিলা, ঘিলা মুড়া এবং বলগাজীর মুড়ার নাম উল্লেখ করা যায়। এসব স্থান থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ ধ্বংসাবশেষ প্রাপ্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। লোকজনের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অবহেলার দরুণ ঢিবিগুলির আশে পাশের স্থানসমূহের অধিকাংশই এখন অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় বিদ্যমান।

নিদর্শনসমূহ  ময়নামতীতে খননকার্যের ফলে অসাধারণভাবে সমৃদ্ধ প্রাচীন নিদর্শনের সমাহার উন্মোচিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বারোটি তাম্রশাসন ও ক্ষুদ্রাকৃতির লিপিসমৃদ্ধ মূর্তি, চারশরও অধিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া ও কাদামাটির সিল ও সিলিং, নব্যপ্রস্তরযুগীয় কুঠার ও বাটালি, প্রস্তর, ব্রোঞ্জ, স্টাকো ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য, প্রস্তর ও পোড়ামাটির গুটিকা, সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের অলঙ্কার, অলঙ্কৃত পোড়ামাটি ও স্থাপত্যশিল্প সামগ্রী, ধাতব ও মৃৎ পাত্র, তাওয়া, অলংকৃত পাত্র ও হাঁড়িপাতিল, তৈল প্রদীপ এবং দৈনন্দিন ব্যবহারোপযোগী বিভিন্ন সামগ্রী। এগুলির বেশিরভাগই শালবন বিহার থেকে সংগৃহীত। শালবন বিহারেই নিয়মানুগ পদ্ধতিতে খননকার্য পরিচালনা করা হয়েছে। এই প্রত্নসামগ্রীগুলি একই সাথে প্রাচীন বঙ্গ-সমতট স¤পর্কে জ্ঞানার্জনে যেমন অবদান রাখে, তেমনি ছয় থেকে তেরো শতক পর্যন্ত প্রায় সাতশ বছরের তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।

বুদ্ধমূর্তি, রূপবান মুড়া

অন্যূন বারোটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে যা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর আলোকপাত করে। উৎসর্গীকৃত ছোট ছোট বহু উৎকীর্ণ লিপির মধ্যে খুব সামান্য কয়েকটিতে শালবন বিহার ও এর নির্মাতা রাজার নাম খচিত। সবগুলিই বেশ গুরুত্ববহ। সংগ্রহকৃত মুদ্রার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সামান্য কিছু গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী মুদ্রার অনুকরণে নির্মিত স্বর্ণ মুদ্রা, শশাঙ্ক-এর একটি দুর্লভ রৌপ্য মুদ্রা, খড়গ শাসক বলভট্টের প্রায় এক ডজন স্বর্ণ মুদ্রা, গুটি কয়েক আরাকানি ও অসংখ্য হরিকেল ও ‘আকর’ বংশের মুদ্রা এবং আব্বাসীয় খলিফাদের একটি স্বর্ণ ও কয়েকটি রৌপ্য মুদ্রা।

মৃৎপাত্র ব্যতীত প্রস্তর, ব্রোঞ্জ, স্টাকো ও পোড়ামাটির ভাস্কর্যসমূহ হলো প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাদির মধ্যে একক সর্ববৃহৎ সংগ্রহ। এখানে প্রস্তর ভাস্কর্য বিরল। তবে প্রাপ্ত কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত স্টাকো ভাস্কর্যটি একটি আকর্ষণীয় নমুনা। ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও মূর্তিতত্ত্বে বিহ্বলতা প্রকাশ পেলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় মহাযান মতবাদের পরিবর্তে তান্ত্রিক মতবাদ এবং সবশেষে বহু-ঈশ্বরবাদের প্রকাশ পরিদৃষ্ট হয়। এক্ষেত্রে বৌদ্ধধমের্র সাথে হিন্দু ও আদিবাসীদের বিশ্বাসসমূহ অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে গেছে। পোড়ামাটির ফলকই এখানে সর্বাধিক এবং এগুলিই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও স্থানীয় লোকশিল্পের পরিচয়বাহী। এগুলি স্থূল অথচ বলিষ্ঠ ভঙ্গি এবং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য আকর্ষণীয়।

ব্রোঞ্জ বুদ্ধ মূর্তি

খননের ফলে প্রধানত ফসিল কাঠে নির্মিত প্রায় ডজন খানেক সঙ্কীর্ণ হাতলের হাত-কুঠার ও বাটালি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি অনুসন্ধানের ফলে ময়নামতীর দক্ষিণাংশে কিছু নব্য প্রস্তরযুগীয় বসতি আবিষ্কৃত হয়েছে। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নব্য প্রস্তর যুগীয় নিদর্শনাদির সাথে এগুলির সুস্পষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ময়নামতীতে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার জীবন ও সংস্কৃতির প্রায় সকল বিষয়েই আলোকপাত করেছে। এ অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্বন্ধে বিশদ তথ্য সরবরাহ করেছে এবং সেই সাথে প্রথম দেব বংশ ও দেবপর্বত-এর প্রতিষ্ঠাতা বলভট্ট সম্বন্ধে জানার পথ সুগম করেছে। এতে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক প্রশ্নের সমাধান হয়েছে। যেমন, সমতটের আয়তন ও সীমানা, দেবপর্বত, পট্টিকের ও লালম্বি-বন-এর অবস্থান এবং হরিকেলের অবস্থা। আরও তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, পোড়ামাটির নিদর্শনাদি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এবং মৃৎপাত্র ও সাধারণ ব্যবহার্য দ্রব্যাদির তারিখ-ক্রম নিরূপণ করে ময়নামতী এখন এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান ও গবেষণার কার্যকর ভিত্তি স্থাপন করেছে। নিঃসন্দেহে ময়নামতী থেকে সংগৃহীত নিদর্শনাদি অতীত সম্বন্ধে জানার পরিধিকে আরও ব্যাপক করেছে। এসব সংগ্রহের মূল তাৎপর্য এই যে, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা হতে এগুলিই একমাত্র প্রাপ্ত প্রামাণিক সমকালীন স্তরবিন্যস্ত উপকরণ যা বাংলার এই অঞ্চলের সভ্যতা ও ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য এই প্রথমবারের মত একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।  [এম হারুনুর রশিদ]