কলকাতা বোটানিক গার্ডেন
কলকাতা বোটানিক গার্ডেন কোম্পানি শাসনামলে ১৭৮৭ সালের প্রথম ভাগে এ উদ্যানের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল The Hon’ble Company’s Botanic Garden, Calcutta। ১৯৫০ সালে গার্ডেনের নতুন নামকরণ হয় ‘ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন, হাওড়া’। তবে এখনও ভারতে ও বহির্বিশ্বে উদ্যানটি সাধারণভাবে কলকাতা বোটানিক গার্ডেন নামেই সমধিক পরিচিত।
সাধারণভাবে বলা হয়, এ উদ্যান প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বের অধিকারী ফোর্ট উইলিয়মের সামরিক বিভাগের তৎকালিন সচিব, শৌখিন উদ্ভিদবিদ কর্নেল রবার্ট কাইড (১৭৪৬-১৭৯৩)। ১৭৮৬ সালের ১ জুন তারিখে স্বাক্ষরিত এক পত্রে কাইড মূলত অর্থনৈতিক লক্ষ্যে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এ পত্রে তিনি দারুচিনি, ঢাকা কটন, নীল, তামাক, কফি, চন্দন, মরিচ, চা ইত্যাদি চাষের প্রস্তাব করেন। কোর্ট অব ডিরেক্টর কাইডের অর্থনৈতিক যুক্তিতে বেশ সন্তুষ্ট হয়। এ ছাড়া এ ব্যাপারে উৎসাহমূলক সাড়া আসে রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন, কিউ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও রয়্যাল সোসাইটি (১৭৭৮-১৮২০)-এর প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্যাংকস-এর পক্ষ থেকে। শালিমারে অবস্থিত রবার্ট কাইডের ব্যক্তিগত বাগানের সন্নিকটে কলকাতার হুগলি নদীর অপর পাড়ে বোটানিক গার্ডেন প্রতিষ্ঠার স্থান নির্ধারিত হয়। ১৭৮৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রস্ত্ততিমূলক কাজ আরম্ভ হয় এবং মে মাসে কাইডকে বোটানিক গার্ডেনের সুপারিনটেন্ডেন্ট নিয়োগ করা হয়।
কাইডের প্রাথমিক পরিকল্পনার অনেক কিছুই ব্যর্থ হয়। জায়ফল, লবঙ্গ, দারুচিনি, মরিচ ইত্যাদি চাষের প্রয়াস সফল হয় না কারণ এসব বিষুবীয় প্রজাতির গাছপালার জন্য এ স্থানের জলবায়ু মোটেই অনুকূল ছিল না। বিষুবীয় অঞ্চলের ফল এবং ইউরোপীয় নাতিশীতোষ্ণ ফল চাষেরও চেষ্টা চলে, কিন্তু তাও ব্যর্থ হয়। তথাপি, তিনি গার্ডেনে বিপুল সংখ্যক গাছপালা রোপণ করেন এবং সেখান থেকে বীজ ও চারা কোম্পানির অন্যান্য উদ্ভিদ উদ্যানে স্থানান্তরকরণে সক্ষম হন। রক্সবার্গের Hortus Bengalensis থেকে এমন ৩০০ প্রজাতির উদ্ভিদের নাম চিহ্নিত করে কলকাতা বোটানিক গার্ডেনে প্রবর্তন করেছিলেন রবার্ট কাইড।
কাইডের উত্তরসূরি উইলিয়ম রক্সবার্গ (১৭৫১-১৮১৫) একজন সফল উদ্ভিদবিদ। তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জন হোপের অধীনে উদ্ভিদবিদ্যায় শিক্ষালাভ করেন এবং ১৭৯০ সালে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৭৯৩ সালের ২৯ নভেম্বর। একই বছরে গার্ডেনার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন ক্রিস্টোফার স্মিথ। রক্সবার্গ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দূরপ্রাচ্য থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহ শুরু করেন এবং একটি হার্বেরিয়াম গড়ে তোলেন। দারুচিনি চাষের ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। বিশেষত জায়ফল ও লবঙ্গ গাছের জন্য স্মিথ মালাক্কা গিয়েছিলেন। রক্সবার্গ শন ও অতসীসহ (hemp, flax) নানা ধরনের আঁশযুক্ত উদ্ভিদ চাষের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। উদ্ভিদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রক্সবার্গ ১৭৯৮-এর এপ্রিল থেকে ১৭৯৯-এর জুলাই পর্যন্ত কেপ অব গুড হোপ-এ অবস্থান করেন।
