ইহতেশামউদ্দীন, মির্জা শেখ

ইহতেশামউদ্দীন, মির্জা শেখ (আনু.১৭৩০-১৮০০) পাশ্চাত্যে ভ্রমণকারী প্রথম ভারতীয় পর্যটক। তিনি ফার্সি ভাষায় রচিত শেগুর্ফনামা-ই-বিলায়েত গ্রন্থে নিজের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। পান্ডুলিপিটির কপি লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং বিহারের অন্তর্গত বাঁকীপুরের খুদাবখশ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। এ পান্ডুলিপির একটি সংক্ষিপ্ত ইংরেজি অনুবাদ করেন জেম্স এডওয়ার্ড আলেকজান্ডার। Shigurfnama-i-Vilayet or Excellent Intelligence Concerning England, Being the Travels of Mirza I’tesamuddin শিরোনামে এটি লন্ডনে প্রকাশিত হয় (জন টেইলর, ১৮২৭)। অধ্যাপক .বি.এম হাবিবুল্লাহ ‘বিলায়েত নামা’ শিরোনামে পান্ডুলিপির একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ করেছেন। আলেকজান্ডার ও হাবিবুল্লাহর অনুবাদের উপর ভিত্তি করে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি অনুবাদ করেছেন কায়সার হক The Wonders of Vilayet  শিরোনামে। শেখ ইহতেশামউদ্দীনের সম্ভাব্য জন্ম ও মৃত্যু তারিখ যথাক্রমে ১৭৩০ ও ১৮০০ সাল। তাঁর বংশলতিকার ধারাবাহিকতা পাওয়া যায় ষোল শতক পর্যন্ত। ইহতেশামউদ্দীনের পূর্বপুরুষগণ পারস্যে মোঙ্গল আক্রমণকালে ভারতবর্ষে পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার পাঁচনূর গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। ধর্মানুরাগ ও পান্ডিত্যের জন্য এ পরিবার বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। ফলে এ পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের কাউকেই প্রশাসন ও বিচার বিভাগে চাকরি পেতে কোনরূপ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় নি।

ইহতেশামউদ্দীনের বড় ভাই ছিলেন নওয়াব  আলীবর্দী খানএর অধীনে একজন মুফতী বা মুসলিম আইন বিষয়ক পরামর্শদাতা। ইহতেশাম নওয়াব  মীরজাফরএর দরবারের মুনশী সলিমুল্লাহর তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন। এই শিক্ষা তাঁকে পরবর্তীকালে মুনশী পেশায় নিয়োজিত হওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। আক্ষরিক অর্থে ‘মুনশী’ অর্থ করণিক বা নকলনবিশ হলেও সেকালে এটি ছিল উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন একটি পদ এবং এই পদ দ্বারা এমন একজন পন্ডিত ব্যক্তিকে বোঝাত যার ফারসি ভাষা-জ্ঞান ছিল এবং ফারসি তৎকালীন সরকারি ভাষা হিসেবে প্রশাসনিক, কূটনৈতিক ও আইন ক্ষেত্রে অপরিহার্য ছিল।

