কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স

কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স ১৮৫৮ সালে বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত লন্ডনের লিডেন হল স্ট্রীটে কোম্পানির সদরদপ্তরে অবস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যনির্বাহি অঙ্গ-সংগঠন। কোম্পানির অংশীদারগণ, যাদেরকে সমষ্টিগতভাবে কোর্ট অব প্রোপ্রাইটর্স বলা হতো, প্রতি বছর কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর সদস্যদের নির্বাচিত করত। ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর ওপর কোর্ট অব প্রোপ্রাইটর্স বেশ প্রভাব খাটাত। কোম্পানি যখন বাংলা নিজ দখলে নিয়ে আসে তখন অধিক মুনাফা অর্জনে ব্যগ্র অংশীদারগণ কর্তৃক এ রকম নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়ে। এভাবে রেগুলেটিং অ্যাক্ট (১৭৭৩) ও পিটের ভারত আইনের (১৭৮৪) মাধ্যমে কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর ওপর অংশীদারদের ক্ষমতা পার্লামেন্ট কমিয়ে দেয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের কর্তৃত্ব  বোর্ড অব কন্ট্রোল হিসেবে অভিহিত একটি পার্লামেন্টারি কমিটির নিকট চলে যায়। অংশীদারগণ এখন থেকে ডাইরেক্টরদের নীতিমালা শুধু আলোচনা করতে পারত কিন্তু কোনোভাবেই রদ অথবা সংশোধন করতে পারত না। পিট-এর ভারত আইন অনুসারে বোর্ড অব ডাইরেক্টর্স শুধু বোর্ড অব কন্ট্রোলের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বোর্ড অব কন্ট্রোলের যথাযথ সম্মতি ছাড়া রাজস্ব-সংক্রান্ত অথবা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেত না। অবশ্য সাম্প্রতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স ‘পৃষ্ঠপোষকতার’ বিশেষ সুবিধা ধরে রাখতে পেরেছিল। ১৮৫৩ সালের সনদ আইন পাস হওয়া পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের নিয়োগদান ডাইরেক্টর সভার সার্বভৌম বিশেষ সুবিধা হিসেবে বিরাজ করে। এরপর এ বিশেষ সুবিধা বিলুপ্ত করা হয় এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগ দানের নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়।

ডাইরেক্টরগণ চার বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর সর্বমোট ২৪ জন সদস্যের মধ্যে প্রতি বছর এপ্রিল মাসে পালাক্রমে ছয়জন করে পদত্যাগ করতেন এবং তাদের শূন্যস্থান চার বছরের জন্য নতুন ডাইরেক্টরদের দ্বারা পূরণ করা হতো। অবসরগ্রহণকারী কোনো ডাইরেক্টর পরবর্তী বছরের পূর্বে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন না। ডাইরেক্টর সভার আসন এত অধিক লোভনীয় ছিল যে, পদপ্রার্থীগণ সভায় নির্বাচিত হওয়ার মানসে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ও কর্মশক্তি ব্যয় করতেন।

কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স প্রশাসনিক কাজ বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে সম্পাদন করত। এ সকল কমিটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘সিক্রেট কমিটি,’ ‘সিলেক্ট কমিটি’ ও ‘কমিটি অব করেসপন্ডেন্স’। সিক্রেট কমিটি রাজনৈতিক বিষয়াবলি নিয়ে ব্যস্ত থাকত, সিলেক্ট কমিটির কাজ ছিল সাধারণ প্রশাসনিক বিষয়াদি দেখাশোনা করা, এবং কমিটি অব করেসপন্ডেন্স সপরিষদ গভর্নর জেনারেলের নিকট চিঠিপত্রের খসড়া তৈরির প্রতি লক্ষ রাখত। সপরিষদ গভর্নর জেনারেল কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর নির্দেশ ও আদেশাবলির জন্য প্রাসঙ্গিক কমিটির সঙ্গে পত্র-যোগাযোগ করতেন। ডাইরেক্টর সভার সদস্যবৃন্দ তাদের নিজ নিজ কমিটিসমূহে পূর্ণকালীনভাবে কাজ করতেন। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স-এর সদস্যগণ কর্তৃক প্রতি বছর নির্বাচিত সভাপতি মিটিংসমূহ পরিচালনা করতেন। অনেক আর্থিক সুযোগ প্রাপ্তি ছাড়াও ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকরিতে প্রতি বছর দুজন শিক্ষানবিশ মনোনয়নের একটি বিশেষ সুবিধা প্রত্যেক পরিচালকের ছিল। ১৮৫৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে অপরিমেয় সামাজিক মর্যাদা ও আয়ের উৎস ‘পৃষ্ঠপোষকতার’ বিশেষ সুবিধা বিলুপ্ত করা হয়।  [সিরাজুল ইসলাম]