কোট

কোট সংস্কৃত ‘কোট্ট’ থেকে কোট শব্দের উৎপত্তি। কোট্ট অর্থ দুর্গ। কোট্টের অধিনায়ক ছিলেন কোট্টপাল। হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের লেখনী, তাম্রশাসন ও শিলালিপিতে ‘কোট্টপাল’ নামক দুর্গ অধিনায়কের কথা জানা যায়। ‘কোট্টপাল’ শব্দটি স্থানীয় ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে প্রথমে ‘কোটপাল’ পরে ‘কোটাল’ শব্দে পরিণত হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘কোট’ শব্দযুক্ত অনেক স্থানের নাম পাওয়া যায় যেমন, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া, গাজীপুর জেলার সাহার বিদ্যাকোট, নওগাঁ জেলার মঙ্গলকোট, চট্টগ্রাম জেলার কোটেরপাড়, বগুড়া জেলার বর্ধনকোট ইত্যাদি। কোটালিপাড়ায় বহু প্রত্নসামগ্রী পাওয়া গিয়েছে এবং এস্থানের প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ নেই। শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী সাহার বিদ্যাকোট গ্রামে মাটির উঁচু প্রাচীর বেষ্টিত এক দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। প্রাচীরের চারদিকে রয়েছে প্রাচীন পরিখার অগভীর খাদ। এ স্থান থেকেও বিভিন্ন সময় প্রত্নসামগ্রী উদ্ধারের কথা শোনা যায়। কোটেরপাড় নামক স্থানটিও মাটির উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ধারণা করা যায়, কোটেরপাড়ও এক সময় দুর্গ ছিল। হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগে নির্মিত কোটগুলির অবস্থান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। কোটগুলিকে অনেকে তৎকালীন আঞ্চলিক প্রশাসনিক কেন্দ্র বলেও মনে করে থাকেন।

বাংলাদেশের ‘কোট’ শব্দযুক্ত আরও কয়েকটি স্থানের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো। কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট, কোটবাড়ী ও অন্ধিকোট; ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বিদ্যাকোট, পাঠানকোট ও ভলাকোট; নোয়াখালী জেলার বীরকোট; লক্ষ্মীপুর জেলার বদলকোট; কক্সবাজার জেলার রামকোট; সিলেট জেলার বারকোট; হবিগঞ্জ জেলার নৈতিকোট; বগুড়া জেলার বর্ধনকোট ও ফুলকোট; দিনাজপুর জেলার অসুরকোট, সীতাকোট, কোটপাড়া, বড়কোট ও উজালকোট; ঠাকুরগাঁও জেলার কোটালবাড়ী; নাটোর জেলার আচিলকোট; ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর; নরসিংদী জেলার নওলাকোট; ঢাকা জেলার কোটবাড়ী ও চিত্রকোট; মুন্সিগঞ্জ জেলার ধামালকোট ইত্যাদি।  [আহমেদ আমিন চৌধুরী]