মুনশী হিসেবে ইহতেশামউদ্দীনের কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কোম্পানির চাকরিতে। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল মেজর পার্ক এর অধীনে। বীরভূমের শাসনকর্তা আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সমরাভিযানের তিনি ছিলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। যুদ্ধবিরতির পর তিনিও মেজর পার্কের সঙ্গে আজিমাবাদে যান এবং সেখানে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমএর সাক্ষাৎ লাভ করেন। এরপর কলকাতায় কোম্পানির অধীনে কর্মরত অপর সাত জন মুনশীর সঙ্গে তিনিও যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ক্যাপ্টেন ম্যাকিননের অধীনে একটি এতিমখানার খাজাঞ্চি পদে কাজ করেন। কোম্পানি ও নওয়াব মীর কাসিমের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি উক্ত সমরাভিযানে ক্যাপ্টেনের সহগামী হন এবং গিরিয়া ও উদয়নালার যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেন। এরপর এক বছর ধরে তিনি মি. বারডেটির অধীনে কুতুবপুরের তহসিলদার হিসেবে কাজ করেন। ১৭৬৫ সালে তিনি ব্রিটিশ প্রধান সেনাপতি কর্নেল কর্নাকের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন এবং জাহাজগড়ে সম্রাট শাহ আলমের সাক্ষাৎ লাভ করেন। এর কিছুকাল পর কর্নেল কর্নাক সম্রাটের মিত্রশক্তিরূপে মারাঠা ও সুজাউদ্দৌলার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কোরা-মানিকপুরে সম্পাদিত এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটে এবং এখানেই সূচিত হয় ইহতেশামউদ্দীনের জীবনে এক নাটকীয় পরিবর্তন। তাঁকে ‘মির্জা’ উপাধিসহ সম্রাটের দরবারের মুনশী পদ গ্রহণের প্রস্তাব করা হলে তিনি তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করেন। ‘নাইট’ উপাধির প্রায় সমপর্যায়ভুক্ত ‘মির্জা’ খেতাব লাভের ফলে তিনি সভাসদ বা অমাত্যের পদমর্যাদায় উন্নীত হন। এ ঘটনার অব্যবহিত পরেই তিনি পাশ্চাত্যে ভ্রমণের সুযোগ লাভ করেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলার  রাজস্ব আদায়ের স্থায়ী অধিকার প্রদানের পর সম্রাট শাহ আলম বিরোধী পক্ষের চাপের মুখে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় তিনি ব্রিটিশ রাজকীয় বাহিনীর নিকট নিজের নিরাপত্তা বিধানের অনুরোধ জানান। কিন্তু ভিনদেশী রাজদরবারে ব্রিটিশ সৈন্য মোতায়েন  ক্লাইভ এর ক্ষমতা বহির্ভূত হওয়ায় এরূপ সিদ্ধান্ত হয় যে, উপরিউক্ত অনুরোধ সম্বলিত একটি চিঠি এবং উপহারস্বরূপ এক লক্ষ টাকা সম্রাটের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ-রাজের নিকট প্রেরণ করা হবে। এ দায়িত্বভার ন্যস্ত হয় ক্যাপ্টেন সুইনটনের উপর। সম্রাট শাহ আলম প্রেরিত পত্রের বিষয়বস্ত্ত যথাযথভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য ফারসি ভাষায় দক্ষ একজন ভারতীয়কে এ মিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গৃহীত হয়। মির্জা শেখ ইহতেশামউদ্দীনকে ক্যাপ্টেনের সহগামী নির্বাচন করা হয়। এভাবেই মির্জার তিন বছর স্থায়ী (১৬৬৬-৬৯) অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিযানের শুরু।

উপরিউক্ত মিশনে কোনো ফললাভ না হলেও এর থেকে পাওয়া গেছে একটি মনোমুগ্ধকর স্মৃতিকথার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তিন সপ্তাহ সমুদ্র ভ্রমণের পর ক্যাপ্টেন সুইনটনের কাছ থেকে মির্জা জানতে পারেন যে, ক্লাইভ সম্রাটের পত্রটি এই বলে রেখে দিয়েছেন যে, তাঁদের সঙ্গে পত্রটি পাঠাবার কোনো যুক্তিই নেই, কারণ এর সঙ্গে যে উপহার যাওয়ার কথা তা সম্রাটের কাছ থেকে তখনও পৌঁছেনি। ক্লাইভ ক্যাপ্টেনকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি নিজেই চিঠি ও অর্থ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ইংল্যান্ডে মিলিত হবেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে মির্জা জানতে পারেন যে, ক্লাইভ চিঠিটির বিষয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে সমুদয় অর্থ তাঁর নিজের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ-রাজকে উপহার দিয়েছেন। এরূপ চাতুর্যের কারণ হলো, ক্লাইভ সঙ্গত কারণেই অনুধাবন করেছিলেন যে, কোম্পানির স্বার্থেই ব্রিটিশ-রাজ ও মুগল সম্রাটের মধ্যে যে কোনো ধরনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তৃতীয় জর্জের নিকট লিখিত সম্রাট শাহ আলমের পত্রটি কালের পরিবর্তন ও ভাঙ্গাগড়ার মধ্যেও আজও টিকে আছে। এর একটি ইংরেজি অনুবাদ করেন অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ এবং ১৯৩৯ সালে ইন্ডিয়ান হিস্ট্রিক্যাল রেকর্ডস কমিশনের এক সম্মেলনে পত্রটি উপস্থাপন করা হয়।

