শাহ নিয়ামতউল্লাহর সমাধি

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:২৬, ১৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শাহ নিয়ামতউল্লাহর সমাধি  বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম মুগল সমাধিস্থাপত্য নিদর্শন। নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ফিরোজপুর মৌজায়  ছোট সোনা মসজিদের উত্তর-পশ্চিম দিকে মাত্র আধা মাইল দূরে এটি অবস্থিত।

সমাধিটির নির্মাণের তারিখ শিলালিপির ভিত্তিতে না করে ঐতিহাসিক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে বলা হয় যে, সুবাহদার শাহ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রি) সমাধিসহ শাহ নিয়ামতউল্লাহ মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেন। তদুপরি, মুগল যুগের স্থাপত্যরীতির বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হওয়ার কারণেও বলা হয় যে, সমাধিটি সতেরো শতকের মাঝামাঝিতে  নির্মিত হয়েছে।

শাহ নিয়ামতউল্লাহর সমাধি, নবাবগঞ্জ

শাহ নিয়ামতউল্লাহর মসজিদ, সমাধি ও হাম্মাম সম্বলিত দ্বিতল জাঁকজমকপূর্ণ ভবন নিয়ে গঠিত কমপ্লেক্সের বর্তমান মূল আকর্ষণ এই সমাধিসৌধটি। উঁচু ভিত্তিবেদির উপর দন্ডায়মান সমাধিসৌধটি বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট ইমারত। এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিক থেকে ১৬.১৫ মি। প্রাচীর প্রায় ১.২২ মি চওড়া। প্রত্যেক দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশপথ সন্নিবেশিত হওয়াতে এ সমাধিসৌধটি ‘বারদুয়ারি’ ইমরাত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। ইমারতটি ইট দিয়ে নির্মিত। মূল কক্ষের চারদিকে ঘিরে রয়েছে টানা বারান্দা। এ বারান্দার বিস্তার ৩.৩৫ মি।

শাহ নিয়ামতউল্লাহর শবাধার সম্বলিত কেন্দ্রীয় কক্ষটিও বর্গাকৃতির এবং প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৭.৪৮ মি। আদিতে যদিও কক্ষটিতে ঢোকার জন্য দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর দেওয়ালে একটি করে প্রবেশপথ ছিল, পরবর্তীকালে পূর্ব ও উত্তরের প্রবেশপথ দুটি বন্ধ করে দেওয়াতে বর্তমানে মাত্র দক্ষিণ দেওয়ালেই একটি দরজা উন্মুক্ত আছে এবং পশ্চিম দেওয়ালে মিহরাব যুক্ত করা আছে। এখানে মুগল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চতুষ্কেন্দ্রিক খিলান লক্ষ্য করা যায়। ‘ফাসাদ’ এবং অন্য তিন দিকের বাইরের দেওয়ালে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উভয় পার্শ্বে খিলান বিশিষ্ট প্যানেল রয়েছে এবং প্রত্যেক খিলানের উপরিভাগ অন্তঃপ্রবিষ্ট আয়তাকার প্যানেল নকশাযুক্ত। সমাধি ইমারতের কার্নিস অনুভূমিক এবং উপরিভাগ বদ্ধ মেরলোন নকশায় অলঙ্কৃত। এ ইমারতের চার কোণে পার্শ্ব মিনার সুসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রূপায়িত হয়েছে। এ মিনারগুলি অষ্টকোণাকৃতির এবং ছাদ থেকে উপরে উঠে গেছে। এছাড়া মিনারশীর্ষ পদ্মপাপড়ির গুলদস্তা সম্বলিত ছোট গম্বুজে আচ্ছাদিত। গম্বুজের শীর্ষ ক্রমান্বয়ে একটির উপর আরেকটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র কলস দ্বারা সুশোভিত। গম্বুজ চূড়ায় কলস, পদ্মফুল, মিনারমুকুট ও কার্নিসে পদ্মপাপড়ির মোটিফ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলার আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন সুস্পষ্ট।

সমাধিসৌধটির ভূমিনকশার বিন্যাসে দেখা যায় কেন্দ্রীয় বর্গাকৃতির কক্ষটি বেষ্টন করে আছে তার চতুষ্পার্শ্বের ভল্টনির্ভর টানা বারান্দা। দিল্লির হুমায়ুনের সমাধি ও আগ্রার বিশ্বখ্যাত তাজমহলের ভূমি-নকশার যথেষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে এ সমাধিতে। এভাবে রাজকীয় মুগল সমাধি স্থাপত্য-ঐতিহ্যের সম্প্রসারণ ঘটে গৌড় অঞ্চল পর্যন্ত। ঢাকায়  বিবি পরীর সমাধি, নারায়ণগঞ্জে বিবি মরিয়ম সমাধি ও রাজমহলের বখত হোমা-র সমাধি নির্মাণে আলোচ্য সমাধির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

শাহ নিয়ামতউল্লাহর সমাধিটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত ইমারত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। শাহ নিয়ামতউল্লাহর সমাধি এবং এ কমপ্লেক্সের অন্য দুটি নিদর্শন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একাধিকবার নবায়ন ও সংস্কার করেছে।  [আয়শা বেগম]