দত্ত, মনোমোহন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
'''দত্ত'''''', ''''''মনোমোহন '''(১৮৭৭-১৯০৯)'''  '''সাধক ও ভাবসঙ্গীতকার। ‘মনোমোহন সাধু’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ১০ মাঘ  [[১০৪২৭১|ব্রাহ্মণবাড়িয়া]] জেলার নবীনগর থানার সাতমোড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা পদ্মনাথ দত্ত পেশায় ছিলেন একজন কবিরাজ। গ্রামের রামজীবন চক্রবর্তীর পাঠশালা থেকে ছাত্রবৃত্তি পাস করে মনোমোহন মুরাদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি তিন বছর (১৮৯৬-১৮৯৯) মোক্তারি পড়েন।
[[Image:manomohandatta.jpg|thumb|400px|right|মনোমোহন দত্ত]]
'''দত্ত, মনোমোহন '''(১৮৭৭-১৯০৯) সাধক ও ভাবসঙ্গীতকার। ‘মনোমোহন সাধু’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ১০ মাঘ  [[ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা|ব্রাহ্মণবাড়িয়া]] জেলার নবীনগর থানার সাতমোড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা পদ্মনাথ দত্ত পেশায় ছিলেন একজন কবিরাজ। গ্রামের রামজীবন চক্রবর্তীর পাঠশালা থেকে ছাত্রবৃত্তি পাস করে মনোমোহন মুরাদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি তিন বছর (১৮৯৬-১৮৯৯) মোক্তারি পড়েন।


আঠারো বছর বয়সে মনোমোহন কালিকচ্ছ গ্রামের সর্বধর্মসমন্বয়বাদী সাধক আনন্দস্বামীর সাহচর্যে থেকে সংসারের প্রতি বিরাগী হয়ে ওঠেন। অতঃপর  [[১০১৬৭৪|চট্টগ্রাম]] মাইজভান্ডারের পীর মাওলানা আহমদউল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তিনি তাঁর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। মাইজভান্ডারের পরিবেশ তাঁকে অধ্যাত্মসঙ্গীত রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি এ ধারায় গান রচনা করে সাধু ও সজ্জন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ৮৫০।  
আঠারো বছর বয়সে মনোমোহন কালিকচ্ছ গ্রামের সর্বধর্মসমন্বয়বাদী সাধক আনন্দস্বামীর সাহচর্যে থেকে সংসারের প্রতি বিরাগী হয়ে ওঠেন। অতঃপর  [[চট্টগ্রাম জেলা|চট্টগ্রাম]] মাইজভান্ডারের পীর মাওলানা আহমদউল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তিনি তাঁর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। মাইজভান্ডারের পরিবেশ তাঁকে অধ্যাত্মসঙ্গীত রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি এ ধারায় গান রচনা করে সাধু ও সজ্জন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ৮৫০।  


মনোমোহন নিয়মিত  [[১০১০৯১|কুরআন]] ও  [[১০৩৬৭৮|বাইবেল]] পড়তেন; বেদ''-''বেদান্তেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর গানের একটি উক্তি হলো: ‘কোরান পুরান আদি বাইবেল কি বেদ, সবে ফুঁকারিয়া কয়, তার অবিচ্ছেদ।’ তিনি গুরুর নামে আনন্দাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন; সেখানে প্রতিরাতে জলসা হতো। পরবর্তীকালে মনোমোহনের জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর ১০ মাঘ ভক্তরা তাঁর গান পরিবেশন করতেন। তাঁর একমাত্র সন্তান সুধীরচন্দ্র দত্ত আশ্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। #[[Image:দত্ত, মনোমোহন_html_88407781.png]]
মনোমোহন নিয়মিত  [[আল-কুরআন|কুরআন]] ও  [[বাইবেল|বাইবেল]] পড়তেন; বেদ-বেদান্তেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর গানের একটি উক্তি হলো: ‘কোরান পুরান আদি বাইবেল কি বেদ, সবে ফুঁকারিয়া কয়, তার অবিচ্ছেদ।’ তিনি গুরুর নামে আনন্দাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন; সেখানে প্রতিরাতে জলসা হতো। পরবর্তীকালে মনোমোহনের জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর ১০ মাঘ ভক্তরা তাঁর গান পরিবেশন করতেন। তাঁর একমাত্র সন্তান সুধীরচন্দ্র দত্ত আশ্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন।


