গ্রন্থাগার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:২৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

গ্রন্থাগার  একটি বিদগ্ধ প্রতিষ্ঠান যেখানে পাঠক-গবেষকদের ব্যবহারের জন্য বই, পত্র-পত্রিকা, পান্ডুলিপি, সাময়িকী, জার্নাল ও অন্যান্য তথ্যসামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষিত হয়। গ্রন্থাগারের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Library’-এর উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ Liber থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক’। Liber শব্দটি এসেছে Libraium শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক রাখার স্থান’। এ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ শব্দ Librarie অর্থ হলো পুস্তকের সংগ্রহ।

মুদ্রণ প্রযুক্তি আবিষ্কারের আগে বই-পুস্তক, চিঠিপত্র, দলিলাদি লেখা হতো বৃক্ষের পাতা ও বাকল, পাথর, মৃন্ময় পাত্র, পশুর চামড়া প্রভৃতির উপর। এসব উপাত্ত-উপকরণ গ্রন্থাগারে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হতো। মেসোপটেমিয়া (ইরাক) অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রায় ৩০ হাজার পোড়ামাটির ফলক নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলি প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন মিশরীয় নগরী আমারনা এবং থিবিস-এ প্রাপ্ত প্যাপিরাস স্ক্রলগুলি ১৩০০-১২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের রচনা। মেসোপটেমীয় উপত্যাকায় যথাক্রমে সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় এবং এ্যাসেরীয়রা বসতি গড়ে তোলে এবং সে সময়ে গ্রন্থাগার স্থাপন করে তারা সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখে।

প্রাচীনকালে গ্রন্থাগার রাজন্যবর্গ ও অভিজাতগণ ব্যবহার করতো। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। সময়ের বিবর্তন, মুদ্রণযন্ত্র ও কাগজ-কালির আবিষ্কার, গ্রন্থের সহজলভ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রন্থাগারের চর্চা সাধারণ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে তথ্য ও গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অনেক।

বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে পুঁথি-পান্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রথা ছিল। এসব পুঁথি পান্ডুলিপি লিখিত হতো তালপাতায়, গাছের বাকলে বা পার্সমেন্ট, ভেলামে। উৎকীর্ণ করা হতো পাথরে অথবা পোড়ামাটির ফলকে। এগুলি সংরক্ষণ করা হতো বিভিন্ন ধর্মীয় আলয়ে বা বিহারে। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিহারে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের বেশ কিছু পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া গেছে। মধ্যযুগে হোসেনশাহী রাজবংশ রাজকীয় গ্রন্থাগার স্থাপন করে। ১৭৮০ সালে শ্রীরামপুর মিশন মুদ্রিত গ্রন্থ ও পান্ডুলিপির গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে। এর পরই  কলকাতা মাদ্রাসা ও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পুঁথি ও মুদ্রিত গ্রন্থের সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়। ১৮০১ সালে  ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ মানবিক বিদ্যা ও বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে। ১৮০৫ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতায় একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করে।

১৮৫৪ সালে ৪টি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলি হলো- বগুড়া উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি, যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি এবং বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। তাছাড়া রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি, ঢাকা (১৮৭১), নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি (১৮৮২), সিরাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৮২), রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার (১৮৮৪), কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার (১৮৮৫), অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯০), শাহ মখদুম ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, রাজশাহী (১৮৯১), নোয়াখালী টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৯৬), উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি, খুলনা (১৮৯৬), প্রাইজ মেমোরিয়াল লাইব্রেরি, সিলেট (১৮৯৭), ভিক্টোরিয়া পাবলিক লাইব্রেরি, নাটোর (১৯০১), চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি পাবলিক লাইব্রেরি (১৯০৪), রামমোহন পাবলিক লাইব্রেরি, ঢাকা (১৯০৬), হরেন্দ্রনাথ পাবলিক লাইব্রেরি, মুন্সিগঞ্জ (১৯০৮)।