উপরিউক্ত মিশনটি সফল হলে সম্ভবত ভারতের ইতিহাস এবং নিঃসন্দেহে ইহতেশামউদ্দীনের স্মৃতিকথাটি অনেকটাই ভিন্নতর রূপ লাভ করত। এতে ভারতবর্ষের ভাগ্যও হয়তবা সুপ্রসন্ন হতো এবং স্মৃতিকথার মাধ্যমে তৃতীয় জর্জের রাজদরবার সম্পর্কে আরও প্রত্যক্ষভাবে জানবার সুযোগ পাওয়া যেত। মির্জার ব্রিটেন ভ্রমণ সংক্রান্ত বর্ণনা এক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষতিপূরণ করেছে এবং তিনি যদি কূটনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তেন তাহলে হয়তবা এটাও সম্ভব হতো না।

ইউরোপ থেকে ফিরে আসার পর মির্জা স্থানীয়ভাবে একজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং ‘বিলায়েতি মুনশী’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ব্রিটেন ও ইউরোপকে বোঝাতে ভারতীয় শব্দ ‘বিলায়েতি’ বা ‘‘বিলেত’ ব্যবহূত হয়। তিনি কোম্পানির অধীনে পুনরায় চাকরি গ্রহণ করেন এবং যে কূটনৈতিক কর্মকৌশলের মাধ্যমে মারাঠাদের সঙ্গে কোম্পানির বহু বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটে, তিনি তার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৭৭৫ সালে তিনি কর্নেল জন হ্যামিলটনের সঙ্গে পুনায় যান এবং সেখানেই সূচনা হয় মারাঠা সমরনায়কদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার। আসন্ন শান্তি আলোচনায় তাঁকে দূত হিসেবে কাজ করতে হয়েছে এবং তিনি মারাঠা নেতা নরদ শখরাম ও নানা ফড়নবিশের সঙ্গে আলোচনা শেষে ক্যাপ্টেন ভ্যান্সিটার্টের সহায়তায় চুক্তি সম্পাদন করেন।

ইহতেশামউদ্দীন তাঁর স্মৃতিকথা রচনা শুরু করেন বন্ধুদের পরামর্শ ও উৎসাহে এবং চারপাশে দেখা নৈরাজ্য থেকে মুক্তির অন্বেষায়। এ ক্ষেত্রে তিনি দাক্ষিণাত্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও টিপু সুলতানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের প্রতিই ইঙ্গিত দেন। এছাড়া তিনি ফার্সি ভাষায় ‘নসবনামা’ বা বংশ বৃত্তান্তের একটি সংকলন রচনা করেন। কাজী মুহম্মদ সদরুল উলা কর্তৃক সংকলিত মির্জার পরিবারের ইতিহাসের এটি ছিল প্রধান উৎস। (History of the Family of Mirza Sheikh Itesamuddin, Calcutta, 1944, Dhaka, 1984: ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশিত)।

মির্জা ইহতেশামউদ্দীন ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, স্বীয় বংশ মর্যাদায় গর্বিত এবং ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে সুশিক্ষিত। তাঁর জীবন অতিবাহিত হয়েছে আধুনিক ভারতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত সংকটময় ক্রান্তিকালে। তাঁর জন্মের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল ইউরোপীয় বাণিজ্য সংস্থাগুলির মতোই একটি বানিয়া প্রতিষ্ঠান, আর তাঁর মৃত্যুকালে এ কোম্পানিই হয়ে ওঠে উপমহাদেশের প্রকৃত শাসনকর্তা। এতদ্সত্ত্বেও উল্লেখ্য যে, তিনি কখনই ঔপনিবেশিকদের তাবেদার ছিলেন না। এই সমুন্নত মনোবৃত্তির পাশাপাশি অভিজাত পারিবারিক পটভূমি তাঁর স্মৃতিকথাকে অত্যন্ত গুরুত্ববহ করে তুলেছে। তাঁর স্মৃতিকথায় ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে মানবিক গুণাবলি ও সংস্কৃতির সংস্কারসমূহ। ভিনদেশী সংস্কৃতির প্রতি তাঁর কৌতূহল ছিল, ছিল তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি এবং বর্ণনার অসাধারণ দক্ষতা। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ওই অন্তর্মুখীতার এক তেজোদীপ্ত ব্যতিক্রম, যা পাশ্চাত্যের প্রতি ঔপনিবেশিক জনগণের মনোভাবকে গড়ে তোলে, আর যেমনটি গান্ধীর মধ্যে রয়েছে বলে ভি.সি নইপাল নির্দেশ করেছেন। অনুরূপভাবে তিনি যখন ভারতের সঙ্গে ইউরোপের তুলনা করেছেন, তখন স্বচ্ছ দৃষ্টিতে ভারতের অধঃপতনের সমালোচনা এবং ইউরোপীয়দের বিশেষত ব্রিটিশের গুণাবলির উদার প্রশংসা করেছেন, যা তাদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ছিল। তাঁর বিশ্বাস ও সংস্কারগুলি বেশ অস্বস্তিকর এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে তাঁর পর্যবেক্ষণ প্রায়শই একপেশে বলে গণ্য হতে পারে। কিন্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এ ধরনের ত্রুটি তাঁর বর্ণনাকে মূলত আনন্দদায়ক ও কৌতূহলোদ্দীপক করে তুলেছে। তাঁর কিছু কিছু দুর্বলতা, যেমন হালাল খাবার নিয়ে তাঁর বদ্ধ-সংস্কার প্রায়শই ব্রিটেনে সমস্যা সৃষ্টি করত, কারণ সেগুলি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ত। ফরাসিদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের সংস্কার আত্মীভূত করার বিষয়টিও একইভাবে কৌতূহলোদ্দীপক।

নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে মির্জার দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকদের অবশ্যই আকৃষ্ট করে। ভ্রমণকালে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দেখা হয়েছে তাদের সম্পর্কে মন্তব্যে ঘটেছে মির্জার সংস্কারের বর্হিপ্রকাশ। অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে ইউরোপীয় নারীদের প্রতি তাঁর আবেগময় প্রশংসা। শ্বেতাঙ্গ নারী তাঁর কাছে মনে হয়েছে সৌন্দর্যের নিষ্কাম প্রতিমূর্তি। ইংরেজ সুন্দরীদের অনুরূপ প্রশংসা প্রকাশ পেয়েছে পরবর্তীকালের স্মৃতিকথা মির্জা আবু তালিবের ভ্রমণ কাহিনীতে।

আবু তালিবের স্মৃতিকথার মতোই ইহতেশামউদ্দীনের বর্ণনাতেও অনেক প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে। শুরুতে আত্মজীবনী অংশের পরই তিনি ভারতে ইউরোপীয়দের সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়েছেন। এরপর রয়েছে নৌচালনা বিষয়ক বিবরণ। যাত্রাপথে যেসব স্থানে জাহাজ যাত্রাবিরতি করেছে (যেমন মরিশাস, মাদাগাস্কার, উত্তমাশা অন্তরীপ) সেসব স্থানের বর্ণনা ছাড়াও অদ্ভুত সব সামুদ্রিক প্রাণীর বর্ণনা তিনি দিয়েছেন।

তিনি তাঁর লন্ডন, অক্সফোর্ড ও স্কটল্যান্ডের অভিজ্ঞতার প্রাণবন্ত বিবরণ এবং মনোরম দৃশ্যাবলির খুঁুটিনাটি বর্ণনা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করেছেন। পরিশেষে, ব্রিটিশ সভ্যতার বিভিন্ন দিক (যেমন, সরকারব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও শিক্ষা বিষয়) আলোচিত হয়েছে। আলোচ্য স্মৃতিকথা থেকে সাংস্কৃতিক ইতিহাসে আগ্রহী শিক্ষার্থিগণ অক্সফোর্ড সম্পর্কে এক মনোজ্ঞ বিবরণ লাভে সক্ষম হবে। সেখানে তিনি উইলিয়ম জোনস এর সাক্ষাৎ লাভ করেন, যিনি পরবর্তীকালে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হন এবং এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন। ইহতেশামউদ্দীন উইলিয়ম জোনসকে ফারসি ব্যাকরণ রচনায় সাহায্য করেছিলেন বলে দাবি করেন।

আবু তালিব ও শেখ দীন মুহম্মদের ভ্রমণকাহিনীর মতোই ইহতেশামউদ্দীনের স্মৃতিকথাও স্বাধীনতা-উত্তর কালের প্রেক্ষাপটে সতর্ক অধ্যয়নের দাবি রাখে।  [কায়সার হক]