জমিদার সমিতি
জমিদার সমিতি আধুনিক ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সমিতি বলে পরিগণিত। ১৮৩৮ সালের মার্চ মাসে কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত এ সমিতি অনতিকালের মধ্যেই ভূমি মালিক সমিতি (Landholders’ Society) নামে অভিহিত হয়। রাজা রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রাজকমল সেন এবং ভবানিচরণ মিত্র প্রমুখ বড় বড় ভূমি মালিকগণ এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। সরকারের কাছে আবেদনের মাধ্যমে ভূমি-মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং অসংলগ্ন যুক্তি-পরামর্শ দ্বারা আমলাতন্ত্রকে সপক্ষে আনাই ছিল এর ঘোষিত আদর্শ। এর লক্ষ্যসমূহের মধ্যে ছিল জমি নিষ্কর ভোগ দখলের অধিকার পুনঃপ্রবর্তন রহিত করা এবং ভূম্যধিকারীদের নিকট বন্দোবস্ত প্রদানসহ ভূমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভারতের সর্বত্র সম্প্রসারণ ঘটানো। বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ এবং রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দাবিও এর আলোচ্য সূচিতে ছিল।
এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সমিতি কলকাতায় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিল, লন্ডনের ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং এর সভাপতি জর্জ থম্পসনকে লন্ডনে ভূমি মালিক সমিতির প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিল।
রাজানুগত্যের সুস্পষ্ট প্রকাশসহ ভূমি মালিক সমিতি ছিল স্থানীয় জমিদার ও বানিয়াদের একান্ত একটি অভিজাত ক্লাব বিশেষ। বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্যরত বেসরকারি ব্রিটিশদেরও এর সদস্যপদ প্রদান করা হয়েছিল। এর সদস্যপদ লাভ করা সাধারণ রায়তদের সাধ্যাতীত ছিল। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাইরে, যেখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অস্তিত্ব ছিল না, ভূমি মালিক সমাজ সেখানে শিকড় ছড়াতে ব্যর্থ হয়। সীমিত ক্ষেত্র ও কর্মকান্ড নিয়ে এর একমাত্র সাফল্য ছিল সরকারের নিকট হতে দশ বিঘা পর্যন্ত ব্রহ্মোত্তর জমির খাজনা মওকুফ করা। ভূমি মালিক সমিতি ভারতে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এক নতুন ধারার উন্মোচন করেছিল বলা যায়।
ভূমি মালিক সমিতি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৮৪২ সালের দিকে এটা অকার্যকর হয়ে পড়ে, ১৮৪৩ সালে এটা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৫০ সাল পর্যন্ত এটা অবশ্য এর অস্তিত্ব কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছিল। বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি এর স্থান দখল করে নেয়। [বি.আর খান]