কাশীরাম দাস

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কাশীরাম দাস (১৬শ-১৭শ শতক)  মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কবি। তাঁর রচিত বাংলা  মহাভারত সর্বাধিক জনপ্রিয়। আনুমানিক ষোলো শতকের মধ্যভাগে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার ইন্দ্রাণী পরগনার সিঙ্গি গ্রামে এক  কায়স্থ পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা রমাকান্ত দাস উড়িষ্যার পুরীতে  জগন্নাথ দর্শনে গিয়ে সেখানেই বসতি স্থাপন করেন। কাশীরাম মেদিনীপুরের আওয়াসগড় রাজার শাসনাধীন কোনো এক স্থানে পাঠশালা খুলে শিক্ষকতা করেন। হরহরপুরের অভিরাম মুখুটি ছিলেন কাশীরামের গুরু। তিনি তাঁরই নির্দেশে মহাভারত রচনা করেন।

কাশীরামের নামে আঠারো পর্বে সমাপ্ত বিশাল মহাভারত প্রচলিত আছে। তবে তিনি আদি, সভা, বন ও বিরাট এ চার পর্ব রচনা করে মারা যান; পরে তাঁর পুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্র ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন মিলে কাব্যখানি সমাপ্ত করেন। এটি ১৮০১-১৮০৩-এর মধ্যে  শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে আংশিকভাবে প্রকাশিত হয়। তারপর ১৮৩৬ সালে জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের সম্পাদনায় একই প্রেস থেকে সম্পূর্ণ আকারে মুদ্রিত হয়। পরবর্তীকালে আরও অনেকেই কাব্যটি সম্পাদনা করেন।

কাশীরামের পূর্বে ও পরে আরও অনেকে পূর্ণ ও খন্ডিত আকারে মহাভারত রচনা করেছেন; কিন্তু সেগুলির মধ্যে কাশীরামের গ্রন্থই শ্রেষ্ঠ। বেদব্যাসের সংস্কৃত মহাভারত ও অন্য অনেক উৎস থেকে উপাদান নিয়ে কাশীরাম প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা মহাভারত রচনা করেন। বাঙালির কাছে কৃত্তিবাসের  রামায়ণ ও কাশীরামের মহাভারত সমান গুরুত্বপূর্ণ। উভয় কাব্য যুগ যুগ ধরে হিন্দুদের ঘরে ঘরে পঠিত হচ্ছে।

মহাভারতে নানা বিষয়ের সমাহার আছে, যেমন শাস্ত্র,  পুরাণ, ইতিহাস,  দর্শন, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদি। মহাভারত ছাড়াও কাশীরামের নামে ভারতপাঁচালী, সত্যনারায়ণের পুথি, স্বপ্নপর্ব, জলপর্ব ও নলোপাখ্যান নামক গ্রন্থগুলি প্রচলিত। তাঁর অগ্রজ কৃষ্ণদাস ও অনুজ গদাধর যথাক্রমে শ্রীকৃষ্ণবিলাস ও জগন্নাথমঙ্গল কাব্য রচনা করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কাশীরাম পারিবারিক ঐতিহ্যসূত্রেই কবিত্বশক্তি অর্জন করেছিলেন। বর্তমানে কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামে প্রতিবছর কাশীরাম দাসের স্মৃতিবার্ষিকী পালিত হয়।  [ওয়াকিল আহমদ]