একতারা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:০৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)
একতারা

একতারা  ততজাতীয়  লোকবাদ্যযন্ত্র। সাধারণত  বাউল, বৈরাগী ও ভিক্ষুকরা এ যন্ত্র বাজিয়ে থাকে। এক সময় বাংলার বাউলরা একতারা বাজিয়ে মরমি গান গেয়ে পল্লীর পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াত। একতারাটি কানের কাছে নিয়ে তারা মৃদু গুঞ্জন তুলত, আর তন্ময় হয়ে তার সুরের সঙ্গে গান গাইত।

একটিমাত্র তার থাকে বলে এ বাদ্যযন্ত্রের নাম একতারা। লাউ,  বেলনারিকেল ইত্যাদি নির্মিত বস (খোল বা শূন্যপাত্র), কাঠ বা পিতলের খোল, এক খন্ড সরু  বাঁশ, একগাছি তার এবং এক টুকরা চামড়া এর নির্মাণ উপকরণ। বিভিন্ন ধরনের একতারায় বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহূত হয়। উপকরণ ও আকৃতি ভেদে যন্ত্রটি লাউ, গোপীযন্ত্র, বসমতি, থুনথুনে ইত্যাদি নামে পরিচিত। লাউ-এর বস গোলাকার জাতীয় বড় লাউয়ের খোল দিয়ে তৈরি, বিকল্পে পিতলের খোলও ব্যবহার করা হয়। প্রায় দুহাত লম্বা এক খন্ড সরু বাঁশ মাথায় গিঁট রেখে সমান চার ভাগ করে মুখোমুখি দুভাগ কেটে ফেলে বাকি দুফালি বসের দুপাশে বেঁধে দেওয়া হয়। লাউয়ের তলা থেকে ইস্পাতের সরু তার বা সুতা বসের ওপর দিয়ে বাঁশের মাথায় কানের সঙ্গে টেনে বাঁধা হয়। প্রয়োজনমতো কান ঘুরিয়ে তার টান-ঢিল করা যায়। ডান হাতে বাঁশের ফালির মাঝামাঝি অংশ ধরে তর্জনীর অগ্রভাগ দিয়ে একতারা বাজানো হয়।

লাউয়ের খোলের প্রাধান্যহেতু  সিলেট অঞ্চলে একতারা ‘লাউ’ নামে পরিচিত। ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’ ওই অঞ্চলের একটি বিখ্যাত গান। ‘বস’ শব্দটির প্রাধান্যের কারণে রংপুরে এটি ‘বসমতি’ নামে অভিহিত হয়। বেল বা নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি একতারা আকারে ছোট হয়। এর খোলা দিকে চামড়ার ছাউনি থাকে, আর পেছনের অংশ কাঠের দন্ডের সঙ্গে বাঁধা হয়। কাঠের নিচের অংশের সঙ্গে তার বেঁধে চামড়ার উপরিস্থিত সোয়ারির ওপর দিয়ে নিয়ে কাঠের মাথায় কানের সাহায্যে আটকানো হয়। ‘গোপীযন্ত্র’ নামের একতারার খোলের নিচে চামড়ার ছাউনি থাকে। সেখানে একটি চাকতির সাহায্যে তারটিকে চামড়ার সঙ্গে আটকিয়ে ওপরের দিকে বাঁশের মাথায় বাঁধা হয়। লাউয়ের বসটি ঢোলের খোলের মতো ঈষৎ লম্বা হয়। সাধারণত ভিক্ষোপজীবী বৈরাগীরা এরূপ যন্ত্র ব্যবহার করে। থুনথুনের বসটি ঢোঙাকৃতি বিশিষ্ট এবং একখন্ড সরু বাশের সঙ্গে বাঁধা হয়। চামড়ার নিচ থেকে উঠিয়ে পিতলের তার বাঁশের মাথায় শক্ত করে বাঁধা হয়। ছোট আকারের এ যন্ত্র সাধারণত ভিক্ষুকরা ব্যবহার করে। এ একতারাকেই যে-কোনো ধরনের বীণাযন্ত্রের আদিরূপ মনে করা হয় এবং প্রাচীনকালে হয়তো একেই একতন্ত্রী  বীণা বলা হতো।  [ওয়াকিল আহমদ]