ইমামবারা

ইমামবারা  আক্ষরিক অর্থে ইমামের বাসভবন। বিশেষ করে ইমামবারা শব্দটি দিয়ে শিয়াদের দ্বারা মুহররমের অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য নির্মিত ভবন বা সম্মেলন কক্ষকে বোঝানো হয়। মুসলিম পঞ্জিকার প্রথম মাস মুহররম মাসে এবং শিয়াদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য অনুষ্ঠানাদিতে ইমামবারাতে মজলিস (সভা/ সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হতো। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কারবালার কাহিনী বর্ণনা, মর্সিয়া (শোকগাঁথা) আবৃত্তি, শোকমিছিল ও মাতম (শোকের চিহ্ন হিসেবে বুক চাপড়ানো) করা হতো। প্রাথমিক যুগে শিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের এই স্থানকে ইরান, ইরাক প্রভৃতি ভূখন্ডে ‘হোসেনীয়া’ বলা হত। দশ শতকের শেষ ভাগে বাগদাদ, আলেপ্পো এবং কায়রোর মতো প্রধান শহরগুলিতে প্রধানত মসজিদের বর্ধিত অংশকে হোসেনীয়া হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই ভবন থেকে তখন শিয়া মুসলিমদের আশুরা মিছিল বের হত। ইরানের সাফাভি বংশীয় শাসনের পূর্বে সেখানে কোনো হোসেনীয়া নির্মিত হওয়ার প্রমাণ নেই। ১৭ শতকের শুরুতে ইস্পাহান শহরের নিকটে প্রথম হোসেনীয়া নির্মিত হয়েছিল। পারস্যের কাস্পিয়ান অঞ্চলে  ১৭৮০’র দশকে মুহররম এর আনুষ্ঠানিকতা একটি দালানের ভেতরের নির্দিষ্ট স্থানে করার রীতি চালু হয় এবং তার নাম দেয়া হয় ‘তাকিয়া’। তখন থেকে হোসেনীয়া ও তাকিয়া উভয় স্থানে একই ধরনের কর্মকান্ড পরিচালিত হতে থাকে। ইরানের ইসপাহান প্রদেশের জাভারায় ফতেহ-আলী শাহ এর শাসনামলের প্রথম ভাগে আগা মুহাম্মদ খান ১৮ শতকের শেষভাগে ‘ময়দান-ই-বুজুর্গ’ নামের যে হোসেনীয়াটি নির্মাণ করেন তাই তখনকার প্রথম হোসেনীয়া হিসেবে চিহ্নিত। হোসেনীয়া নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হত একটি খোলা অথবা ছাদে ঢাকা বড় স্থান, যেখানে অনেক লোকের সমাগম ছাড়াও মুহররমের সব ধরনের কর্মকান্ড পরিচালিত হতে পারত। ভারতবর্ষে এসে এই হোসেনীয়া বা তাকিয়াই ‘ইমামবারা’ নাম ধারণ করেছে। কখনো  কখনো  একে আশুরাখানা এবং আজাখানাও বলা হয়েছে।

ভারতে ইমামবারা হিসেবে পৃথক ভবন নির্মিত হয়েছিলো আঠারো শতকে। সফদার জং (১৭০৮-৫৪) মুহররম মাসের দশ তারিখে ‘আশুরা’ পালনের জন্য দিল্লিতে একটি ভবন নির্মাণ করেন। কিন্তু এ ভবনকে ইমামবারা বলা হতো না। সফদার জং এর পৌত্র আসাফুদ্দৌলাও অনুরূপ একটি ভবন লক্ষ্ণৌতে নির্মাণ করেন। এটি ‘ইমামবারা-ই-আসাফী’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। উত্তর ভারতে ইমামবারা আশুরাখানা নামেও পরিচিত। নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার শাসনামলে ইরাকের নাজফ শহর থেকে সৈয়দ আলী রেজা নামক এক ধর্মবেত্তা মুর্শিদাবাদে আসেন এবং তাঁর সঙ্গে শিয়া ধর্মীয় প্রভাব মুর্শিদাবাদে আসে। নওয়াবের মৃত্যুর পর সৈয়দ আলী রেজার উত্তরসূরিগণ ঢাকায় এসে স্থায়ী হন। তাঁদের সময়েই ঢাকায় ইমামবারা নির্মাণের সূচনা।