১৭৯৪-৯৫ সময়কালে রক্সবার্গ কোর্ট অব ডিরেক্টর কর্তৃক প্রেরিত পশ্চিম ভারতীয় বীজ থেকে কলকাতা বোটানিক গার্ডেনে মেহগনি গাছ লাগানো শুরু করেন। দাবি করা হয়, দেশের প্রত্যেকটি মেহগনি গাছের উৎপত্তি এখান থেকেই হয়। কলকাতা বোটানিক গার্ডেনে সেগুনও রোপণ করা হয় এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে সেগুন বন গড়ে তোলা হয়। তবে বাংলায় সেগুন চাষ সফল হয় নি। আঁশযুক্ত উদ্ভিদ নিয়ে রক্সবার্গের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফল হয়, কারণ তিনি শন ও অতসী গাছের কয়েকটি ভারতীয় বিকল্প উৎপাদনে সক্ষম হন।
সামালকোটে ও কলকাতায় রক্সবার্গ এক দল দেশি চিত্রশিল্পীকে ইউরোপীয় শৈলীতে বিভিন্ন উদ্ভিদের চিত্র অাঁকার প্রশিক্ষণ দেন। এভাবে তিনি ভারতীয় উদ্ভিদের কয়েক হাজার চিত্র তৈরি করাতে সক্ষম হন। রক্সবার্গের এসব সংগ্রহ ও চিত্রের উপর ভিত্তি করেই ভারতীয় উদ্ভিদবিদ্যার বিখ্যাত কয়েকটি গ্রন্থ প্রণীত হয়, যথা Plants of the Coast of Coromandel (কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত ১৭৯৫, ১৮০২ ও ১৮১৯ সালে), Hortus Bengalensis or A Catalogoue of the plants growing in the Hon’able East India Company’s Botanic Garden at Calcutta (সেরামপুর, ১৮১৪) ও বিখ্যাত Flora Indica (মরণোত্তর প্রকাশিত)। ১৮৭২ সালে বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যার জোসেফ হুকার প্রণীত Flora of British India গ্রন্থের প্রকাশনা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত রক্সবার্গের Flora Indica-ই ছিল একমাত্র গ্রন্থ যা থেকে ভারতীয় উদ্ভিদ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা যেত।
রক্সবার্গের উত্তরসূরি ফত্থাক্ম্রিস বুকানন (পরবর্তী সময়ে বুকানন হ্যামিল্টন) স্বল্প সময়ের জন্য এ গার্ডেনের পরিচালক ছিলেন (নভেম্বর ১৮১৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৮১৫)। তিনি দুটি জরিপ পরিচালনার জন্য স্মরণীয়, ১৮০০ সালে মহিশুরে পরিচালিত জরিপ ও ১৮০৭-১৪ সময়কালে বাংলায় পরিচালিত জরিপ। ১৮০২-১৮০৩ সময়কালে তিনি একটি ব্রিটিশ মিশন নিয়ে নেপাল ভ্রমণ করেন, সেখানে প্রচুর উদ্ভিদ সংগ্রহ করেন এবং পরে নেপালের ইতিহাস বিষয়ক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। বুকানন প্রাকৃতিক ইতিহাসে আগ্রহী ছিলেন, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যার প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল। ১৮০৪ সালে তিনি ব্যারাকপুরে নবপ্রতিষ্ঠিত Institute for Promoting the Natural History of India-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বুকাননের সংগৃহীত উদ্ভিদের নমুনা গার্ডেনের হার্বেরিয়ামকে বেশ সমৃদ্ধ করে।
১৮১৫ সালে বুকানন এদেশ ত্যাগের পর ডেনিশ শৈল্যচিকিৎসক ন্যাথানিয়েল ওয়ালিক (১৭৮৬-১৮৫৪) কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের অস্থায়ী সুপারিনটেন্ডেন্ট নিযুক্ত হন। তিনি চূড়ান্ত নিয়োগ লাভ করেন ১৮১৭ সালের ১ আগস্ট। তিনি ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে ওয়ালিক সময়ে সময়ে ভারতের উত্তর ও পূর্ব সীমান্ত এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি ভ্রমণ করেন। বস্ত্তত ওয়ালিক ১৮১৭-১৮২৮ সময়কালে নিজ প্রচেষ্টায় ও দেশের বিভিন্ন দূরবর্তী অঞ্চলের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও সংগ্রাহকদের সহায়তায় বিপুল সংখ্যক উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করেন। কিন্তু উদ্যানে বসে সেগুলি নিয়ে গবেষণা করার অবকাশ তাঁর ছিল না। এ ছাড়া, ১৮২০ সালের জুন মাসে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত সরকারি বনভূমি ওয়ালিকের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত হয়, তিনি সুপারিনটেন্ডেন্ট অব প্ল্যান্টেশনস হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব লাভ করেন।