বিশ শতকের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পূর্ব পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে গণগ্রন্থাগার স্থাপিত হতে থাকে। এ গণগ্রন্থাগারগুলি ব্রিটিশ আমলাদের প্রশাসন চালানোর পাশাপাশি পাঠমনস্কতা, সময় কাটানো এবং মিলন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শিক্ষিত দেশীয় ব্যক্তিদের উৎসাহে স্থানীয়ভাবে গণগ্রন্থাগারগুলি গড়ে উঠে। ১৯২৪ সালে বেলগাঁও শহরে অনুষ্ঠিত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ৩৯তম অধিবেশনে গণগ্রন্থাগার নিয়ে আলোচনা হয় এবং দেশের সর্বত্র গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হয়। একই বছর ডিসেম্বর মাসে নিখিল ভারত গ্রন্থাগার সম্মেলনের তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্থির হয়, প্রতিটি প্রদেশে গ্রন্থাগার সমিতি সংগঠন করতে হবে। ১৯২৫ সালে নিখিল বঙ্গ গ্রন্থাগার সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ডিসেম্বর মাসে কলকাতার এলবার্ট হলে গ্রন্থাগার কর্মী ও গ্রন্থপ্রেমিক ব্যক্তিদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় অবিভক্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা হতে প্রতিনিধিগণ অংশ নিয়ে জেলা বোর্ড ও পৌরসভাকে গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানান।

eZÆgvGb cÉvq cÉwZwU ˆRjv ‰es DcGRjvq ˆemiKvwi MYMɯ©vMvi Õ©vwcZ nGqGQ| RvZxq Mɯ©GKG±`Êi ‰K RwiGc ˆ`Lv hvq mvivG`Gk cÉvq 1,600 ˆemiKvwi MYMɯ©vMvi AvGQ| ZGe ˆewkifvM Mɯ©vMvGii AeÕ©v D®²Z bq| ˆ`Gki 31wU miKvwi ‰es 51wU ˆemiKvwi wek¼we`ÅvjGq mg†«¬ Mɯ©vMvi iGqGQ| 1921 mvGj XvKv wek¼we`Åvjq cÉwZÓ¤vi mgq ˆ^GK ‰LvGb ‰KwU mg†«¬ Mɯ©vMvi MGo IGV| eZÆgvGb ‰ Mɯ©vMvGii Mɯ©msLÅv cÉvq 6 jÞ 50 nvRvi ‰es 76 nvRvi evauvB mvgwqKx iGqGQ| ‰ Mɯ©vMvGi cÉvq 3k RvbÆvj iwÞZ AvGQ| ˆ`Gk 70 nvRvi cÉv^wgK we`Åvjq I 12 nvRvi gvaÅwgK we`ÅvjGq Mɯ©vMvi iGqGQ| gv`Ëvmv ˆKw±`ÊK agxÆq wkÞv cÉwZÓ¤vGbI Mɯ©vMvi iGqGQ|

১৯২০-এর দশক থেকে গ্রন্থাগার একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। গ্রন্থাগার পরিচালনার জন্য প্রবর্তিত হয় গ্রন্থাগার শাস্ত্র।

১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য,  শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির লালন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা; দেশ ও জাতি সম্পর্কে দেশিবিদেশি সকল প্রকাশনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ করা; বৈধ গচ্ছিতকারী লাইব্রেরি হিসেবে কাজ করা; জাতীয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা এবং সরকারের তথ্য পরিবেশন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। জাতীয় গ্রন্থাগারের কার্যাবলী হলো দেশের সমস্ত পুস্তক, সরকারি প্রকাশনা ও সাময়িকী  কপিরাইট আইন বলে সংগ্রহ করা এবং সংগঠন, সংরক্ষণ ও বিতরণ করা; বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশের বাইরে প্রকাশিত পাঠোপকরণসমূহ সংগ্রহ, সংগঠন, বিন্যাস ও বিতরণ; জাতীয় গ্রন্থপঞ্জি প্রণয়ন ও প্রকাশ করা; ইউনিয়ন ক্যাটালগ প্রস্তুত করা; পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা; আন্তঃগ্রন্থাগার সেবার সমন্বয় সাধন করা; দেশে বিদ্যমান গ্রন্থাগার সেবার সমন্বয় সাধন; আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা; দেশে প্রকাশিত গ্রন্থ ও সাময়িকীর যথাক্রমে আইএসবিএন ও আইএসএসএন দেওয়া; সরকারকে তথ্য সেবা দেওয়া ইত্যাদি।