পশ্চিম বাংলায় বেশ কয়েকটি ইমামবারা রয়েছে। এগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি প্রাসাদের ইমামবারা এবং হাজী মুহম্মদ মোহসীন ফান্ড দ্বারা পরিচালিত হুগলির ইমামবারা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশেও একাধিক ইমামবারা রয়েছে। এগুলির অবস্থান ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, অষ্টগ্র্রাম, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও এবং সিলেটে। একসময় শুধু ঢাকাতেই ১৫টি ইমামবারা ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ইমামবারা হলো সৈয়দ মীর মুরাদ কর্তৃক নির্মিত হোসেনী দালান

ইমামবারা (হুগলি)  মোহসীন তহবিল কর্তৃক পরিচালিত একটি ওয়াক্ফকৃত শিয়া প্রতিষ্ঠান। ইমামবারাটি চুঁচুড়ার গঙ্গা নদীর তীরে হুগলী রেইলওয়ে স্টেশনের সন্নিকটে অবস্থিত। হুগলি শহরের সবচেয়ে আর্কষণীয় স্থান এই বিশাল ইমামবারা কমপ্লেক্সটি। স্থাপত্যসৌকর্যময় মনোরম ইমারত শোভিত এ কমপ্লেক্সটি একটি দ্বিতল ভবন এবং এতে রয়েছে ৮০ ফুট উঁচু টাওয়ার বিশিষ্ট বিশাল প্রবেশদ্বার এবং এ দু‘য়ের মাঝে একটি বড় ঘড়ির টাওয়ার। দালানের উত্তর দিকে রয়েছে একটি মসজিদ, যার বাইরের দেয়ালে কোরানের আয়াত উৎকীর্ণ। এ ছাড়াও রয়েছে কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, বিপণি কেন্দ্র, আবাসস্থল, শিয়া সাধকদের সমাধি, হাজী মুহম্মদ মোহসীন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সমাধি। মুন্নজান খনম এর স্বামী, ফৌজদার সালাহউদ্দীন মুহম্মদ খান, আঠারো শতকের শেষদিকে ইমামবারা কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেন। হাজী মুহম্মদ মোহসীন তাঁর বৈপিত্রেয় বোন নিসন্তান মুন্নজান খানমের কাছ থেকে সায়াদপুরের জমিদারি উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন এবং তিনি ইমামবারার রক্ষণাবেক্ষণের সাথে সাথে জাঁকজমকের সঙ্গে ধর্মীয় উৎসব ও মুহররমের অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করে পারিবারিক ঐতিহ্য অব্যাহত রাখেন।

ইমামবারার সংরক্ষণ ও পারিবারিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়োজনেই হাজী মোহসীন ১৮০৬ সালে (বাংলা ১২১৩, বৈশাখ) একটি ওয়াক্ফ দলিল সম্পাদন করেন। এ দানপত্রে জমিদারির পুরো আয় নয়টি সমান অংশে ভাগ করে তার মধ্যে তিনটি অংশ ইমামবারার রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারিন করে দেন। পরবর্তীতে চরম অব্যবস্থার কারনে ১৮১৮ সালে সরকার এ তহবিলের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তহবিলের সরকারি তত্ত্বাবধায়ক জমিদারির আয় বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্বৃত্ত দেখান এবং এ উদ্বৃত্ত অর্থে ১৮৪১ সালে ইমামবারায় নতুন ইমারতের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৮৬১ সালে প্রায় ২১৭৪১৩ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়। নতুন জমকালো ইমারত শোভিত এই ইমামবারা হুগলির সর্বাধিক আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়। মসজিদ ও সরাইখানাসহ সবগুলি ইমারতের মেঝে মর্মর পাথরে বাঁধানো এবং দেয়ালগুলি পবিত্র কুরআনের বাণী দ্বারা অলংকৃত। অপরূপ কারুকার্যখচিত মসজিদের মূল্যবান আসবাবপত্র, ভাস্কর্য, ঝাড়বাতি, লণ্ঠন ও রূপার পাতে মোড়ানো মিম্বর এবং দক্ষ কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত হাসপাতাল ও কলেজসহ ইমামবারা কমপ্লেক্সটি উনিশ শতকের ষাটের দশক থেকে এক মনোমুগ্ধকর রূপ পরিগ্রহ করে আসছিল। বর্তমানে ইমামবারার কার্যক্রম পূর্বের নায় সুব্যবস্থায় পরিচালিত না হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