১৮৪৬ সালে এপ্রিলে ওয়ালিক অবসর গ্রহণ করে চূড়ান্তভাবে ইউরোপ চলে যান। তাঁর উত্তরসূরি হুগ ফ্যালকনারের আগমনের পূর্বে ১৮৪৮ সালের গোড়ার দিকে গার্ডেনের দায়িত্বে ছিলেন উদ্ভিদবিদ্যায় অনুরাগী ভূতত্ত্ববিদ জন ম্যাকক্লেল্যান্ড (১৮০৫-১৮৮৫)। তিনি ছিলেন ক্যালকাটা জার্নাল অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি (১৮৪১-১৮৪৭)-এর সম্পাদক। মালীদের যোগ্যতাসম্পন্ন করে তোলার লক্ষ্যে তিনি গার্ডেনে একটি বিদ্যালয় খোলেন। ১৮৪৮ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ ও উদ্ভিদবিদ হুগ ফ্যালকনার (১৮০৮-১৮৬৫) কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের সুপারিনটেন্ডেন্ট ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। টেনাসিরেমে তাঁর সংগৃহীত উদ্ভিদ নমুনাগুলি গার্ডেনের হার্বেরিয়ামকে সমৃদ্ধ করে। তিনি ১৮৫২ সালে হিমালয় ও নীলগিরি অঞ্চলে সিনকোনা চাষের সুপারিশ করেন এবং ১৮৫৪ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে সেগুন চাষ সম্পর্কে একটি বিবরণী প্রস্ত্তত করেন। বাংলায় সেগুন চাষের প্রবর্তন করেছিলেন রক্সবার্গ। ফ্যালকনার ১৯৫৫ সালে এ দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
টমাস থমসন (১৮১৭-১৮৭৮) গার্ডেনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৮৫৫ সালের ১৭ এপ্রিল। ১৮৫৬ সালে তিনি কোম্পানির বোটানিক গার্ডেন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন (Report on Hon’ble Company’s Botanic Garden) প্রণয়ন করেন এবং Flora Indica -এর কাজ সম্পন্ন করার বিবরণসহ কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের হার্বেরিয়াম সম্পর্কে আরেকটি প্রতিবেদন রচনা করেন, যেখানে তিনি গার্ডেনের বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেন। ১৮৬১ সালে বিদায় গ্রহণের আগে তিনি তাঁর পরিকল্পিত কর্মকান্ডের সূচনা করে যান। ১৮৪১-১৮৫১ সময়কালে থমসন তাঁর নিজ এবং জে.ডি হুকার কর্তৃক সংগৃহীত ভারতীয় উদ্ভিদরাজির নমুনা (ইউরোপে যা গ্রেট ইন্ডিয়ান হার্বেরিয়াম নামে পরিচিত) কলকাতা বোটানিক গার্ডেনে স্থানান্তরিত হয় যা সেখানকার হার্বেরিয়ামটিকে সমৃদ্ধ করে। তাঁর উত্তরসূরি টমাস এন্ডারসন ১৮৫৩ সালে এম.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর কার্যকালে গার্ডেনের বীজ বিভাগ ও হার্বেরিয়ামের উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। তিনি ১৮৬৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে উইলহেলম স্যুলপিজ ক্রুজ (১৮৩৩-১৮৭৮) নামে এক জার্মান ব্যক্তিকে গার্ডেনের হার্বেরিয়ামের কিউরেটর নিযুক্ত করেন। থমসনের ব্যক্তিগত পাঠাগার ক্রয়ের মাধ্যমে গার্ডেনের পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করা হয়। ১৮৬০ দশকের গোড়া থেকে কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের নামের সঙ্গে রয়্যাল শব্দটি যুক্ত হয়। গার্ডেনের উন্নয়নমূলক কাজ গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত হয় ১৮৬৪ সালের অক্টোবরে ও ১৮৬৭ সালের নভেম্বরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে, যার ফলে গার্ডেনের ১,৭৬১টি গাছ ধ্বংস হয়। ইতোমধ্যে এন্ডারসন দার্জিলিং-এ সাফল্যের সঙ্গে সিনকোনার চাষ প্রবর্তন করেন, বিশেষত কুইনিন উৎপাদনকারী উন্নতজাতের Cinchona ledgeriana। ১৮৬৪ সালে এন্ডারসন বাংলা প্রেসিডেন্সির বন রক্ষকের পদে নিযুক্তি লাভ করেন। এ ছাড়া তাঁর ও তাঁর উত্তরসূরিগণের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল বাংলায় সিনকোনা চাষের সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করার।
১৮৭১ সালে গার্ডেনের সুপারিনটেন্ডেন্ট নিযুক্ত হন জর্জ কিং (১৮৪০-১৯০৯)। পূর্বে এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার কর্তৃক অধিকৃত যে জমি ছিল, সেটি ১৮৭২ সালে উদ্ধার করে কলকাতা রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের ২৭০ একরের বেশি ভূমির বিস্তার ঘটানো হয়। ভূদৃশ্যের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য গার্ডেনের পুরো এলাকাকে সাজানো হয়। নতুন নতুন রাস্তা ও পায়ে চলা পথ নির্মিত হয়। হার্বেরিয়ামের জন্য ভবন এবং নাজুক প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য লোহার কাঠামো ও পাতলা কাচে আবৃত কয়েকটি সংরক্ষণশালা গড়ে তোলা হয়। সংগৃহীত দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদরাজির (১৮৯০ সাল নাগাদ যার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ) জন্য একটি অগ্নিনিরোধক হার্বেরিয়াম নির্মিত হয়। অনেক নার্সারি ভবন এবং গার্ডেনের কর্মীদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়। কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের একটি দূরবর্তী বর্ধিতাংশ হিসেবে একটি বোটানিক গার্ডেন (লয়েড বোটানিক গার্ডেন) স্থাপনের লক্ষ্যে ১৮৭৮ সালে দার্জিলিং-এ ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৮৭৮ সালে জর্জ কিং Annals of the Royal Botanic Garden, Calcutta নামে সিরিজ আকারে হাতে অঙ্কিত চিত্র সম্বলিত বোটানিক্যাল মনোগ্রাফের প্রকাশনা শুরু করেন। ১৮৯১ সাল থেকে সুপারিনটেন্ডেন্ট নামটির ব্যবহার বন্ধ করা হয়, জর্জ কিং এবং তাঁর উত্তরসূরিদের ডিরেক্টর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভারতে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ক সকল গবেষণা কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে ১৮৮৭ সালে বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কিং সে প্রতিষ্ঠানেরও ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। বাংলা, আসাম, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বার্মা এবং আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের আঞ্চলিক দায়িত্বসহ সার্ভের সদর দপ্তর হয় কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন।
জর্জ কিং-এর পর ১৮৯৭ সালে গার্ডেনের ডিরেক্টর নিযুক্ত হন কলকাতা হার্বেরিয়ামের কিউরেটর, Bengal Plants (১৯০৩) গ্রন্থের রচয়িতা ডেভিড প্রেইন (১৮৫৭-১৯৪৪)। তিনি ১৯০৫ সালে কিউ গার্ডেনের ডিরেক্টর হন। ১৯০৫ সালে কলকাতা গার্ডেনে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এবং ১৯২৩ পর্যন্ত ওই পদে কাজ করেন অ্যান্ড্রূ টমাস গেজ (১৮৭১-১৯৪৫) নামের একজন পর্যটক উদ্ভিদবিদ, যিনি ১৮৯৭ সাল থেকে কিউরেটর ছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক চার্লস কামিং ক্যালডার (১৮৮৪-১৯৬২) ছিলেন গার্ডেনের সর্বশেষ ইউরোপীয় ডিরেক্টর। ১৯৩৭ সালে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন বাঙালি উদ্ভিদবিদ কালীপদ বিশ্বাস। তিনিই প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি যিনি কলকাতা বোটানিক গার্ডেন ও বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর হন। পরবর্তী বছর গার্ডেনের ১৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। [অভিজিৎ মুখার্জী]