ফররুখ সিয়ার
ফররুখ সিয়ার (১৭১৩-১৭১৯) মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেবএর প্র-পৌত্র। তিনি তাঁর চাচা জাহান্দার শাহকে (১৭১২-১৭১৩) পরাভূত করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর প্র-পিতামহের শাসনামলেই তিনি ক্ষমতার আস্বাদ পান। তাঁর পিতা আজিম-উস-শান বাংলা, বিহার ও ঊড়িষ্যার সুবাহদার থাকাকালীন তিনি পিতার সহকারী হিসেবে নায়েব-নাজিম নিযুক্ত হন। বাংলায় থাকাকালীন তিনি এখান থেকে যতটুকু সম্ভব অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করতেন যাতে সিংহাসন দখলের যুদ্ধে জাহানদার শাহের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করা যায়। ফররুখ সিয়ার তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও তাঁর পিতার সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে খুব কমই সাহায্য পান। তাই তিনি বাধ্য হয়েই সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সাহায্যপ্রার্থী হন। দু’ভাই হুসেন আলী খান ও আব্দুল্লাহ খান ছিলেন যথাক্রমে বিহার ও এলাহাবাদের ডেপুটি সুবাহদার। সৈয়দ ভাইদের সহায়তায় ফররুখ সিয়ার ১৭১৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁর চাচা জাহানদার শাহকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসনে আসীন হন।
ফাররুখ সিয়ার ছিলেন দুর্বল, অস্থিরচিত্ত ও অদূরদর্শী শাসক। তাঁর সমগ্র শাসনামলে দরবার ছিল একটি ষড়যন্ত্রের আখড়া। এ অবস্থায় ফররুখ সিয়ারকে দলাদলি বহির্ভূত কিছু দক্ষ রাজকর্মচারীর স্মরণাপন্ন হতে হয়। এ উদ্দেশ্যে তিনি একসময়ের শত্রু মুর্শিদকুলী খানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। তিনি মুর্শিদকুলী খানকে ’জাফর খান নাসিরী’ উপাধি প্রদান করেন এবং মুর্শিদকুলী খান পুনরায় বাংলার দীউয়ান হিসেবে যোগ দেন। তিনি ঊড়িষ্যার দীউয়ান ও সুবাহদার এবং ফররুখ সিয়ারের নাবালক পুত্র ও বাংলার নামমাত্র সুবাহদার ফরখুন্দ সিয়ারের ডেপুটি হিসেবে নিযুক্ত হন।
ফররুখ সিয়ার শিখদের বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান চালান। শিখ নেতা বান্দাকে পরাজিত করে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। অবাধ্য রাজপুতদেরও তিনি দমন করেন। ফররুখ সিয়ারের শাসনকাল ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রদত্ত অবিবেচনাকর বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের জন্য চিহ্নিত। এ আইন সমগ্র সাম্রাজ্য, বিশেষ করে বাংলা, বিহার ও ঊড়িষ্যার অর্থনীতির জন্য ছিল চরম ক্ষতিকর। তিনি ইংরেজদের অযৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নিয়ে ১৭১৭ সালে রাজকীয় ফরমান প্রদান করেন যার ওপর ভিত্তি করে ইংরেজরা বাংলায় একচেটিয়া বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এধরনের আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি তাঁর অযোগ্যতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় প্রদান করেন। ফররুখ সিয়ারের ফরমান বাংলায় উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে। মৃত্যু ১৭১৯। [শিরীন আখতার]