১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৮৫ সালে ডাইরেক্টরেট অব আর্কাইভস অ্যান্ড লাইব্রেরিজ হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে গ্রন্থপঞ্জি শাখা, গ্রন্থাগার শাখা, বাধাঁই শাখা, প্রস্ততি শাখা, কম্পিউটার শাখা, মাইক্রোফিল্ম শাখা, অনুদান শাখাসহ একাধিক শাখা রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। ১৯৯৬ সাল থেকে এ গ্রন্থাগার হতে আইএসবিএন দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় গ্রন্থাগার ছাড়াও ঢাকায় জাতীয় স্বাস্থ্য গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৯৫৮ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সকলের জন্য উম্মুক্ত একটি গণগ্রন্থাগার (Public Library)। ১৯৭৭-৭৮ সালে গ্রন্থাগারটি শাহবাগের নতুন ভবনে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়। এ গ্রন্থাগার দেশের সকল জেলা উপজেলায় একটি করে গ্রন্থাগার স্থাপন করেছে।

১৯৮২ সালে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এনাম কমিটি তৎকালীন বাংলাদেশ পরিষদকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এর ফলে সরকারি গণগ্রন্থাগারসমূহ ও বিলুপ্ত বাংলাদেশ পরিষদের অধীনে জেলা ও তৎকালীন মহকুমা (বর্তমানে জেলা) পর্যায়ে পরিচালিত গ্রন্থাগারসমূহের (তথ্যকেন্দ্র) সমন্বয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর গঠনের পক্ষে সুপারিশ করলে ১৯৮৪ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই অধিদপ্তরের অধীনস্থ গ্রন্থাগারগুলিতে ক) সাধারণ পাঠকক্ষ, খ) মহিলাদের জন্য বিশেষ পাঠকক্ষ, গ) সাময়িকী কক্ষ এবং ঘ) গবেষণা কক্ষ রয়েছে। ইন্টারনেট এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি অনেক গ্রন্থাগারে রয়েছে। বর্তমানে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে ৬৮টি সরকারি গণগ্রন্থাগার পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার (ঢাকায়), ছয়টি বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার (চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় সদরে), ৫৭ টি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার (৫৭টি জেলা সদরে), ৪টি শাখা গ্রন্থাগার (ঢাকায় ২টি- আরমানিটোলা ও মোহাম্মদপুর) ও রাজশাহীতে ২টি।

গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মোট ৪১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৬ লাখ বই দেখাশুনা করে এবং প্রতিদিন  প্রায় ৬ শত পাঠককে সেবা প্রদান করে।

বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অনেকগুলি গ্রন্থাগার রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে রয়েছে পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক পুস্তকসহ সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা এবং অভিসন্দর্ভ। গ্রন্থাগারটি সিডি-রম, ক্যাবি এবং এগরিস ডাটাবেজ, এ-ভি সামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি ও তথ্যসংগ্রহ সেবাও দিয়ে থাকে। এটি বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশস্থ সংরক্ষণমূলক গ্রন্থাগার। এতে ইউএনও (UNO), ইউনেস্কো (UNESCO), ইউনিসেফ (UNICEF), হু (WHO), ইরি (IRRI)-এর বিভিন্ন সংগ্রহ এবং সার্ক দেশসমূহ ও বিশ্বের সর্বত্র থেকে সংগৃহীত কৃষিবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গাজীপুরস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এ রয়েছে গ্রন্থাগার। অন্যান্য কৃষিভিত্তিক গ্রন্থাগারসমূহ ঢাকা, পটুয়াখালী, দিনাজপুর এবং রাজশাহীস্থ কৃষি কলেজসমূহে অবস্থিত। এছাড়াও কিছু কৃষি বিষয়ক বিশেষ গ্রন্থাগার আছে। যেখানে চাল, পশুসম্পদ, মৎস্য, বনবিদ্যা, পাট, আলু, চা, পশুচিকিৎসা বিজ্ঞান, পশুপালন বিদ্যা, তুলা, গম, আম,  রেশম চাষ, মৃত্তিকা গবেষণা এবং পল্লী সমাজতত্ত্ব, পল্লী উন্নয়ন ও শিল্প সংক্রান্ত গ্রন্থের বিপুল সমাহার রযেছে। কৃষিতথ্য কেন্দ্র, যা পূর্বে জাতীয় কৃষি গ্রন্থাগার ও তথ্যসংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের অংশ। এই কেন্দ্রের গ্রন্থাগারে তথ্য সংরক্ষণ, প্রকাশনা ও রিপ্রোগ্রাফি বিভাগ রয়েছে এবং এটি মূল্যবান উপাত্ত সরবরাহ করে থাকে। দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে রয়েছে  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) গ্রন্থাগার, বাংলাদেশ পারমানবিক শক্তি কমিশন গ্রন্থাগার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) গ্রন্থাগার এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের গ্রন্থাগার।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনফরমেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন সেন্টার (ব্যান্সডক) বাংলাদেশের অন্যতম প্রযুক্তিবিষয়ক গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র, যা  সার্ক ডকুমেন্টেশন সেন্টার-এর সদস্য।

চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত গ্রন্থাগারসমূহ হচ্ছে ন্যাশনাল হেলথ লাইব্রেরি অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন সেন্টার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, বারডেম গ্রন্থাগার, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, দি ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ, দি ইনস্টিটিউট অব চেস্ট রিসার্চ, দি ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেবল ডিজিজেজ, দি ইনস্টিটিউট অব হার্ট রিসার্চ অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেজ এবং অন্যান্য কিছু সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও হাসপাতালের গ্রন্থাগার।

গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগারগুলি হলো  বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিবাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরবরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, পরিসংখ্যান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, পরিকল্পনা কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট,  বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ  বেতার, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একাডেমী, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও  কুটির শিল্প ইনস্টিটিউট মতো প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার রয়েছে। ব্যানবেইস-এর তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের বিশেষ গ্রন্থাগারের সংখ্যা ১,৫০০-এর মতো। এদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গ্রন্থাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণে  বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগার বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

প্রায় সকল সরকারি মন্ত্রণালয়, দপ্তর এবং অধিদপ্তরের নিজস্ব গ্রন্থাগার রয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহও তাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছে। সরকারি গ্রন্থাগারসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ হচ্ছে বাংলাদেশ সচিবালয় লাইব্রেরি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর গ্রন্থাগারও বেশ সমৃদ্ধ।

সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় কিছু গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল চত্বরে প্রতিষ্ঠিত সার্ক কৃষি তথ্য কেন্দ্র (সাইক) আটটি সার্কভুক্ত দেশের কৃষি বিজ্ঞান ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ করে। বাংলাদেশস্থ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র অভ্যন্তরীণ ও বহিঃসূত্র থেকে তথ্যসেবা প্রদান করে থাকে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র (সিরডাপ) পল্লী উন্নয়ন খাতে তথ্যসবা প্রদান করে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের গ্রন্থাগারের মান উন্নয়ন এবং পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির জন্য  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি (ল্যাব), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব লাইব্রেরিয়ান, ইনফরমেশন সায়েনটিস্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টালিস্ট (বেলিড), বাংলাদেশ গ্রন্থাগার বান্ধব সমিতি, বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার ফেডারেশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কাজ করছে। বাংলাদেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় এখনও অনেক দুর্বলতা বিদ্যমান। তবে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ গ্রন্থাগার উন্নয়ন ও তথ্যসেবা বিস্তৃতির জন্য সক্রিয় রয়েছে।  [মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান]