ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৩ নং লাইন: ৩ নং লাইন:
'''ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ''' (১৯২২-১৯৭১)  কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার। ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষোলশহরে সৈয়দ (ডেপুটি) বাড়িতে তাঁর জন্ম। পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। এ কারণে পূর্ববাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পিতার কর্মস্থলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে নানাভাবে তাঁর দেখার সুযোগ ঘটে, যা তাঁর  [[উপন্যাস|উপন্যাস]] ও নাটকের চরিত্র-নির্মাণ ও জীবন-অন্বেষণে প্রভূত সাহায্য করে।
'''ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ''' (১৯২২-১৯৭১)  কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার। ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষোলশহরে সৈয়দ (ডেপুটি) বাড়িতে তাঁর জন্ম। পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। এ কারণে পূর্ববাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পিতার কর্মস্থলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে নানাভাবে তাঁর দেখার সুযোগ ঘটে, যা তাঁর  [[উপন্যাস|উপন্যাস]] ও নাটকের চরিত্র-নির্মাণ ও জীবন-অন্বেষণে প্রভূত সাহায্য করে।


পিতার চাকরিসূত্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৩৯), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ (১৯৪১) এবং [[আনন্দ মোহন কলেজ|আনন্দ মোহন কলেজ]] থেকে ডিস্টিংকশনসহ বিএ (১৯৪৩) পাস করেন। পরে  [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]]এ অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তা শেষ করেন নি।
পিতার চাকরিসূত্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৩৯), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই.এ (১৯৪১) এবং [[আনন্দ মোহন কলেজ|আনন্দ মোহন কলেজ]] থেকে ডিস্টিংকশনসহ বি.এ (১৯৪৩) পাস করেন। পরে  [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]]এ অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তা শেষ করেন নি।


ফেনী হাইস্কুলে ছাত্র থাকাকালেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয়। এ সময় তিনি হাতে লেখা পত্রিকা ভোরের আলো  সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রথম গল্প ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’  [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]] ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ইংরেজি-বাংলা উভয় ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল। তিনি কনটেম্পোরারি নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৫-৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার দৈনিক  [[স্টেটস্ম্যান, দি|স্টেটস্ম্যান]] পত্রিকার সাব-এডিটর ছিলেন।  [[সওগাত|সওগাত]],  [[মোহাম্মদী|মোহাম্মদী]], বুলবুল, পরিচয়, অরণি, পূর্বাশা প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো।
ফেনী হাইস্কুলে ছাত্র থাকাকালেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয়। এ সময় তিনি হাতে লেখা পত্রিকা ভোরের আলো  সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রথম গল্প ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’  [[ঢাকা কলেজ|ঢাকা কলেজ]] ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ইংরেজি-বাংলা উভয় ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল। তিনি কনটেম্পোরারি নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৫-৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার দৈনিক  [[স্টেটস্ম্যান, দি|স্টেটস্ম্যান]] পত্রিকার সাব-এডিটর ছিলেন।  [[সওগাত|সওগাত]],  [[মোহাম্মদী|মোহাম্মদী]], বুলবুল, পরিচয়, অরণি, পূর্বাশা প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো।

০৭:১৪, ৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ (১৯২২-১৯৭১)  কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার। ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ষোলশহরে সৈয়দ (ডেপুটি) বাড়িতে তাঁর জন্ম। পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। এ কারণে পূর্ববাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পিতার কর্মস্থলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে নানাভাবে তাঁর দেখার সুযোগ ঘটে, যা তাঁর  উপন্যাস ও নাটকের চরিত্র-নির্মাণ ও জীবন-অন্বেষণে প্রভূত সাহায্য করে।

পিতার চাকরিসূত্রে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেন। তিনি কুড়িগ্রাম হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৩৯), ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই.এ (১৯৪১) এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ডিস্টিংকশনসহ বি.এ (১৯৪৩) পাস করেন। পরে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়এ অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তা শেষ করেন নি।

ফেনী হাইস্কুলে ছাত্র থাকাকালেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত হয়। এ সময় তিনি হাতে লেখা পত্রিকা ভোরের আলো  সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রথম গল্প ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’  ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ইংরেজি-বাংলা উভয় ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল। তিনি কনটেম্পোরারি নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪৫-৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার দৈনিক  স্টেটস্ম্যান পত্রিকার সাব-এডিটর ছিলেন।  সওগাতমোহাম্মদী, বুলবুল, পরিচয়, অরণি, পূর্বাশা প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ওয়ালীউল্লাহ ঢাকায় এসে প্রথমে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সহকারী বার্তা-সম্পাদক ও পরে করাচি কেন্দ্রের বার্তা-সম্পাদক (১৯৫০-৫১) হন। ১৯৫১-৬০ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষে নয়াদিল্লি, সিডনি, জাকার্তা ও লন্ডনে বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্যারিসে পাকিস্তান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ১৯৬৭-৭১ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ছিলেন।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারকার্য চালান এবং বিচারপতি  আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে ফরাসি একাডেমির সদস্য পিয়ের এমানুয়েল, অাঁদ্রে মারলো প্রমুখ বুদ্ধিজীবীর সহযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ফরাসি নাগরিক এ্যান মেরির সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন (১৯৫৫)। মিসেস মেরি ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস  লালসালু (১৯৪৮) ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন। পরে এটি Tree Without Roots (১৯৬৭) নামে ইংরেজিতেও অনূদিত হয়।

বিভাগোত্তর পূর্ববঙ্গের লেখক-বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিক আলোড়নে যখন নানাভাবে আলোড়িত, তখন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলার গ্রাম ও সমাজ-জীবনের এক ধ্রুপদী জীবনধারাকে লালসালু উপন্যাসে রূপদান করেন। তিনি এতে বাংলার লোকায়ত সংস্কার ও ধর্মাচরণের নেপথ্যে তথাকথিত ধর্মধ্বজাধারী ও ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ গভীর জীবনবোধ ও মমত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেন। তাঁর অন্য দুটি উপন্যাস চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪) ও কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮) বাংলা সাহিত্যে দুটি ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টি। তিনি এ দুটি উপন্যাসে ‘চেতনাপ্রবাহ রীতি’ ও ‘অস্তিত্ববাদ’-এর ধারণাকে অসাধারণ রূপক ও শিল্পকুশলতায় মূর্ত করে তুলেছেন।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ দুটি গল্পগ্রন্থ নয়নচারা (১৯৫১), দুই তীর ও অন্যান্য গল্প এবং তিনটি নাটক বহিপীর (১৯৬০), তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬৪) ও সুড়ঙ্গ (১৯৬৪) রচনা করেছেন।  ছোটগল্প ও নাটকেও তিনি সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় ভন্ডামি, মানসিক ও চারিত্রিক স্খলন ইত্যাদিকে প্রতিভাসিত করেছেন। তিনি দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলাদেশ সরকারের ‘একুশে পদক’ (মরণোত্তর, ১৯৮৩) লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর প্যারিসে তাঁর মৃত্যু হয় এবং প্যারিসের উপকণ্ঠে মদোঁ-স্যুর বেল্ভু-তে তিনি সমাহিত হন।  [শফিউল আলম]