হেইলিবেরি কলেজ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

হেইলিবেরি কলেজ  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নবনিযুক্ত ক্যাডেটদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পূর্বেই ক্যাডেটদেরকে (কোম্পানির সিভিল সার্ভিসে নবনিযুক্ত সদস্যবৃন্দ) পরিকল্পিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ধারণাটি গভর্নর জেনারেল লর্ড  ওয়েলেসলী (১৭৯৮-১৮০৫) কর্তৃক সর্বপ্রথম গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। লর্ড ওয়েলেসলী ১৮০০ সালে নবনিযুক্ত ক্যাডেটদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের জন্য  ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ নামে একটি কলেজ স্থাপন করেন। কিন্তু কোর্ট অব ডাইরেক্টর্সএর কোন রকম পূর্বানুমতি ছাড়াই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলেই তারা অনিয়মতান্ত্রিকতার অজুহাতে এই কলেজে আর্থিক অনুদান প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স ওয়েলেসলীর ফোর্ট উইলিয়ম কলেজটি বাতিল করে দিলেও একটি উপনিবেশিক রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার জন্য দক্ষ আমলাতন্ত্র গড়ে তোলা সম্পর্কে তাঁর ধারণাটি তারা নাকচ করে দেয় নি। তারা বৃটেনে একই ধরনের একটি প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ ধারাবাহিকতায় ১৮০৬ সালে ইংল্যান্ডের হেইলবেরিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ যা সাধারণভাবে হেইলিবেরি কলেজ (স্থানের নামানুযায়ী) নামেই পরিচিত।

এরপর থেকে সকল ক্যাডেটকে কোম্পানির সিভিল সার্ভিসে নিজেদের যোগ্য করে তোলার জন্য এ কলেজ থেকে চার বছরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হতো। প্রত্যেক ক্যাডেটকে নৈতিক, শারীরিক ও মননশীলতার প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য কঠোর নিয়ম ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয়। এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয় অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম অনুযায়ী। এখানে পাশ্চাত্য বিষয়সমূহের উপর শিক্ষা কোর্সের পাশাপাশি ভারতীয় ভাষা ও ইতিহাসের উপরও অতিরিক্ত কোর্স চালু করা হয়।

হেইলিবেরি কলেজ, গ্রেট ব্রিটেন

ক্যাডেটদের নৈতিক প্রশিক্ষণ দানের জন্য রেভারেন্ড স্যামুয়েল হেনলী (অধ্যক্ষ) এবং রেভারেন্ড এডওয়ার্ড লিউটনের মতো প্রখ্যাত দার্শনিকদের নিযুক্ত করা হয়। রাজনৈতিক অর্থনীতির বিখ্যাত তাত্ত্বিক টমাস আর. ম্যালথাস (১৭৬৬-১৮৩৪) নীতিশাস্ত্রবিদ হিসেবে এ কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। ম্যালথাসের সঙ্গে ডেভিড রিকার্ডো (১৭৭২-১৮২৩) নামে অপর একজন বড় তাত্ত্বিকও ছিলেন। কলেজের অ্যাকাডেমিক ও নৈতিক পরিবেশ তরুণ ক্যাডেটদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন উক্তিও প্রচলিত আছে যে, ভারত যদি উনিশ শতকের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মুকুট হয়ে থাকে তাহলে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস ছিল সে মুকুটের ইস্পাত-কাঠামো। এই বক্তব্যের আলোকে একথাও বলা যায় যে, মুকুটের সেই ইস্পাত-কাঠামোর কারিগর ছিল হেইলিবেরি কলেজ, যে প্রতিষ্ঠান আমলাতন্ত্রে সদ্যনিযুক্ত সদস্যদের নৈতিক, শারীরিক ও মননশীলতার প্রশিক্ষণ দিত।  [সিরাজুল ইসলাম]