আহমদিয়া
আহমদিয়া মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ১৮৮৯ সালে এর প্রবর্তন করেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাঞ্জাবের অমৃতসর এলাকার কাদিয়ান গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর অনুসারীরা আহমদিয়া এবং কাদিয়ানি উভয় নামেই পরিচিত। এ আন্দোলন সর্বপ্রথম বাংলায় আসে ১৯১২ সালে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মীর সৈয়দ আবদুল ওয়াহেদের মাধ্যমে। তাঁর দীক্ষার পর কয়েকশত লোক এ আন্দোলনে যোগ দেয়।
১৮৮৯ সালে মির্জা গোলাম আহমদ ঘোষণা করেন যে, তিনি একটি দৈববাণী পেয়েছেন, যাতে তাঁকে এ মতবাদে বিশ্বাসীদের আনুগত্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পরবর্তীকালে তিনি নিজেকে মেহেদি এবং মাসীহ বলেও ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা মৌলানা নুরউদ্দিনকে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচিত করেন। নুরউদ্দিনের মৃত্যুর পর ১৯১৪ সালে সম্প্রদায়টি ভাগ হয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুসারীরা কাদিয়ানে থেকে যায় এবং তারা গোলাম আহমদকে নবী বলে স্বীকার করে। ১৯৪৭ সাল থেকে এ শাখা ‘জামাত-ই-আহমদিয়া’ নামে পাকিস্তানের রাবওয়াহ থেকে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকে। অন্য শাখাটি গোলাম আহমদকে একজন সংস্কারক বলে স্বীকার করে এবং তারা লাহোরে ‘আহমদিয়া আঞ্জুমান ইশাত-ই-ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করে।
গত একশ বছরে এ আন্দোলন অনেক শক্তিশালী হয়েছে। তারা এখন অন্য ধর্মের লোকদের স্ব-সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করছে এবং অনেক দেশেই তাদের অনুসারী রয়েছে। বর্তমানে তাদের অনুসারীদের সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। বাংলাদেশে কিছুসংখ্যক আহমদিয়া আছে।
পাকিস্তানে আহমদিয়ারা সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষিত। মূল ইসলামের অনেক মতবাদের সঙ্গে আহমদিয়াদের মতবাদের মিল আছে। তারা আল্লাহ-কে বিশ্বাস করে এবং হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে তাঁর নবী বলে স্বীকার করে। তারা বিশ্বাস করে আল্লাহ কুরআনে যা বলেছেন এবং রসুলের বাণী হিসেবে যা হাদিসে সংগৃহীত হয়েছে তা সবই সত্য। তারা আরও বিশ্বাস করে যে, যারা ইসলামি শরিয়তের বিরোধী তারা অবিশ্বাসী এবং ইসলাম বিরোধী। তারা সকল নবী এবং কুরআনে উল্লিখিত সকল কিতাবে বিশ্বাস করে। আহমদিয়ারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, রমজান মাসে রোজা রাখে এবং যাকাত দেয়। তবে তারা ইসলামী আকিদা ও আমলের অনেক কিছু অনুসরণ করে না। যেসব বিষয়ে তারা ইসলামের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করে, সেগুলি হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.) এর মৃত্যু, সর্বশেষ নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর স্বীকৃতি এবং ইমাম মেহেদি ও মাসীহর আবির্ভাব।
আহমদিয়ারা বিশ্বাস করে হযরত মুহাম্মদ (স.) খাতিমুন নবীইন বা শেষ রাসুল ছিলেন না, তিনি ছিলেন খতমুন নবীইন বা নিখুঁত ও পূর্ণ রাসুল। তাদের মতে, তিনি এত মহান ছিলেন যে তাঁকে অনুসরণ করে কোনো ব্যক্তি কেবল নিম্ন স্তরের রাসুল হতে পারে, পূর্ণ রাসুল নয়। আহমদিয়ারা দাবি করে যে, তাদের সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ছিলেন এ স্তরের লোক।
ইসলামের সঙ্গে আহমদিয়াদের ক্রুসে বিদ্ধ হয়ে যিশুখ্রিস্টের মৃত্যু বিষয়ে একটি মৌলিক মতপার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আহমদিয়ারা বলে যে, ঈসা (আ.) ক্রুসে বিদ্ধ হয়ে মারা যাননি, তিনি কেবল অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের মতে ক্রুস থেকে নামানোর পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীকালে ভারতে এসে ইসরাইলের দশটি গোত্রের মধ্যে ধর্ম প্রচার করেন। এ গোত্রগুলিকে নেবুচাদনেজার বিতাড়িত করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করে যিশুখিস্ট বেশ বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিকভাবে মারা যান।
ইমাম মেহেদির আবির্ভাবের ব্যাপারেও তাদের মতভেদ আছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে ইসলাম খুব সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকবে এবং সত্যিকার ধর্ম বিলুপ্ত হবে। এ সময় হযরত ঈসা (আ.) স্বর্গ থেকে মাসীহ হিসেবে নেমে আসবেন এবং খ্রিস্টধর্মের প্রতীক সকল ক্রুস ভেঙে ফেলবেন এবং অমঙ্গলের উৎস সকল শূকর মেরে ফেলবেন। এ সময় ইমাম মেহেদি এসে দজ্জালকে মেরে ইসলাম পুনর্জীবিত করবেন। কিন্তু আহমদিয়ারা বিশ্বাস করে যে, মাসীহ ও ইমাম মেহেদি একই ব্যক্তি এবং তিনি স্বর্গ থেকে নামতে পারেন না, কারণ যিশুখ্রিস্টের মৃত্যু হয় স্বাভাবিকভাবে। তাদের মতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিই ইমাম মেহেদি এবং মাসীহ। বাংলাদেশে আহমদিয়া আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ঢাকায়। [সম্পাদনা পরিষদ]