[[Image:manomohandatta.jpg]]
মনোমোহনের শিষ্যবর্গের মধ্যে খ্যাতনামা সুরকার  [[খাঁ, ওস্তাদ আফতাবউদ্দিন|আফতাবউদ্দিন খাঁ]], ওস্তাদ  [[খাঁ, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ|গুল মোহাম্মদ খাঁ]], নিশিকান্ত সেন ও লবচন্দ্র পালের নাম উল্লেখযোগ্য। আফতাবউদ্দিন মনোমোহনের গানে সুরারোপ করেন। মনোমোহনের প্রথম সঙ্গীত-সংকলন মলয়া (২ খন্ড); অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে ''পথিক'', ''পাথেয়'', ''কথামৃত'', ''যোগপ্রণালী'', ''খনি'' ইত্যাদি। ১৩১৬ বঙ্গাব্দের (১৯০৯) ২০ আশ্বিন তিনি পরলোক গমন করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী লাশ কবর দেওয়া হয়।  [আলি নওয়াজ]
 
#মনোমোহন দত্ত
 
মনোমোহনের শিষ্যবর্গের মধ্যে খ্যাতনামা সুরকার  [[১০১২৫৮|আফতাবউদ্দিন খাঁ]], ওস্তাদ  [[১০১২৫৪|গুল মোহাম্মদ খাঁ]], নিশিকান্ত সেন ও লবচন্দ্র পালের নাম উল্লেখযোগ্য। আফতাবউদ্দিন মনোমোহনের গানে সুরারোপ করেন। মনোমোহনের প্রথম সঙ্গীত-সংকলন মলয়া (২ খন্ড); অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে পথিক,'' ''পাথেয়,'' ''কথামৃত,'' ''যোগপ্রণালী, খনি ইত্যাদি। ১৩১৬ বঙ্গাব্দের (১৯০৯) ২০ আশ্বিন তিনি পরলোক গমন করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী লাশ কবর দেওয়া হয়।  [আলি নওয়াজ]
 
<!-- imported from file: দত্ত, মনোমোহন.html-->


[[en:Dutta, Manomohan]]
[[en:Dutta, Manomohan]]

০৪:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মনোমোহন দত্ত

দত্ত, মনোমোহন (১৮৭৭-১৯০৯) সাধক ও ভাবসঙ্গীতকার। ‘মনোমোহন সাধু’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ১০ মাঘ  ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার সাতমোড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা পদ্মনাথ দত্ত পেশায় ছিলেন একজন কবিরাজ। গ্রামের রামজীবন চক্রবর্তীর পাঠশালা থেকে ছাত্রবৃত্তি পাস করে মনোমোহন মুরাদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি তিন বছর (১৮৯৬-১৮৯৯) মোক্তারি পড়েন।

আঠারো বছর বয়সে মনোমোহন কালিকচ্ছ গ্রামের সর্বধর্মসমন্বয়বাদী সাধক আনন্দস্বামীর সাহচর্যে থেকে সংসারের প্রতি বিরাগী হয়ে ওঠেন। অতঃপর  চট্টগ্রাম মাইজভান্ডারের পীর মাওলানা আহমদউল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তিনি তাঁর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। মাইজভান্ডারের পরিবেশ তাঁকে অধ্যাত্মসঙ্গীত রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। তিনি এ ধারায় গান রচনা করে সাধু ও সজ্জন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ৮৫০।

মনোমোহন নিয়মিত  কুরআন ও  বাইবেল পড়তেন; বেদ-বেদান্তেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর গানের একটি উক্তি হলো: ‘কোরান পুরান আদি বাইবেল কি বেদ, সবে ফুঁকারিয়া কয়, তার অবিচ্ছেদ।’ তিনি গুরুর নামে আনন্দাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন; সেখানে প্রতিরাতে জলসা হতো। পরবর্তীকালে মনোমোহনের জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর ১০ মাঘ ভক্তরা তাঁর গান পরিবেশন করতেন। তাঁর একমাত্র সন্তান সুধীরচন্দ্র দত্ত আশ্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

মনোমোহনের শিষ্যবর্গের মধ্যে খ্যাতনামা সুরকার  আফতাবউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ  গুল মোহাম্মদ খাঁ, নিশিকান্ত সেন ও লবচন্দ্র পালের নাম উল্লেখযোগ্য। আফতাবউদ্দিন মনোমোহনের গানে সুরারোপ করেন। মনোমোহনের প্রথম সঙ্গীত-সংকলন মলয়া (২ খন্ড); অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে পথিক, পাথেয়, কথামৃত, যোগপ্রণালী, খনি ইত্যাদি। ১৩১৬ বঙ্গাব্দের (১৯০৯) ২০ আশ্বিন তিনি পরলোক গমন করেন এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী লাশ কবর দেওয়া হয়।  [আলি নওয়াজ]