ফরিদপুরী, মওলানা শামসুল হক
ফরিদপুরী, মাওলানা শামসুল হক (১৮৯৬-১৯৬৯) শিক্ষাবিদ, সুফি ও সমাজসংস্কারক। ১৩০২ বঙ্গাব্দের (১৮৯৬) ২ ফাল্গুন গোপালগঞ্জ (বৃহত্তর ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ প্রায় তিনশ বছর পূর্বে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন। তাঁর পিতা মুন্সি আব্দুল্লাহ্ ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে এবং পিতামহ চেরাগ আলী সৈয়দ আহম্মদ বেরেলভির সঙ্গে শিখ-ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
শামসুল হক ১৯২০ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কয়েক বছর পর সাহারানপুর মাদ্রাসা থেকে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করেন। মাওলানা থানভীর নিকট তিনি ইলমে তাসাউফ শিক্ষালাভ করেন। পরে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা (১৯৩০-৩৫) এবং বড় কাটরার আশরাফুল-উলম মাদ্রাসায় (১৯৩৬-৫০) হাদিস শিক্ষা দেন।
শামসুল হক আজীবন সমাজসেবা ও সমাজসংস্কারমূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ‘লালবাগ আমি’আ কুরআনিয়া আরবিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল (১৯৫০-৬৮) ছিলেন। ইসলামি আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি ‘খাদেমুল-ইসলাম জমা‘আত’ (১৯৪০) এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রতিরোধকল্পে ‘আঞ্জুমান-ই-তাবলিগু‘ল-কুরআন’ (কুরআন প্রচার সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ইসলামি গবেষণাগার ‘ইদারাতু‘ল-মা‘আরিফ’ প্রতিষ্ঠা তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।
শামসুল হক শতাধিক পুস্তক রচনা ও অনুবাদ করেন। সেগুলির মধ্যে হক্কানী তফসীর, জীবনের পরিচয়, চরিত্র গঠন, বেহেশতী জেওর, তবলীগে দ্বীন, বুখারী শরীফ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয় এবং তিনি স্বগ্রামে সমাহিত হন। [মোঃ রুহুল আমীন]