মোর্শেদ, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:MorshedJusticeSyedMahbub.jpg|thumb|right|400px|বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ]]
'''মোর্শেদ, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব''' (১৯১১-১৯৭৯)  বিচারপতি। ১৯১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তাঁর জন্ম। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩১ সালে অর্থনীতিতে বি.এ (অনার্স), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে এম.এ এবং ১৯৩৩ সালে এল.এলবি ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে (১৯৩৯) তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইনব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে মাহবুব মোর্শেদ হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৬৭ সালের ১৫ নভেম্বর পদত্যাগ করেন।
'''মোর্শেদ, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব''' (১৯১১-১৯৭৯)  বিচারপতি। ১৯১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তাঁর জন্ম। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩১ সালে অর্থনীতিতে বি.এ (অনার্স), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে এম.এ এবং ১৯৩৩ সালে এল.এলবি ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে (১৯৩৯) তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইনব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে মাহবুব মোর্শেদ হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৬৭ সালের ১৫ নভেম্বর পদত্যাগ করেন।


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ১৯৫৪ সালে  [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রন্ট]] গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উদ্যাপন প্রস্ত্ততি কমিটির সভাপতি হিসেবে ১৯৬১ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি ঢাকায় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেন। আইয়ুব খানের শাসনকালে গণতান্ত্রিক অধিকার যখন বাধাগ্রস্ত, তখন মানুষের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের আসন থেকেই তিনি সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৬৯-এর আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় ভূমিকা। তিনি ছাত্র সমাজের ১১-দফার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও  [[আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা|আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা]] প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। ঐ বছরই আইয়ুব খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি পূর্ব বাংলার  [[ছয়দফা কর্মসূচি|ছয়দফা]] ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন।উপরন্তু প্রাদেশিক গভর্নর মোনায়েম খানের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের কথা তখন সুবিদিত ছিল।
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ১৯৫৪ সালে  [[যুক্তফ্রণ্ট|যুক্তফ্রন্ট]] গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উদ্যাপন প্রস্ত্ততি কমিটির সভাপতি হিসেবে ১৯৬১ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি ঢাকায় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেন। আইয়ুব খানের শাসনকালে গণতান্ত্রিক অধিকার যখন বাধাগ্রস্ত, তখন মানুষের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের আসন থেকেই তিনি সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৬৯-এর আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় ভূমিকা। তিনি ছাত্র সমাজের ১১-দফার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও  [[আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা|আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা]] প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। ঐ বছরই আইয়ুব খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি পূর্ব বাংলার  [[ছয়দফা কর্মসূচি|ছয়দফা]] ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন।উপরন্তু প্রাদেশিক গভর্নর মোনায়েম খানের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের কথা তখন সুবিদিত ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানি শাসকচক্রের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বন করেন।
 
[[Image:MorshedJusticeSyedMahbub.jpg|thumb|right|বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ]]
 
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানি শাসকচক্রের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বন করেন।


আইনজীবী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও দক্ষ বিচারক হিসেবেই মাহবুব মোর্শেদের খ্যাতি সুদূর প্রসারিত। বিচারপতির মর্যাদা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তিনি কঠোর প্রয়াস চালিয়েছেন। ‘মন্ত্রীর মামলা’, ‘কর্নেল ভট্টাচার্যের মামলা’ ও ‘পানের মামলা’-য় তাঁর ঐতিহাসিক রায় একজন অকুতোভয় বিচারকের ন্যায়নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]
আইনজীবী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও দক্ষ বিচারক হিসেবেই মাহবুব মোর্শেদের খ্যাতি সুদূর প্রসারিত। বিচারপতির মর্যাদা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তিনি কঠোর প্রয়াস চালিয়েছেন। ‘মন্ত্রীর মামলা’, ‘কর্নেল ভট্টাচার্যের মামলা’ ও ‘পানের মামলা’-য় তাঁর ঐতিহাসিক রায় একজন অকুতোভয় বিচারকের ন্যায়নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]

০৭:০৫, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

মোর্শেদ, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব (১৯১১-১৯৭৯)  বিচারপতি। ১৯১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তাঁর জন্ম। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩১ সালে অর্থনীতিতে বি.এ (অনার্স), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২ সালে এম.এ এবং ১৯৩৩ সালে এল.এলবি ডিগ্রি লাভ করেন। লন্ডনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে (১৯৩৯) তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইনব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে মাহবুব মোর্শেদ হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৬৭ সালের ১৫ নভেম্বর পদত্যাগ করেন।

সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ১৯৫৪ সালে  যুক্তফ্রন্ট গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উদ্যাপন প্রস্ত্ততি কমিটির সভাপতি হিসেবে ১৯৬১ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি ঢাকায় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেন। আইয়ুব খানের শাসনকালে গণতান্ত্রিক অধিকার যখন বাধাগ্রস্ত, তখন মানুষের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের আসন থেকেই তিনি সংগ্রাম করেছিলেন। ১৯৬৯-এর আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় ভূমিকা। তিনি ছাত্র সমাজের ১১-দফার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও  আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। ঐ বছরই আইয়ুব খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি পূর্ব বাংলার  ছয়দফা ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন।উপরন্তু প্রাদেশিক গভর্নর মোনায়েম খানের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের কথা তখন সুবিদিত ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানি শাসকচক্রের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বন করেন।

আইনজীবী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও দক্ষ বিচারক হিসেবেই মাহবুব মোর্শেদের খ্যাতি সুদূর প্রসারিত। বিচারপতির মর্যাদা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তিনি কঠোর প্রয়াস চালিয়েছেন। ‘মন্ত্রীর মামলা’, ‘কর্নেল ভট্টাচার্যের মামলা’ ও ‘পানের মামলা’-য় তাঁর ঐতিহাসিক রায় একজন অকুতোভয় বিচারকের ন্যায়নিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।  [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]