খাঁ, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ

খাঁ, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ (১৮৭৬-১৯৭৯)  ধ্রুপদ ও  খেয়াল ধারার সঙ্গীতশিল্পী। দ্বারভাঙার তিরহুত শহরে তাঁর জন্ম। পিতা ওস্তাদ আহমদ খাঁ ছিলেন দ্বারভাঙা মহারাজার সভাগায়ক। পিতামহ ওস্তাদ নামদার খাঁও ছিলেন একজন খ্যাতনামা সঙ্গীতবিদ। শৈশবে পিতার নিকট গুল মোহাম্মদের সঙ্গীতে  হাতেখড়ি হয়; পরে পিতা ও পিতামহের কাছে তিনি ঐতিহ্যবাহী ‘ডাগর’ ঘরানায় সঙ্গীত শিক্ষাগ্রহণ করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পিতার মৃত্যু হলে পিতৃব্য হায়দার বক্স তাঁর  সঙ্গীত শিক্ষার দায়িত্ব নেন। এভাবে পারিবারিক ঐতিহ্যে গুল মোহাম্মদের সঙ্গীত জীবন গঠিত হয়।

পিতৃব্যের নিকট শিক্ষা সমাপ্ত করে গুল মোহাম্মদ আগ্রা গিয়ে বসবাস করেন এবং সেখানে আগ্রা ঘরানায় পারদর্শিতা লাভ করেন। ১৯০৮ সালে তিনি সপরিবারে  ঢাকা চলে আসেন এবং এখানে স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। গুল মোহাম্মদের দরাজ কণ্ঠ এবং জোরালো গায়নভঙ্গি ঢাকার শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। ক্রমশ তাঁর সঙ্গীত মাধুর্যে আকৃষ্ট হন সঙ্গীত রসিকরা এবং তাঁকে কেন্দ্র করে ঢাকায় গড়ে ওঠে একটি নতুন সাঙ্গীতিক পরিমন্ডল; বহু সঙ্গীত পিপাসু তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এক সময় তিনি শিষ্যদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘকাল এ কাজে ব্যাপৃত থাকেন। গুল মোহাম্মদের নিকট সঙ্গীত শিক্ষা করে যাঁরা বিখ্যাত হয়েছেন তাঁরা হলেন  মুন্সি রইসউদ্দিন, উৎপলা সেন, লায়লা আর্জুমান্দ বানু প্রমুখ।

গুল মোহাম্মদ  ধ্রুপদ ও খেয়াল উভয় ধারায়ই সমান দক্ষ ছিলেন। উপমহাদেশের বিভিন্ন সঙ্গীত জলসায় সঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি ব্যাপক প্রশংসা ও সম্মান অর্জন করেন। ১৯৩৯ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি  উচ্চাঙ্গসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তখন থেকেই তিনি ঢাকা বেতারে একজন সঙ্গীত শিক্ষকশিল্পী হিসেবে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিক্ষার আসর প্রবর্তিত হলে তিনি সেই আসর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য গুল মোহাম্মদ বহুবার পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৯৬৫ সালে ‘বুলবুল একাডেমী পুরস্কার’, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ‘স্বীকৃতি সংবর্ধনা’ এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য।  [মোবারক হোসেন খান]