নিজামত ইমামবারা, মুর্শিদাবাদ

নিজামত ইমামবারা বা হাজার দুয়ারি ইমামবারা পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের উত্তর পার্শে অবস্থিত। ইমামবারাটি কেবল  পশ্চিমবঙ্গেই না, সমগ্র ভারতে এটি সর্ববৃহৎ (২০৭ মিটার)। প্রাথমিক পর্যায়ে নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা ইমামবারাটিকে কাঠ দ্বারা নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু ১৮৪৬ সালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ইমামবারাটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। পরবর্তীতে ১৮৪৭ সালে হুমায়ুন ঝা এর ছেলে নওয়াব নাজিম মনসুর আলী ফেরাদুন ঝা প্রায় সাত লাখ রুপি ব্যায়ে দ্বিতল ইমামবারাটি পুনঃনির্মাণ করেন।

ইমামবারা এবং হাজারদুয়ারী প্রাসাদের মধ্যবর্তী স্থানে নির্মিত হয়েছে একটি ছোট আকৃতির মদীনা মসজিদ। মসজিদটির বারান্দা রঙিন টাইলস দ্বারা অলংকৃত এবং এর মধ্যে রয়েছে হযরত মুহম্মদ (সা.) এর মদীনার রওজা মোবারকের অনুরূপ একটি প্রতিকৃতি।

প্রতি বছর মুহররমের মাসের এক থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত ইমামবারাটি দর্শণার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়।

ইমামবারা, বাংলাদেশ ইমামবারা, (ঠাকুরগাঁও)  ঠাকুরগাঁও সদর থেকে ২০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সিন্দুরনা গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটির পূর্বদিকে শালবাড়ি মসজিদ থেকে ২০০ গজ দক্ষিণে ইমামবারাটির স্থান।

ইমামবারার কাল নির্দেশক দুটি শিলালিপি পাওয়া যায়। এর একটি বাংলায়, অন্যটি ফারসিতে লেখা। বাংলায় লিখিত শিলালিপিটি ওয়াক্তের নামাযের জন্য নির্মিত একটি মাটির তৈরী মসজিদের বাইরের পূর্ব দেয়ালে সংস্থাপিত আছে। ফারসিতে লিখিত শিলালিপিটি সিন্দুরনা গ্রামের অধিবাসী, জনাব হাকিমউদ্দীন আহমেদ-এর কাছে সংরক্ষিত আছে। বাংলায় লিখিত শিলালিপিতে ১২১৫ এবং ফারসিতে লিখিত শিলালিপিতে ১২১০ বাংলা সনের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উভয় লিপিতে শেখ মুহম্মদ রাজ কর্তৃক এ ইমামবারা নির্মিত, কথাটির উল্লেখ রয়েছে। আরও লেখা আছে যে, নির্মাতার পিতার নাম শেখ খায়েরউদ্দীন এবং দাদার নাম শেখ সদরউদ্দীন। স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, এরা পূর্ণিয়া জেলার শীতলপুর জমিদারের বংশধর শেখ চান-এর উত্তরসূরি।

ইমামবারাটি খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় এখনও বিদ্যমান। এটি একটি আয়তাকার দালান এর উচ্চতা প্রায় ৬.১০ মিটার। বাইরের দিক থেকে এর দৈর্ঘ্য ৫.৮০ মিটার এবং প্রস্থ ৩.৯৫ মিটার। কক্ষে প্রবেশের জন্য পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে দুটি করে চারটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে দুটি খিলান পথ। খিলানগুলির প্রস্থ ০.৯০ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ২.১৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ০.৯০ মিটার। ইমারতের ছাদ চৌচালা আকৃতির ও এর কার্নিশ সমান্তরাল। ছাদের উপরে গাছপালা গজিয়েছে, বাইরের অলঙ্করণের কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। ইমারতটি খুব সম্ভবত ইমামবারার প্রবেশকক্ষ, কেননা এটি উঁচু ভিতের উপর তৈরি, চারপাশে পতিত জমি এবং জমিতে ইটের টুকরা ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। এ থেকে অনুমান করা যায় যে, এখানে আরও ইমারত ছিল। সম্ভবত মূল ইমামবারাটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

