বাইবেল

বাইবেল  খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। গ্রিক শব্দ biblia (বই) থেকে উদ্ভূত বাইবেল শব্দটি খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বোঝাতে ব্যবহূত হয়ে আসছে। এতে অবশ্য ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মেরই পবিত্র বাণীর সংকলন রয়েছে।

বাইবেল দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট। ওল্ড টেস্টামেন্ট আদিতে হিব্রু ভাষায় লিখিত হয়েছিল এবং ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ই তা মানত। এটি ৩৯টি গ্রন্থে বিভক্ত। নিউ টেস্টামেন্ট ২৭টি গ্রন্থে বিভক্ত এবং তাতে যিশু খ্রিস্টের জীবনী ও তাঁর শিক্ষা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রন্থের আলাদা নাম আছে এবং প্রত্যেকটি কতগুলি অধ্যায় ও স্তবকে বিভক্ত। যেমন মার্ক ২ : ১২ বলতে বোঝায় মার্ক সংক্রান্ত গ্রন্থ, যার অধ্যায়সংখ্যা ২ এবং স্তবকসংখ্যা ১২। Apocrypha বলতে বোঝায় বাইবেলের কিছু অংশ যা ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রিক ও ল্যাটিন অনুবাদে পাওয়া যায়, কিন্তু মূল হিব্রুতে নেই। পোপের নেতৃত্বে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত Orthodox Eastern Chruch Apocrypha-কে বাইবেলের অংশ হিসেবে মনে করে, ফলে বাইবেলের  গ্রন্থসংখ্যা হয় ৭৩। পৃথিবীর বহুভাষায় বাইবেল অনূদিত হয়েছে।

বঙ্গদেশে বাইবেল ও খ্রিস্টধর্মের প্রথম প্রচলন করে পর্তুগিজরা। পর্তুগিজ Jesuit-রা বাংলাসহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় বাইবেলের অংশবিশেষ অনুবাদ করে। বাংলায় সম্পূর্ণ বাইবেল অনুবাদ করেন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশনের প্রতিষ্ঠাতা  উইলিয়ম কেরী। এটিই প্রথম মুদ্রিত বাংলা গদ্যগ্রন্থ। তখনকার অধিকাংশ স্কুল পাঠ্যপুস্তকে বাইবেলের কথা সংযুক্ত থাকত, কারণ পাঠ্যপুস্তকগুলি রচনা করতেন খ্রিস্টান মিশনের ব্যক্তিবর্গ। উনিশ শতকের শেষপর্যন্ত এই ধারা প্রচলিত ছিল। পরে হিন্দু ও মুসলমানদের সংস্কারমূলক আন্দোলনের ফলে এ ধারা রহিত হয়। বহু খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে বাইবেল বিতরণ করত। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: Christian Missionary Society, Baptist Missionary Society, London Missionary Society, Bible Society এবং Society for Promoting Christian Knowledge।

এ দেশের অধিকাংশ বাঙালি খ্রিস্টান বাংলায় বাইবেল পাঠ করে। বাংলাদেশ  টেলিভিশন ও  বেতার তাদের প্রাত্যহিক কর্মসূচি শুরুর আগে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের পাঠ প্রচার করে। বাইবেল পড়া হয় রবিবারে।  [সেলমন এইচ ডিও]