উমিচাঁদ

উমিচাঁদ  পলাশী ষড়যন্ত্রের প্রধান হোতা উমিচাঁদ ছিলেন নওয়াবী আমলের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী। আগ্রার অধিবাসী মধ্য ভারতীয় ব্যবসায়ী উমিচাঁদ আঠারো শতকের দ্বিতীয় দশকে বাংলায় আসেন। বিষ্ণুদাস শেঠ নামক কলকাতার এক দাদনি ব্যবসায়ী ও দালাল উমিচাঁদের মুর্শিদাবাদ গমনের ব্যয়ভার বহন করেন। পরবর্তী সময়ে আঠারো শতকের ত্রিশের দশকে তিনি কলকাতায় নিজেকে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি  আলীবর্দী খানের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। উঁমিচাদ মূলত শোরাআফিম এর ব্যবসা করতেন। তিনি ছিলেন ইংরেজ কোম্পানিতে শোরা সরবরাহের একজন বড় ঠিকাদার।

উমিচাঁদ  মুর্শিদাবাদ প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। প্রশাসনকে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে তিনি অত্যন্ত লাভজনক শোরার ব্যবসায়ে একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। আলীবর্দী খানের ভাই হাজী আহমদ কোম্পানি এবং সে সঙ্গে মুর্শিদাবাদের নওয়াবের নিকট উমিচাঁদের ব্যবসায়িক জামিনদার ছিলেন। বিশাল ধনসম্পদ ও অভিজাত মহলের সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগের ফলে তিনি আলীবর্দী খান এবং পরবর্তীকালে সিরাজউদ্দৌলার ঘনিষ্ঠ বিশ্বাসভাজনে পরিণত হন।

পলাশী ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তোলার ক্ষেত্রে কোম্পানি মুর্শিদাবাদ দরবারে উমিচাঁদের প্রভাবকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগায়। উমিচাঁদের মাধ্যমেই কলকাতা ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ দরবারের যোগাযোগ পরিচালিত হতো। উমিচাঁদ প্রথমে সিরাজউদ্দৌলার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কোম্পানির কাছে সেনাপতি ইয়ার লতিফ খানের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু এ প্রস্তাব গৃহীত হয় নি। পরবর্তী সময়ে উইলিয়ম ওয়াট্স,  মীরজাফর এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং উমিচাঁদ তখন মীরজাফরের অনুকূলে সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

পলাশী চক্রান্ত পাকাপাকি হওয়ার পর তা বাস্তবায়নের অব্যবহিত পূর্বে উমিচাঁদ নওয়াবের সকল ধনসম্পদের পাঁচ শতাংশ দাবি করে বসেন। তখন এ সম্পদের পরিমাণ ধরে নেওয়া হয়েছিল চল্লিশ কোটি টাকার মতো যা নিঃসন্দেহে ছিল অতিরঞ্জিত। ষড়যন্ত্রে সাফল্যের পর কে কি পাবেন এ বিষয়ে সম্পাদিত আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্রে এ বলে উমিচাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয় যে, তাঁকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। তার দাবিকৃত শতকরা পাঁচ ভাগ সম্পদ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে তার সঙ্গে একটি পৃথক চুক্তি করা হয়। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধ-এর পর রবার্ট ক্লাইভ তাঁকে তাঁর প্রাপ্য অর্থ দিতে এ বলে অস্বীকৃতি জানান যে, তার মতো ‘দ্বৈত চর’কে খুশি রাখার জন্যই নিছক চাতুরি হিসেবে এ চুক্তি করা হয়েছিল। এ কথা শোনামাত্রই উমিচাঁদ অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং আরোগ্যলাভ করলেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে কয়েক বছর বেঁচেছিলেন।  [সিরাজুল ইসলাম]