হোসেনীদালান, ঢাকা

হোসেনী দালান  ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন ইমামবারা এটি। নাওয়ারা বা নৌবহরের প্রধান বা নিজামত মীর মুরাদ ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ১০৫২) ঢাকায় ইমামবারাটি নির্মাণ করেন। এ সময়ে শাহ সুজা ছিলেন বাংলার সুবাদার। হেসেনী দালান ইমামবারা বুড়িগঙ্গা নদী থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভিতরে, বর্তমান ঢাকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। এর উত্তরের মূল ফটকের সামনের রাস্তাটির নাম হোসেনী দালান রোড, পশ্চিমে বকশীবাজার এবং পূর্বে নাজিমউদ্দিন রোড। প্রায় ৬.২ বিঘা (৮৪৫৩ বর্গ মিটার) স্থান জুড়ে নির্মিত ইমামবারা কমপ্লেক্সটির মূল দালানটি প্রায় ০.৬৫ বিঘা বা ৮৮.০৫ বর্গ মিটার জায়গা নিয়ে ঠিক মধ্যবর্তী অংশে নির্মিত। দালানটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে ১.০১ বিঘা বা ১৩৭৬.৯৫ বর্গ মিটার স্থান জুড়ে একটি মনোরম পুকুর। দ্বিতল বিশিষ্ট ইমামবারার পূর্ব দিকে রয়েছে নওয়াব গাজীউদ্দিন হায়দারের কবর সহ আরও আটটি কবর। একে বলা হয় মুকবারা-ই-নায়েব নাজিম। ১৯৮৫ সালের কোনো এক সময়ে মুকবারার দালানটি ভেঙে পড়েছিল। পরবর্তীতে কবরের দেয়ালটি শূধূ নির্মাণ করা হয়েছিল। ইমামবারার উত্তরদিকে মূল ফটকের সামনে রয়েছে দ্বিতল নওবত খানা। ইংরেজি শব্দ ড্রাম এর ফার্সি অর্থ ‘নওবত’ যা বাজিয়ে মহররম মাসের লোকজনকে মজলিসের সময় জানানোর ব্যাবস্থা করা হত। নওবত খানা ছাড়াও ইমামবারা কমপ্লেক্স এর মধ্যে রয়েছে গন্জ-ই-সহীদান, কোতোয়ালী দালান, গোসল খানা ইত্যাদি। ইমামবারার নির্মাতা মীর মুরাদের মৃত্যুর পর ঢাকার নায়েব নাজিমগণ পরবর্তী মুতোওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৪ সালে ঢাকা নওয়াব পরিবার-এর প্রতিষ্ঠাতা খাজা আলীমুল্লাহকে প্রধান করে হোসেনীদালানের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়।

১৮৯১ সাল থেকে খাজা আহসানউল্লাহ হোসেনীদালানের একচ্ছত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মূল দালানের উত্তর অংশ ভেঙে গেলে নওয়াব তার পুনঃনির্মাণ করেন। শেষ নওয়াব খাজা হাবীবুল্লাহ্র মৃত্যুর পর নওয়াব পরিবার কর্তৃক হোসেনীদালানের পরিচালনার দায়িত্বের অবসান ঘটে এবং ১৯৫৯ সাল থেকে হোসেনীদালানের পরিচালনার দায়িত্ব তৎকালীন পাকিস্তান সরকার গ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন কমিটি গঠন করে ইমামবারা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। হেসেনীদালানের উত্তর-পুর্ব দিকের কোতোওয়ালী দালানটি নববই এর দশকে প্রায় সম্পূর্ণই ভেঙে যায় এবং ১৯৯৮ সালে দালানটি পুনঃনির্মাণ করে এটিকে শেফা খানা বা দাতব্য চিকিৎসালয়ে রূপান্তর করা হয়। মূল ফটকের উপরে নির্মিত নওবত খানার দালানটিকে দি দারুল কোরআন ফাউন্ডেশন ১৯৯৪ সালে সংস্কার করে তাকে একটি লাইব্রেরিতে রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৬-২০০৫ সালের সময়ের মধ্যে হোসেনীদালানের শেষ সংস্কারের কাজ হয়েছে।

ঢাকার অন্যান্য ইমামবারা পুরানো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ইমামবারা সমূহের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে, ঢাকায় মুহররম মাসের ধর্মীয় কার্যক্রম জাকজমকের সঙ্গে পালন করা হত। ঢাকার ফরাসগঞ্জের বিবি কা রওজার নিকটে ১৬০০ সালে  জনৈক আমীর খান কর্তৃক নির্মিত ইমামবারাটি সম্ভবত সর্বপ্রাচীণ। আর এম দোসানজী ১৮৬১ সালে এটির সংস্কার কাজ করেন। পুরাতন হোসেনী দালান নামে পরিচিত ইমামবারাটি ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এর নিকট ১৮৬৯ সালে নির্মিত হয়েছিলো। এছড়াও ঢাকার ফুলবাড়ীয়ার নিকট হোসেনী দালান বা মীর ইয়াকুব নামের আরেকটি ইমামবারা ছিলো। হোসেনী দালানের রোডেই রয়েছে ছোট ইমামবারা। ছোট কাটরা ও মীর মুকিম কাটরায় (মৌলোভীবাজার) আরও দু‘টি ইমামবারা ছিল। [মুহম্মদ শফিকুল্লাহ, সানিয়া সিতারা এবং নাসরীন আক্তার]